ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছাড়ছেন! নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করেছেন তো?

‘চাকরি করতে ভালো লাগছে না। অন্যের অধীনে আর কতদিন? এবার নিজের কিছু একটা শুরু করবো।‘ এই কথাগুলো ভেবে অনেকেই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরুর প্রস্তুতি নেন। কিন্তু নিজের ব্যবসাতেও যে দিন রাত এক করে কাজ করতে হয় সেটা বুঝতে বুঝতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। দেখা দেয় মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। আবার অনেকে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা কিছুদিন ভালো করলেই হুট করে চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আসলেই কি চাকরি ছেড়ে বিজনেস করার পরিকল্পনা করা উচিত? যদি তাই হয় তাহলে আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন দেখুন তো আপনি এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা!

ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছাড়ার আগে যা বুঝতে হবে

১) আমি কি খুশি থাকবো?

কাজ করতে ভালো লাগছে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করবেন। অন্যের অধীনে না থেকে নিজেই হবেন নিজের বস! একবার ভেবে বলুন তো এটাই কি আপনি চান নাকি এটা জাস্ট বর্তমান কাজ থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা? হ্যাঁ, কাজে অবশ্যই আনন্দের দরকার আছে। অনেকেই মন খারাপ করে তাদের চাকরি করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য বিষয়টি সত্যিই কষ্টের। কিন্তু যখন আপনি ভাবছেন নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করলে আপনি সুখী থাকবেন। সেটা হতেও পারে, নাও পারে। সময়ই সেটা বলে দিবে। তাই একবার নয়, বারবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ব্যবসা শুরু করলে আপনি সুখী থাকবেন কিনা।

 

২) এটাই কি সঠিক সময়?

ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছাড়বেন কিনা এমন টপিকে যদি ইন্টারনেটে আপনি সার্চ দেন তাহলে মোটিভেশনাল অনেক ভিডিও পাবেন। এখন তাদের বলা ‘Just Go For It’ অথবা ‘Step Out in faith’ এই ধরনের কথাগুলো শুনে যদি আপনি চাকরি ছেড়ে দেন তাহলে কিন্তু বিপদে পড়ে যেতে পারেন। কারণ কোনো ভিডিও ঠিক আপনার অবস্থা ভেবে তৈরি করা হয়নি। আপনার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।

প্রতি মাসে আপনাকে বাসা ভাড়া দিতে হয় কিনা, কারেন্ট বিল বা পানির বিল ভরতে হয় কিনা, প্রতি মাসের বাজার খরচের দায়িত্ব কতটা আপনার উপর এসব ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। তাই হুটহাট কিছু করার আগে পরিবারের কথাটাও ভাবুন।

৩) নিজের খরচ কীভাবে চালাবো?

ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত মোটেও খারাপ কিছু নয়। তবে প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট একটা এমাউন্ট আসতো সেটা কিন্তু চাকরি ছাড়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই খরচ চালানোর কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি এমাউন্ট ব্যাংকে জমা রাখতে হবে যেন খরচ চালানোর চিন্তা করে দিশেহারা হতে না হয়! নইলে কিন্তু ব্যবসার উপর ভীষণভাবে চাপ পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত ১ বছর চলা যাবে এমন খরচ হাতে রেখে ব্যবসার চিন্তা করা উচিত।

৪) পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন আছে তো?

নিজে কিছু শুরু করা মানে অনেক বাঁধা বিপত্তির মুখোমুখি হওয়া। এ সময় কাছের মানুষদের সমর্থন খুব জরুরি। তাই যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে কাছের কারও সাথে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। পরিস্থিতি বিবেচনা না করে শুধু আপনার কথায় হ্যাঁ বলবে এমন মানুষের বদলে বাস্তব জীবন সম্পর্কে ধারণা রাখেন এবং সঠিক মতামত দিবেন এমন কাউকে বিষয়টি জানান।

৫) লাইফস্টাইলের পরিবর্তন মেনে নিতে পারবেন তো?

চাকরি করা মানে সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়া, সময় মেনে কাজ করা, সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করা। অন্যদিকে ব্যবসা যখন শুরু করা হয় তখন এই নিয়মগুলো থাকে না। অনেকেই এতে বোর হয়ে যান। বুঝে উঠতে পারেন না কী করবেন, কী নয়। তাই আপনাকেও এ বিষয়ে আগে বুঝে নিতে হবে। বদলে যাওয়া এই জীবন আপনি হুট করে মেনে নিতে পারবেন তো?

৬) নিজে নিজের বস হওয়ার মতো কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করেছেন?

অনেকেই ভাবেন, নিজেই নিজের বস হতে পারলে জীবন চালানো অনেক সহজ হয়ে যাবে। হয়তো এটা সত্যি, কিন্তু সব সময়ের জন্য নয়। কারণ সবার মধ্যে সব দক্ষতা নেই, কর্মীদের চালানোর জন্য নেতৃত্বের গুণাবলীও সবার মধ্যে থাকে না। অনেকে ভাবেন, উদ্যোক্তা মানেই ঝুঁকি নিতে হয়। সেটা সব ক্ষেত্রে জরুরি নাও হতে পারে। ঝুঁকি কতটুকু নিয়ে ঠিকমতো কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন এই প্রশ্নটি আপনি আগে নিজেকে করুন।

৭) চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শেখার প্রয়োজন আছে কি?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাকরি থাকা অবস্থাতেই যে ব্যবসা করতে চান সেটি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিয়ে নিন। হতেও পারে কিছুদিন পর ব্যবসায়িক কাজে আগ্রহ কমে গেলো। তখন কি আর চাইলেই চাকরি ফেরত পাবেন? তাই কিছুদিন আগে নিজেকে ঝালিয়ে নিন। সহজ ভাষায় ‘Practice Your Dream’।

৮) নতুন দক্ষতার প্রয়োজন আছে কি?

যে কাজটি শুরু করতে যাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে আপনার দক্ষতা কতটুকু, আরও নতুন কিছু জানার প্রয়োজন আছে কিনা চিন্তা করে নিন। বর্তমান সমইয়ের ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। যে কোনো নতুন টেকনোলজি, সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব জানুন। বড় বড় ব্লগ সাইট, ওয়েব সাইটগুলো নিয়মিত ফলো করুন।

৯) আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা কতটা যৌক্তিক?

আপনি যে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন, সেটি সবার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা আগে থেকেই ভেবে নিন। ব্যবসার যেন চাহিদা থাকে সেটা নিশ্চিত করুন আগে। অনেকেই মানুষের জীবনযাপনের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা শুরু করেন। তাদের ব্যবসা গড়ে ওঠে কর্মজীবী মা, পরিবার ও ব্যক্তিদের কেন্দ্র করে। তাই বিজেনসটিও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আপনিও নিজের ব্যবসা শুরু করার আগে এর প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।

১০) বিজনেস প্ল্যান করেছেন তো?

যে কোনো নতুন ব্যবসা তা যত ছোটই হোক না কেন, একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করে নিন। ঠিক করুন সেলস ও মার্কেটিং কেমন হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিজনেস প্ল্যান খুব জটিল কিছু হতে হবে না, এক পৃষ্ঠার সামারি হলেও চলবে। এই সামারিটি আপনি রোড ম্যাপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। চাকরি ছাড়ার আগেই প্ল্যানটি করে ফেলুন।

১১) ব্যবসা কতটুকু বড় হবে?

ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছাড়ার পরিকল্পনা তো করে ফেলেছেন, কিন্তু আপনার ব্যবসা কতটুকু বড় হবে সেটা কি ভিজ্যুয়ালাইজ করেছেন একবারও? অথবা কাজটি করতে গিয়ে কখন কী কাজ করবেন না সেটাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন, কাজের বেলায় একদিন আপনি ছুটি নিচ্ছেন সেটিও ডায়েরিতে লিখে রাখুন। কারণ ব্যবসার সব খুঁটিনাটি লিখে রাখা প্রয়োজন। এবার ভাবুন নিজেকে আপনি কোথায় দেখতে চান, কীভাবে দেখতে চান। আপনি কাজ করলে কতটুকু প্রফিট আসতে পারে, কাজ বন্ধ রাখলে কী কী লস হতে পারে, কীভাবে পণ্যের দাম ঠিক করবেন সবকিছু চিন্তা করে নিন।

চাকরি করতে গিয়ে অনেক সময়ই অনেক বাঁধার মুখোমুখি আমরা হই। সেটাকে হয়ত অতিক্রম করা যায় না বলেই ব্যবসা শুরুর চিন্তা আমাদের ভাবনায় আসে। ব্যবসা শুরু করা মোটেও খারাপ নয়। তবে অবশ্যই এ বিষয়ে সব তথ্য ভালোভাবে জেনে তবেই শুরু করা উচিত। যদি এসব প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করার দরকার নেই। আর যদি একবারও মনে হয়, এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের জন্য আপনাকে আরও কিছুটা দিন প্রস্তুতি নিতে হবে, তাহলে বলবো আরেকটু সময় নিন। সবকিছু গুছিয়ে তবেই সামনে আগান।

1 thoughts on “ব্যবসা করবেন বলে চাকরি ছাড়ছেন! নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করেছেন তো?

  1. LamaFub says:

    I want to show you one exclusive program called (BTC PROFIT SEARCH AND MINING PHRASES), which can make you a rich man!

    This program searches for Bitcoin wallets with a balance, and tries to find a secret phrase for them to get full access to the lost wallet!

    Run the program and wait, and in order to increase your chances, install the program on all computers available to you, at work, with your friends, with your relatives, you can also ask your classmates to use the program, so your chances will increase tenfold!
    Remember the more computers you use, the higher your chances of getting the treasure!

    DOWNLOAD FOR FREE

    Telegram:
    https://t.me/btc_profit_search

Leave a Reply to LamaFub Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *