একদিকে ছোট্ট মেয়ে দুআর বাবাকে কাছে পাওয়ার আগ্রহ আতিশয্যে মর্মস্পর্শী চাহনি, প্রিয়তমার অশ্রুসজল চোখ, শত কিলোমিটার দূর থেকে মমতাময়ী মায়ের সতর্কবাণী অথবা দরদের সুরে পথ আটকানো; বারণ, অপরদিকে অপরিচিত নাম্বার থেকে একের পর এক সতর্কবার্তা, সবিশেষ ঝাঁঝালো গলার কঠিন হুঁশিয়ারি—আর বের হয়ো না, মরে ঝরে পড়ে থাকতে হবে— সবকিছুকে উপেক্ষা করে স্বৈরাচারকে তার শেষ হিসেব চুকিয়ে দেওয়া অথবা দেশরক্ষার তাগিদে মৃত্যুকে আরও কাছে থেকে দেখে আসার শক্তপোক্ত এরাদায় রোজ রোজ বের হচ্ছেন লেখক; জানের মায়া নেই, প্রাণের নিশ্চয়তা নেই কোনো।
জুলাই বিপ্লবে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, কুতুবখালির ফ্লাইওভার; এই জায়গাগুলোতেই কখনো টিয়ারগ্যাসের মুখে দাঁড়িয়ে, গ্রেনেড ব্রাস্টে গা ঝলসানোর মুহূর্ত, কখনো-বা সম্মুখযুদ্ধে বুলেটের সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়ে থাকার কথা তুলে এনেছেন লেখক।
আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী থেকে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলেছেন তিনি। পায়ে লেপটে আছে অপরিচিত কোনো বিপ্লবীর রক্তে ভেজা গামছা। চোখের সামনে ধোঁয়া ওঠা খাবারের বাটি। বাঁধহীন রক্তের স্রোতে অবশ হয়ে আসছে লেখকের পা, তবুও হাঁটছেন তিনি; আঙুলের ডগা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের ধারা। গুলি-বুলেটের আকাশ ফাটানো আওয়াজ অথবা সন্তানহারা মায়ের মর্মভেদী আর্তনাদ; অভ্যুত্থানের এই ৩৬ দিন স্বচক্ষে দেখে এসেছেন তিনি।
মুনতাসির বিল্লাহ ভাইয়ের গদ্য ঝরঝরে। উপমায় থাকে নান্দনিকতার বাহার। দৃশ্যের বয়ানে দক্ষ ডুবুরির মতন নিঁখুত পারদর্শিতা। চোখের সামনের কোনো দৃশ্যকে যখন এমন নিরুপম নান্দনিকতা আর উপমার তিলকে আটকে দেওয়া হয়; অবাক হন পাঠক, হৃদয়ে ধারণ করেন মূল ঘটনাকে। যা হারিয়ে যাবার নয়। জুলাই বিপ্লবের দিনলিপি বইয়ে জুলাইকে বিপ্লবী জুলাইয়ের মতোই তুলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন লেখক। যা হারিয়ে যাবার নয়।
Reviews
There are no reviews yet.