কাজ করতে ভালো লাগছে না? যেভাবে সামলাবেন এই পরিস্থিতি

আধুনিক এই যুগে আমরা দৌড়ে চলেছি ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায়। ধরাবাঁধা রুটিন আর একই কাজের জীবনে একঘেয়ে লাগতেই পারে। মনে হতেই পারে যে আর কাজ করতে চাই না আমি। কিংবা আজ কিছুই করবো না। অনেক সময় এই ধরনের চিন্তার জন্য আমরা অপরাধবোধেও ভুগি অথবা ঝামেলায় পড়ি। কাজ করতে ভালো না লাগলে কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, আজকে সেটা নিয়েই জানবো আমরা।

কাজ করতে ভালো লাগছে না- কী করা যায় এখন?

কারণ খুঁজে বের করুন

কাজ করতে না ইচ্ছে করার একটি বড় কারণ হতে পারে মানসিক সমস্যা। ডিপ্রেসন, দু:খবোধ ইত্যাদি থেকে তৈরি হওয়া অবসাদ কাজের ইচ্ছাকে নষ্ট করে দেয়। আবার শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করলেও আমরা কাজ করতে পারি না। অনেক সময় আমাদের শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আমরা হয়তো সেটা তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারি না। ঠিক কী কারণে কাজ করতে ইচ্ছা করছে না সেটি খুঁজে বের করুন। কোনো অসুস্থতা বোধ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নতুন শখ তৈরি করুন

বিভিন্নরকম শখ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে সাহায্য করে। আমাদেরকে উৎফুল্ল রাখে, মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করে। কিন্তু অনেক সময় একই শখের কাজ অনেকদিন ধরে করলে সেটাতে হয়তো আমাদের উদ্দীপনা হারিয়ে যায়। তাই যখন কোনোকিছুই আর ভালো লাগবে না তখন একঘেমেয়ি কাটাতে শুরু করতে পারেন নতুন কোনো শখের কাজ, যা আগে কখনো করেননি। এতে নতুনভাবে উদ্দীপনা তৈরি হবে আপনার মাঝে, কাজের প্রতিও আগ্রহ বেড়ে যাবে।

বিরতি নিন এবং নিজেকে সময় দিন

একঘেয়ে রুটিনে অনেকদিন চলতে থাকলে আমাদের মাঝে বিরক্তি এসে পড়া স্বাভাবিক। এগুলোও কাজ করার স্পৃহা কমিয়ে দেয়। তাই দৈনন্দিন জীবনে বিরক্তি এসে পড়লে বিরতি নিন একটু। নিজেকে সময় দিন। ঘুরতে যান একা একা অথবা নিজের পছন্দের বই পড়ুন। গান শুনুন অথবা পছন্দের খাবার খান। এক কথায় নিজের যত্ন নিন।

কাজ করতে ইচ্ছা না হলে কিছু সময় বিরতি নিন

প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান

প্রিয়জনেরা সবসময়ই আমাদের আনন্দের কারণ হয়ে থাকেন। তাই প্রিয়জনদের সাথে কাটানো সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যায়। সময়গুলো হয়ে ওঠে অত্যন্ত উপভোগ্য ও আনন্দের। কাজের স্পৃহা হারিয়ে গেলে বা জীবনের একই রুটিনে বিরক্তি চলে আসলে বিরক্তিকর রুটিনকে একটু ছুটি দিয়ে প্রিয়জনদের সাথে কাটাতে পারেন কিছু সময়। তাদের সাথে কোনো প্রিয় স্থানে খেতে যাওয়া বা ঘুরতে যাওয়া, বা ভিডিও কল বা ম্যাসেজের মাধ্যমে আড্ডা দেওয়াও হতে পারে কিছু সুন্দর সময়ের উৎস।

সময় কাটান প্রকৃতির সাথে

সবুজ প্রকৃতি আমাদের মনের অস্থিরতা দূর করে, মনে প্রশান্তি আনে। প্রকৃতির সাথে সময় কাটালে মন ও শরীর দুটোই সুস্থ থাকে। তাছাড়া একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনের থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পাওয়া যায়। তাই খুব অস্থির লাগলে, একঘেয়েমি লাগলে কিছু সময় কাটাতে পারেন প্রকৃতির সাথে।

বড় কাজকে ছোট করে নিন

অনেক সময় আমাদের যদি অনেক বেশি কাজ একসাথে করতে হয় বা অনেক বড় কোনো কাজ করতে হয়, আমাদের কাজ করার ইচ্ছাটা চলে যায়। এটা আমাদের মন ও মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে৷ ফলে ডিপ্রেশনও হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি যেন না হয় তাই কাজ ভাগ করে নিন। ছোট ছোট ধাপে কাজ করুন। এতে করে কাজ করার আগ্রহ বাড়বে এবং কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।

রান্না করুন প্রিয় খাবার

কথায় আছে, খাবার হলো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়ার অন্যতম উপায়। হঠাৎ করেই সবকিছুতে বিরক্ত লাগতে থাকলে, কোনোকিছুতে মন না বসাতে পারলে রান্না করতে পারেন আপনার প্রিয় খাবার। অনেকেরই রান্নাবান্না বেশ পছন্দের কাজ, তাছাড়া নিজের হাতে নিজের প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়ার মধ্যে বেশ ভালোলাগা কাজ করে। রান্না করতে না জানলে শিখে ফেলতে পারেন নিজের প্রিয় খাবার, এতে করে যেমন আনন্দ লাগবে, তেমনই নতুন কিছু শেখাও হয়ে যাবে।

কাজ করতে অনীহা চলে আসলে শিখে ফেলুন নতুন কিছু

 

নিজেকে পুরষ্কৃত করুন

লক্ষ্য বড় হলে অনেক কাজের চাপ পড়ে মন ও মস্তিষ্কে। তখন একঘেয়েমি আসে, কাজ করার ইচ্ছে কমে যায়। তাই বড় কাজ সমাধানের ক্ষেত্রে ছোট ছোট গোল বা লক্ষ্য সেট করুন। এগুলো পূরণের জন্য নিজেকে নিজের পছন্দের ছোট ছোট জিনিসগুলো উপহার দিন। যেমন ধরুন, আপনি ঠিক করলেন কাজটির কোনো একটি অংশ শেষ করলে পছন্দের কফিশপে কফি খেতে যাবেন। অথবা কাজটির কোনো অংশ শেষ করে নিজের প্রিয় কোনো চকলেট খাবেন। এভাবে কাজ করলে কাজটির প্রতি আগ্রহও বাড়বে আর কাজ করার ক্ষেত্রে আসবে নতুনত্ব।

কাজ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন

অনেক সময় আশেপাশের পরিবেশের কারণে কাজে মনোনিবেশ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন কাজের প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করলে কাজ না করতে চাওয়ার ইচ্ছা হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই কাজ করতে ইচ্ছা না হলে আশেপাশের পরিবেশের দিকে মনোযোগ দিন। আপনার কাজ করার জন্য সহায়ক ও উপযুক্ত পরিবেশ আছে কি না তা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি না থাকে সেরকম পরিবেশ তৈরি করুন।

মেডিটেশন করুন

মেডিটেশন করাও একটা কাজ। কিন্তু এটাকে এমনভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কিছু না করা। মেডিটেশন করা মোটেই সহজ না, বিশেষ করে শুরুর দিকে। তবে চর্চার মাধ্যমে মেডিটেশন সহজ হয়ে যাবে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের উত্তেজনা কমিয়ে আমাদেরকে শান্ত হতে সাহায্য করে। এতে শরীর ও মন দুইই সুস্থ থাকে।

গুছিয়ে ফেলুন ঘরবাড়ি

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের মনকে সুন্দর করে, আমাদের একঘেয়েমি দূর করে। হঠাৎ যদি কাজে মন না বসে, গুছিয়ে ফেলতে পারেন ঘরবাড়ি। বদলে ফেলতে পারেন বিভিন্ন রুমের সাজসজ্জা। নতুন পরিবেশ তৈরি হলে কাজ করার স্পৃহা জাগবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মন ও স্বাস্থ্য দুটোই তরতাজা হবে।

ঘর গোছালেও ভালো থাকে মন

পছন্দের গান শুনুন

পছন্দের গান আমাদের মনে প্রশান্তি আনে, দূর করে ক্লান্তি। কাজের উদ্দীপনা তৈরি করে আর মনকে প্রফুল্লও করে৷ তাই খুব বেশি বিরক্ত লাগলে বা একঘেয়েমি লাগলে শুনতে পারেন পছন্দের গান। তাছাড়া গান আশেপাশের নীরবতাও দূর করে৷ গান মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, কোনো কাজে মনোযোগ বাড়াতে আর স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।

শরীরচর্চা করুন

নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম শরীরের পাশাপাশি মনকেও সতেজ রাখে। এছাড়াও ব্যায়াম করার মাধ্যমে কাজে ফোকাস করার ক্ষমতা বাড়ে, বাড়ে কাজ করার দক্ষতা। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, ধৈর্যশীল হওয়া কিংবা কাজের চাপ নিতে পারার মতো মানসিক দক্ষতাও তৈরি হয় ব্যায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে। তাই কাজ করার অনীহা দেখা গেলে শরীরচর্চা হতে পারে একটি সুন্দর মাধ্যম।

জার্নালিং করুন

নিজের আবেগ অনুভূতিকে সঠিকভাবে জানার জন্য জার্নালিং এর কোনো তুলনা নেই। জার্নালিং করলে নিজেকে নিজে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। সাথে কেটে যাবে দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তিকর রুটিনের একঘেয়েমিতা। নিজেকে নিজে বুঝতে পারলে, কাজ করার অনীহা কেন হচ্ছে সেটিও সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। আর এটা বুঝতে পারলেই কাজ করার জন্য নিজের মানসিকতাও তৈরি করতে আর কোনো কষ্ট হবে না।

জার্নালিং

কাজের প্রতি অনীহা বা কাজ করতে ইচ্ছা না হওয়া কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় বরং সাধারণ বিষয়। তবে এটি যেন আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতির ক্ষেত্রে বা কর্মজীবনে খুব বেশি বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই অনিচ্ছার কাছে মাথানত করে নিজের কাজকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না বরং এই মুহুর্তগুলোকে এমনভাবে কাজে লাগান যেন তা আপনার জীবন এবং কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

ছবিঃ সংগৃহীত

1 thoughts on “কাজ করতে ভালো লাগছে না? যেভাবে সামলাবেন এই পরিস্থিতি

Leave a Reply to Iftekhar Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *