বিজনেসের নাম ঠিক করার ১০টি সাকসেসফুল টিপস

অ্যাপেল নাম শুনলে কি আপনার সামনে কোনো আপেলের ছবি ভাসে? কয়েক বছর আগে হলে হয়ত এটাই মানুষ ভাবত। কিন্তু এখন অ্যাপল নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে অর্ধেক আপেলের একটা লোগো। আর এখানেই নামের সার্থকতা। বুঝতেই পারছেন আজকের আলোচনা বিজনেসের নাম ঠিক করার আগে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা নিয়ে। ব্যবসার সফলতার জন্য নাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রেও নামের শক্তিশালী ভূমিকা আছে। চলুন তাহলে বিজনেসের ইম্পরট্যান্ট এই পার্ট সম্পর্কে আজ জেনে নেয়া যাক।

বিজনেসের নাম ঠিক করার টিপস 

১) কঠিন নাম নয়

বিজনেসের নাম যদি বেশি বড় হয়, উচ্চারণ করতে কঠিন হয়, অথবা বানানও কঠিন লাগে, তাহলে লোকে বিরক্ত হয়ে যাবে। আর একবার যদি কেউ বিরক্ত হয়, তাহলে বিজনেসের জন্য সেটা মোটেও ভালো হবে না। অনলাইনে কাস্টমাররা আপনাকে খুঁজে পেতে যেয়ে কনফিউজড হয়ে যাবে এটা নিশ্চয়ই আপনি চান না, তাই না? তাই নামের বানান ও উচ্চারণের দিকে মনোযোগী হোন। সহজ নাম রাখুন।

নাম ঠিক করার সময় প্রায়ই আমরা ২/৩টা শব্দ একসাথে করে একটি নাম বানিয়ে ফেলি। এক্ষেত্রে নাম যেন সহজে উচ্চারণ করা যায় সেটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ পরবর্তীতে এই নামই ওয়ার্ড অফ মাউথ হিসেবে কাজ করবে। যদি ব্র্যান্ডের নামই উচ্চারণ করতে কষ্ট হয় তাহলে বিজনেসের পরিচিতি বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

বিজনেসের নাম

২) বিজনেস গ্রোথের লিমিটেশন কমায় এমন নাম নয়

নাম যদি বেশি লম্বা হয়ে যায়, তাহলে মনে রাখা বেশ কঠিন হয়ে যায়। জেফ বেজোস ঠিক এই কারণেই ‘OnlineBooks’ থেকে নাম বদলে ‘Amazon’ রেখেছিলেন। এই নাম যেমন মনে রাখা সহজ, তেমনই এর অর্থও বোঝা সহজ। কাস্টমার যদি নাম মনে নাই রাখতে পারে তাহলে বিজনেস গ্রোথ কমে যাবে। নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা শহরকে নির্দিষ্ট করে ফেলে নাম এমন রাখা যাবে না।

৩) নামেই যেন বোঝা যায় কেমন বিজনেস 

একটি বিজনেস যখন শুরু হয় তখন তার নামেই অনেকখানি বোঝা যায় সেটা কী নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্মল বিজনেসের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজনেস কী নিয়ে শুরু হচ্ছে সেটা আগে থেকে বোঝা গেলে কনভার্সন রেট অনেকটাই বেড়ে যায়। স্মল বিজনেসে সাধারণত বাজেট কম থাকে। তাই নাম দিয়েই পরিচিতি বাড়ানো জরুরি। এতে কাস্টমার হারানোর সম্ভাবনা কমে যাবে।

কিছু উদাহরণ দিয়ে বলা যাক।

বেঙ্গল মিটস – নাম শুনলেই বোঝা যায় মাংস রিলেটেড কিছু

টেস্টি ট্রিট – খাবার রিলেটেড বিজনেস

সাজগোজ – বিউটি প্রোডাক্ট রিলেটেড বিজনেস

বিক্রয় ডট কম – প্রোডাক্ট বিক্রি সংক্রান্ত বিজনেস

দর্জিবাড়ি – পোশাক সংক্রান্ত ব্যবসা

এখন থেকে যখনই কোনো বিজনেসের নাম শুনবেন, নামের ব্যাপারটা একটু মিলিয়ে দেখবেন। তাহলে সহজেই বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

৪) ইন্টারনেটে সার্চ করা

বিজনেস নেম সার্চ করা  

বিজনেসের জন্য কোনো নাম যদি ঠিক করে ফেলেন, তাহলে সেই নাম দিয়ে ইন্টারনেটে আগে সার্চ করুন। প্রায়ই দেখা যায়, যে নামটি আপনি ভাবছেন সেটা আগেই কেউ না কেউ নিজের বিজনেসের জন্য চুজ করে ফেলেছে। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। বুঝতে পারলেন যে নাম নিয়ে আরও রিসার্চ করা প্রয়োজন।

৫) ডট কম ডোমেইন পাওয়া যায় কিনা চেক করা

ডোমেইন এক্সটেনশন অনেক ধরনের আছে। যেমন – .net, .org, .biz ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোনোটা চুজ করার আগে দেখতে হবে .com ডোমেইনটি পাওয়া যায় কিনা। কারণ যে কোনো ইস্ট্যাব্লিশড বিজনেসে কাস্টমাররা ডট কম এর সাথেই বেশি পরিচিত। হতেই পারে, আপনি আপনার পছন্দমতো এক্সটেনশন পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে চেক করতে পারেন কোনো ওনার তাদের নাম বিক্রি করছে কিনা। তাহলে সেটি আপনি কিনে ফেলতে পারেন। এতে বাধ্য হয়ে অন্য এক্সটেনশন আপনাকে নিতে হলো না। মনে রাখবেন এটাও কিন্তু বিজনেসে আপনার এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট।

৬) ফিডব্যাক নেয়া

বিজনেসের নাম নির্ধারণ করার আগে ৫/১০টি নাম আগে ঠিক করে নিন। এরপর সেই নামগুলো বন্ধু, পরিবার বা বিশ্বস্ত কলিগদের দেখিয়ে নিতে পারেন। আপনার যারা টার্গেট অডিয়েন্স তাদের কাছ থেকেও ফিডব্যাক নেয়া যায়। আবার এমন নামও রাখা যাবে না যার অর্থ নেতিবাচক হয়।

৭) কম্পিটিটরের নামের সাথে যেন মিলে না যায়

ইউনিক নাম খোঁজার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেই নাম যেন আপনার কম্পিটিটরের সাথে মিলে না যায়। সেই সাথে এমন নামও রাখা যাবে না যেগুলো ব্যবসা সম্পর্কে কনফিউশন বাড়ায়। আর অবশ্যই নামের ট্রেডমার্ক করে নিবেন যেন অন্য কেউ সেটিকে নিজের বলে দাবি করতে না পারে।

৮) ওয়েব ফ্রেন্ডলি নাম রাখা

ওয়েব ফ্রেন্ডলি বিজনেস নেম

আপনি অবশ্যই আপনার ব্যবসার জন্য ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজ তৈরি করবেন। কারণ বিজনেসকে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অ্যাকটিভ থাকতে হবে। তাই বিজনেস নাম এর সাথে ম্যাচ করে এমন ডোমেইন নাম চুজ করুন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও সেই নামেই খুলুন। ডোমেইন নামের জন্য অবশ্যই সহজ ও মনে রাখার মতো নাম বেছে নিতে হবে। আপনি ভাবতেই পারেন বিজনেসের নাম হবে আপনার পছন্দমতো। সেটা উচ্চারণেও ভিন্ন হতে পারে। তবে সত্যি বলতে এতে যারা পটেনশিয়াল কাস্টমাররা পিছু হটবে। তারা আপনাকে এক দুইবার খুঁজে না পেলে আর পেছন ফিরে তাকাবে না।

৯) এক্সপান্ডেবল নাম সিলেক্ট করা

বেশিরভাগ ব্যবসাই ছোট থেকে শুরু হয়। আর ওনাররা তখন একে নিয়ে তেমন বড় চিন্তাও করেন না। যার কারণে মার্কেটপ্লেসও ছোট থাকে। তাই নামও সিলেক্ট করা হয় এরিয়া অনুযায়ী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ব্যবসায় লেগে থাকলে এক সময় সেটি বড় হয়। কাজের পরিসর বাড়ে। তখন দেখা যায় ব্যবসার নামের সাথে কাজের ক্ষেত্র মিলছে না। তখন আবারও সব জায়গায় নাম বদলানো বেশ ঝামেলার একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

ধরুন, আপনি আজকে ব্যাগ নিয়ে বিজনেস করছেন। সেই অনুসারে ব্যাগ রিলেটেড একটি নাম রাখলেন। কয়েক বছর পর বিজনেসে নতুন নতুন প্রোডাক্ট অ্যাড করলেন। কাস্টমার তখন প্রোডাক্ট খুঁজতে যেয়ে কনফিউজড হয়ে যাবে। তাই এমন নাম শুরু থেকেই রাখুন যেন সব ধরনের প্রোডাক্ট রাখলেও বিজনেসকে ইরেলিভেন্ট মনে না হয়।

ঠিক একইভাবে জিওগ্রাফি নিয়েও উদাহরণ দেয়া যায়। ধরুন আপনার একটি গার্ডেনের বিজনেস আছে। আপনি ঢাকায় থাকেন বলে এর নাম দিলেন ‘ঢাকা গার্ডেন কেয়ার’। কিন্তু কয়েক বছর পর যে আপনি ঢাকার বাইরে অন্য জেলায় গার্ডেনিং সার্ভিস দিবেন না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? তখন কি আবার নাম বদলাবেন? অন্য শহরের মানুষ তখন নিজেদের আপনার বিজনেসের সাথে কানেক্ট করতে পারবে না। তাই নাম এমনভাবে চুজ করুন যেন বিজনেস গ্রো করে এবং চেঞ্জ হয়।

ব্র্যান্ড নেম এর আইডিয়া খোঁজার জন্য ‘শপিফাই বিজনেস নেম জেনারেটর’ বা ‘বিজনেস নেম জেনারেটর’ টুলগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

১০) আপনার যেন পছন্দের নাম হয়

বিজনেস নেম

বিজনেসের নাম ঠিক করার জন্য যতগুলো পয়েন্টের কথা এখন পর্যন্ত বললাম, এগুলোর সাথে সাথে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে নাম নিজের পছন্দ হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখা। যে বিজনেস দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনি করতে যাচ্ছেন, সেটি অবশ্যই আপনার ভালো লাগার হতে হবে। বিজনেসের নাম এমনভাবে চুজ করুন যেন, সেটি উচ্চারণ করতেও আপনার মাঝে ভালোলাগা কাজ করে। কাস্টমার যখন নাম উচ্চারণ করবে তখন আপনি প্রাউড ফিল করবেন। তাই শুরুতে একটু সময় নিলেও নাম ঠিক করেই বিজনেস চালু করুন।

নতুন বিজনেস শুরু করার জন্য নাম চুজ করা খুব এক্সাইটিং একটি ব্যাপার। একটি নাম ঠিক করার আগে ভালোভাবে রিসার্চ করুন এবং লিগ্যাল গাইডলাইন মেনে চলুন। আর নাম এমন বেছে নিন যেন বিজনেসের ইমেজ বোঝা যায় এবং সেটি লং টার্ম গোলের হয়। আপনার বিজনেসের জন্য শুভ কামনা।

1 thoughts on “বিজনেসের নাম ঠিক করার ১০টি সাকসেসফুল টিপস

  1. Rakib Hossain says:

    আমি নিজের নামের সাথে মিল রেখে একটা Facebook page খুলতে চাই
    আমি food নিয়ে video করব বাহিরের দেশে

Leave a Reply to Rakib Hossain Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *