আপনি যদি কোনো সফল ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন তিনি জীবনে কখনো হেরে গিয়েছিলেন কিনা, তিনি এক বাক্যে জবাব দিবেন, হ্যাঁ তিনি হেরে গিয়েছেন। কারণ এটাই জীবনের নিয়তি। কিন্তু আমরা যখন কোনো কাজ করতে গিয়ে শেষ করতে পারি না, বার বার ভুল করি, এক মুহূর্তে এসে মনে হয় নিজের কাছেই হয়তো হেরে যাচ্ছি। এতে কি আসলেই জীবন শেষ হয়ে যায়? কেন আমরা হেরে যাই আসলে? কীভাবে এসব ফিক্স করা যায়? চলুন এই সমস্যাগুলো নিয়েই আজ আলোচনা করা যাক।
জীবনের কাছে বার বার হেরে যাওয়ার কারণ
অধ্যবসায়ের অভাব
প্রতিটি মানুষেরই নিজস্বতা আছে। নিজের মতো করে জ্ঞান আয়ত্ত করার ক্ষমতা আর ট্যালেন্ট আছে। তারপরও মানুষ কোনো না কোনো কাজে হেরে যায়। কেন জানেন? কারণ তারা জাস্ট থেমে যায়। কাজ করতে করতে থেমে গেলেই হার এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায়। সব সময় দুটো কথা মনে রাখবেন। Persistance and resistance। অর্থাৎ অধ্যবসায় ও প্রতিবন্ধকতা। অধ্যাবসায় এর কারণে আপনি করতে থাকা কাজটি শেষ করতে পারবেন এবং প্রতিবন্ধকতা আপনাকে কাজ শেষ করতে দিবে না। এবার আপনিই ভেবে বলুন আপনি কী করবেন। তাই প্রতিবার নতুন নতুনভাবে ভাবুন। আগেরবার করা ভুল থেকে শিক্ষা নিন। সিদ্ধান্ত নিন কী কী বদলাতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতাকে গাইড হিসেবে ভাবুন।
আমরা হারতে ভয় পাই
হারতে কেউ পছন্দ করে না। হার আমাদের মানসিকভাবে প্যারালাইসিস করে দেয়। আবার অনেকেই আছেন যারা কোনো রকম চেষ্টা না করেই শুরুতেই হেরে যাওয়ার ভয় পান। পুরনো একটা কথা আছে, ‘একদম চেষ্টা না করার চেয়ে চেষ্টা করে হেরে যাওয়া ভালো।‘ তাই আমাদের চেষ্টা করতে ভয় পাওয়া যাবে না। ইংরেজিতে বলে, ‘Failure is the result of trying’। একবার ভাবুন তো, দুনিয়াটা যদি এমন হতো যে, কেউই কিছু চেষ্টা করছে না কারণ কেউই হারতে চায় না! কেউই কিন্তু সফল হবে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর সফলতা অবশ্যই আসবে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকে না
আমাদের যদি প্রোপার প্ল্যান না থাকে, তাহলে জীবনে সফল হওয়া খুব কঠিন। প্ল্যান একদম সঠিক হতেই হবে বা সম্পন্ন হতে হবে এমন নয়। পরিকল্পনা থাকলে সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কাজের পরিকল্পনা করে অন্তত এগিয়ে যাওয়া যায়। ব্যাপারটি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরুন, একজন ব্যক্তি শুধু টাকা অর্জনের জন্য ব্যবসা করতে চাচ্ছেন। এই লক্ষ্যটা কিন্তু খুবই বিপজ্জনক। আপনার অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়েই ব্যবসা হওয়া উচিত। অর্থ বা খ্যাতি সফল ব্যবসার বাইরের চিত্র মাত্র।
ঠিক এভাবে আমাদেরও একটি পরিষ্কার লক্ষ্য থাকা উচিত। সফল হওয়ার জন্য আমাদের জীবনের ও চাকরির উদ্দেশ্য জানতে হবে। ছোটভাবে চিন্তা করলে আপনি অন্তত সপ্তাহখানেকের একটি পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন। ঠিক একইভাবে চিন্তা করুন পরের সাত দিনের জন্য। এভাবে ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
বোল্ড মুভ নিতে ভয় পাই
আপনি যদি অন্যদের থেকে আলাদা কিছু করতে চান, সবার ভীড় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান, অসম্ভবকে সম্ভব করতে চান তাহলে অবশ্যই সবার যেটাতে কমফোর্ট হয় সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবাই যা করছে আপনিও যদি তাই করেন তাহলে সেটিকে আলাদা সাফল্য বলা যাবে না। একই কাজ করে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সবাই যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আপনিও ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। সফল হতে হলে আমাদের অবশ্যই নিজেদের লক্ষ্য ও চিন্তায় স্বাধীন ও কনফিডেন্ট হতে হবে। সেই সাথে সমালোচনা গ্রহণ করার মানসিকতাও থাকতে হবে। যদি তা না থাকে, তাহলে খুব বেশি দূর যেতে পারবো না কেউই।
সহজেই হাল ছেড়ে দেই
আমাদের হারের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে হাল ছেড়ে দেয়া। কোনো কাজ মাঝপথে ছেড়ে দেয়াটাই হেরে যাওয়ার মূলমন্ত্র। আমরা যা ঠিক করেছিলাম সেটা পূর্ণ হওয়ার আগেই হাল ছেড়ে দেয়াটা অনেকেরই অভ্যাস। আমরা ট্যালেন্টেড ও বুদ্ধিমান হতে পারি। কিন্তু এই দুটো যদি একত্রিত না হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজেই আসবে না।
যে কোনো কারণেই আপনার মধ্যে দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাড়াতে পারে, হতেই পারে চিন্তার জগতে আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, কোনো কিছুই সহজে আসে না। আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সফল ব্যক্তিদের জীবনেও প্রচুর হেরে যাওয়ার গল্প আছে। কোনো কাজে একবার সফল না হলে সেটি ছেড়ে দেয়া খুব সহজ। এতে হয়তো কাজের চাপ, পরিশ্রম আর ব্যথা কমে যায়। সেই সাথে হারিয়ে যায় সফল হওয়ার সুযোগটাও।
ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই না
অসফল ব্যক্তিরা নিজেদের ভুল আর হার থেকে ভীষণভাবে দুঃখ পান। খারাপ অভিজ্ঞতা বোঝার জন্য যে কোনোকিছু করতে তারা রাজি থাকেন। এতে তারা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারেন না। বুঝতে পারেন না ভুল থেকেও তাদের অনেক কিছু শেখার ছিল।
ভুলকে অপ্রয়োজনীয় ভাবলে হবে না। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা কিন্তু আসে এই ভুল থেকেই। ভুলগুলো এনালাইজ করা যায়। তাই আবারও ভাবুন, বারবার ভাবুন। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু করার।
দ্রুত ফলাফল চাই
সফলতার কোনো জাদুর কাঠি নেই এ কথা জানার পরও আমরা খুব দ্রুত সফলতা চাই। একবার কাজ শুরু করার পর আমরা জানি আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, কাজ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এসবের রেজাল্ট নিয়েও ভাবনা হতে থাকে। ফলাফল হাল ছেড়ে দেয়া! বড় চিন্তা করা কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট ইফোর্ট দেয়াও জরুরি।
আমরা নিজেরাই নিজেদের স্ট্রেসের কারণ হই। স্ট্রেস আমাদের স্বপ্নকে মেরে ফেলে, আমাদের ভালো লাগা, আনন্দ, আমাদের পারফরমেন্স নষ্ট করে দেয়, সেই সাথে জীবনের গতিও থামিয়ে দেয়। তাই এই স্ট্রেসকে দূর করা শিখতে হবে সবাইকেই।
বিনয়ের অভাব থাকে
সফল ব্যক্তিদের মাঝে বিনয় ব্যাপারটা বেশ কমন। অনেকে তো এটিকে সফলতার মূলমন্ত্রও বলেন। বিনয়ী ব্যক্তিরা খুব ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। বিনয় আমাদের শক্তি, দুর্বলতা, বাঁধা সবকিছু সম্পর্কে জানতে ও চিনতে শেখায়। সফল ও অসফল ব্যক্তিদের মাঝে বিনয় একটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে।
নিজের উপর বিশ্বাস না থাকা
আচ্ছা বলুন তো, যে কাজটি করতে আপনি মাঠে নেমেছেন, সেটা করার জন্য নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন কিনা? আপনি নিজে কনফিডেন্ট তো সেটা করার জন্য? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে বলবো ঠিক আছে, আপনি সামনে এগিয়ে যান। কিন্তু যদি উত্তর না হয়, তাহলে ভেবে দেখুন, যে কাজে আপনার নিজেরই ভরসা নেই, সেটি কীভাবে সফলতার সাথে আপনি সম্পন্ন করবেন? তাই নিজের উপর ভরসা রাখা খুব জরুরি। হতে পারে যা শুরু করেছেন সে সম্পর্কে আপনার জানাশোনা কম। তাই বলে থেমে না থেকে সেটি সম্পর্কে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করবেন। দেখবেন আত্মবিশ্বাসও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
‘জীবনের কাছে আমরা বার বার কেন হেরে যাই’ – এ প্রশ্ন করে আমরা অনেকেই বেশ হতাশ হয়ে যাই। যার কারণে কাজে মন বসে না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গোছানো হয়ে ওঠে না। মনে রাখবেন, আপনি যতবার নিজেকে এই প্রশ্ন করছেন ততবার একবার করে নিজের হার নিশ্চিত করছেন। তাই এই কথাগুলো নিজের মনে আনা থেকেও বিরত থাকুন। পরিকল্পনা গুছিয়ে নিন, অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করুন, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, ভয় না পেয়ে বিনয়ী হয়ে সামনে এগিয়ে যান। দেখবেন জয় আপনার দুয়ারে এসেই দাঁড়িয়েছে।