ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠলো?

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন কাজে অনেক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার যুগে, সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলোর যদি একটা তালিকা করতে বলা হয়, তাহলে ইন্সটাগ্রাম শুরুর দিকেই চলে আসবে। ইন্সটাগ্রাম হচ্ছে বর্তমানে ছবি ও ভিডিও শেয়ারের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় অ্যাপ। মূলত ছবি, স্বল্প সময়ের ভিডিও শেয়ার করা এবং বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের ফলো করাই এখন ইন্সটাগ্রাম এর মূল ফিচার। ২০১০ সালে সানফ্রান্সিসকোর একটি ছোট অফিস থেকে ইন্সটাগ্রাম এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সেলিব্রেটি ইনফ্লুয়েন্সার এবং বড় বড় মিডিয়া পারসনদের অনেকেরই ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র ইন্সটাগ্রাম এর উপর ভর করে। মার্চ ২০২৪ এ মেটা হতে পাওয়া এক স্ট্যাটিস্টিকসে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ নিয়মিত ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করছেন। ছোট একটা আইডিয়ার এই বড় সাফল্য সম্পর্কেই আমরা আজকে জানবো।

ইন্সটাগ্রাম এর যাত্রা শুরু যেভাবে

২০০৯ সালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ২৭ বছর বয়সী কেভিন সিস্ট্রোম, যার পরে তিনি নেক্সটপ নামে একটি ট্র্যাভেল রিকমেন্ডেশন স্টার্টআপ এ কাজ শুরু করেন। কাজের জগতে সিস্ট্রোম তখন একেবারে নতুন নন, এর আগে তিনি ওডিও (যা পরে টুইটার এবং বর্তমানে এক্স নামে রিব্র‍্যান্ডেড) তে ইন্টার্ন করেছিলেন এবং ভূগোলের কর্পোরেট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করেছিলেন। নেক্সটপে থাকাকালীন সময়েই সিস্ট্রোম কোডিং শিখে নেন। কম্পিউটার সায়েন্স সম্পর্কে তার ছিল না কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা। তারপরেও দিনে কাজ করে রাতে কোডিং নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন তিনি। এভাবে অনেক ঘুমহীন রাত কাটিয়ে তৈরি করেন একটি প্রোটোটাইপ অ্যাপ, যার নাম ছিল বুরবন (burbn)। নামটি তিনি রেখেছিলেন ভালো মানের হুইস্কি ও বুরবনের প্রতি তার পছন্দ থেকে। সে সময় এলাকাভিত্তিক চেক ইন অ্যাপগুলো খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বুরবনেও ছিল এই ফিচার। তবে বুলবনের বিশেষত্ব ছিল এখানে চেক ইনের পাশাপাশি ছবিও আপলোড করা যেত।

কেভিন সিসট্রোম

তবে সিস্ট্রোমের ভাগ্য খুলে যায় ২০১০ সালের মার্চ মাসে। তখন তিনি সিলিকন ভ্যালিতে হান্স নামে একটা স্টার্টআপের পার্টিতে অ্যাটেন্ড করেন। সেখানে তার সাথে দেখা হয় বেসলাইন ভেঞ্চারস ও অ্যান্ড্রেসেন হরোউইটয নামে দুটি কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে। তারা দেখে আগ্রহী হন এবং এ নিয়ে আলোচনা আহবান জানান। আলোচনা সফল হওয়ার পরে সিস্ট্রোম সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরিভাবে অ্যাপের পিছনে লেগে থাকার। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে জোগাড় করে ফেলেন পাঁচ লক্ষ ডলারের ফান্ডিং। ফান্ডিং তো পাওয়া গেল, এবার দরকার লোকবল। ফান্ডিং পেয়ে যাবার পর সিস্ট্রোম তার লক্ষ্য পূরণের জন্য টিম বিল্ডিং শুরু করেন৷ এ তালিকায় প্রথমেই ছিলেন ২৫ বছর বয়সী মার্ক ক্রিগার। সিস্ট্রোমের মত ক্রিগারও ছিলেন স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট, সেখান থেকেই পরিচয় দুজনের। ‘মিবো’ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও ছিলো তার।

প্ল্যান বদলে নতুনধারায় চিন্তা

বুরবনের প্রাথমিক প্ল্যানিং ছিলো এটি হবে একটি লোকেশন বেইজড চেক ইন অ্যাপ, যার মাধ্যমে ইউজাররা বন্ধুবান্ধবের সাথে লোকেশন শেয়ার করতে ও আপডেট দিতে পারবে। সিস্ট্রোম আর ক্রিগার যখন বুরবন নিয়ে গভীরভাবে আলোচনায় বসেন, তখন তারা বুঝতে পারেন, মার্কেটে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপস এর অভাব নেই। বিশেষ করে “ফোরস্কয়ার” নামে আরেকটি অ্যাপ্লিকেশনের সাথে বুরবনের অনেকগুলো ফিচার মিলে যাচ্ছে। এরইমধ্যে তারা লক্ষ্য করেন, বুরবনের ফটো শেয়ারিং ফিচারটা গ্রাহকরা খুবই পছন্দ করছেন। তাদের ভাষ্যমতে “তারা পাগলের মত ছবি শেয়ার ও পোস্ট করে যাচ্ছেন”। এই সাফল্য তাদের নতুনভাবে ভাবায় এবং তারা তাদের আগের প্ল্যান চেঞ্জ করে বুরবনকে বিশেষভাবে ফটো শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে তৈরি করার প্রস্তুতি নেন।

প্ল্যান চেঞ্জ করার পর তারা দুইজন মার্কেটে থাকা অন্যান্য ফটো শেয়ারিং মিডিয়াগুলো নিয়ে স্টাডি এবং রিসার্চ করতে শুরু করেন। হিপস্টাম্যাটিক নামে একটা অ্যাপ তখন তাদের নজর কাড়ে। এই অ্যাপ এ ছিল ফটোগ্রাফির জন্য কিছু ইন্টারেস্টিং ফিচার, যেমন ছবিতে ব্যবহার করা বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার। তবে ছবি তোলা ও পোস্ট করার জন্য তখনকার সময়ে সেরা হলেও হিপস্টাম্যাটিকে সোশ্যাল মিডিয়া ধরার ফিচার অতটা ভালো ছিল না। এই আইডিয়াকেই কাজে লাগাতে চান সিস্ট্রোম আর ক্রিগার, এমন একটা অ্যাপ তৈরির চিন্তা মাথায় আসে, যেখানে ফটোগ্রাফি ফিচার থাকবে ভালো, একইসাথে ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপাবিলিটিও থাকবে। তাদের দ্রুত অগ্রগামী প্ল্যানকে তারা একটু পিছিয়ে নিয়ে আসেন, অ্যাপ এর মূল ফিচারে ফটো শেয়ারিং, কমেন্ট ও লাইক এর দিকে বেশি মনোযোগ দেন। এই সময়েই তাদের অ্যাপের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্সটাগ্রাম, যা নেয়া হয়েছিল “ইন্সট্যান্ট ক্যামেরা” ও “টেলিগ্রাম” এই দুইটি শব্দ একসাথে যুক্ত করে।ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ এর শুরু

ইন্সটাগ্রাম এর প্রথম লোগোটির ডিজাইন করেছিলেন কেভিন সিস্ট্রোম নিজেই। লোগোটি দেখতে ছিল চমৎকার, একটি ক্লাসিক ভিনটেজ পোলারয়েড ক্যামেরার মতো। ১৯৭০ সালের পোলারয়েড ল্যান্ড ক্যামেরার ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিস্ট্রোম এটি ব্যবহার করেন। এছাড়াও এই লোগো সিলেক্ট করার আরও একটি কারণ হচ্ছে এতই অ্যাপের মূল ফোকাস ফটোগ্রাফি এবং ফটো শেয়ারিং। সিস্ট্রোম নিজে ছিলেন ফটোগ্রাফির প্রতি খুবই আগ্রহী। তাই নিজের অ্যাপে এই জিনিসটাকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। বুরবন এর জটিলতা কমিয়ে ও গুছিয়ে এনে ইন্সটাগ্রামকে একটি সিম্পল ও মিনিমাল অ্যাপ হিসেবে লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সব রকম টেস্টিং, প্রসেসিং এবং ফিচার টিউনিং করার পর অবশেষে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর অ্যাপল প্ল্যাটফর্মে প্রথম ইন্সটাগ্রাম লঞ্চ করা হয়।

নজরকাড়া সাফল্য শুরুতেই

লঞ্চের প্রথম দিনেই ইন্সটাগ্রাম সাড়া ফেলে দেয় ২৪ ঘন্টায় ২৫ হাজার ইউজার রেকর্ড করে। এই সাফল্যের ধারাকে অব্যাহত রেখে প্রথম তিন মাসেই এক মিলিয়ন এবং তারপরের দেড় মাসে ২ মিলিয়ন ইউজার রেকর্ড করে ইন্সটাগ্রাম। এখানে বলে রাখা ভালো যে প্রথম এক মিলিয়ন ফলোয়ার পেতে ফেসবুকের লেগেছিল ১০ মাস, টুইটারের ২৪ মাস এবং টাম্বলারের ২৭ মাস। সেদিক থেকে ইন্সটাগ্রাম এর এই রেকর্ড প্রায় বাঁধভাঙ্গাই বলা যায়। এর সাফল্যকে তখনও সীমিতই বলা যায় কারণ ইন্সটাগ্রাম শুধুমাত্র তখনও অ্যাপল ডিভাইসে চলছে। অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা তখনও তার এক্সেসই পায়নি।

ইন্সটাগ্রাম এর এই নজর করার সাফল্যে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে অ্যাপলও। ইন্সটাগ্রাম লঞ্চ হওয়ার কিছুদিন আগেই জুন ২০১০ এ অ্যাপল বাজারে এনেছিল আইফোন ফোর। বরাবরের মতোই আগের মডেলগুলোর থেকে আইফোনের নতুন মডেলে, অন্যান্য ভিন্নতার পাশাপাশি ক্যামেরা কোয়ালিটিতে এসেছিল পরিবর্তন। এটাকে মোটামুটি ভালো মানের ক্যামেরাসহ প্রথম স্মার্ট ফোনও বলা যায়। এছাড়াও আইফোন 4 এর স্ক্রিনে ব্যবহার করা হয়েছিল গুড কোয়ালিটি হাই রেজ্যুলেশন টেকনোলজি। যার ফলে ছবির ক্ল্যারিটিও ছিল বেশি, ছবিগুলো দেখতে ভালো লাগতো। আইফোন ফোর এর ক্যামেরা কোয়ালিটি ছিল ৫ মেগাপিক্সেল, যেটা নিয়ে তখন মানুষ ফটোগ্রাফিতে খুব আগ্রহী হয়েছিল এবং নতুন ফোনের ভালো কোয়ালিটির ক্যামেরা দিয়ে প্রচুর ছবি তোলা হচ্ছিল। ইন্সটাগ্রাম লঞ্চ হওয়ায় সেইসব ছবি শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম মানুষ পেয়ে যায় একদম ঠিক সময়ে। এই কো ইন্সিডেন্স দুই কোম্পানির জন্যই লাভ বয়ে আনে।

ফেইসবুকের আয়ত্বে যাওয়া 

মার্চ ২০১২ এর মধ্যে শুধুমাত্র অ্যাপল ইউজারদের মধ্যেই প্রায় ২৭ মিলিয়ন ইন্সটাগ্রাম ইউজার হয়ে গেছে। এরই মাঝে এপ্রিল ২০১২ তে অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য ইন্সটাগ্রাম রিলিজ করা হয় গুগল প্লে স্টোরে। শোনা যায় অ্যাপল ব্যবহারকারীরা প্রথমে এটিকে ভালোভাবে নেননি, তারা চেয়েছিলেন এ ধরনের একটা অ্যাপ শুধু তাদেরই আয়ত্তে থাকবে। কিন্তু বিশাল একটা সংখ্যার এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারী থাকায় ইন্সটাগ্রামের সম্ভাব্য মার্কেট ছিল বিরাট, তাই প্রায় ২৭ মিলিয়নের মতই ব্যবহারকারী থাকা সত্ত্বেও দশ জনেরও কম লোকবল নিয়ে সিস্ট্রোম ও ক্রিগার অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য রিলিজ করে ফেলে ইন্সটাগ্রাম। আর তাদের ধারণাকে সত্যি প্রমাণিত করে প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যেই অ্যান্ড্রয়েডে ১ মিলিয়ন ব্যবহারকারী পেয়ে যায় ইন্সটাগ্রাম।

ঠিক তার ৬ দিন পরেই ফেসবুক ১ বিলিয়ন ডলার অফার করে ইন্সটাগ্রাম কিনে নেয়। বলে রাখা ভালো যে এর আগে গুগল ও টুইটারের সাথে মিটিং হলেও এ ধরনের আলোচনা হয়নি। টুইটার থেকে এর আগে ৫০০ মিলিয়ন অফার করা হলেও সিস্ট্রোম তা ফিরিয়ে দেন। অ্যান্ড্রয়েডে রিলিজ হওয়ার পর এর সাফল্যের হার দেখে মার্ক জুকারবার্গ এই অফারটি করেন। এত দ্রুত এত জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলা ইন্সটাগ্রাম ছিল সমসাময়িক অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য বেশ স্ট্রং কম্পিটেটর। জানা যায় যে, ইন্সটাগ্রাম এর দুই প্রতিষ্ঠাতাকে মার্ক জুকারবার্গ সম্পূর্ণ স্বাধীনতার অফার দেন, এবং বেশ ভালো অফার করেন। এ কারণে অ্যান্ড্রয়েড এ রিলিজ হওয়ার ৬ দিনের মধ্যেই ইন্সটাগ্রাম আর ফেসবুক একই মালিকানায় চলে যায়।

লোগো পরিবর্তন ও তার কারণ

রিব্র‍্যান্ডিং, লোগো চেঞ্জ, থিম চেঞ্জ এগুলো কোনো ব্র‍্যান্ডের পপুলারিটি বাড়ানোর জন্য সাধারণ প্র‍্যাকটিস। এছাড়াও সময়ের সাথে সাথে নতুনত্ব আনা ব্যবসার জন্যই ভালো। এই স্ট্র্যাটেজি ফলো করে ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত ইন্সটাগ্রাম তিনবার পুরোপুরি লোগো চেঞ্জ করেছে, সাথে ছিল টুকটাক রিফাইনমেন্ট। প্রথম লোগোর কথা আমরা আগেই বলেছি, এখন আসি পরেরগুলো নিয়ে।

২য় লোগো চেঞ্জ

ইন্সটাগ্রাম এর পপুলারিটি খুব দ্রুতই বাড়ছিল, তাই আরো প্রফেশনাল দেখাতে এবং ডিটেইলড লোগোর দরকার ছিলো। তাই ইন্সটাগ্রামের ফাউন্ডাররা দায়িত্ব দেন কোল রাইজকে। কোল রাইজ একাধারে একজন ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, পাইলট এবং এস্কেপ আর্টিস্ট, বড় বড় কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। তিনি সাগ্রহেই এই চ্যালেঞ্জ নেন, এবং ইন্সটাগ্রামের লোগোকে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে স্পেশাল করে তোলার দায়িত্ব নেন। কোল খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে ইন্সটাগ্রামের আসল ভাইব ঠিক রাখেন, এবং ভিনটেজ ক্যামেরা লুক রেখে তাকে আরো ডিটেইলড ও আকর্ষণীয় করে তোলেন। শেডিং ও হাইলাইটিং করে ক্যামেরা লোগোটিকে দেখতে থ্রি ডাইমেনশনাল করে তোলা হয়। পরবর্তীতে এই লোগোকে সামান্য একটু পরিবর্তন করে ক্যামেরার উপরের পার্টে লেদারের টেক্সচার দেয়া হয় এবং লেন্স এর অংশে রিফ্লেকটিভ লেন্স এর আইকন যোগ করা হয়। একপাশে ছোট করে “ইনস্টা” উল্লেখ করা ছিলো।

৩য় লোগো চেঞ্জ

২০১৬ সালে সিম্পল মিনিমাল ও ফ্ল্যাট ডিজাইনের চল আসে। ভিনটেজ ও ওল্ড ডিজাইন তখন মানুষের মন থেকে চলে গেছে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে রঙিন, উজ্জল ও সিম্পল লোগো। সেই ধারাবাহিকতায় ইনস্টাগ্রামও যায় লোগো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ততদিনে ইনস্টাগ্রামেও যুক্ত হয়েছেন নতুন নতুন ফিচার। শুধুমাত্র ফটো শেয়ারিং অ্যাপ থেকে ভিডিও, মেসেজ, স্টোরি ইত্যাদি অনেক দিকেই বিকাশ ঘটেছে। তাই সবকিছুকে একসাথে রিপ্রেজেন্ট করতে ভিনটেজ ক্যামেরা সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গা করে নেয় অ্যাবস্ট্রাক্ট ক্যামেরা। শুধুমাত্র উজ্জ্বল রং ও খুব বেশি কিছু শেইপ এর মাধ্যমে ক্যামেরাকে ফুটিয়ে তোলা হয় ইন্সটার নতুন লোগোতে। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত ব্যবহারকারীরা প্রথম প্রথম এই লোগো চেঞ্জকে মেনে নিতে না পারলেও ধীরে ধীরে সবাই পছন্দ করে এই সিম্পল লোগো। ২০২২ সালে ২০১৬ সালের লোগোকেই একটু রং পরিবর্তন করে আর হালকা একটু ট্রানজিশনের মাধ্যমে আসে বর্তমান লোগো। এখন পর্যন্ত এই লোগোই ইন্সটাগ্রামের পরিচিতি হিসেবে আছে।

ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ এর লোগো

কিছু বিশেষ ফিচার ও তাদের শুরু

ইন্সটাগ্রাম প্রথমে শুধু ফটো শেয়ারিং অ্যাপ হিসেবে থাকলেও ধীরে ধীরে গ্রাহক বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা ও টেকনোলজির নতুনত্বের সাথে তাল মিলিয়ে ইন্সটাগ্রাম এ আসে অনেক ফিচার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিয়েই আমরা আজকে কথা বলবো।

হ্যাশট্যাগ

জানুয়ারি ২৭, ২০১১ তে ইন্সটাগ্রামে যুক্ত হয় হ্যাশট্যাগ ফিচারটি। হ্যাশট্যাগ মূলত কিওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে এবং একই ধরনের ও সম্পর্কিত টপিকগুলো ব্যবহারকারীদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে। বলা যায় হ্যাশট্যাগের উপরে ইন্সটাগ্রাম এর অ্যালগরিদম ও কমিউনিটি নির্ভর করে।

ভিডিও শেয়ারিং

আগস্ট ১৬, ২০১২ সালে ইন্সটাগ্রাম এ প্রথম ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও শেয়ার করার ফিচার চালু করা হয়। এটা করার উদ্দেশ্য ছিল অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মগুলোর থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকা। চালু হবার সাথে সাথেই প্রবল জনপ্রিয় হয় এই ফিচার এবং ব্যবহারকারীরা ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট অল্প সময়ে বানানোর ফিল্ড পান।

ডিরেক্ট ম্যাসেজ

ডিসেম্বর ১২, ২০১৪ সালে ইন্সটাগ্রামে প্রথম চালু হয় ডিরেক্ট ম্যাসেজিং। এর আগে ইন্সটাগ্রাম এ কোনো ম্যাসেজিং অপশন অথবা প্রাইভেট পোস্টিং ছিল না। অন্য সব সোশ্যাল মিডিয়ার মতো বন্ধুবান্ধবদের সাথে প্রাইভেট ম্যাসেজে ছবি ও ভিডিও আদান প্রদান করার সুযোগ পাওয়ায় ব্যবহারকারীদের কাছে ইন্সটাগ্রাম হয়ে ওঠে আরো জনপ্রিয়।

অ্যাডভার্টাইজিং

২০১৪ সালের শেষের দিকে ইন্সটাগ্রাম স্পন্সর্ড পোস্ট এবং অ্যাডভার্টাইজিং এর ফিচার চালু করে। এর মাধ্যমে নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টকে মনিটাইজ করে নেওয়া যায় এবং তার মাধ্যমে আয় করা সহজ হয়ে যায়। বিভিন্ন বড় বড় বিজনেস, রেগুলার পোস্টার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা এই সুযোগ নিতে পারে এবং এতে করে দুই পক্ষই লাভ পায়।

ইন্সটাগ্রাম স্টোরিস

আগস্ট ২, ২০১৬ সালে ইন্সটাগ্রাম প্রথমবারের মতো চালু করে স্টোরি ফিচার। এখন পর্যন্ত এটি ইন্সটাগ্রামের সবচেয়ে পপুলার ফিচারগুলোর মধ্যে একটি। এই ফিচারে ২৪ ঘন্টার জন্য সাময়িকভাবে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা যায় যা চব্বিশ ঘন্টা পর নিজে নিজেই চলে যায়। আইডিয়াটি মূলত স্ন্যাপ চ্যাট থেকে অনুপ্রাণিত বলেই ইন্সটাগ্রাম এর ক্রিয়েটররা স্বীকার করেন।

ফিল্টার

মে ১৬, ২০১৭ সালে ইন্সটাগ্রাম তার গ্রাহকদের পরিচয় করিয়ে দেয় ফেইস ফিল্টারের সাথে। এ আইডিয়াটিও স্ন্যাপচ্যাট এর স্ন্যাপ ফিল্টার থেকে অনুকরণ করা। চেহারায় বিভিন্ন মজার মজার ফিল্টার বসাতে পারায় গ্রাহকরা লুফে নেন এই অপশনটি এবং ইন্সটাগ্রাম এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বহুগুণ।

রিলস

আগস্ট ৫, ২০২০ সালে ইন্সটাগ্রাম টিকটক এর ফিচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চালু করে রিলস। রিলস হচ্ছে শর্ট ফর্ম এর এন্টারটেইনিং ভিডিও, যা অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকের আকর্ষণ ধরে রাখে ও তাদেরকে আসক্ত করে ফেলে। মূলত টিকটকের ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতেই এই ফিচারটি চালু করা হয়।ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ এর ফিচার

ইন্সটাগ্রামের কিছু জনপ্রিয় চ্যালেঞ্জ

ইন্সটাগ্রাম বর্তমানে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর একটি। এংগেজিং রাখতে ও সচেতনতা ছড়াতে ইন্সটাগ্রাম এর সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে থাকেন, যা আমরা প্রায় ইন্সট্রাগ্রাম ট্রেন্ডিং এ দেখি। মূলত বেশিরভাগ চ্যালেঞ্জের অংশই থাকে ভ্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিডিও বানিয়ে পোস্ট করা। এরকমই কয়েকটি মজার চ্যালেঞ্জের কথা আজ এখানে আমরা জানাবো।

আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ

আপনাদের কি মনে আছে ২০১৪ সালে “ইন্সটাগ্রাম আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ” রাতারাতি ছড়িয়ে পড়েছিল? এর মূল উদ্দেশ্য ছিল স্ক্লেরোসিস রিসার্চের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা ও সচেতনতা ছড়ানো। চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের শরীরে এক বালতি বরফ দেয়া পানি ঢালতেন, এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিজেদের বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের কাউকে একই কাজ করা, অথবা এমিট্রপিক লেটারাল স্ক্লেরোসিস রিসার্চে ডোনেট করার জন্য চ্যালেঞ্জ করতেন।

টেন ইয়ার চ্যালেঞ্জ

২০১৯ সালে শুরু হলেও এই চ্যালেঞ্জ এখনো অনেকেই নিয়ে থাকে। মূলত নিজেদের পরিবর্তন ও সময়ের সাথে সাথে পার্সোনাল গ্রোথের হিসাব বোঝাতেই এই দশ বছরের চ্যালেঞ্জ নেয়া হয়। মূলত নিজের দশ বছর আগের একটি ছবি ও বর্তমানে একটি ছবি পাশাপাশি একসাথে আপলোড করে ইউজাররা তুলনা করেন এবং এটি প্রায়ই নস্টালজিয়ার জন্ম দেয়।

ডালগোনা কফি

এই চ্যালেঞ্জটি সম্ভবত আমরা সবাই দেখেছি। ২০২০ সালে সারা দুনিয়া যখন কোভিড ১৯ এ জর্জরিত এবং লকডাউনে সবাই ঘরে আটকে পড়েছে, তখন মানুষ সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারই একটি হচ্ছে ডালগোনা কফি। এই চ্যালেঞ্জের জন্ম মূলত সাউথ কোরিয়া থেকে। কফি এবং চিনি গরম পানি দিয়ে খুব দ্রুত মেশালে মিশ্রণটা যখন চেনা চেনা হয়ে আসে তখন সেটাকে দুধের সাথে সার্ভ করলে কফি এবং এবং দুধের দুইটি আলাদা লেয়ার তৈরি হয়, যা দেখতে খুব সুন্দর ও নান্দনিক। নজরকাড়া হওয়ায় এটি খুব দ্রুতই ইন্সটাগ্রাম দখল করে নেয় এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই ডালগোনা কফি চ্যালেঞ্জ নিতে থাকে। বলা যায় মহামারীর প্রাদুর্ভাব এর সময়ে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি ও আনন্দ দিয়েছিল এই ডালগোনা কফি চ্যালেঞ্জ।

সমালোচনা ও কন্ট্রোভার্সি

এত বছরের জার্নি সফলভাবে করে এলেও সমালোচনার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে ইন্সটাগ্রামকেও। প্রাইভেসি ইস্যু থেকে শুরু করে কনটেন্ট মডারেশন, মিস ইনফরমেশন ইত্যাদি অনেক কিছুকে ঘিরেই ইন্সটাগ্রামের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। কিছু কমন কনট্রোভার্সি এখানে তুলে ধরা হলো।

১) প্রাইভেসি কনসার্ন

২০১৮ সালে প্রকাশ পায় যে ইন্সটাগ্রাম ও ফেইসবুকের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর ডাটা তাদের কোনো মতামত ছাড়াই তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গিয়েছে। যেহেতু ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রাম একই কোম্পানি মেটার আন্ডারে, তাই ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীদের ডাটা কতটুকু সুরক্ষিত আছে এটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

২) কনটেন্ট মডারেশন ও সেন্সরশিপ

ইন্সটাগ্রাম এর নতুন কনটেন্ট পলিসিতে অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে এবং বাদ গিয়েছে। ইউজারদের অভিযোগ ইন্সটাগ্রাম এর এই কনটেন্ট মডারেশন স্বচ্ছ নয়। দেখা গেছে অনেক কনটেন্ট যেখানে আপত্তিকর কিছু নেই, তা এই পলিসিতে পড়ে রিমুভ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে স্পষ্টভাবে পলিসির বিরোধী কিছু কনটেন্ট রয়ে গেছে, সেগুলো চেকও করা হয়নি। এছাড়াও নুডিটি ও এক্সপ্লিসিট কনটেন্ট এর উপর মডারেশন দেওয়ার কারণে ফটোগ্রাফার ও চিত্রশিল্পীরা তাদের কাজকর্ম সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, অথবা তাদের অনেক কনটেন্ট রিমুভ হয়ে গেছে।

৩) ইনফ্লুয়েন্সার ট্রান্সপারেন্সি

ইন্সটাগ্রাম সুযোগ দেওয়ার কারণে বর্তমানে অনেকেই কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও ইনফ্লুয়েন্সিংকে নিজেদের পেশা বানিয়ে নিয়েছেন, একই সাথে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা বিভিন্ন বিজনেসগুলোর মধ্যে খুবই বেড়ে গিয়েছে। এখানে গ্রাহকের সাথে ইনফ্লুয়েন্সারদের কমিউনিকেশন গ্যাপ ও বিশ্বাসের জায়গায় ফাটল তৈরি হয়। নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রায়ই ভুল তথ্য অথবা অর্ধেক তথ্য দিয়ে প্রোডাক্টের প্রচারণা চালান। যা গ্রাহকদেরকে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। এছাড়াও ফলোয়ার কেনা এবং ফেক ফলোয়ার বানানোর বিরুদ্ধে ইন্সটাগ্রামের পলিসি থাকলেও সেই পলিসির খুব একটা কার্যকর ব্যবহার সব সময় দেখা যায় না। অনেক ইনফ্লুয়েন্সারই নকল ফলোয়ার বানিয়ে ক্যারিয়ার তৈরি করেন এবং তার সাহায্যে বড় বড় ব্র্যান্ডের সাথে কোলাবরেশন করে থাকেন। এই ইস্যুতে সবসময় ইন্সটাগ্রাম এর পলিসি কার্যকর হয় না বলেই দেখা যায়।ইন্সটাগ্রাম অ্যাপ নিয়ে কন্ট্রোভার্সি

৪) এলগরিদম বায়াস

ইন্সটাগ্রাম এর এলগরিদমকে পক্ষপাতী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করতে শোনা গেছে। বিশেষ কোনো মতবাদধারী, বিশেষ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত অথবা বিশেষ কোনো ম্যাসেজ দেওয়া কনটেন্টগুলোকে ইন্সটাগ্রাম “শ্যাডো ব্যানিং” এর আওতায় ফেলে বলে ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন। শ্যাডো ব্যানিং হচ্ছে নির্দিষ্ট সেই কনটেন্টের রিচ কমিয়ে দিয়ে তাকে পিছিয়ে ফেলা, যাতে সেটা কম মানুষের কাছে পৌঁছায়।

৫) ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা

মনিটাইজেশন এবং বিজনেস থেকে আয় হওয়ার পর ইন্সটাগ্রাম এর নামে অভিযোগ আসে যে, তারা অর্গানিক রিচ কমিয়ে দিয়েছে এবং ব্যবসায়ী ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এখন বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং অনলাইন বিজনেসগুলো ইন্সটাগ্রাম নির্ভর হওয়ায়, ইন্সটাগ্রাম তাদের অর্গানিক রিচ কমিয়ে দিয়েছে, তাতে তারা বুস্টিং এর পেছনে বেশি খরচ করে এবং ইন্সটাগ্রাম এ থেকে লাভবান হয়। বেশ সমালোচনার মুখে পড়া হলেও এ ব্যাপারে এখনো তাদের কোনো স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সবশেষে

২০১০ থেকে ২০২৪ এর যাত্রাটা একটা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ এর জন্য বেশ ঘটনাবহুল। অ্যাপের সাথে তুলনা করতে গেলে ইন্সটাগ্রাম এর সাফল্য বেশ তাড়াতাড়ি দেখা দিয়েছে এবং এখনো তা বিদ্যমান রয়েছে। ফটো শেয়ারিং এর মাধ্যমে বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ রাখতে ইন্সটাগ্রাম এর সরাসরি বিকল্প এখনো অন্য কোনো অ্যাপ নেই। এন্টারটেনিং চ্যালেঞ্জ হোক, চ্যারিটিওয়ার্ক, ফান্ড রেইজিং অথবা বিজনেস, ইন্সটাগ্রাম এখন সব স্তরের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রিয়েটিভিটি, হিউমার, ডাইভারসিটি সবকিছু মিলিয়ে ইন্সটাগ্রাম একটি ইউনিক এবং জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন। এটি শুধুমাত্র একটি অ্যাপ নয় এটি একটি বিশেষ অভিজ্ঞতাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *