ওয়ার্ক মোটিভেশন | এটি কী এবং সাফল্য পেতে কেন জরুরি?

আমাদের সবার ক্ষেত্রেই একটি কমন বিষয় প্রায়ই ঘটে। সেটি হচ্ছে কোনো কাজ শুরু করেও মাঝপথে থামিয়ে দেয়া। কাজ থেমে থাকা মানে কি এই যে কাজটি আপনি করতে পারবেন না? মোটেও তা নয়। এর অর্থ হচ্ছে কাজে ওয়ার্ক মোটিভেশন না থাকা। হয়তো একটু মোটিভেশন পেলেই কাজটি ভালোভাবে করা যেত। কিন্তু এটি আসলে কী এবং কেন এটি জরুরি? আজ আমরা জানবো এ বিষয়েই।

মোটিভেশন কী?

মোটিভেশনকে সহজ ভাষায় বলা যায় ড্রাইভিং ফোর্স। অর্থাৎ যে কাজটি আমরা করতে চাই বা কেউ যদি করতে চায় তাহলে তাকে সেই কাজে বেশি বেশি করে উদ্বুদ্ধ করা। ব্যাপারটি ঠিক এমন যে, আপনার পিপাসা পেয়েছে এবং এক গ্লাস পানি পান করে সেই পিপাসা আপনি মিটাচ্ছেন। এটা বন্ধুকে করা কোনো একটি কমিটমেন্ট হতে পারে, আবার ডুবে যাওয়া বন্ধুকে তীরে ভাসিয়ে তোলাও হতে পারে। এক কথায়, মোটিভেশন হচ্ছে সেই ফোর্স যেটির মাধ্যমে কোনো কাজ সম্পাদন হয়।

মোটিভেশনের ধরন

অনেক ধরনের মোটিভেশন আছে। যদিও এর সবগুলো ইনট্রিনসিক ও এক্সট্রিনসিক মোটিভেশনের ভেতরেই যুক্ত। চলুন এ দুটো সম্পর্কে এবার জেনে নেয়া যাক-

এক্সট্রিনসিক মোটিভেশন

এক্সট্রিনসিক মোটিভেটররা এক্সটার্নাল হয়ে থাকেন। তাদের টাকা দিয়েও পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে অথবা চাকরি হারানোর মতো নেগেটিভ কোনো ইমপ্যাক্ট তাদের উপর পড়ে না। এর মাধ্যমে সরাসরি পজিটিভ বা নেগেটিভ কোনো ঘটনার উপর কন্ট্রোল থাকে না।

মোটিভেশনের ধরন

ইনট্রিনসিক মোটিভেশন

আমরা যখন ইনট্রিনসিক্যালি মোটিভেটেড হই, তখন আমরা আনন্দের সাথে কাজটি সম্পন্ন করি অথবা কাজটি করা শেষ করে আনন্দ পাই। এক্সট্রিনসিক মোটিভেটরদের মতো, এই মোটিভেশন এক্সটারনাল ফ্যাক্টরের কারণে পুরস্কৃত হয় না। এর কারণে বরং ইমপ্লয়ি স্যাটিসফেকশন বাড়ে এবং টার্নওভার রেট কমে।

কর্মক্ষেত্রে ওয়ার্ক মোটিভেশন জরুরি কেন?

কর্মক্ষেত্রে যদি মোটিভেট করার কালচার থাকে, তাহলে সেটা বেশ ভালো। কারণ মোটিভেটেড ইমপ্লয়িরা বেশি প্রোডাক্টিভ হয়। আর টিম যদি ইফেক্টিভ হয়, দিনশেষে কোম্পানি কালচারই ইমপ্রুভ করে। ওয়ার্ক মোটিভেশন কীভাবে কর্মীদের ও ব্যবসাকে বেনিফিট দেয় এবার চলুন সেটাই জেনে নেয়া যাক-

১) প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হয়। মোটিভেটেড ওয়ার্কপ্লেস ছাড়া, কোম্পানি তাদের কাস্টমারকে করা ওয়াদা পূরণ করতে পারে না। সেই সাথে ডেইলি অপারেশন এক্সিকিউট করতে ব্যর্থ হয়, ভবিষ্যতে ওয়ার্কপ্লেস ডিমোটিভেটেড হয়ে যায়।

২) সময়ের সাথে সাথে প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়। হ্যাপি ইমপ্লয়িরা অন্তত ৩১% বেশি সুখী হন অন্যদের তুলনায়। এটি কোম্পানির পজিটিভ গ্রোথের দিকেই নির্দেশ করে।

৩) যে কর্মীরা মোটিভেটেড হন, তারা কোম্পানির সাথে ইমোশনালি কানেক্টেড থাকেন। যার কারণে তারাই এক সময় হয়ে ওঠেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।

৪) কাজের কোয়ালিটি যত ভালো হয়, তত একজন স্টাফ কাজের জন্য সম্মান পেতে থাকেন।

৫) কর্মীরা কমিটেড থাকে, এক্সপেরিয়েন্সড হয়। একটি মোটিভেটেড ওয়ার্কপ্লেস কর্মীদের উপস্থিতি বাড়ায় এবং টার্নওভার কমায়।

যেসব কারণে ওয়ার্কপ্লেসে ডিমোটিভেশন বেশি হয়

ওয়ার্ক মোটিভেশন

কর্মক্ষেত্রে যেসব কারণে ডিমোটিভেশন বেশি হয়-

  • মাইক্রোম্যানেজমেন্ট
  • উন্নতি না হওয়া
  • কোম্পানির লিডারশীপে কনফিডেন্স না থাকা
  • কমিউনিকেশন ভালো না হওয়া
  • কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকা
  • কাজে বোর হয়ে যাওয়া

কীভাবে কাজে মোটিভেশন ফিরিয়ে আনা যায়?

১) নতুন করে কাজে মোটিভেশন ফিরিয়ে আনা

মটিভেশন প্রতিবার রিফ্রেশড হওয়া জরুরি, প্রয়োজন হলে প্রতিদিনই। আমরা যখন কোনো কাজের জন্য সরাসরি পুরস্কার পাই না, বা কাজ শেষে সন্তুষ্ট হই না, তখন আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে কী কারণে এমনটি হলো? কেন হলো? আর এজন্য আরও এক ধাপ বেশি কাজ করতে হবে এবং সব সময় কাজের নতুন লক্ষ্য খুঁজতে হবে। আর হ্যাঁ, কোয়ালিটিতে ফোকাস করুন অবশ্যই।

২) লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করুন

এটা দেখে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা প্রায়ই আমাদের লক্ষ্যকে অ্যাকশনে পরিণত করতে ভুলে যাই। লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর, সেটি পূরণ করার জন্য একটি প্ল্যান ঠিক করুন। এটার জন্য আপনি শিডিউল করতে পারেন বা টু ডু লিস্টও করতে পারেন। যদি একবার পুরণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজেকে আবারও উদ্বুদ্ধ করুন পরেরবার চেষ্টা করার জন্য।

ওয়ার্ক মোটিভেশন

৩) নিজেকে পুরস্কৃত করা

নিজের ডোপামিন লেভেলকে অ্যাকটিভ করার আরও একটি বেস্ট ওয়ে হচ্ছে নিজেকে পুরস্কার দেয়া এবং আরও লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হওয়া। লক্ষ্য পূরণ শেষে এমন পুরস্কার দেয়ার কারণে প্রতিনিয়ত আপনি নিজেই মোটিভেট হতে থাকবেন।

৪) নতুন জিনিস শেখার চ্যালেঞ্জ নেয়া

আপনার মস্তিষ্ক আরও মোটিভেটেড হতে পারে যদি আপনি একে একের পর এক নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তোলেন। এজন্য যত সম্ভব পড়তে হবে এবং নতুন নতুন জিনিস শিখতে হবে। বই পড়া, কারেন্ট ইভেন্ট সম্পর্কে জানা এবং অনলাইন আর্টিকেল পড়া আপনাকে নতুন নতুন দক্ষতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।

৫) মোটিভেট করে এমন মানুষদের আশেপাশে থাকুন

কখনো কখনো মোটিভেশন ডেভেলপ হওয়া সহজ হয় যদি আশেপাশে এমন মানুষ থেকে থাকে। তাই সব সময় এমন মানুষদের আশেপাশে থাকা জরুরি যারা অন্যদেরও উৎসাহিত করে এবং নতুন লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট থাকে।

শুধু যে অন্যদের থেকে আপনি শিখবেন তা কিন্তু নয়, আপনাকে দেখেও অন্যরা শিখতে পারে। একবার যদি সেটা করা যায় তাহলে অন্যরাও আপনাকে তাদের আইডল ভাববে। এমন অনেক সময় হতে পারে যে, কেউ হয়তো কোনো কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে বা মোটিভেশনের অভাবে নতুন করে শুরু ক্রতে পারছে না। তার হয়ত একজন কো ওয়ার্কারের একটুখানি সাপোর্ট দরকার, যে কিনা তাকে উৎসাহ দিবে। এই ব্যক্তিটি আপনি নিজেও হয়ে উঠতে পারেন।

৬) পজিটিভ চিন্তা করুন

পজিটিভ চিন্তা করুন

যে কোনো কাজে সব সময় পজিটিভ থাকা জরুরি। ভুল থেকেই সঠিকটা শেখা যায় এবং নিজেকে শোধরানো যায়। সেলফ মোটিভেশন বাড়ানোর জন্য, পজিটিভ অ্যাটিচিউড যুক্ত যে কোনো কিছুর সাথে যুক্ত হওয়া যায় এবং সেখান থেকে শেখা যায়। কেউ যদি আপনার কাজের সমালোচনা করে, তাহলে সেটিকে গঠনমূলক হিসেবে নিন। পজিটিভ চিন্তা করলে আপনার পারফরম্যান্সও ভালো হয় এবং রেজাল্টও ভালো আসে।

৭) হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করুন

মোটিভেশন মস্তিষ্ককে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। যে কোনো কাজ বা লক্ষ্য পূরণের জন্য এটি খুব জরুরি। আর এ কারণে মস্তিষ্ক ও শরীর একইসাথে সুস্থ রাখা জরুরি। এজন্য অবশ্যই একটি হেলদি লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে হবে। যেভাবে এটি করা যায়-

  • নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন
  • ডোপামিন অ্যাক্টিভেট করার জন্য নিয়মিত ফল ও সবজি খান
  • ব্রেনকে সঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য রাতে অন্তত আট ঘন্টা ঘুমান
  • কাজের ফাঁকে মস্তিষ্ককে বিরতি দিন
  • একটি হেলদি ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স করুন

৮) কমফোর্ট জোনের বাইরে কাজ করার জন্য নিজেকে পুশ করুন

নিজের মোটিভেশন বাড়ানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে নিজেকে কমফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে যাওয়া এবং নতুন সুযোগ খোঁজা। আপনি এর আগে কখনোই করেননি এমন কাজ করতে পারেন। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিন, যেন নতুন নতুন স্কিল শিখতে পারেন এবং কর্মক্ষেত্রে আপনার পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন।

নতুন স্কিল শিখুন

যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই মোটিভেশন খুব জরুরি। আপনি যদি কারও মাধ্যমে মোটিভেটেড হন, তাহলে তাকে অবশ্যই সেটি জানাতে ভুলবেন না। আর আপনার কাছ থেকে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে তাকে আরও নতুন নতুন কাজে উদ্বুদ্ব করুন। মনে রাখবেন, আপনার একাকে দিয়ে যেমন প্রতিষ্ঠান না, তেমনই আপনারা একসাথে না হলেও প্রতিষ্ঠান চলবে না। তাই সবাইকে একত্রিত হয়েই কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *