নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী একেকজনের ভাবনাচিন্তা একেক রকম হতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবেই একে অন্যের সাথে এই চিন্তা মিলবে না। তবে এ কথাও ঠিক, ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্য ওয়ার্কপ্লেসে যে পারসোনাল স্ট্রেন্থ থাকতে হয়, সেগুলো কমবেশি সবার মধ্যেই থাকতে হয়। নইলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। আমাদের পারসোনাল স্ট্রেন্থ যখন পজিটিভ থাকে, তখন ওয়ার্কপ্লেসে সেই স্ট্রেন্থই অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে অনেক বড় একটি পরিবর্তন ও সফলতা তো আসেই, সাথে সাথে বস ও টিম মেম্বারদের সাথে এত ভালো বন্ডিং তৈরি হয় যে টিম বন্ডিংও বেশ স্ট্রং হয়ে ওঠে। যে স্ট্রেন্থ নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো আসলে কোনগুলো? চলুন জেনে নেয়া যাক।
পারসোনাল স্ট্রেন্থ কী?
জবের জন্য পারসোনাল স্ট্রেন্থ কোনগুলো? এগুলো এমন কিছু স্কিল যেগুলো সাধারণত ওয়ার্কপ্লেসে বা জবের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করা হয় এবং স্ট্রং রিলেশনশীপ গড়তে সাহায্য করে। এর মধ্যে আছে বেশ কয়েক ধরনের সফট স্কিল। হেলদি ওয়ার্কপ্লেস রিলেশনশীপ ডেভেলপ করার জন্য প্রফেশনাল এই স্ট্রেন্থগুলো বেশ জরুরি।
ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্য যত ধরনের পারসোনাল স্ট্রেন্থ থাকা জরুরি
প্রফেশনাল ডিউটি কমপ্লিট করার জন্য কোন কোন স্ট্রেন্থগুলো জরুরি সেগুলো সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
ডিপেন্ডেবল বা নির্ভরযোগ্যতা
ডিপেন্ডিবিলিটি একজন ব্যক্তিকে লয়্যাল বানায়। ওয়ার্কপ্লেসে একজন ডিপেন্ডেবল ইমপ্লয়ি সময়মত আসে, তার সহকর্মীরা তার সাথে যে কোনো পরামর্শ বা সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের সুপারভাইজরও জানে তাদের প্রতি কতটুকু বিশ্বাস করা যায় এবং এক্সট্রা কাজ দিলে তারা নিজ দায়িত্বে সম্পন্নও করবে।
ফ্লেক্সিবল বা নমনীয়
ফ্লেক্সিবিলিটি থাকলে যে কোনো ব্যক্তি সহজে পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারে। ওয়ার্কপ্লেসে, একজন ফ্লেক্সিবল ইমপ্লয়ি দ্রুত নতুন সব পদ্ধতি শিখে নেয়। সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে তারা এই পরিবর্তনগুলোকে পজিটিভভাবে নেয়। প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে বলে সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত হন রোল মডেল হিসেবে।
সেলফ মোটিভেটেড
নিজে যদি সেলফ মোটিভেটেড থাকা যায়, তাহলে সুপারভাইজারের উপস্থিতি ছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ করে ফেলা যায়। ওয়ার্কপ্লেসে এমন ব্যক্তিকেই সবাই সহকর্মী হিসেবে চায়। কারণ তাকে সর্বক্ষণ সুপারভিশনের উপর রাখতে হয় না বা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে বার বার মনে করিয়ে দিতে হয় না।
টিম ওরিয়েন্টেড
টিম ওরিয়েন্টেড হলে গ্রুপে সহকর্মীদের সাথে কাজ করতেও ভালো লাগে। এ ধরনের ব্যক্তিদের ম্যানেজাররা পছন্দ করেন, কারণ গ্রুপে সে লিডার হিসেবে সব দায়িত্ব নিজে পূরণ করতে পারে। তাছাড়া শুধু নিজের কাজ বা দায়িত্ব থেকে করা প্রজেক্টের সাফল্যেই সে শুধু খুশি হয় না, অন্যের সাফল্যেও সে একই রকম খুশি হয়।
সাকসেস ওরিয়েন্টেড
একজন সাকসেস ওরিয়েন্টেড ব্যক্তি সবদিকে সমানভাবে খেয়াল রাখে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে তারা তাদের সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্য ওয়ার্কপ্লেসে যতগুলো পারসোনাল স্ট্রেন্থ থাকা জরুরি তার মধ্যে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি। এই স্ট্রেন্থ সব কর্মীর মাঝেই থাকা উচিত, কেননা প্রতিদিনের দায়িত্ব পালনের জন্য এই স্ট্রেন্থই আপনাকে অ্যাকটিভ রাখবে।
অ্যাকটিভ লিসেনার
যে কোনো জবেই অ্যাকটিভ লিসেনার হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিম মেম্বারদের সাথে কাজ করার সময় যদি ভালো করে তাদের কথা শোনা হয়, তাহলে আপনি সঠিক ডিরেকশন পাবেন। এই স্কিল আপনাকে আরও সাহায্য করবে জরুরি বিভিন্ন তথ্য সম্পর্ক সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে।
অপটিমিসটিক
এ ধরনের ব্যক্তিরা যে কোনো পরিস্থিতিতে পজিটিভ থাকে। সহকর্মীকে যে কোনো স্ট্রেসফুল সিচ্যুয়েশনে পজিটিভ রাখতে তারা সাহায্য করে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের বড় কোনো পরিবর্তনেও তারা আশাহত হয় না। এই ব্যাপারগুলোই তাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে, মোটিভেটেড ও প্রোডাক্টিভ থাকতে হেল্প করে।
কমিউনিকেটিভ
যে ব্যক্তির কমিউনিকেশন স্কিল ভালো, তিনি নানাভাবে অন্যের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারেন। ওয়ার্কপ্লেসে, তারা রিটেন বা ভারবাল কমিউনিকেশনের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য সবাইকে জানাতে পারেন বা ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে পারেন। যেমন- কমিউনিকেটিভ ইমপ্লয়ির ই-মেইল লেখার খুব ভালো দক্ষতা থাকে, যা তাদেরকে অল্প কথায় সময়ের মধ্যে কীভাবে রিপ্লাই দিতে হবে বা কিছু লিখতে হবে তা শেখায়।
ইমোশনালি অ্যাওয়ার
সহকর্মী যদি মুখে কিছু নাও বলে, তবু তার বডি ল্যাংগুয়েজ বুঝে তাকে কোনো বিষয়ে সাহায্য করতে যদি পারেন, তাহলে বলতে হবে আপনি ইমোশনালি অ্যাওয়ার আছেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা সব সময় আশেপাশে খেয়াল রাখেন। কে কেমন আছে, কেউ কোনো সমস্যায় ভুগছে কিনা, কোনো কনফ্লিক্ট হচ্ছে কিনা কারও সাথে- এসব বিষয় সম্পর্কে তিনি বুঝতে পারেন। তারা এমপ্যাথির মাধ্যমে কনফ্লিক্ট দূর করে সাপোর্টিভ এনভায়রনমেন্ট ক্রিয়েট করতে হেল্প করেন। এতে ওয়ার্ক এথিক ও টিমওয়ার্ক এনকারেজ হয়।
প্রবলেম সলভার
যে ব্যক্তি প্রবলেম সলভ করতে পারেন, তিনি সিচ্যুয়েশন বুঝে সমস্যার সমাধানও দিতে পারেন। এই স্কিলটি স্পেসিফিক ডিপার্টমেন্টের প্রবলেম খুঁজে বের করতে এবং নতুন উপায় বাতলে দিতে সাহায্য করে। এর কারণে কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সময় ও অর্থ বেঁচে যায়।
কীভাবে বুঝবেন এই স্ট্রেন্থগুলো আপনার মাঝে আছে কিনা?
জব ডেসক্রিপশন পড়ুন
আপনার মাঝে কী কী স্ট্রেন্থ আছে, সেগুলো বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আগে নির্দিষ্ট জবটি খোঁজা। এরপর সেটার দায়িত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে আগে পড়ে নেয়া। আপনার বর্তমান জব রেসপনসিবিলিটিগুলো কী কী? এগুলোকে নতুন দায়িত্বের সাথে তুলনা করুন। রেসপনসিবিলিটি অনুযায়ী কি আপনাকে সুপার অর্গানাইজড হতে হবে? যদি হয়, তাহলে এটাও কিন্তু চমৎকার একটি স্ট্রেন্থ!
আপনার দুর্বলতাগুলো কী কী?
স্ট্রেন্থ খুঁজে বের করার আরও একটি উপায় হচ্ছে আগে উইকনেস সম্পর্কে জানা। ওয়ার্ক বিহেভিয়ার ইমপ্রুভ করার জন্য খেয়াল করুন কোন কোন কাজ আপনি খুব ভালোভাবে করছেন। সেই সাথে আরও খেয়াল করুন, দিনের পর দিন কোন ভুলগুলো আপনাকে শোধরাতে হয়েছে, কোন ইস্যুগুলো আপনাকে পেছনে ফেলেছে বা পজিটিভ হতে দেয়নি।
আপনার পারসোনালিটি কেমন?
আপনি যদি বুঝতে পারেন আপনার পারসোনালিটি কেমন, তাহলে পারসোনাল স্ট্রেন্থ ডিসকভার করা খুব সহজ হয়ে উঠবে। অনলাইনে অনেক সার্ভে রিসোর্স আছে, যেগুলো আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে আপনার পারসোনালিটি, বিহেভিয়ার, স্ট্রেন্থ কেমন।
লিস্ট করুন
অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি নিজের স্ট্রেন্থ সম্পর্কে একটি লিস্ট তৈরি করুন এবং ইন্টারভিউ পর্যন্ত সেগুলো অবশ্যই মনে রাখুন। নিজের কাজকে আরও সহজ করার জন্য এই স্কিলগুলোকে ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফেলতে পারেন, যেমন- পারসোনালিটি স্ট্রেন্থ বা স্পেসিফিক ওয়ার্ক স্ট্রেন্থ (পাওয়ার পয়েন্ট বা ইন ডিজাইন)। এমন একটি লিস্ট যদি আপনার কাছে থাকে, তাহলে ইন্টারভিউ প্রসেস আরও স্মুথ হবে।
পারসোনাল স্ট্রেন্থ থাকার বেনিফিট
ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্য ওয়ার্কপ্লেসে কোন পারসোনাল স্ট্রেন্থগুলো থাকা জরুরি তা সম্পর্কে তো জানা হলো। এগুলো থাকলে কী কী বেনিফিট আপনার হতে পারে চলুন জেনে নেয়া যাক-
সেলফ অ্যাওয়ারনেস বাড়ে- এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারেন আপনি কিসে ভালো এবং কিসে নন
সেলফ কনফিডেন্স বাড়ে- আপনি যখন আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে জানবেন, তখন আপনার মাঝে আলাদাভাবেই একটি সেলফ কনফিডেন্স তৈরি হবে
খুশি থাকা- দুর্বলতা দূর করে যখন আপনার মাঝে স্ট্রেন্থ থাকবে, তখন আপনাআপনিই খুশি থাকবেন
বেটার পারফরম্যান্স- স্ট্রেন্থই আপনাকে বোঝাবে আপনি কোন কাজগুলো ভালো করে করতে পারবেন। এতে আপনি আরও বেটার পারফরম্যান্স দিতে পারবেন।
অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা- আপনি যখন অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারবেন, তখন তারা কীভাবে ভাবছে সেটাও আপনার জানা হয়ে যাবে।
এক কথায়, ক্যারিয়ার গ্রোথের জন্য ওয়ার্কপ্লেসে পারসোনাল স্ট্রেন্থ থাকার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যত সফলতার চূড়ায় উঠতে চাইবেন, তত আপনাকে স্ট্রেন্থ বাড়াতে হবে। তাই পারসোনাল স্ট্রেন্থ আরও ডেভেলপ করুন, সাকসেস হোন।