ভালো থাকতে চান? খারাপ এই অভ্যাসগুলো দূর করুন জীবন থেকে!

ভালো অভ্যাস যেমন একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে শেখায়, তেমনই খারাপ অভ্যাস ধীরে ধীরে বেঁচে থাকাকে কঠিন বানিয়ে দেয়। যে অভ্যাস আপনি লালন করছেন, সেগুলোই ঠিক করে দেয় আপনি জীবনে সফল হবেন নাকি হেরে যাবেন। খারাপ অভ্যাস স্লো পয়জনের মতো। ধীরে ধীরে মানুষকে শেষ করে দেয়। যত দ্রুত এই খারাপ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে জেনে দূরে থাকতে পারবেন ততই আপনার জন্য মঙ্গল। ভালো থাকতে চাইলে কোন কোন অভ্যাসগুলো জীবন থেকে বাদ দিতে হবে চলুন জেনে নেয়া যাক।

ভালো থাকতে চাইলে যে অভ্যাসগুলো দূর করতে হবে 

১) সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা

আমরা যখন খারাপ পরিস্থিতিতে থাকি, তখন ভাবি সঠিক সময় আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে। আদৌ কি সেই সময় আসে? আপনি যখন থেকে যা শুরু করবেন সেটাই আপনার সঠিক সময়। আপনি কীসের অপেক্ষা করছেন? কোনোকিছুর রিসোর্স? শর্ত? উপলক্ষ্য? ইনভেস্ট? দেখুন- এসব যা কিছু নিয়েই ভাবছেন তার সবই হয়ত কোনো না কোনোভাবে আপনার আশেপাশেই আছে। জাস্ট সেগুলো খুঁজে বের করুন। কাজ শুরু করে দিন!

২) বিছানায় মোবাইল ব্যবহার করা

ঘুমাতে যাওয়ার আগে সাথে করে যখন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে যাচ্ছেন, তখন ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটছে। এসব ডিভাইস থেকে আসা নীল রশ্মি মেলাটোনিনের প্রোডাকশনে ব্যাঘাত ঘটায়- যার কারণে ঘুমের হরমোনের সঠিকভাবে কাজ করে না। রাতের পর রাত এভাবে চলতে থাকলে রেগুলার যে ঘুমের সাইকেল সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে দেখা দিতে পারে ইনসমনিয়া। সকালের ঘুমের কারণে কমে যেতে পারে প্রোডাক্টিভিটি। এর সহজ সমাধান হচ্ছে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে সব ডিভাইস অফ করে ফেলুন। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো ম্যাসেজ আপনার ঘুম ভাঙাবে না।

ভালো থাকতে চাইলে যা করবেন না

৩) সব সময় হ্যাঁ বলা

সবকিছুতেই যদি আপনি হ্যাঁ বলতে থাকেন, তাহলে ভালো থাকতে পারবেন না। সহজেই হ্যাঁ বলে দিলে স্ট্রেস বাড়বে, অপরাধ বোধ বাড়বে, সুখী থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে। সবকিছুকে আপনি কীভাবে হ্যাঁ বলতে পারেন? আপনারও তো সাপ্তাহিক ছুটির দরকার হয়, পার্টিতে যেতে হয়, মুভি দেখতে ইচ্ছা করে প্রিয় মানুষের সাথে। তাহলে আপনার কাজের গুরুত্ব কোথায় গেলো? আপনি যাদের পছন্দ করেন না তাদের সাথে কীভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা আপনি কাটিয়ে দিতে পারেন? আপনি কি বিনা বেতনে এক্সট্রা শিফট করে খুশি? যদি না হন, তাহলে সবকিছুতে হ্যাঁ বলা ছাড়ুন!

৪) নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা

নিজের ক্যারিয়ার, লুকস, স্পাউস, স্যালারি, সম্পত্তি এগুলো বিষয়ে অন্যের সাথে তুলনা করলে আপনার ভালো লাগে? তাহলে আপনি প্রচুর ফ্রাস্ট্রেশনে আছেন! আপনার যা আছে তা নিয়ে অন্যের মন্তব্য শুনে খুশি হতে যাবেন কেন! যদি আপনি কাজ করে খুশি থাকেন, তাহলে সেটাই মন দিয়ে করুন। সবাই তো আর একসাথে আইনস্টাইন হতে পারবে না, তাই না? কাউকে না কাউকে তো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতাও হতে হবে? প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ক্রিয়েটিভিটি, পাওয়ার ও পারসোনালিটি নিয়ে নিজ নিজ গল্প আছে। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা ব্যাপারটা বেশ সাংঘর্ষিক।

৫) দেরি করে ওঠা

দেরি করে বিছানায় যেয়ে সকালে এলার্ম ঘড়িতে বারবার স্নুজ বাটনে চাপ দিলে কখনোই ঘুম পুরো হবে না। আর ঘুম ভাল না হলে পুরো দিন কীভাবে ভালো যাবে? দেরি করে উঠছেন, নাস্তা করছেন না, কাজে বা ইভেন্টে দেরি করে পৌঁছে অন্যের কাছে নিজের ইমেজ খারাপ করছেন। কতদিন, কতবার, কতজনকে সরি বলবেন? দিনের শুরুটা এভাবে করা খুব খারাপ অভ্যাস, কারণ এতে পুরো দিন খুবই আনপ্রোডাক্টিভ ও ডিজঅর্গানাইজড যায়। আর রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়, ‘আমি আমার নিজের জন্য যথেষ্ট নই’।

৬) মিটিং এ বসে মাল্টি টাস্কিং করা 

মিটিং এ বসে মাল্টি টাস্কিং

ভাবছেন, মিটিং এ বসে আরও কিছু কাজ করে ফেললে বেশ কুল একটা ব্যাপার হবে, তাই না? মোটেও না! এতে আপনার কাজের মনোযোগ থাকবে না। অন্যরা কে কী বলছে বুঝতেও পারবেন না। মিটিং এর সময় বসে বসে ফোনে কথা বলা বা জরুরি বিষয় ছাড়া নরমাল কনভার্সেশন চালিয়ে যাওয়া একদমই উচিত নয়। এ ধরনের মাল্টি টাস্কিং এ শুধু নিজের ইমপ্রেশনই খারাপ হয় না, মনে হয় আপনি এই কাজের চেয়ে অন্য কাজকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাছাড়া কাজে প্রচুর ভুল হয়। মাল্টিটাস্কিং আপনার ব্রেনকে শ্রিংক করে দিতে পারে এবং আইকিউ কমিয়ে দিতে পারে। সেই সাথে প্রোডাক্টিভিটি কমে যেতে পারে ৪০%। এতে পরের ধাপে যেয়ে নিজের প্রোডাক্টিভিটি ও এফিসিয়েন্সি দেখানোর সুযোগ কমে যায়।

৭) মানি ম্যানেজমেন্ট না বোঝা

আপনি কি জানেন ফাইন্যান্সিয়াল হেলথ যদি আপনি ইগনোর করেন, তাহলে কী কী সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে? অতিরিক্ত খরচ করা এবং প্রচুর লোন নিলে ঋণ বাড়তে থাকে, সেভিংস কমতে থাকে। এতে তৈরি হয় ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রেস। ভালো থাকতে চাইলে এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

স্ট্রেস লেভেল বেশি হলে মুড সুইং হয়, খাবারের ইচ্ছা চলে যায়, জব পারফরম্যান্স খারাপ হয়, রিলেশনশিপে আঘাত আসে। সর্বোপরি মেন্টাল হেলথ ঠিক থাকে না। এসব কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় অন্তত ২৫%। তাই ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইস নিন, মানি ম্যানেজমেন্ট বুঝুন, সুখী জীবন যাপন করুন।

৮) টক্সিক রিলেশনশিপে থাকা

আপনি কি এমন জায়গায় কাজ করছেন যেখানে সহকর্মীরা কোনো ধরনের সাপোর্ট করছে না? হরহামেশাই কাজে ঝামেলা বাঁধাচ্ছে? বন্ধুরা কখনোই কাজে প্রশংসা করছে না? জীবনে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই? সত্যি বলতে এসব টক্সিক ব্যাপার এভয়েড করা সহজ নয়। এগুল সব জায়গায় থাকবে, সব সময় থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এগুলো থেকে দূরে থাকা যাবে না। আপনার কাছে দুটো উপায় আছে। এক, এসব নিয়ে ভেবে ভেবে নিজের এনার্জি নষ্ট করুন, দুই, পুরো সময় নিজের জীবনের ভালো কাজের উপর দিন।

ভালো থাকতে চাইলে আপনি যদি একবার পজিটিভ থাকা শিখে যান, তাহলে স্ট্রেস কমে যাবে, সাইকোলজিক্যালি ও ফিজিক্যালি ভালো থাকবেন, পারসোনাল ও প্রফেশনাল গ্রোথ হবে, কনফিডেন্স বাড়বে, জীবন সুখের হবে।

৯) স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট না পারা

ভালো থাকতে চাইলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে

আমরা প্রায় প্রত্যেকেই স্ট্রেসকে ইগনোর করতে থাকি, যতক্ষণ সেটা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে খুব বাজেভাবে এফেক্ট না করে। এগুলোর মধ্যে কমন কিছু সিম্পটম হচ্ছে-

  • মনোযোগ দিতে না পারা
  • সঠিকভাবে বিচার করতে না পারা
  • মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা
  • রাগ ও জেদ
  • নার্ভাস হয়ে যাওয়া যেমন- নখ কাটা

এসব সমস্যা হলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন- হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদি বাড়বে। সেই সাথে মেন্টাল হেলথ প্রবলেম যেমন- ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি এসবও বাড়তে থাকবে। কোন কাজগুলো আপনার স্ট্রেস বাড়াচ্ছে সেগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলোর উপর কাজ করুন।

ভালো থাকতে চান বলে অনেক সফল ব্যক্তি নিজেদের প্রতিদিনের রুটিনে কিছু অভ্যাস তৈরি করেছেন। যেমন-

  • বাউন্ডারি সেট করেছেন
  • মেডিটেশন, ইয়োগা, রিফ্লেকটিভ জার্নালিং, এক্সারসাইজ, বই পড়ার মতো কাজগুলো করেন
  • টু ডু লিস্ট অনুযায়ী কাজ করেন
  • লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
  • পর্যাপ্ত ঘুমান
  • প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান
  • প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটান

১০) অতিরিক্ত বসে কাজ করা

অতিরিক্ত বসে কাজ করা উচিত নয়

দিনে ৮-১০ ঘন্টা কাজ করার পরও শুয়ে বসে নেটফ্লিক্স দেখা, ভিডিও গেইম খেলা, ফাস্ট ফুড খাওয়া, শুয়ে শুয়ে লেখা বা পড়া – এসব নিয়মিত করতে থাকা খারাপ অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি। ভালো থাকতে হলে এসব কমিয়ে আনতে হবে যতটা পারা যায়। ফিজিক্যাল ইনঅ্যাক্টিভিটি একটি গ্লোবাল সমস্যা।

এই লাইফস্টাইলকে কীভাবে ফিক্স করবেন?

  • শুরুতেই নিজের খাবার নিজে রাঁধতে শিখুন। যততা সম্ভব খাবার তালিকায় ফল ও সবজি রাখুন।
  • অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন
  • লিফটের বদলে সিঁড়ি দিয়ে উঠুন
  • কাজের মাঝে ব্রেক নিন
  • দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস করুন
  • ঘরের কাজ বেশি বেশি করুন
  • ফোনে কথা বলার সময় হাঁটুন

খারাপ অভ্যাস আমাদের মাঝে এতটাই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে যে আমরা চাইলেও এ থেকে বের হতে পারি না। কিন্তু এতে যে আমাদেরই ক্ষতি হচ্ছে তা কি বুঝতে পারছি না? এসব অভ্যাস দূর করতে না পারলে ভালো থাকা যাবে না। তাই সুস্থ ও সুখী থাকার জন্য এসব অভ্যাস ত্যাগ করুন। ভালো থাকতে কি খুব বেশি কিছু লাগে বলুন? সবার আগে দরকার চেষ্টা। আর চেষ্টা চালিয়ে গেলে আপনি সফল হবেনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *