টিমওয়ার্ক স্কিল কী এবং জব লাইফে এর গুরুত্ব কতটুকু?

টিমওয়ার্ক স্কিল হচ্ছে সেই স্কিল যা আপনাকে অন্যদের সাথে কাজ করার জন্য যোগ্য করে তোলে। নিয়োগদাতারা এই স্কিল আছে এমন ক্যান্ডিডেট পেলে সহজে হাতছাড়া করতে চান না। কারণ একইসাথে তাদের লিডারশীপ যোগ্যতা থাকে, কোলাবোরেশন করতে পারে এবং কমিউনিকেশন ভালোভাবে করতে পারে। নিয়োগদাতারা সব সময় চান কর্মীরা যেন টিম প্লেয়ার হয়। সব ধরনের কোম্পানিতে টিমওয়ার্কের প্রয়োজন রয়েছে। টিমওয়ার্ক স্কিল কী এবং জব লাইফে এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কেই জানবো আজ।

টিমওয়ার্ক স্কিল কী?

টিমওয়ার্ক স্কিল মানে হচ্ছে অন্যদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ কাজ করতে পারা। দায়িত্ব অনুযায়ী আপনাকে অন্যদের সাথে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে, এমনকি লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি যখন কোনো জব খোঁজেন, সেখানে প্রায়ই দেখবেন চাকরিপ্রার্থীদের মাঝে ‘টিম প্লেয়ার’ হলে গুরুত্ব দেয়া হবে এমন কথা লেখা থাকে। যাদের মধ্যে কমিউনিকেশন, কোলাবোরেশন, লিডারশীপ ও এমন পজিটিভ অ্যাটিটিউড থাকে, ধরা হয় তারাই টিম প্লেয়ার।

এই স্কিলের উদাহরণ

  • প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী টিমে কাজ করা
  • ইফেক্টিভ রিলেশনশীপ ডেভেলপ করা এবং ভালোভাবে কাজ করা
  • সহকর্মী ও ম্যানেজারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা
  • সবার সাথে কমিউনিকেশন করার দক্ষতা থাকা
  • অন্য কর্মীদের অবজার্ভ করা এবং তাদেরকে শেখানো
  • অ্যাসিস্ট করা ও ট্রেনিং দেয়া
  • লক্ষ্য পূরণের জন্য লিডিং, ইনফ্লুয়েন্সিং, মোটিভেটিং দক্ষতা থাকা
  • অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা থাকা
  • ওপেন মাইন্ডেড হওয়া ও ফ্লেক্সিবিলিটি নিয়ে ডিল করা
  • অন্যের কথা শোনা এবং মতামতকে গুরুত্ব দেয়া

টিমওয়ার্ক স্কিল

টিমওয়ার্ক স্কিল এর ধরন

টিমওয়ার্ক স্কিল এর অনেক ধরন আছে, কিন্তু সেগুলো আপনার কাজের দক্ষতা এবং অন্যের সাথে কাজ করার মানসিকতার উপরেও অনেকখানি নির্ভর করে। একটি সফল টিমের অংশ হতে হলে আপনাকে চমৎকার কমিউনিকেশন, কথা শোনা ও কনফ্লিক্ট দূর করার ম্যানেজমেন্ট স্কিল থাকতে হবে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিমওয়ার্ক স্কিলের তালিকা দিচ্ছি।

১) কমিউনিকেশন

একজন ভালো টিম মেম্বার মানে দলের সবার সাথে তার কমিউনিকেশন ভালো। এটি যে কোনোভাবেই হতে পারে। যেমন- ফোন, ই-মেইল, ভিডিও অথবা ব্যক্তি সরাসরি নিজে। আপনি নিশ্চিত করবেন যে আপনার টোন সবসময় প্রফেশনালও থাকবে, একইসাথে ফ্রেন্ডলিও হবে। ভারবাল ও নন ভারবাল কমিউনিকেশন দুটোই দলীয়ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে জরুরি। এই কমিউনিকেশনের মাঝে যা যা থাকতে পারে-

  • অ্যাডভাইজিং
  • কোলাবোরেশন
  • কন্ট্রিবিউটিং
  • কো অরডিনেশন
  • ক্রিয়েটিভিটি
  • ক্রিয়েটিভ থিংকিং
  • ফিডব্যাক দেয়া
  • গোল সেট করা
  • গাইডেন্স
  • ইনফ্লুয়েন্সিং
  • ভাষা
  • ম্যানেজমেন্ট
  • বোঝাতে পারা
  • রিসার্চ
  • টিম ম্যানেজমেন্ট
  • টিচিং
  • ভারবাল কমিউনিকেশন
  • ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন
  • রিটেন কমিউনিকেশন

২) কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট

টিমওয়ার্ক স্কিল এর মধ্যে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট বোঝা কেন জরুরি?

দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে কনফ্লিক্ট হলে সেটা দূর করাও টিমওয়ার্ক স্কিল এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আপনাকে দলের সবার সাথে নেগোশিয়েট করতে হবে এবং সবার পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই স্কিলে যা যা থাকবে-

  • কোলাবোরেটিভ
  • কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট
  • কো অপারেশন
  • ক্রিটিক্যাল থিংকিং
  • সমস্যা নিয়ে আলোচনা অরা
  • অন্যের প্রতি সদয় হওয়া
  • ফ্লেক্সিবিলিটি
  • হাই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স
  • লিডারশীপ
  • কথা শোনা
  • যুক্তি দেয়া
  • যুক্তি ও তর্ক
  • লজিক্যালি চিন্তা করা
  • মধ্যস্ততা
  • আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া
  • সমস্যার সমাধান করা
  • টিম বিল্ড করা
  • টিম বিল্ডিং অ্যাকটিভিটিজ

৩) লিসেনিং

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হচ্ছে লিসেনিং। একজন ইফেক্টিভ টিম মেম্বার হতে হলে আপনাকে অন্যের আইডিয়া শুনতে হবে। ক্ল্যারিফিকেশনের জন্য প্রশ্ন করতে পারেন, কনসার্ন দেখাতে পারেন, টিমকে বোঝাতে হবে যে আপনি দল নিয়ে ভাবছেন এবং তাদের আইডিয়া নিয়েও চিন্তা করছেন। এর মাঝে যা যা থাকতে পারে-

  • অ্যাকটিভ লিসেনিং
  • ক্ল্যারিফায়িং কোয়েশ্চন জিজ্ঞেস করা
  • অ্যাটেনটিভ হওয়া
  • আই কন্ট্যাক্ট
  • ফিডব্যাক দেয়া
  • গ্রুপের সাথে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া
  • মন দিয়ে শোনা
  • কথার মাঝে জিজ্ঞেস করা
  • ননভারবাল কমিউনিকেশন
  • ওপেন মাইন্ড
  • ধৈর্য
  • রিল্যাক্স
  • ফিডব্যাক নেয়া
  • সামারাইজ করা

৪) রিলায়্যাবিলিটি

রিলায়াবিলিটি

আপনাকে একজন নির্ভরযোগ্য টিম মেম্বার হতে হবে যেন আপনার সহকর্মীরা আপনার উপর ভরসা করে এবং সেনসিটিভ কাজের ব্যাপারে এবং কোম্পানি ইনফরমেশনের ব্যাপারে আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে। ডেডলাইনের ভেতর অর্পিত কাজ শেষ করার দক্ষতা আপনার মাঝে অবশ্যই থাকতে হবে। এতে আপনার প্রতি কলিগদের আস্থা বাড়বে। এতে আরও যা যা থাকবে-

  • কমিটমেন্ট
  • কমিউনিটি বিল্ডিং
  • কনফিডেন্স
  • কনফিডেন্স বিল্ডিং
  • নির্ভরশীলতা
  • ফ্লেক্সিবিলিটি
  • সাহায্য করা
  • সৎ থাকা
  • লিডারশীপ
  • মাল্টিটাস্কিং
  • পার্টিসিপেশন
  • পারফর্ম টাস্ক
  • দায়িত্ব
  • টিম ওরিয়েন্টেড
  • টাস্ক ম্যানেজমেন্ট
  • বিশ্বাস

৫) রেসপেক্টফুলনেস

লোকে আপনার সাথে মন খুলে আরও কমিটমেন্ট করতে চাইবে যদি আপনি তাদের আইডিয়াকে সম্মান জানান। কিছু কিছু সহজ কাজ যেমন- কারও নাম মনে রাখা, আই কন্টাক্ট করা, কেউ কিছু বললে সেটা মন দিয়ে শোনা এমন কাজগুলো টিম মেম্বারদের অ্যাপ্রিশিয়েট করে। তাছাড়া এই ক্যাতাগরিতে আরও থাকবে-

  • অন্যকে সম্মান দেয়া
  • আগ্রহী করে তোলা
  • আইডিয়া শেয়ার করা
  • মোটিভেট করা
  • অপিনিয়ন দেয়া
  • ওরাল কমিউনিকেশন
  • ধৈর্য
  • পজিটিভ আচরণ
  • রিলেশনশীপ বিল্ড করা
  • সেনসিটিভিটি
  • ক্রেডিট শেয়ার করা
  • সাপোর্ট দেয়া
  • টিম প্লেয়ার হওয়া
  • অনুভূতি বোঝা
  • ভ্যালু দেয়া
  • টিমওয়ার্ক স্কিলের মধ্যে আরও যা যা আছে
  • সম্পর্ক তৈরির দক্ষতা
  • অ্যাকাউনট্যাবিলিটি
  • ক্রিয়েটিভ
  • ডিসিশন মেকিং
  • ডেলিগেটিং
  • এনকারেজিং
  • ইনফ্লুয়েনশিয়াল
  • ইনোভেটিভ
  • অর্গানাইজিং
  • পারসুয়েশিভ
  • প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
  • প্রোজেক্ট প্ল্যানিং
  • ফিডব্যাক দেয়া
  • প্রেজেন্টেশন
  • সম্মান দেয়া
  • আত্মসচেতনতা
  • সাপোর্টিভ
  • টাইম ম্যানেজমেন্ট
  • বিশ্বস্ততা

একে অন্যকে সম্মান করা

দলীয়ভাবে কাজ করার উপকারিতা

১) ইনোভেশন

একজন কর্মী যতই দক্ষ হোক না কেন, তিনি শুধু তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন। তার মানে হচ্ছে কাজ সম্পন্ন করার জন্য তার কাছে কেবল এই একটি বিষয়ই আছে। টিমওয়ার্ক মানে অনেকগুলো মানুষের সাথে কাজ সম্পন্ন করা, নতুন নতুন আইডিয়া শেয়ার করা, দক্ষতাকাএ কাজে লাগানো। যে কোনো টাস্ক ও চ্যালেঞ্জ পূরণ করার জন্য টিম ব্রেইনস্টরমিং খুবই জরুরি। একজন ব্যক্তি যদি একা কাজ করতে থাকে তাহলে তার আগ্রহ, মোটিভেশন, ক্রিয়েটিভিটি ও ইনোভেশন কমতে থাকে। টিমের একটি অংশ হয়ে কাজ করলে দারুণ দারুণ কাজের অংশ হয়ে থাকা যায়।

২) কনফিডেন্স

কাজে সফলতার জন্য কনফিডেন্স থাকা জরুরি। ইফেক্টিভ টিমওয়ার্কের একটি সাইন হচ্ছে কনফিডেন্ট থাকা। এতে টিমের সবার মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয় এবং প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কফোর্স বাড়ে। যারা টিমের অংশ হয়ে কাজ করেন তাদের মধ্যে ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। যে কোনো সমস্যা সমাধানে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা বেশি ইফেক্টিভলি কাজ করেন।

৩) কর্মদক্ষতা

কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি ভালো টিম গঠন করা সবচেয়ে ভালো উপায়। প্রতিটি টিম নিজেদের কাজের প্রতি ফোকাস করে এবং কোম্পানির লক্ষ্য পূরণে কাজ করে, কঠিন কাজ সহজে করে ফেলে এবং সবাই মিলে একসাথে দ্রুত কাজ করে। যেসব টিম মেম্বার নির্দিষ্ট কোনো কাজে দক্ষ, তারা সেই কাজ আরও ভালোভাবে করতে পারে যা পুরো টিমের জন্যই ইফেক্টিভ হয়। ওয়ার্কলোড শেয়ার করা গেলে নির্দিষ্ট একজনের উপর থেকে চাপও কমে, আবার কাজও সময়মতো করা যায়।

৪) কাজের মান

যে কোনো কর্মীর জন্য কাজের প্রেশার যদি বেশি হয়, তাহলে সে গুণগত মানসম্পন্ন কাজ করতে পারে না। এতে প্রতিষ্ঠানের নামই খারাপ হয়। একজন ব্যক্তি যখন কাজ নিয়ে চাপে পরে যান, তখন টিমের সবাই মিলে সেই কাজ শেষ করে ফেললে হাই প্রোডাক্টিভ কাজ করা যায়। ওয়ার্কলোড শেয়ার করলে কাজের কোয়ালিটিও ভালো হতে থাকে।

কাজের মানের উন্নতি

৫) আনন্দ

যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই ভালো থাকা সবচেয়ে জরুরি। যেখানে টিমওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়া হয়, সেখানে কর্মীরাও খুশি থাকে। আর কর্মীরা খুশি থাকলে ভালো মানের কাজ উপহার দেয়া সম্ভব। সবাই মিলে কাজ করলে বন্ধন আরও গভীর হয়।

৬) গ্রোথ

টিমের অংশ হয়ে কাজ করলে গ্রোথ যেমন বাড়ে, তেমনই প্রফেশনাল রোলও ডেভেলপ করে। একটা স্ট্যাবল ও সাপোর্টিভ ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট মানে কর্মীদের স্ট্রেন্থ চিহ্নিত করা যায়। অন্যদের সাথে কাজ করলে স্কিল যেমন ডেভেলপ হয়, তেমন ফরমাল ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয় না।

এক কথায়, টিমওয়ার্ক স্কিল থাকা মানে পুরো টিমকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কাজ করানোর দক্ষতা থাকা। দলের সবার মনমানসিকতা এক হবে না, আবার সবার মতামতও এক হবে না। এসব বিষয়কে মূল্যায়ন করেই কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দলের প্রতিটি সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই টিমওয়ার্কে দক্ষতা আনা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *