নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে চাচ্ছেন? জেনে নিন এর সুবিধা ও বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে

বর্তমানে আপনি যে ক্যারিয়ারে যুক্ত আছেন, হতেই পারে সেখানে আপনার এখন মন টিকছে না। আপনি চাচ্ছেন নতুনভাবে নতুন করে শুরু করতে। একটি ক্যারিয়ার পরিবর্তন করা মানে আপনার ইন্টারেস্ট, কোয়ালিফিকেশন ও প্রফেশনাল গোল এর জন্য অনেক কিছু কনসিডার করা। আপনার কী করতে ভালো লাগে সেটার উপর নির্ভর করে আপনি প্রোডাক্টিভ ক্যারিয়ার তৈরি করবেন। আজ আমরা জানবো নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে আপনাকে কী কী ধাপ পার হতে হবে এবং এর বেনিফিটগুলো সম্পর্কে।

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা বলতে কী বোঝায়?

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা একটি প্রসেস যেখানে একজন ব্যক্তি তার ক্যারিয়ার ফোকাস বদলে নতুন জবে যুক্ত হন, ভিন্ন ঘরানার ইন্ড্রাস্ট্রিতে চলে যান, নতুন ট্রেনিং করেন বা নতুন কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করেন অথবা নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। তবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা মানে যে সব সময় ইন্ড্রাস্ট্রি বদলাতে হবে তা নয়, একই ইন্ড্রাস্ট্রিতে থেকেও সেটি করা যায়। বেশিরভাগ মানুষই তাদের নিজেদের আগ্রহ, লাইফস্টাইল ও প্রয়োজন থেকেই ক্যারিয়ার বদলের সিদ্ধান্ত নেয়।

কীভাবে বুঝবেন ক্যারিয়ার বদলানোর সময় এসেছে?

হুট করেই কেউ ক্যারিয়ার বদলে ফেলে না। এ জন্য মনের ভেতর আগে থেকেই কিছু চিন্তা যুক্ত হতে থাকে। যেমন ধরুন- আপনি যে কাজ করছেন তাতে আপনার মনে হচ্ছে আপনি খুশি নন বা আগে থেকেই স্ট্রেসড হয়ে আছেন। সপ্তাহের শুরু ও শেষ কখনোই আপনাকে আনন্দ দিতে পারছে না। এমন হলে বুঝতে হবে ক্যারিয়ার বদলানোর সময় এসেছে। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে-

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে চাচ্ছেন?

  • আপনি ভাবছেন কাজ আপনার জন্য কোনো গুরুত্বই বহন করছে না
  • আপনি বুঝতে পারছেন আপনার পজিশনে নতুন করে জানার ও শেখার কোনো চান্স নেই
  • প্রতিষ্ঠানে আপনার কাজের কোনো ভ্যালু দেয়া হচ্ছে না
  • ভাবছেন, অন্য কোনো ক্যারিয়ারে হয়ত আপনি ভালো করবেন
  • নিজের কাজ করতে একদম আগ্রহ পাচ্ছেন না
  • সারাদিন কাজ করেও আপনি বোর হয়ে যাচ্ছেন, স্ট্রেসড হচ্ছেন আর নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তা হচ্ছে
  • কাজের সময় সর্বক্ষণ আপনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকেন আর ভাবেন, কখন অফিসের সময় শেষ হবে!

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার ৬টি স্টেপ

১) শুরুতে নিজের আগ্রহের প্রতি ফোকাস করুন

আপনার কীসে আগ্রহ সেটা আগে খুঁজে বের করুন। সেই আগ্রহগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং খুঁজে দেখুন বর্তমান জবে সেগুলো খুঁজে পাচ্ছেন কিনা। যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে খুঁজে দেখুন কোন কোন জবে এই আগ্রহগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।

২) ব্যাকগ্রাউন্ড ও ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স এর লিস্ট বানিয়ে নিন

আগ্রহের জায়গাগুলোর তালিকা করে ফেলেছেন? দারুণ! এবার তালিকা করুন আপনার আগের অফিসের নিয়োগকর্তাদের, জব টাইটেল, কলেজ ডিগ্রি ও সার্টিফিকেটের। এতে আপনি বুঝতে পারবেন রোল অনুযায়ী আপনার সিভিতে কোন কোন তথ্যগুলো যুক্ত করতে হবে এবং কোথা থেকে আপনাকে আরও ট্রেনিং বা পড়ালেখা করতে হবে। সেই সাথে, এটাও তালিকা করুন যে, কোন কোন জব, ক্লাস, ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট আপনাকে আগ্রহী করে তোলে এবং ক্যারিয়ার বেছে নিতে সাহায্য করে।

৩) আগ্রহ ও অভিজ্ঞতাকে ক্যারিয়ার অপশনের সাথে তুলনা করুন

আচ্ছা, যে ক্যারিয়ারে আপনি যুক্ত হতে চাচ্ছেন, তার সাথে কি আপনার ভ্যালু, স্কিল বা প্যাশনের সম্পর্ক আছে? থাকলে কতটুকু? এই তালিকাগুলো করে ফেলা জরুরি। তালিকা অনুযায়ী খেয়াল করুন আপনার কোয়ালিফিকেশন অনুযায়ী জব ম্যাচ করছে কিনা এবং যে কাজ আনন্দ নিয়ে আপনি করতে চাচ্ছেন সেখানে আনন্দ পাবেন কিনা।

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার আগে

৪) দুই বা তিনটি ক্যারিয়ার অপশন বেছে নিবেন না

একবার যখন পটেনশিয়াল ক্যারিয়ার টাইটেল তৈরি করেছেন, তখন এটিকে ভ্যালু, স্কিল ও প্যাশনের সাথে যুক্ত করুন এবং সমান গুরুত্ব দিন। এরপর আপনি তিন বা চারটি অপশন থেকে একটি বেছে নিন। সবগুলো অপশনই চুজ করতে যাবেন না। এতে সার্চিং এরিয়াও কমে আসবে এবং আপনার আসলে যেটাতে আগ্রহ সেটা খুঁজে বের করতে পারবেন।

৫) ক্যারিয়ার সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করুন 

ক্যারিয়ার অপশন নিয়ে সার্চ করা যখন প্রায় শেষ হয়ে আসবে, তখন সিলেক্ট করা ক্যারিয়ার নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করুন। স্যালারি কেমন হতে পারে, এডুকেশন রিকয়ারমেন্টগুলো কী কী এবং জেনারেল ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট সবকিছু সম্পর্কে জেনে নিন। যে কাজ করতে আপনি ভালোবাসেন সেগুলোর সাথে আপনার ভ্যালু ও স্কিল কতটুকু গুরুত্ব পাবে বুঝে নিন।

৬) অ্যাপ্লাই করুন

ভালোভাবে রিসার্চ করার পর এবার জব টাইটেল ও ওপেনিং দেখে অ্যাপ্লাই করে ফেলুন। কোন কোম্পানি কী চাচ্ছে সেটা বুঝে সিভি ও কভার লেটার তৈরি করুন। আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড ও এক্সপেরিয়েন্স অনুযায়ী অ্যাপ্লিকেশন করেছেন কিনা নিশ্চিত হোন। অ্যাপ্লাই করার পর, আপনাকে অবশ্যই ইন্টারভিউয়ের জন্য প্র্যাকটিস করতে হবে এবং প্রিপারেশন নিতে হবে।

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার সুবিধা

বর্তমান বদলে নতুনভাবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করার বেশ কিছু সুবিধা আছে। এমনই কয়েকটি সুবিধা সম্পর্কে জানাচ্ছি-

নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে শেখা

new challenge

সত্যি বলতে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করা মানে একদম ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করা এবং নলেজ বাড়ানো। ক্যারিয়ার বদলে ফেললে আপনাকে কাজ করতে হবে ভিন্ন ধারার পরিবেশে, নতুন কাজ করতে হবে, ভিন্ন উদ্দেশ্যে করতে হবে এবং সেগুলোর প্রসেসও হবে আলাদা। এগুলোর প্রতিটিই আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ ও কমিউনিকেশন ব্যারিয়ার তৈরি করে, তবে শেষ পর্যন্ত সাকসেসও তৈরি করে যেটা বেশ স্যাটিসফায়িং।

নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া

ক্যারিয়ার বদলালে আপনি জীবনে নতুন কাজ করার জন্য নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে পাবেন। ধরুন আপনি ১০ বছর ধরে একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত আছেন। এখন আপনি চাচ্ছেন স্পেশাল বাচ্চাদের জন্য ভিন্ন ধারার শিক্ষা পদ্ধতিতে যোগদান করতে। আবার আপনি চাইলে কিন্তু নতুন একটি ইন্ড্রাস্ট্রি খুঁজে সেখানেও যুক্ত হতে পারেন। যেমন- অনেক প্রতিষ্ঠান এখন ট্রেনিং দেয়ার জন্য টিচিং স্কিল আছে এমন ব্যক্তিদের খুঁজছে। আপনি এখানেও নিজেকে ট্রান্সফার করতে পারেন।

বেশি বেতন পাওয়া

নতুন ক্যারিয়ারে আপনি হয়তো আগের চেয়ে বেশি বেতন পেতে পারেন। একই ইন্ড্রাস্ট্রিতে হোক বা অন্য ইন্ড্রাস্ট্রিতে, আপনি আপনার পেশাগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্যালারি বাড়াতেই পারেন। এ জন্য অবশ্য আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কারা বেশি বেতন, সুবিধা ও বড় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

হেলদি ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট পাওয়া যায়

একটি নতুন রোলে কাজ শুরু করা মানে সুযোগ রয়েছে আগের চেয়ে হেলদি ও পজিটিভ ওয়ার্ক এনভায়নমেন্টে কাজ করার। এতে আপনার স্ট্রেস কমবে।

নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হওয়া

নতুন সহকর্মীদের সাথে পরিচয় হওয়া

ওয়ার্কপ্লেসে নতুন কলিগদের সাথে পরিচিত হওয়া নতুন জবের অন্যতম ভালো লাগার একটি অংশ এবং নতুনভাবে শুরু করার জন্য বেশ পজিটিভ একটি উপায়। ভিন্ন চিন্তাধারার মানুষদের সাথে মিশলে এবং তাদের অভিজ্ঞতা শুনলে আপনিও আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারবেন এবং স্কিল ও নলেজ ডেভেলপ করতে পারবেন। সেই সাথে নতুন টিম মেম্বারদের সাথে সম্পর্ক হলে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক গ্রো হওয়ার চান্স বাড়ে, যেখানে আপনি সবকিছু শুরু করতে পারবেন একদম ভিন্ন একটি উপায়ে। নিজেকে আরও ইমপ্রুভ করতে পারবেন এবং ওয়ার্ক পারফরম্যান্সও ভালো হবে।

শিডিউল ফ্লেক্সিবল হতে পারে

ক্যারিয়ার ট্র্যাকের উপর ডিপেন্ড করে, আপনি এমন কাজ বেছে নিতে পারেন যেখানে কাজ করার সময় একদম ফ্লেক্সিবল থাকবে। তাই ক্যারিয়ার বদলানোর সময় ফ্লেক্সিবল টাইম পাচ্ছেন কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখুন। এতে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স হবে। স্ট্রেস কমাতে ও পারসোনাল গোল অ্যাচিভ করতে শিডিউল ফ্লেক্সিবল হওয়া খুব জরুরি।

নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে চাওয়া অন্যায় নয়। বয়স যাই হোক না কেন, নিজের প্যাশন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা দোষের নয়। তাই অনেক কিছু না ভেবে যদি বর্তমান কাজ ভালো না লাগে, তাহলে প্যাশনের প্রতি ঝুঁকুন। হারবেন না, জিত আপনারই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *