প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি কী এবং প্রোডাক্ট সেল করতে এটি কেন প্রয়োজন?

যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে অনলাইন শপিং এর গুরুত্ব যেমন বেড়েছে, তার সাথে বেড়েছে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির গুরুত্ব। ই-কমার্স এর বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রোডাক্ট এর ছবির আকর্ষণ ও গুরুত্ব দুটোই বেড়েছে। একটি বিজনেস এর উন্নতি করতে এরপর অনলাইনে তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে সুন্দর করে করা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি এর বিকল্প নেই। শুধুমাত্র সুন্দর ও নান্দনিক ফটোগ্রাফির মাধ্যমে অনেক ব্যবসাই এগিয়ে গিয়েছে। মানুষের মস্তিষ্ক কেবল ১৩ মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই ছবি প্রসেস করতে পারে। এর মানে হচ্ছে, কাস্টমারের কাছে ফার্স্ট ইম্প্রেশন ভালো তৈরির জন্য আপনার প্রোডাক্ট এর ছবি সময় পাচ্ছে ১৩ মিলি সেকেন্ড। তাই, ছবিতে এমন কিছু অবশ্যই থাকতে হবে যাতে কাস্টমারের মনে তা দীর্ঘ সময় প্রভাব ফেলে এবং কাস্টমারকে প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহী করে। এ কাজে সময় নিয়ে ও সুন্দরভাবে করা ফটোগ্রাফির জুড়ি নেই।

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি কী?

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি অথবা কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফি হচ্ছে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের ফটোগ্রাফি যা ব্যবহার করে অ্যাডভার্টাইজ করা হয়। প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি কাস্টমারকে প্রোডাক্টটি কিনতে আগ্রহী করে সাধারণত কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবির সাথে প্রোডাক্টের ডিটেইল ও ফিচারসহ থাকে। এর লক্ষ্য হচ্ছে কাস্টমারকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ডিটেইলসে ধারণা দেয়া এবং সম্ভাব্য কাস্টমারকে আকর্ষণ করা, প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী করে তোলা। প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি মানে শুধু তোলা ছবিই নয়, বরং এতে আরও থাকে এডিট, ফটোশপের কাজ।

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি

কী কী ধরনের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করা যায়?

সব বিজনেস এর প্রোডাক্ট যেমন এক নয়, তেমনি সব প্রোডাক্টকেও একইভাবে ফটোগ্রাফি করে কাজ করা যায় না। প্রোডাক্টের ধরন, ব্যবহার, গুণগত মান, স্টাইল ও অরিজিন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল ও টেকনিক ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করতে হয়। একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কাস্টমারকে আপনার প্রোডাক্টটি পছন্দ করানো। তাই অবশ্যই ছবি তোলা রুচিশীল হতে হবে। ছবির মান ও ভঙ্গি ভালো না হলে তা বরং উলটো কাজ করবে এবং কাস্টমারের মনে আপনার বিজনেস নিয়ে খারাপ ধারণা স্থায়ী হয়ে যাবে। বিভিন্ন ধরনেই প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করা যায়, তবে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কয়েকটি নিয়েই আমরা আজকে কথা বলবো।

ইন্ডিভিজ্যুয়াল শট

এটা একটা খুব প্রচলিত প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি টাইপ। এই টাইপের ফটোগ্রাফিতে একটাই প্রোডাক্ট দেখানো হয়। সাধারণত ক্যাটালগ, ব্যানার ও প্রোডাক্ট এর সাথে অতিরিক্ত ছবি হিসেবে ওয়েবসাইটে শো করা হয়, বিভিন্ন সাইড থেকে মাঝে মাঝে ইন্ডিভিজ্যুয়াল শট দিয়ে প্রোডাক্টের বিভিন্ন ডিটেইলস, মেজারমেন্ট, শেপ ইত্যাদি বুঝানো হয়। এ ধরনের শট সাধারণত ফুল হোয়াইট ব্যাকগ্রাউন্ডে নেয়া হয়, যাতে আলাদা করে প্রোডাক্টের সব ডিটেইলস বোঝা যায়।

গ্রুপ শট

গ্রুপ শটে একসাথে বেশ কয়েকটা প্রোডাক্ট দেখানো হয়। এ ধরনের শট প্রায়ই কিট, কালেকশন, সেট ইত্যাদি বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। গ্রুপ ফটোগ্রাফি কাস্টমারকে একই সাথে কয়েকটি সম্পর্কিত জিনিস অথবা একই কালেকশনের ভিন্ন ভিন্ন জিনিস সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও অ্যাডভার্টাইজমেন্টে এ ধরনের ফটোগ্রাফি কার্যকর, কারণ এই টাইপের ফটোগ্রাফি শুধু একটা প্রোডাক্ট না দেখিয়ে একই গ্রুপের বেশ কয়েকরকম প্রোডাক্ট দেখানো যায়। যেমন টি সেট, টি-কফি-সুগার এর জার সেট, আর্টের পেন্সিল সেট ইত্যাদি।

লাইফস্টাইল শট

এ ধরনের ফটোগ্রাফিতে আপনি দেখাবেন আপনার প্রোডাক্টটি কীভাবে কাজ করে অথবা ব্যবহার করতে হয়। এ ধরনের ফটোগ্রাফি সাধারণত মডেলদের দিয়ে অথবা প্র্যাকটিকাল সেট আপে করানো হয়ে থাকে। লাইফস্টাইল শট প্রোডাক্টের পিছনের গল্প বলে এবং কাস্টমারদেরকে ধারণা দেয় তারা তাদের রোজকার জীবনে কীভাবে কীভাবে প্রোডাক্টটি ব্যবহার করতে পারেন। লাইফস্টাইল শট প্রোডাক্টের পেজে ইন্ডিভিজ্যুয়াল শর্ট এর সাথে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল ইত্যাদি ভিজ্যুয়াল চ্যানেলেও ব্যবহার করা যায়। তবে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী অ্যাডভার্টাইজিং এ। কারণ এটি খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং কাস্টমারকে প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে আগ্রহী করে।

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি তে লাইফস্টাইল শট

স্কেল শট

এ ধরনের ফটোগ্রাফি ব্যবহার করা হয় প্রোডাক্টের একচুয়াল সাইজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে। অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে একটা সমস্যা খুবই কমন, সেটা হচ্ছে প্রোডাক্টের সাইজ বুঝতে ঝামেলা হয়, হয়তো বড় সাইজ ভেবে ছোট সাইজ অর্ডার করে দেয়া হয়। অথবা প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে সাইজ নিয়ে হতাশ হতে হয়। কিন্তু স্কেল শট ধরনের ফটোগ্রাফিতে প্রতিদিনের ব্যবহৃত ও পরিচিত কোনো কিছু পাশে রেখে প্রোডাক্টের সাইজ বোঝানো হয়। যেমন- বই, মোবাইল, নির্দিষ্ট মাপের বোতল ইত্যাদি। এর ফলে কাস্টমার প্রোডাক্টের আসল সাইজ বুঝতে পারেন এবং তার কেনা বা না কেনার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিতে পারেন।

ডিটেইলড শট

এই ধরনের ফটোগ্রাফি সাধারণত সেইসব প্রোডাক্টের জন্য করা হয়, যেগুলোতে সূক্ষ্ম কাজ অথবা ডিটেইলস থাকে। সাধারণত গয়না, ছোট জিনিসপত্রে এ ধরনের শট নেয়া হয়৷ এ ধরনের শট বিশেষভাবে করা লাইট সেটিং এ খুব সাবধানে নিতে হয়, কারণ প্রোডাক্ট সম্পর্কে বুঝতে পারা এবং তার সূক্ষ্ম কারুকাজগুলো ভালোভাবে চোখে পড়া জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন ভিডিও অ্যাডভার্টাইজিংএও এখন স্লো মোশনে ডিটেইলে দেখানো হয় গয়না বা ছোট জিনিস। এ থেকেই বোঝা যায় ডিটেইলড শট কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্যাকেজিং শট

যদিও এটা অত গুরুত্বপূর্ণ নাও মনে হতে পারে, কিন্তু প্যাকেজিং ফটোগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমাররা এখন আর শুধু প্রোডাক্টই কিনেন না, তারা প্রোডাক্টের সাথে আসা এক্সপেরিয়েন্সটাও ভালোভাবে চান। আপনি নিজেই যদি সুপারশপে গিয়ে কোনোভাবে নরমাল প্লাস্টিক প্যাকেজিং করা একটা খাবার আর ফুড গ্রেড প্লাস্টিকে প্রিমিয়াম প্যাকেজিং এ একটা খাবার দেখেন, আপনার মন কোনদিকে যাবে? আর আর যদি আপনি সুন্দর ব্র্যান্ডেড প্যাকেজিং এর ব্যবস্থা করতেই পারেন, তাহলে কাস্টমারদের দেখাতেই বা আপত্তি কিসের? একটা সুন্দর প্রোডাক্ট এর সাথে তার সুন্দর প্যাকেজিং মন ভালো করে দেয়। এ কারণে প্রোডাক্টের ছবির সাথে প্যাকেজিং এর ছবিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ফ্ল্যাট-লে শট

ফ্ল্যাট লে শট সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভালো সাড়া ফেলতে পারে বিশেষত ইনস্টাগ্রাম এ। ফ্ল্যাট-লে শট নিতে প্রোডাক্ট এবং প্রপস মূলত একটা সমান প্লাটফর্মে সাজানো হয় এবং বার্ডস আই ভিউ থেকে ছবি তোলা হয়। এ কারণেই একে বলা হয় ফ্ল্যাট লে। এখানে ক্রিয়েটিভিটির অনেক জায়গা থাকে। মূলত বিউটি প্রোডাক্ট বা ফুল আউটফিট এভাবে ফ্ল্যাট লে ফটোগ্রাফি করা হয়।

রিভিউ ফটো

রিভিউ ফটো

রিভিউ ফটো কোনো বিজনেস থেকে নয়, বরং প্রোডাক্ট কেনার পর কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে আসলে কাস্টমার যে ধরনের ফটো দেবে, সেটাই নিতে হয়। তবে, রিভিউ ফটো একটা বিজনেস সেকশনে থাকা জরুরী। কারণ এতে আপনার বিজনেসের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে এবং অন্য কাস্টমারের ভালো অভিজ্ঞতা দেখে নতুন কাস্টমাররা আগ্রহী হন।

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য যা যা জরুরী 

লাইটিং

যেকোনো ফটোগ্রাফিতেই লাইটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিও এর বাইরে নয়। প্রোডাক্টের কালার, টেক্সচার ও ডিটেইল বোঝাতে ঠিকঠাক লাইটিং খুবই জরুরী। এছাড়াও বিশেষ ধরনের প্রোডাক্ট, স্টাইল, ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রপস ইত্যাদির জন্য বিশেষ বিশেষ ধরনের লাইটিং এর দরকার হয়। সাধারণত ন্যাচারাল লাইট অথবা স্টুডিও লাইটিং সেটআপ প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়।

কম্পোজিশন

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিতে কম্পোজিশন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে। কম্পোজিশন হচ্ছে প্রোডাক্ট ছবিটা তোলার সময় কীভাবে ফ্রেমে আসছে তা। কম্পোজিশনে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো খেয়াল রাখতে হবে, যেমন প্রোডাক্টের ফিচারস, ডিটেইলস, ঠিকঠাক কালার ইত্যাদি। কম্পোজিশন সেট করার কিছু বেসিক রুল, যেমন- রুল অফ থার্ড, লিডিং লাইন, সিমেট্রি, গ্রীড লাইন ইত্যাদি খেয়াল করতে হয়। যাতে ছবি তোলাটা সুন্দর হয় এবং মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিতে ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে এমন, যা প্রোডাক্টকে কমপ্লিমেন্ট করে। প্রোডাক্ট থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেয় না। ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে সলিড কালার, ওয়ালপেপার, অল্প একটু টেক্সচার করা সারফেস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও স্টুডিও সেটিং বা আউটসাইড সেটিং এ ন্যাচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড ও ব্যবহার করা যায়। আবার বিশেষ ধরনের প্রোডাক্ট বিশেষ ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রেজেন্ট করারও একটা ট্রেন্ড আছে। যেমন- দুই আলাদা কালারের জোড়া ব্যাকগ্রাউন্ডে সম্পূর্ণ অন্য কালারের প্রোডাক্ট এর ছবি। খুব বেশি এলোমেলো হিজিবিজি বা ছক কাটা ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোডাক্টের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে।

প্রপস ও স্টাইলিং

প্রপস প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির সৌন্দর্য বাড়ায়, আর প্রোডাক্টটা কী কাজে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। তবে প্রপস অবশ্যই সাবধানে ব্যবহার করতে হয়। প্রপস যাতে রিলেটেড হয় এবং মূল প্রোডাক্ট থেকে ফোকাস না সরিয়ে ফেলে, সে খেয়াল রাখতে হবে। প্রোডাক্ট আর প্রপস সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা, একে অন্যের সাথে যায় এমন রঙ ব্যবহার করা এবং টুকটাক ডেকোরেট করা প্রোডাক্টের সৌন্দর্যকে বাড়ায়।

প্রপস

ক্যামেরা ও ইকুইপমেন্ট

ভালো ফটোগ্রাফির জন্য ভালো মানের ক্যামেরা ও ইকুইপমেন্ট জরুরী। তবে ভালো ভালো ক্যামেরা আর স্টুডিও সেটআপ এর পাশাপাশি স্মার্ট ফোন দিয়েও এখন খুব ভালোভাবে ফটোগ্রাফি করা যায়। মূলত ফটোগ্রাফির কিছু টেকনিক ও ফটোগ্রাফারের দক্ষতার উপরে ব্যাপারটা নির্ভর করে। তবে ছোটখাটো জিনিসপত্র স্মার্ট ফোনের ক্যামেরায় চালিয়ে নেওয়া গেলেও বড় মাপের জিনিসপত্রে ক্যামেরাই দরকার হয়।

এডিটিং ও রিটাচ

শুধু ফটোগ্রাফি নয়, ফটোগ্রাফির পরের প্রসেসিংও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্রপিং, কালার কারেকশন, রি টাচিং, ফিল্টার ইত্যাদির মাধ্যমে ছবিকে আরো সুন্দর ও স্ট্যান্ডার্ড করে তোলা যায়। কিছু কিছু ফটোগ্রাফির ভুলও পোস্ট প্রসেসিং এ সুন্দর করে ঠিক করে ফেলা যায়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এডিট এর ফলে আসল প্রোডাক্টটি যাতে বদলে না যায়। প্রোডাক্ট এর অথেন্টিসিটি থাকাটাই ফটোগ্রাফির মূল লক্ষ্য।

কনসিস্টেন্সি

ফটোগ্রাফির স্টাইলে কনসিস্টেন্সি থাকাটা প্রয়োজনীয়। এখানে একই প্রোডাক্ট এর ছবি দেয়া হবে সেখানে সবগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল ভালো দেখায় না, খাপছাড়া ও এলোমেলো মনে হয়। কিছু ছবির কোয়ালিটি ভালো, কিছু খারাপ এমন ছবিও দেখতে ভালো লাগে না। তাই ছবির কোয়ালিটি ও স্টাইল এর কনসিস্টেন্সি থাকাটা দরকারি।

প্ল্যাটফর্ম অপটিমাইজেশন

আমরা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছি যে সকল ছবি সকল প্ল্যাটফর্মে ভালোভাবে চলে না। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্দিষ্ট স্টাইলের ছবি ব্যবহার করতে হবে। যেমন- ফ্ল্যাট লে আর লাইফস্টাইল শট সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভালো চলে। অন্যদিকে ডিটেইল, স্কেল, ইন্ডিভিজ্যুয়াল এ ধরনের শটগুলো ওয়েব সাইটে প্রোডাক্টের পেজে ভালো চলে। তাই প্ল্যাটফর্ম অনুযায় ছবি বাছাই ও এডিট করতে হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক যার দিকে খেয়াল রাখতে হবে

ডিটেইলসে ফোকাস করুন

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি

বিভিন্ন প্রোডাক্টকে আলাদা করে তাদের নিজস্ব ফিচার ও ডিটেইলস। তা হতে পারে টেক্সচার, কালার অথবা ডিজাইন। ফটোগ্রাফিতে যেন এসব ডিটেইলস ফুটে ওঠে তা খেয়াল রাখতে হবে।

ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলুন

প্রোডাক্টের একই দিকে ফোকাস করে ছবি তোলা কাস্টমারদেরকে প্রোডাক্টের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে না। বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা আলাদা এঙ্গেলে প্রোডাক্টের ছবি তুলুন। পিছন থেকে সামনে থেকে উপর থেকে তোলা ছবিগুলো ব্যবহার করুন যাতে কাস্টমার প্রোডাক্ট, তার সাইজ ও ডিজাইন সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা পায়।

ইউনিক সেলিং পয়েন্টগুলোকে হাইলাইট করুন

ইউনিক সেলিং পয়েন্ট বা ইউএসপি (USP) হচ্ছে প্রোডাক্টের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অথবা গুণ যা বিক্রি বাড়তে সাহায্য করবে। খেয়াল রাখতে হবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেন ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ভালোভাবে বোঝা যায়। হতে পারে এটা স্পেশাল ফিচার, এক্সক্লুসিভ ডিজাইন অথবা ইকো ফ্রেন্ডলি ম্যাটেরিয়াল, এই ইউনিক সেলিং পয়েন্টগুলোই অন্যান্য কম্পিটেটর প্রোডাক্ট থেকে আপনার প্রোডাক্টকে আলাদা করবে।

ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল টেস্ট করুন

সব প্রোডাক্ট যেমন একই স্টাইলে ফটোগ্রাফিতে ভালো লাগবে না, তেমনি আবার কোন প্রোডাক্ট কোন স্টাইলে ভালো লাগছে, তা আপনি টেস্ট না করলে বুঝতে পারবেন না। তাই ফটোগ্রাফির নতুন নতুন স্টাইল আর টেকনিক টেস্ট করে দেখুন। যে স্টাইল আপনার প্রোডাক্ট এর সাথে সবচেয়ে ভালো মিলছে, সেটাই ফলো করুন।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ব্যবহার করুন

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অথবা এসইও(SEO) হচ্ছে একটি বিশেষ টেকনিক, যা ব্যবহার করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিক ট্রাফিক আনতে পারেন। প্রোডাক্টের নাম, অল্টার ট্যাগ, কি ওয়ার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে উপরের দিকে থাকা যায় এবং ওয়েবসাইটের অর্গানিক ট্রাফিক আসে।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

ভালোমানের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করতে বেশ কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেগুলোকে বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবহার করতে হবে। সেগুলো হলো-

  • কালার প্যালেট
  • স্যাচুরেশন
  • ফোকাল লেংথ
  • শ্যাডো
  • কম্পোজিশন
  • লোকেশন ও কন্টেক্সট
  • শটস কনসিসটেন্সি

এগুলো মূলত ক্যামেরা আর ফটোগ্রাফারের কাজ। যদি নিজেই ফটোগ্রাফি করেন তাহলে এসব জিনিসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মনে রাখতে হবে, প্রোডাক্ট ইমেজ ব্র‍্যান্ডিং এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট এখন মানুষের নজর কাড়ে এবং মনে গেঁথে থাকে। প্রায় ৭৫% এরও বেশি কাস্টমারের মনে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি প্রভাব ফেলে এবং তাদেরকে প্রোডাক্ট ও ব্র‍্যান্ডের প্রতি আগ্রহী করে। একইসাথে, ২২% কমার্শিয়াল অর্ডার রিটার্ন করা হয় ছবির সাথে প্রোডাক্টের মিল না থাকায়। কাজেই এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি একটা বিজনেসকে একাই উঠিয়ে বা নামিয়ে দিতে পারে। তবে উপরে বর্ণনা করা টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে আপনিও নিজের বিজনেস এর ফটোগ্রাফিকে প্রফেশনাল লেভেলে নিয়ে যেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *