লোকে আপনাকে সম্মান করবে যে কয়েকটি অভ্যাস মেনে চললে

অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার যে কোনো জায়গায় এমন কেউ না কেউ থাকে, যাকে কমবেশি সবাই বেশ পছন্দ করে। কিন্তু কেন? তারা কি আসলে আলাদা কোনো মন্ত্র জানে? নইলে কীভাবে সব মানুষের এত পছন্দের পাত্র হয়ে ওঠে তারা? সত্যি বলতে এটার আসলে কোনো ম্যাজিক ট্রিক নেই। এজন্য দরকার কিছু অভ্যাস নিয়মিত মেনে চলা। কিন্তু সেই অভ্যাস কোনগুলো যেগুলো মানলে লোকে আপনাকে সম্মান করবে? চলুন তাহলে জানা যাক এ বিষয়েই।

লোকে আপনাকে সম্মান করবে যে অভ্যাসগুলো মানলে

১) সৎ থাকা 

সম্মান অর্জনের প্রথম ধাপটি হচ্ছে সৎ থাকা। সত্যি বলতে মিথ্যাবাদীকে কেউ পছন্দ করে না। এটা খুব সিম্পল একটি বিষয়। কোনো না কোনো বিষয়ে যদি ছোটখাটো মিথ্যাও আপনি বলে থাকেন এবং অন্যরা সেটা বুঝে ফেলে তাহলে আপনার উপর পরবর্তীতে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাবে। আর বিশ্বাস ছাড়া, সম্মানও অর্জন করা যায় না। সৎ হওয়া মানেই যে আপনাকে কঠিন হতে হবে তা নয়। নম্র হয়েও সত্য কথাটা সুন্দর করে বলা যায়।

২) মন দিয়ে শোনা 

যখন আপনার সাথে কেউ কথা বলছে, তখন মন দিয়ে তাদের কথা শোনা জরুরি। এর মানে এই নয় যে, অপরজন টানা কথা বলেই যাচ্ছে আর আপনি তার শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছেন। এর অর্থ হচ্ছে, তারা যখন কথা বলছে তখন সেটা খুব মন দিয়ে শোনা, আগ্রহ দেখানো, আপনি যে তার কথা বুঝতে পারছেন সেটা রেসপন্ড করে মাঝে মাঝে বোঝানো। আপনি যখন কাউকে কিছু বলেন এবং সেটা মনে রেখে পরবর্তীতে সে আপনাকে কথার মাঝে মেনশন করে, তাহলে আপনার খুব ভালো লাগবে না? এর কারণ হচ্ছে, আপনি যখন বলেছেন তখন সেও মন দিয়ে শুনেছে। তাই নেক্সট টাইম যখন আপনি কারও কথা শুনবেন, তখন পুরোটা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করবেন।

মন দিয়ে কথা শোনা

৩) স্পষ্টভাবে কথা বলা 

ধরুন, অফিসের মিটিং এ নতুন আইডিয়া জেনারেট নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনার ভাবনাতেও আইডিয়া এলো। কিন্তু স্পষ্টভাবে উঁচু গলায় বলতে পারলেন না দেখে আপনার কথা কেউ শুনলো না। তার বদলে অন্য কলিগের আইডিয়া কনফার্ম হয়ে গেলো। মিটিং শেষে যখন টিম লিডারকে জানালেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন মিটিং এ কেন আপনি কথা বললেন না। আপনি বললেন, সাহস ছিল না, স্পষ্টভাবে বলতে পারছিলেন না। এই যে সুযোগটা হারিয়ে গেলো পরবর্তীতে এটা ফেরত নাও আসতে পারে। তাই সুযোগ লুফে নিতে হবে সময়মতো। কথা যে আপনাকে জোর গলায়, রুড বিহেভ করে বলতে হবে তা নয়। নম্রতার সাথে সুন্দরভাবে কথা বললে সেটাই বরং বেশি গ্র্যান্টেড হয়। আর স্ট্রেইটফরওয়ার্ড হওয়ার কারণে লোকে আপনাকে সম্মান করবে।

৪) অন্যকে বোঝা

‘লোকে আপনাকে সম্মান করবে’ – কিন্তু কেন? এই কেন’র উত্তরে যতগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে অন্যকে বুঝতে পারা। কীভাবে এটি আপনাকে সম্মান এনে দিবে? কারণ এই গুণটি আপনার মাঝে থাকলে আপনি শুধু নিজের জগতেই আটকে থাকবেন না। আপনি অন্য একজন মানুষকেও বুঝতে পারবেন এবং তারা কী ভাবছে জানতে পারবেন। এতে একে অপরের মাঝে সম্পর্ক সহজে তৈরি হবে।

৫) ওয়াদা রক্ষা করা

আপনি যদি অন্যের সম্মান পেতে চান, তাহলে আপনাকে ওয়াদা রক্ষা করা শিখতে হবে। যখন কাউকে কমিটমেন্ট করবেন, তখন সেখান থেকে আর পেছন ফিরে আসা যাবে না। সেটা যে কেউ হতে পারে। বন্ধু, পরিবারের সদস্য, কলিগ এমনকি নিজের সন্তানও। এটা একবার শিখে গেলে সম্মান অর্জন করা সহজ হয়ে যাবে।

৬) আপনারও অন্যকে সম্মান দেয়া 

শুধু লোকে আপনাকে সম্মান করবে এমন ধারণা ভেবে থাকলে মস্ত বড় ভুল করছেন। আপনারও জানতে হবে কীভাবে অন্যকে সম্মান দেয়া যায়। প্রতিটি মানুষকে তার বয়স, স্ট্যাটাস বা ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে নয়, বরং মানুষ হিসেবে সবার আগে সম্মান দিতে হবে। আপনি যখন আরেকজনকে সম্মান দিচ্ছেন, তখন সেও আপনাকে সম্মান দিবে।

৭) শান্ত থাকা

লোকে আপনাকে সম্মান করবে - এমনটি চাইলে শান্ত থাকা শিখতে হবে

যে কোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারা একটি বিশেষ গুণ। জীবন কখনো পুরোপুরি গোছানো হয় না এটা সবাইকেই বুঝতে হবে। কখনো কখনো দিন খারাপ যাবে, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এমন ধরনের পরিস্থিতিতে মাথা গরম করে সবার সাথে রাগারাগি, খারাপ ব্যবহার করে বসলেন। এতে কিন্তু হিতে বিপরীতই হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে না। এই গুণটি আত্মস্থ করতে পারলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সও কন্ট্রোল করতে পারবেন।

৮) বিনয়ী থাকা

ধরুন, আপনার সামনে কেউ তার অ্যাচিভমেন্ট নিয়ে ভীষণ গর্ব করেই যাচ্ছে। আপনি সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে খানিকটা বিরক্তই হচ্ছেন। অপরদিকে, অন্য ব্যক্তি নিজের অর্জনের কথা জানাচ্ছেন বেশ বিনয়ের সাথে। এতে কেউ বিরক্ত তো হচ্ছেই না, বরং তাকে আগের চেয়ে বেশি সম্মান দিচ্ছে। বিনয়ী হওয়া মানে এই নয় যে, আপনি অর্জনের কথা বলবেন না বা নিজেকে ক্ষুদ্রভাবে প্রকাশ করবেন। এর মানে হচ্ছে, অন্যের সামনে নিজেকে জ্ঞানী হিসেবে তুলে ধরা। সব সময় চেষ্টা করুন আপনার সামনে থাকা বিনয়ী মানুষের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখতে।

৯) নিজে হাসা এবং অন্যকে হাসানো

অবাক হচ্ছেন এই পয়েন্ট দেখে? ভাবছেন হাসির মাধ্যমে লোকে আপনাকে সম্মান করবে কীভাবে? খুব সহজ! আপনার মাঝে যদি গ্রেট সেন্স অব হিউমার থাকে, তাহলে অপর ব্যক্তির সাথে আপনি সহজেই কানেক্টেড হয়ে যেতে পারবেন। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে ছোট্ট একটি হাসির কথাও সবার মাঝে উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে। আর সত্যি করে বলুন তো, সেন্স অব হিউমার আছে এমন কাউকে দেখলে কি আপনারও ভালো লাগবে না? তাহলে সেই গুণটি আপনার মাঝে থাকলে ক্ষতি কি!

১০) নিজের সমস্যা নিজেই সমাধানের চেষ্টা করা

আমরা প্রত্যেকেই অনেক বাঁধা, চ্যালেঞ্জ, কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাই। শুধু আপনি একা নন। সব সময় এসব বিষয় নিয়ে কমপ্লেইন করলে আশেপাশের সবাই ভাববে আপনি আসলে একা কিছুই করতে পারেন না। অন্যের দ্বারে যেয়েই সমাধানের চেষ্টা খোঁজেন। তাই কঠিন যে কোনো পরিস্থিতিকে নিজেই সামলাতে হবে। একবার যখন এটা পারবেন, তখন দেখবেন আশেপাশের সবাই আপনার প্রশংসা করছে। আপনার মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

লোকে আপনাকে সম্মান করবে কীভাবে জানেন?

১১) ভুল স্বীকার করা

কেউই পারফেক্ট নয়। আমাদেরও কাজে ভুল হয়। কিন্তু এই ভুল আপনি কীভাবে শোধরাচ্ছেন এবং সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটাই দেখার বিষয়। অন্যের ভুল না ধরে, অন্যকে দোষারোপ না করে, চেষ্টা করুন নিজের ভুল স্বীকার করতে। সামনের দিনে কী হবে, কীভাবে হবে, এসব অতিরঞ্জিত চিন্তা বাদ দিয়ে বর্তমানকে গুছিয়ে চলার চেষ্টা করুন। অন্যরা যখন দেখবে আপনি ভুল স্বীকার করছেন, তখন তারাও শিখবে ভুল হলে কীভাবে স্বীকার করতে হয়।

১২) নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা

অন্যের থেকে সম্মান পাওয়ার জন্য সবার আগে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা জরুরি। এটাই যদি না পারেন, তাহলে বাকি সব বৃথা হয়ে যাবে। আপনি হয়ত ভাবছেন, আপনি যথেষ্ট স্মার্ট নন, মজা করতে পারেন না। নিজেই যদি নিজের ব্যাপারে এমন ভাবেন, তাহলে বাকিরা কী ভাববে? মনে রাখবেন, আপনি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট। অন্যরা কী বলছে, কী ভাবছে, সেগুলো নিয়ে অন্তত আপনার ভাবার কোনো দরকার নেই। আপনি আপনার নিজস্ব শক্তি সম্পর্কে জানেন, কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবেন সেটা জানেন, নিজেই নিজেকে অন্যদের চেয়ে সেরা করে তোলার উপায় জানেন। আপনি যখন নিজের প্রতি কনফিডেন্ট থাকবেন, তখন দেখবেন লোকে আপনাকে সম্মান করবে নিজে থেকেই।

আমরা শুধু অন্যের থেকে সম্মান চাই। কিন্তু ভুলে যাই কীভাবে অন্যদের সম্মান করতে হয় অথবা বুঝেই উঠতে পারি না কেন আমাকে কেউ সম্মান করছে না। দেখুন সম্মান সব সময় চেয়ে চেয়ে পাওয়া যায় না। এজন্য কিছু অভ্যাস নিজের মধ্যে তৈরি করে নিতে হবে। আর একবার অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করে ফেলতে পারলে জীবন সহজ হয়ে যাবে, লোকে আপনাকে সম্মান করবে, ভালোবাসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *