“কী করলে কাস্টমার খুশি হবে এবং তার লয়্যালিটি বাড়বে, এটা জানানোর দায়িত্ব কাস্টমারের নয়, বরং এটা জেনে নেয়ার দায়িত্ব একজন মার্কেটারের।”
— জেফ বেজোস, ফাউন্ডার এন্ড সিইও অফ আমাজন.কম।
বলা হয়ে থাকে, আমরা প্রতিদিন যা যা করি, যেভাবে ভাবি এবং যেসব পদক্ষেপ নিই, সবকিছুর পিছনেই আমাদের অবচেতন মনের একটা প্রভাব থেকে যায়। আমাদের সচেতন মন সাধারণত আমাদের ব্রেনের লজিক্যাল অংশটাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। যেসব জিনিসকে আমরা ইনটুইশন, ফিলিংস অথবা সেন্স বলে মনে করি, সেসব জিনিসের বড় একটা অংশই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের অবচেতন মন অথবা সাব-কনশাস মাইন্ড। যেমন মনে করুন, একই ফ্লেভার ও স্বাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের কিছু আইসক্রিম আপনার সামনে। আপনি কোনটা বেছে নিচ্ছেন তা কোন কোন ব্যাপারের উপর নির্ভর করছে? হয়ত কোনোটার প্যাকেজিং খুব আকর্ষণীয়, অথবা কোনো একটা প্রোডাক্টের অ্যাডভার্টাইজিং আপনাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। অথবা হয়ত কোনো একটা ব্র্যান্ড আপনার প্রিয় তারকার সাথে কোলাব করেছে, যে কারণে আপনি সেই ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এর সবই আসলে নিউরো মার্কেটিং এর স্টাডি। কীভাবে কী করলে কাস্টমার আগ্রহী হবে, এটা জানাই নিউরো মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য।
নিউরোসায়েন্স অনেক আগে থেকে আমাদের পরিচিত হলেও বর্তমানে মার্কেটাররা নিউরো সায়েন্স এবং সাইকোলজিকে বিভিন্নভাবে মানুষের আচার-আচরণকে ইনফ্লুয়েন্স করতে ব্যবহার করছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কাস্টমারের সাথে তাদের কমিউনিকেশন বাড়াতে এর সাহায্য নেয়, একই সাথে কাস্টমাররা তাদের নিজেদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে প্রোডাক্ট কেনে এবং নতুন অভ্যাস তৈরি করে।
নিউরো মার্কেটিং কী?
“নিউরো মার্কেটিং” টার্মটা প্রথম ব্যবহার করেন প্রফেসর ড. অ্যাল স্মিটস (Dr Ale Smidts)। তিনি তার পেপার “Looking into Neuromarketing: About the Possibilities of Neuromarketing” এ ২০০২ সালে এ সম্পর্কে আলোচনা করেন। নিউরোমার্কেটিং হচ্ছে মূলত একটি কমার্শিয়াল স্ট্র্যাটেজি, যা কাস্টমারের ব্যবহারের প্যাটার্ন ও বিভিন্ন প্রোডাক্টের স্টিমুলেশন অনুযায়ী কাস্টমারের নিউরাল রেসপন্স এর উপর ভিত্তি করে তাতে পাওয়া রেজাল্ট মার্কেটিং এর কাজে লাগায়। মূলত এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে কাস্টমারের মোটিভেশন, প্রেফারেন্স এবং ডিসিশন নেয়ার পিছনের থট প্রসেসকে বুঝে নেয়া এবং সে তথ্য কাজে লাগিয়ে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ও মার্কেটিং করা, যাতে কাস্টমার গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে মূলত মানুষের ব্রেনের সাইকোলজিক্যাল এবং নিউরাল সিগন্যালগুলো মেজার এবং অ্যানালাইসিস করে সেখান থেকে কাস্টমারের মনস্তত্ত্ব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ব্রেন স্ক্যানিং এর নিউরাল অ্যাক্টিভিটি, এবং আই মুভমেন্ট বিহেভিয়ার অভ্যাস ইত্যাদি অ্যানালাইসিস করে সাইকোলজিকাল ট্র্যাকিং নিউরো মার্কেটিং মেজার করার সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজ উপায়।
নিউরো মার্কেটিং মূলত কনটেন্ট তৈরি করারও একটি উপায়। তবে নিউরো মার্কেটিং কাজে লাগিয়ে করা ওয়েবসাইট, লোগো, ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদি মানুষের মস্তিষ্কে একটা ইমোশনাল রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্র্যান্ডগুলো তাদের কাস্টমারের পছন্দ অনুযায়ী নিজেদেরকে মডিফাই অথবা রিব্র্যান্ডিং করতে পারে, এছাড়াও ভিন্ন ধরনের সার্ভিস অফার করতে পারে।
বিজ্ঞান কী বলে?
২০০২ সালে ইকোনমিক সায়েন্স এ নোবেল পাওয়া ড্যানিয়েল কাহনেমান এর মতে, আমাদের ব্রেন আসলে দুই ভাগে বিভক্ত। এই দুই ব্রেনকে উনি “র্যাশনাল ব্রেন” বা কনশাস ব্রেন এবং “প্রাইমাল ব্রেন” বা সাবকনশাস ব্রেন বলে ব্যাখা করেন। যেটা আমরা আগেই বলেছি, র্যাশনাল ব্রেন আমাদের ডিসিশনকে ইনফ্লুয়েন্স বা সাপোর্ট করে, কিন্তু প্রাইমাল ব্রেন আমাদের এটেনশন, ট্রাস্ট, মেমোরাইজেশন এবং ইনটুইশনকে সরাসরি ইনফ্লুয়েন্স করে। প্রাণীজগতের অন্যান্য অনেক সদস্যদের সাথেই এই একটা ব্যাপারে মানুষের মিল আছে। মূলত কোনো সিদ্ধান্ত প্রাইমাল ব্রেনে প্রসেস ও ফাইনালাইজড হবার পরেই আমাদের র্যাশনাল ব্রেইন সেটা লজিক দিয়ে জাস্টিফাই করে এবং সেটাকে ব্যাকআপ দেয়।
আমাদের এই প্রাইমাল ব্রেন মূলত ৬টা স্টিমুলি দিয়ে প্রভাবিত হয়, আর নিউরো মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মূলত মার্কেটারদের এই ৬টা স্টিমুলি ট্রিগার করতে হয় যাতে তাদের ম্যাসেজ কাস্টমারদের কাছে ভালোভাবে যায়।
এই ছয়টা স্টিমুলি হচ্ছে-
পার্সোনাল
এটা মূলত আমাদের ভালোভাবে ও সুস্থ মনমানসিকতায় বেঁচে থাকার জন্য আসে। এ ক্ষেত্রে মূলত অডিয়েন্সদের নানা সমস্যা ও প্রয়োজন, এবং কীভাবে তার সমাধান করা যায় সে নিয়ে কাজ করতে হয়।
কনট্রাস্টেবল
এই স্টিমুলি সিদ্ধান্ত নেয়ার গতিকে প্রভাবিত করে। মার্কেটাররা তাদের অ্যাডকে এমনভাবে প্রেজেন্ট করতে পারেন যাতে কাস্টমারের মনে হয় তারা সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। যেমন- বেশ কয়েকটি অপশন দেয়া, স্পেশাল এডিশন বানানো ইত্যাদি।
ট্যাঞ্জিবল
এই স্টিমুলি মূলত পরিচিত, ফ্রেন্ডলি, রিলেটেবল এবং দেখামাত্র চিনে নেয়া যাবে এমন কিছু খোঁজে। তা হতে পারে রেফারেন্স অথবা প্যাটার্ন। এই ক্ষেত্রে মার্কেটাররা রিলেটেবল কোনো ঘটনা, পরিচিত টার্ম, প্যাটার্ন, অথবা সিচুয়েশন ব্যবহার করে অ্যাড ম্যাসেজ তৈরি করতে পারেন। যেমন- জনপ্রিয় কোনো গান, প্রতিদিনকার জীবনের কোনো কমন ঘটনা, স্কুল কলেজে জনপ্রিয় কোনো আইডিয়া ইত্যাদি।
মেমোরেবল
এটা মূলত আমাদের মেমোরি মনে রাখতে অথবা ভুলে যেতে দায়ী। তাই মার্কেটাররা এমন ম্যাসেজ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে বেশ স্ট্রং শুরু এবং শেষ থাকবে, যাতে তা মানুষের মনে থাকে এবং আগ্রহ জাগায়।
ভিজ্যুয়াল
নাম শুনেই বোঝা যায় যে, এটা সরাসরি চোখের দেখার সাথে সম্পর্কিত। এই স্টিমুলি চোখে দেখার উপর নির্ভর করে রিয়েক্ট করে এবং ডিসিশন মেক করে। এটাকে কাজে লাগাতে মার্কেটাররা দেখতে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় মার্কেটিং ম্যাটারিয়াল তৈরি করতে পারে। যেমন- গ্রাফিক ইমেজ, কালারফুল ছবি, ইউনিট ফন্ট ইত্যাদি।
ইমোশনাল
এটা আবেগ ও অনুভূতির সাহায্য নিয়ে মানুষের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাব ফেলে। এই স্টিমুলি ট্রিগার করা বেশ সহজ, এবং মানুষ প্রায়ই এর দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়। মনে রাখার মতো ম্যাসেজ সৃষ্টির মাধ্যমে ইমোশনাল মার্কেটিং প্রাইমাল ব্রেনকে খুব ভালোভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রাইমাল ব্রেনকে প্রভাবিত করার কিছু কম্পোনেন্ট
ফিয়ার অফ মিসিং আউট(FOMO)
fear of missing out এর মানে হচ্ছে কোনো কিছু হারিয়ে ফেলা, খুব মিস করা অথবা আরো বেশি ভালো কোনো সুযোগ হাতছাড়া হবার ভয়।
পিছিয়ে পড়ে থাকতে কেউই চায়না। এখনকার সময়ের মিলেনিয়ালদের মধ্যে ৬৯ পার্সেন্ট FOMO তে প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নিতে দোটানা হয়, কারণ তারা মনে করে তারা হয়তো কিছুদিন অপেক্ষা করলে, অথবা অন্য কোথাও গেলে এই দামে এর চেয়ে ভালো কিছু পেয়ে যাবে। এটা মানুষের একটা ক্ল্যাসিক সাইকোলজিক্যাল লুপহোলকে ব্যবহার করে, কারণ এতে আমাদের মনে হয় আমরা যদি দ্রুত চিন্তা না করি তাহলে হয়তো আমরা ভালো কিছু হারাবো। ঠিক এই জায়গাতেই মার্কেটাররা FOMOকে ব্যবহার করে যাতে ক্রেতার মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। যেমন- লিমিটেড টাইম অফার, ফ্লাশ সেল, লো স্টক ইত্যাদি।
সোশ্যাল প্রুফ
এখানে একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। মনে করুন, আপনি রেস্টুরেন্টে যাবেন লাঞ্চ করতে। আশেপাশে রেস্টুরেন্ট খুঁজছেন, গুগল ম্যাপ দেখে আশেপাশে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট পেয়ে গেলেন তারমধ্যে দুটো আপনার পছন্দ হলো। কিন্তু একটাতে প্রায় কয়েকশ রিভিউ এবং ফাইভ স্টার এর কাছাকাছি। অন্যটায় অল্প রিভিউ এবং রিভিউ তেমন ভালো নয় রেটিং ২-৩ এর মাঝামাঝি। কোনটাতে যাবেন আপনি?
সম্ভবত আপনি প্রথমটাতেই যাবেন কারণ অনেক মানুষ এখানে গিয়েছেন এবং জায়গাটাকে ভালো বলেছেন। এই যে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্স এর মাধ্যমে আপনি ডিসিশন নিচ্ছেন, এটাকেই বলে সোশ্যাল প্রুফ।
এই বিহেভিয়ারটা আসে যখন সম্ভাব্য কাস্টমাররা বুঝতে পারে না কী করতে হবে, এবং অন্যের মতামতের উপর নির্ভর করে। এমন সব ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডগুলো তাদের রিপিটিং কাস্টমার অথবা অলরেডি কাস্টমারদের থেকে সোশ্যাল প্রুফ সংগ্রহ করেন। যেমন- রেটিং, রিভিউ, রেকমেন্ডেশন, অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি। এতে সম্ভাব্য কাস্টমাররা প্রোডাক্টটি কিনতে অথবা ট্রাই করতে নিরাপত্তাবোধ করেন কারণ অন্যরাও এটি ব্যবহার করেছেন এবং তাদের ভালো লেগেছে বলে মতামত দিয়েছেন।
ইগো রিইনফোর্সমেন্ট
এটা মূলত সিগন্যাল ফ্রয়েডের থ্রি পার্ট স্ট্রাকচার থেকে উল্লেখ করা। মানুষের আইডি ইগো এবং সুপারইগোকে ফ্রয়েড তার এই থ্রি পার্ট স্ট্রাকচার মডেলের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। আইডি হচ্ছে সাবকনসাস মাইন্ডের প্রিমিটিভ এবং ইন্সপেক্টিভ অংশ, যা আমাদের ইম্পালস এবং চাহিদাকে কন্ট্রোল করে। ইগো হচ্ছে কনশাস মাইন্ডের র্যাশনাল ডিসিশন মেকিং পার্ট, আর সুপারইগো হচ্ছে কনশাস মাইন্ডের সেলফ ক্রিটিসিজম এর অংশ।
এ ক্ষেত্রে মার্কেটারদের করণীয় হচ্ছে প্রথমে মানুষের “ইগো” এর কাছে সেল করতে তার “আইডি” কে ট্রিগার বা টাচ করতে হবে। যাতে মানুষ কনসার্ট মাইন্ডে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই সাবকন্সাস মাইন্ড তাকে পারমিশন দিয়ে দেয়।
স্ট্যাটাস ক্বো বায়াস (status quo bias)
Status quo bias মানে হচ্ছে আগের অবস্থাকেই আদর্শ মনে করা এবং সেভাবেই থাকা। মানুষ প্রায়ই তার যে বর্তমান অবস্থা তা থেকে সরতে চায় না, অথবা পরিবর্তন পছন্দ করে না। এর কারণ কী? এর কারণ হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মনে করে পরিবর্তন অনেক সময় ও খরচ সাপেক্ষ, নিরাপদ নয় এবং রিস্কি। নতুন কিছু করার, অথবা নতুন প্রোডাক্ট নেওয়ার খরচ যদি আগের প্রোডাক্টের দেওয়া বেনিফিট এর চাইতে বেশি হয়, তাহলে সেটা আসলে ক্ষতি হিসেবে দেখা হয়। তার চাইতে আগের প্রোডাক্টটি মানুষ ভালো মনে করে।
status quo bias মানুষের মধ্যে অনেক স্ট্রং ভাবে থাকে, তাই অন্যান্য সব ব্র্যান্ডের মতো নিজের প্রোডাক্ট শোকেস করলে সেটাকে মানুষের মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
এক্ষেত্রে মার্কেটিং এ এমনভাবে স্টোরি টেলিং এবং প্রেজেন্টেশন নিয়ে আসতে হবে, যাতে সম্ভাব্য কাস্টমাররা মনে করে যে বর্তমান প্রোডাক্টটা তার আগের ব্যবহৃত প্রোডাক্ট এর চাইতে ভালো হবে। তার বর্তমান সিচুয়েশন তাতে আটকে রাখছে, অথবা পিছিয়ে দিচ্ছে, এর চাইতে নতুনত্বকে সাথে নিয়ে আরো ভালো সমাধান হতে পারে।
কোনো ক্রেডিবল অথরিটি ফিগারের অ্যাপ্রুভাল
আমরা প্রায়ই দেখি বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সেলিব্রিটি বা জনপ্রিয় ফিগারদের তাদের মার্কেটিং এ হায়ার করে অথবা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানায়। যেমন- নাইকিতে মাইকেল জর্ডান, জর্জিও আরমানিতে ডেভিড বেকহাম, ইন্ডিয়ায় চিংস চাইনিজ এ রানভীর সিং, বাংলাদেশে জা এন জি আইসক্রিমে সাকিব আল হাসান ইত্যাদি।
অথরিটি প্রিন্সিপাল বলতে বুঝানো হয় বিখ্যাত বা বড় কারো সাথে মানুষের একাত্ম হওয়ার চেষ্টা, কারণ তাদের মনে হয় বিখ্যাত হবার সাথে সাথে তারা ক্ষমতার অধিকারী হয়, আর ক্ষমতাবানদের ব্যবহৃত জিনিস নিশ্চয়ই ভালোই হবে!
ঠিক এই মানসিকতাকে সামনে রেখেই বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো সেলিব্রিটিদের দিয়ে তাদের প্রমোশন ও ব্র্যান্ড প্রেজেন্টিং করায়, কারণ এতে মানুষের মনে প্রভাব ফেলা যায়, সেই সেলিব্রিটির আগে থেকেই থাকা ফ্যানবেসকে কাজে লাগানো যায় এবং মার্কেটে ভালো জায়গা করে নেয়া যায়। এছাড়াও কাস্টমাররা মনে করেন যে বিখ্যাত ও ক্ষমতাবান কেউ সাজেশন দিলে সে জিনিস ভালো না হয়েই যায় না।
সেন্টিমেন্টালিটি
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এটা খুব বড় একটা ইস্যু। এই জায়গায় মার্কেটারদের কোনো ভুল করা যাবে না। সেন্টিমেন্ট একটা ব্র্যান্ডকে যেমন দাঁড় করাতে পারে, তেমনি ভেঙে ফেলতেও পারে। একটা প্রোডাক্টের উপর বিভিন্ন কারণেই কাস্টমারদের ফিলিংস আর ইমোশন কাজ করতে পারে। হতে পারে তার অরিজিন স্টোরি, হতে পারে বিশেষ কোনো ঘটনায় সেই প্রোডাক্টের স্ট্যান্ড, অথবা বিশেষ কোনো ঘটনায় ফোকাস করা। এক্ষেত্রে কাস্টমার এবং ব্র্যান্ডের মধ্যকার মানসিক ও আবেগের সম্পর্ক কাস্টমারের নেয়া ডিসিশনে প্রভাব ফেলে।
মনে করে দেখুন, হয়তো এমন হয়েছে, যে কোনো দোকানে গিয়ে কিছু প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সেলসম্যানের ভালো ব্যবহারে আপনি সেই দোকান থেকে কিছু একটা কিনেছেন। অথবা পছন্দের তারকার সাথে সংযুক্তি, অথবা অন্য কোনো অনুভূতি থেকে আপনি প্রোডাক্টটি কিনে ফেলেছেন। আমরা সাধারণত আনন্দ খুঁজি, এবং যেসব জিনিস আমাদেরকে ভালো বোধ করায়, সেগুলোর জন্য খরচ করতে আফসোস হয় না। বিক্রি বাড়াতে মার্কেটারদের তাদের প্রোডাক্ট এর সাথে কোনোভাবে পজিটিভ ফিলিং জুড়ে দিতে হবে।
“লেস ইজ মোর” এপ্রোচ
অনেক চয়েস, অনেক বেশি ইনফরমেশন, এবং একই রকম দেখতে ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিড়ে কাস্টমার প্রায়ই অভিভূত অথবা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। কোনটা নেবেন, কোনটা নেবেন না এ ধরনের ডিসিশন নিতে তখন তাদের বেশ দোটানায় পড়তে হয়। এর ফলে প্রায়ই দেখা যায় তারা ভুল ডিসিশন নিয়ে নিচ্ছেন, অথবা শেষ পর্যন্ত কিছুই নিচ্ছেন না। একই স্ট্রাটেজি ফলো করা অনেক অনেক ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট এর ফলে কাস্টমার এই সমস্যায় পড়েন।
একই সাথে অনেক জমকালো জটিল এবং বেশি সংখ্যক জিনিসের থেকে বের হয়ে আমরা এখন মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ এর দিকে ঝুঁকছি। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জিনিস কেউই কিনতে চাচ্ছে না। হয়তো আগে যাদের শখ ছিল সব রকমের একটা করে নেওয়ার, তাদের বেশিরভাগই এখন ঠিক যতটা দরকার ততটাই নিচ্ছেন। তাই ফ্ল্যাশি ও গ্ল্যামারাস অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পাশে সরিয়ে রেখে সিম্পল ও মিনিমাল ডিজাইন এবং ইজি টু ইউজ প্রোডাক্টে কাস্টমার অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই দিকটাও মার্কেটটারদের খেয়াল রাখতে হবে।
নিউরো মার্কেটিং রিসার্চ এর টুলস আর টেকনিক
নিউরোমার্কেটিং সম্পূর্ণটাই নিউরোসায়েন্স এর উপর নির্ভরশীল। অনেক আগে থেকেই মার্কেটিং টেকনিক ও কাস্টমারের মেন্টালিটি এবং থট প্রসেস এর উপর গবেষণা হয়ে আসছে। সাধারণ কথা বলার ভাষা, অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার গতি থেকে শুরু করে মডার্ন আর অ্যাডভান্সড টেকনিকগুলোও সবই প্রায় কাস্টমারের মন বোঝা আর তাতে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তবে এখনকার টুলগুলো কাস্টমারের কনশাস মাইন্ডকে ছাড়িয়ে সাবকনশাস মাইন্ডের খবরও জানতে পারে কাস্টমারের কিছু বোঝার আগেই। বর্তমানে নিউরোমার্কেটারদের কাছে অ্যাভেইলেবল অল্প কিছু টুলস আর টেকনিক নিয়েই আমরা আজ কথা বলবো।
ফেসিয়াল কোডিং সিস্টেম
১৯৭০ সালে, মানুষের ছয়টা বেসিক ইমোশন আনন্দ, দুঃখ, রাগ, ভয়, ঘৃণা এবং অবাক হওয়া মাথায় রেখে আমেরিকান সাইকোলজিস্ট পল একম্যান সকল কালচারের সব ধরনের মানুষের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন কোড করার একটি সিস্টেম তৈরি করেন। এই সিস্টেম প্রতি মিলিসেকেন্ডে নেয়া ফ্রিজ ফ্রেম ফটোগ্রাফ অ্যানালাইসিস করে মানুষের মুখের এক্সপ্রেশন বুঝতে পারে ও তার সাথে ইমোশনের যোগসূত্র বের করতে পারে।
আই ট্র্যাকিং
আমাদের চোখ খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা যা পছন্দ করি সেইদিকটাই ফলো করে। মুভমেন্টের পরিবর্তন, গতি, পলক ফেলার দ্রুততা, একটানা তাকিয়ে থাকার সময় আর কোনোকিছু খোঁজার প্যাটার্ন ইত্যাদি সব থেকেই একজন কনজ্যুমার কীভাবে কোনো অ্যাড বা ফটোতে রেসপন্স করছে তা বোঝা যায়। লম্বা সময় ধরে তাকিয়ে থাকার মানে হচ্ছে অ্যাড এর ম্যাসেজ বুঝতে সমস্যা, কম সময়ে তাকানো, বোঝা বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, ঘনঘন পলক ফেলা হয় যখন জিনিসটা ফোকাসে থাকে না, একইসাথে একটানা তাকিয়ে থাকার মানে হলো ফোকাস ওইদিকেই থাকা। এছাড়াও আমাদের পিউপিল এর ডায়ালেটেড বা বড় হবার মাপকে বলা হয় পিউপিলোমেট্রি, এর দ্বারা কোনো অ্যাড এর স্টিমুলেশনে পিউপিল কতটা রেসপন্স করছে তা বোঝা যায়। তবে সেটা ভালো না খারাপ বোঝা যায় না।
ব্রেনের ব্লাড ফ্লো চেক করা
ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং অথবা FMRI আমাদের ব্রেনে ব্লাড অক্সিজেনেশন লেভেল ডিপেন্ডেন্ট (BOLD) সিগন্যালের পরিমাপ করে। যখন ব্রেনের একটা নির্দিষ্ট অংশ বেশি কার্যকর থাকে, তখন সেখানে ব্লাডের গতি বাড়ে। কোন অ্যাড এর মাধ্যমে ব্রেন কতটা ইনফ্লুয়েন্সড হচ্ছে তা এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তবে একটা ইমেজ ক্যাপচারে আট সেকেন্ড লাগার কারণে এর কার্যকারিতা খুব সীমিত, কারণ এইটুকু সময়ের মধ্যে অন্য কোনো অংশে মনোযোগ চলে যেতে পারে।
ইইজি
ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি বা EEG ইলেকট্রিক ব্রেইন অ্যাক্টিভিটির মধ্যে সরাসরি চেঞ্জ ক্যাপচার করে। এটা MRI অথবা PET স্ক্যান থেকে বেশি কার্যকরী। তবে, এসব টুল আর টেকনিক বেশ এক্সপেন্সিভ এবং বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই এফোর্ড করতে পারে না, অথবা এত ঝামেলায় যেতে চায় না। এর সবগুলো অবশ্য সরাসরি মার্কেটিং এর কাজে ব্যবহারও করা যায় না। তাই কিছু সাধারণ টুলস নিয়ে এখন কথা বলব।
প্যাকেজিং
একদম গভীর সায়েন্স এ না গিয়ে সাধারণ একটা ব্যাপার যদি আমরা দেখি, আকর্ষণীয় অথবা ইউনিক প্যাকেজিং হলে ক্রেতারা নিজ থেকেই অনেকটা আগ্রহী হন। বিভিন্ন বড় বড় ব্র্যান্ডকে প্রায়ই দেখা যায় তাদের প্যাকেজিং এ চেঞ্জ আনতে। হতে পারে তা ডিজাইনে, কনভেনিয়েন্সে বা সিস্টেমে। যেমন, কোকাকোলার ভিন্টেজ কাঁচের বোতল থেকে প্লাস্টিকের বোতলে সুইচ করা, বিভিন্ন হ্যান্ডওয়াশ এর বোতল এর সাথে সাথে রিফিল প্যাক যোগ করা, অথবা গতানুগতিক কেচাপের বোতল ছেড়ে হাইনজ এর ফ্লিপ টপ আপসাইড ডাউন প্লাস্টিকের কেচাপ বোতলের ব্যবহার, যাতে কেচাপ ঢালতে সুবিধা হয়। এছাড়াও, কিছু কিছু প্রোডাক্টের প্রিমিয়াম প্যাকেজিং দেখে ক্রেতারা নিজ থেকেই আগ্রহী হন, কিছু নির্দিষ্ট কালার, প্যাটার্ন, টেক্সচার ইত্যাদি প্যাকেজিং এ অ্যাড করলে তা ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণ করে।
কালার সাইকোলজি
রিসার্চে দেখা যায়, একজন ক্রেতা কী কিনছেন তা প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই রঙের উপর নির্ভর করে। বিশ্বাস হচ্ছে না? ভেবে দেখুন, কাঁচা বাজারে গিয়ে কেমন সবজি কিনব, তাও তো আমরা সবজির রঙ দেখেই বুঝতে পারি, মজার না? “ম্যানেজমেন্ট ডিসিশন” এ ছাপা এক আর্টিকেলে লেখা হয়, যে রঙের ব্যবহার শুধু কম্পিটিটর কোম্পানি থেকে নিজেদের প্রোডাক্ট আলাদা করতেই নয়, বরং কাস্টমারের মুড আর ফিলিংস এর উপর প্রভাব ফেলতেও ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ হিসেবে বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ডকে আমরা দেখি। কোকাকোলা, কেএফসি, পিজ্জা হাট। এদের মধ্যে সিগনেচার আমরা কি পাই? বিশেষ সেই লাল রঙের ব্যবহার। গবেষণায় দেখা যায় যে লাল রঙ ক্ষুধার অনুভূতি বাড়ায় এবং খাবারকে আরো আকর্ষণীয় লাগে, তাই এটি একটি খুব স্মার্ট সিলেকশন। একইসাথে পেপসি, ডমিনোজের পরিচয় হচ্ছে নীল রঙ। ম্যাগির হলুদ, বার্বির গোলাপি, আবার দেশি ব্র্যান্ড সাদাকালোর সাদা কালো, আড়ং এর কমলা এর সবই কালার সাইকোলজির উদাহরণ।
এংকরিং
এংকরিং এর মানে হচ্ছে কাস্টমারকে কম খরচে প্রোডাক্টের ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা, তার মাধ্যমে লাভ করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর থেকে এগিয়ে থাকা। এটা মূলত একটু ঝুঁকিপূর্ণ, এই কারণে যে এই ট্যাকটিক্স এ মূলত যেসব ক্রেতারা একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তাদের জন্য পারফেক্ট। যেসব ক্রেতারা প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিসার্চ করেন এবং তিনি ঠিক কী চান, তাই খোঁজেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা কম কাজ করে।
এর কমন কিছু মেথড হলো বান্ডল প্যাকেজ, বাই টু গেট ওয়ান ধরনের অফার, কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গেলে কম্পলিমেন্টারি কফি বা ড্রিংক, বড় কোনো ব্র্যান্ডে ছোট ছোট কম মূল্যের জিনিস রাখা ইত্যাদি।
দ্য প্রাইস ইজ রাইট
না না, আমেরিকার বিখ্যাত সেই গেম শো নয়, এখানে বলা হচ্ছে প্রোডাক্টের সঠিক প্রাইস রেঞ্জ সেট করার ক্ষমতাকে। সিঙ্গাপুরে সোর্সড একটি স্টাডি থেকে জানা যায় যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাউন্ডেড আপ নাম্বার, যেমন ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ১০০০ টাকা এই ধরনের নাম্বারগুলো কাস্টমারকে ঠিকঠাক প্রাইস এর অনুভূতি দেয়। এটা লো এনার্জি টাইমে কাজ করে যখন কাস্টমার তাড়াহুড়ায় থাকেন এবং খুব বেশি ভাবতে চান না।
আবার যখন কাস্টমার কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে ভাবেন এমন লজিক্যাল ব্রেন ইউজ করেন, তখন কমপ্লেক্স নাম্বার বা প্রিসিশন প্রাইস প্রেফার করেন। এই ব্যাপারটা পুরোটাই ইমোশন আর লজিক এর ব্যাপার। এখন বাকিটা কোম্পানির হাতে, যে তারা কোন ধরনের কাস্টমার চান।
মেমরেবল হেডলাইন
হেডলাইনকে বলা হয় ইন্টারনেটের এটেনশন সিকার, ক্লিকের জন্য লেখা। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এর রিসার্চাররা এক স্টাডির মাধ্যমে দেখতে পান বুদ্ধিদীপ্ত, একটু শ্লেষ ও হাস্যরস থাকা, “হিপোক্যাম্পাল হেডলাইনস” ধরনের লেখা, এগুলো অডিয়েন্স টানে বেশি। এছাড়াও বিখ্যাত কোনো মুভির ডায়লগ, প্রবাদ প্রবচন ইত্যাদিকে একটু ঘুরিয়ে স্টোরির কন্টেন্টের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া হেডলাইনগুলো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সেনসরি মার্কেটিং এর ব্যবহার
সেনসরি মার্কেটিং হচ্ছে এমন ধরনের মার্কেটিং যা আমাদের পাঁচটা সেন্সের উপর প্রভাব ফেলে। মানুষের পাঁচটা প্রধান সেন্স হচ্ছে দেখা, শোনা, গন্ধ নেয়া, স্বাদ পাওয়া আর স্পর্শ অনুভব করা। সেনসরি মার্কেটিং এই সব সেন্সকে একই সাথে ট্রিগার করার চেষ্টা করে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়। যেমন- উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একটা লাইভ কিচেন রেস্টুরেন্টে আপনি প্রথমে যাবেন ক্ষুধা মেটাতে, সেখানে গিয়ে যদি আপনি রঙিন ও চাকচিক্যপূর্ণ মেন্যু দেখেন, তা একই সাথে আপনার দৃষ্টি ও স্বাদকে ট্রিগার করছে। খাবারের গন্ধ ও চোখের সামনে খাবার তৈরির দৃশ্য ও শব্দ আপনাকে প্রভাবিত করবে। সেনসরি মার্কেটিং অনেক ব্র্যান্ডই সীমিত ও বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার করে এবং এতে সফলতার হারও অনেক বেশি।
সব মার্কেটিংই কি নিউরোমার্কেটিং?
আসলে একটা নির্দিষ্ট দিকে ভাবতে গেলে, দিনশেষে সব মার্কেটিংই আমাদের রেসপন্সের উপর নির্ভর করে প্ল্যান করা হয়, যেহেতু মানুষ পুরোপুরিই তার ব্রেন দিয়ে চালিত এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্রেনের উপর নির্ভরশীল, সে অর্থে বলা যায় সব ধরণের মার্কেটিংই নিউরোমার্কেটিং। তবে, এই ক্ষেত্রে নিউরোমার্কেটিং এর ফিল্ডটা সাধারণ অনুমান, জিজ্ঞাসা ও স্বাভাবিক বিহেভিয়ারেরও গভীরে, জটিল ধরনের নিউরোসায়েন্সে ও মানুষের ব্রেনের মধ্যকার কাজকর্ম বিশ্লেষণ করে বড় পরিসরের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বোঝানো হয়। দিনে দিনে সবই উন্নত হচ্ছে, নিউরোমার্কেটিংও আরো আধুনিক হচ্ছে। তাই, এখনকার আলোচনায় নিউরোমার্কেটিং বলতে আধুনিক নিউরোমার্কেটিং ও সরাসরি সায়েন্টিফিক ডাটা ইউজ করে করা মার্কেটিংগুলোকেই নিউরোমার্কেটিং হিসেবে আমরা আলোচনা করছি।
নিউরোমার্কেটিং এর সমালোচনা
নিউরোমার্কেটিং বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হলেও, এর সমালোচনাও রয়েছে কিছু। বিজ্ঞানের প্রত্যেকটা নতুন মেথডের ক্ষেত্রেই সাইড এফেক্ট থাকেই।
ব্রিচ অফ প্রাইভেসি
সমালোচনায় সর্বপ্রথম যে দিকটা উঠে আসে, তা হলো ব্রিচ অফ প্রাইভেসি। অনেক ওয়েবসাইটেই দেখা যায়, কাস্টমারের ইনফরমেশন চাওয়ার জন্য কুকি একসেপ্ট করতে বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাস্টমার না দেখেই একসেপ্ট করে নেন। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ ইনস্টল করার সময় বেশ কিছু অ্যাডিশনাল ইনফো বা পারমিশন চাওয়া হয় যা কাস্টমার ভালোভাবে না দেখেই দিয়ে দেন। এর মাধ্যমে মূলত কাস্টমারের মন বোঝা ও তাকে যথাযথ প্রোডাক্ট অফার করা হলেও এটা এক হিসেবে কাস্টমারের ব্যক্তিগত তথ্য কৌশল করে নেয়া হয়, যা কাস্টমারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট করে।
ম্যানিপুলেশন
সমালোচনার আরেকটা আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ম্যানিপুলেশন। কেউ কেউ বলেন যে, টেকনোলজি আপডেট এর সাথে সাথে নিউরো মার্কেটিং এর টেকনিকগুলো প্রায়ই কাস্টমারকে ম্যানিপুলেট করতে ব্যবহৃত হয়, তার পার্সোনাল চয়েসকে অ্যাফেক্ট করা বা তার ফ্রি উইলকে অ্যাফেক্ট করা হয়, যার ফলে কাস্টমার না চাইলেও প্রোডাক্ট নিয়ে নেন, এবং এটিকে নরমাল ভাবেন। পুশ সেলিং, কমপ্লিমেন্টারি আইটেম এবং বান্ডেল প্যাকেজড সুবিধা বা প্রোডাক্ট এ ধরনের টেকনিকের মাঝে পড়ে।
আন্ডারডেভেলাপড রিসার্চ
নিউরোমার্কেটিংকে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলে মনে করা হয়। এই কারণে যেসব রিসার্চ হয়ে গেছে বা হচ্ছে তার সত্যতা ও কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে, এর কার্যকারিতা বোঝা যাচ্ছে এর সফলতা ও সাড়া থেকেই, যা থেকে মনে হয় নিউরোমার্কেটিংই আসলে ফিউচার অফ মার্কেটিং। তবে অনেকেই একে ওভারহাইপড বলে মনে করেন।