স্বপ্ন মানুষকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে? মানুষেরই বা কতটা আশাবাদী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর হার না মানা মন থাকলে সে প্রায় অসম্ভব স্বপ্নকেও সম্ভব করে দেখাতে পারে? এ গল্প এমন এক হার না মানা তরুণীর, যিনি নিজের পরিশ্রম ও মেধার জোরে অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বকেও পিছনে ফেলে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ গল্প এক স্মল টাউন গার্ল এর, যার জেল্লায় বড় বড় শহরের পালিশ করা চকচকে বাতি তার ঝলকে মলিন হয়েছে। আমাদের আজকের গল্প যাকে নিয়ে, তার নাম ন্যান্সি ত্যাগী, উত্তরপ্রদেশের মেয়ে, যিনি বিশ্বের বড় বড় তারকাদের সাথে হেঁটেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে। তাও আবার তার নিজের ডিজাইন করা পোশাকে।
২৩ বছর বয়সী এই স্বশিক্ষিত ফ্যাশন ডিজাইনার ও ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার মূলত তার পরিচিতি তৈরি করেছেন একদম স্ক্র্যাচ থেকে পোশাক বানিয়ে। ন্যান্সি একদম কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় সিলেক্ট করা, কেনা, লেস বোতাম ইত্যাদি দরকারি জিনিস কেনা, বাসায় এনে কাটা ও সেলাই করার পুরো প্রসেস এবং তার ফাইনাল লুক তার ভিডিওতে শেয়ার করেন। ন্যান্সি বিভিন্ন বিখ্যাত ফিল্ম স্টার, মিডিয়া পার্সোনালিটি আর বিখ্যাত মুভি ও টিভি শো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েও ড্রেস বানিয়েছেন। বিশেষ করে তার ১০০ আউটফিটস ফ্রম স্ক্র্যাচ সিরিজটি মানুষের বেশ নজর কেড়েছে। এই সিরিজে তিনি ১০০টি আউটফিট বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইন্সপিরেশন থেকে, আর এই বানানোর পুরো প্রসেসটাই তিনি তার ফলোয়ারদের সাথে শেয়ার করেন। তার মেধা আর পরিশ্রমের প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিটা পারফেক্ট আউটফিট, এক্সেসরি এবং লুকে।
তবে ন্যান্সির এই কাজের পিছনের গল্প কী? কীভাবে তিনি আজকের ন্যান্সি ত্যাগী হলেন? কীভাবেই বা তিনি কানের মত চলচ্চিত্র উৎসবে সবার মধ্যের স্পটলাইট কেড়ে নিলেন? সে গল্পই আমরা বলব আজ।
কে এই ন্যান্সি ত্যাগী?
উত্তরপ্রদেশের বারানওয়া গ্রামে ন্যান্সির ত্যাগীর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ড্রেস মেকিং এর উপর তার ছিল অসীম আগ্রহ। বিভিন্ন ডিজাইন করে পুতুলের ছোট ছোট জামা কাপড় বানাতেন নিজে নিজেই। না ডিজাইনিং এর জন্য আলাদা করে কোনো ডিগ্রী নেননি তিনি, করেননি আলাদা কোনো কোর্সও। ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোর্স থেকে দেখে দেখে এবং নিজের চেষ্টায় ধীরে ধীরে পছন্দের কাজে দক্ষ হয়ে উঠেছেন তিনি।
১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করার পর ইউপিএসসি কোচিং করার লক্ষ্যে দিল্লি আসেন তিনি। কিন্তু তখনই শুরু হয় লকডাউন। পরিবারের অনিচ্ছায় শুধুমাত্র মায়ের ভরসায় একরকম জোর করেই মা ও ভাইকে নিয়ে দিল্লি চলে আসেন ন্যান্সি। কিন্তু লকডাউনের কারণে স্বপ্নে ভাটা পড়ে। সামান্য আয়ে পরিবার চলতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল।
কেমন ছিল এ সময়ের কষ্ট? বটগাছ চ্যানেলে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ন্যান্সি জানান সে সময়ের অভাবের কথা। তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম। ভাই স্কুলে যায় তার ফি দিতে হতো আবার পরিবারও চালাতে হতো। ৬-৭ হাজারে পরিবার চলতে চাইতো না। এই টাকায় বিষ ছাড়া কিছুই কেনা যায় না। পরিবার চালাতে আমার মা দিনরাত ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। আমি সারাদিন মায়ের জন্য অপেক্ষা করতাম আর আশায় থাকতাম মা যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে। মা যখন ফেরত আসত তখন মায়ের কাপড়ে ধুলাবালি ও কয়লার কালি লেগে থাকতো। আমি অনেক বেশি টাকা-পয়সা চাইনি, শুধু অতটুকু চেয়েছিলাম যেন তার মাকে রোজ রোজ কষ্ট করে ফ্যাক্টরিতে কাজ না করতে হয়। এটাই ছিল আমার শেষ চেষ্টা। ভিডিও বানিয়ে কী হয় না হয় দেখা যাক। এরপরে না হয় প্রয়োজনে সব ছেড়ে দেবো।’
যাত্রা শুরুর গল্প
ন্যান্সির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইউ পি এস সির পরীক্ষা দেওয়া। কিন্তু লকডাউনে সে লক্ষ্যে ভাটা পড়ে। পরিবার চালাতে কষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ন্যান্সির ভবিষ্যৎ নিয়েও দোটানা শুরু হয়। এমনিই বাড়ি থেকে বাবার অমতে মা ও ভাইকে নিয়ে কোচিং করতে দিল্লি চলে এসেছিলেন। ন্যান্সির বাবা চাননি মেয়ে দূরে গিয়ে পড়াশুনা করুক, তাই তার কাছ থেকে আর কোনো সাহায্য পাননি ন্যান্সি। কোচিং এর জন্য জমিয়ে রাখা শেষ আড়াই লাখ টাকা দিয়ে এবার নিজের ভাগ্যকে পরীক্ষা করে নেয়ার একটা চেষ্টা করেন। নিজের শেষ সম্বল এই টাকাটা দিয়ে ন্যান্সি একটা ভালো ক্যামেরা, কিছু লাইট এবং এডিট করার জন্য একটি ফোন কেনেন। এটা ছিল তার ভবিষ্যতের জন্য খুব রিস্কি একটি পদক্ষেপ, কিন্তু তিনি পিছু হটে যাননি। ন্যান্সি মূলত কনটেন্ট ক্রিয়েটিং শুরু করেন তার ভাইয়ের সাহায্যে। দুইজনে মিলে আলোচনা করে, শ্যুট করে, এডিটিং করে তারপর সেগুলো পোস্ট করতেন। ন্যান্সির সেসময় ট্রানজিশন ভিডিও অনেক দেখতেন এবং সে সব ভিডিও দিয়েই প্রথমে ভ্লগিং শুরু করেন। তার ভিডিওগুলোতে সিম্পল তিনটা প্রপই দেখা গিয়েছে, একটি হাতে চালানো কালো সেলাই মেশিন, একটি আয়না এবং শাহরুখ খানের একটা পোস্টার। ন্যান্সির চেষ্টায় কমতি না থাকলেও প্রথমদিকে তেমন ভিউ আসছিল না তার ভিডিওগুলোতে, খুব আস্তে আস্তে ভিউ বাড়ছিল।
এবার ন্যান্সি ও তার ভাই চিন্তা করেন অন্যভাবে ভিডিও বানানোর, কারণ এই স্ট্র্যাটেজি কাজ করছে না। শপিং ওয়েবসাইট “মিশো” থেকে প্রোডাক্ট কিনে ভিডিও করে দেখানোর ট্রেন্ড তখন খুব জনপ্রিয়। ন্যান্সি ও তার ভাই এবার এটা করে দেখারই চিন্তা করেন। তবে এক্ষেত্রে টুইস্টটা হল, ন্যান্সি তার ভিডিওতে অতিরিক্ত অতিরঞ্জিত ধরনের নাচ গান ও অভিনয় করে দেখানোর চেষ্টা করেন। এই প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘এই প্রজেক্টে আমরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড ছিলাম। আমি আমার ইউ পি এস এর ক্লাসগুলোকে যতটা সিরিয়াসভাবে নিতাম এবং তার পিছনে যতটা পরিশ্রম করতাম, ঠিক ততটাই এই কাজেও চেষ্টা করেছি। তাই যখন কোনোভাবেই কোনো কাজ হচ্ছিল না, আমরা ভিউ বাড়াতে অদ্ভুতভাবে নাচ ও অভিনয় শুরু করি, যেগুলো মানুষের কাছে প্রেম মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমরা অসহায় ছিলাম। এটা একটা ডু অর ডাই সিচুয়েশন ছিল।
অবশেষে ন্যান্সি ও তার ভাইয়ের পরিশ্রম মানুষের নজর কাড়তে থাকে। কিন্তু ভালোভাবে নয়, অদ্ভুতভাবে করা না তো অভিনয়ের কারণে তার বেশিরভাগ পাবলিসিটি নেগেটিভ। ভিডিওর সমালোচনা করার সাথে সাথে মানুষ তাকে বডি শেমিংও করতে থাকে। শারীরিক গঠন পাতলা হওয়ার কারণে ন্যান্সিকে হতে হয় ট্রল এর শিকার। কিন্তু ন্যান্সি বলেন, এভাবেই তিনি ভেসে উঠেছেন। তিনি বলেন যে দেয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, মানুষের নেগেটিভ কমেন্ট ও ট্রলিং সিরিয়াসলি নেবার মতো আর্থিক অবস্থা তাদের ছিল না। এর মধ্যেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল ন্যান্সির নিজের গুণ ও মেধা। টুকটাক সেলাই এবং আউটফিট বানানো আগে থেকেই করতেন তিনি। খেলনা পুতুলের গায়ে নিজের তৈরি বিভিন্ন ড্রেস তুলে দিয়ে তাকে সব থেকে আলাদা করে তোলায় ন্যান্সির নাম ডাক ছিলো। এবার ভাবলেন না হয় এই গুণেরই ভিডিও করে দেখা যাক। যা থেকে শুরু হয় ন্যান্সির “আউটফিট ফ্রম স্ক্র্যাচ” সিরিজ। প্রথম ভিডিওতে পান অভূতপূর্ব সাড়া এবং তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। সাধারণ কাপড়কে অসাধারণ পোশাকে বদলে যাওয়ার মত মেধা ন্যান্সির ছিল। কোনোরকম কোনো ডিগ্রী অথবা ডকুমেন্টেশন ছাড়া শুধুমাত্র নিজের মেধাকে পুঁজি করে ন্যান্সি এই বিশাল বড় রিস্ক নেন এবং তার মেধা তাকে হতাশ করেনি। আস্তে আস্তে সাধারণ আউটফিট থেকে শুরু করে আলিয়া ভাট, দীপিকা ইত্যাদি বড় বড় ষ্টারদের বিশেষ বিশেষ দিনের, অথবা বিখ্যাত সব সিনেমার লুকগুলো ক্রিয়েট করতে থাকেন ন্যান্সি। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে পরিচিতিও। ধীরে ধীরে ভিডিওর ভিউ এর সাথে সাথে বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে ডিল, পি আর ও কোলাবোরেশনের অফারও পেতে থাকেন ন্যান্সি। উত্তরপ্রদেশের ছোট এক গ্রামের মেয়ে ন্যান্সি হয়ে ওঠেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও ইনফ্লুয়েন্সার।
কানে যাওয়ার গল্প
ন্যান্সির এই পরিচিতি ও প্রভাব সবারই চোখে পড়ে। তার পরিশ্রম সফল হয় যখন ২০২৪ সালের কানপিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করার জন্য ব্রুট ইন্ডিয়ার তরফ থেকে নিমন্ত্রণপত্র পান তিনি। ব্রুট ইন্ডিয়া কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অনেকগুলো স্পন্সরের মধ্যে একটি। ভারতের প্রমিসিং ট্যালেন্ট ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অনেকেই তাদের তরফ থেকে নিমন্ত্রণ পেয়ে কানে গিয়েছিলেন। তাদের সাথেই রেড কার্পেটে পা রাখেন ন্যান্সিও।
বিখ্যাত সেই গোলাপি গাউন
কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিবছর হাজার হাজার সেলিব্রেটি ফিল্মস্টার ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে কীভাবে স্পটলাইট কেড়ে নিলেন ন্যান্সি ত্যাগী? ঠিক ন্যান্সি নয়, স্পটলাইট খেলেছে ন্যান্সির সেই বিখ্যাত গোলাপি গাউন। ইনভাইটেশন পাওয়ার পর মূল অনুষ্ঠানের একমাস আগে থেকেই কাজে লেগে পড়েন ন্যান্সি। উদ্দেশ্য ছিল নিজের ডিজাইন করা ড্রেস পরে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পা রাখা। এর পেছনে ব্যয় হয়েছে তার কঠিন পরিশ্রম ও সময়। যে গোলাপি প্রিন্সেস গাউনটি পরে ন্যান্সি সবার নজর কেড়েছিলেন, সেটি তৈরি করতে ন্যান্সির লেগেছে পুরো একমাস! ১০০০ মিটার কাপড় দিয়ে তৈরি সেই গাউন ওজনে ছিল প্রায় ২০ কেজিরও বেশি! গাউনের টপ পার্ট ছিলো ঘন পুতির কাজ এবং পিছনের লম্বা রাফল ট্রেন। তার সাথে ম্যাচিং গ্লাভসে ন্যান্সি যেন কোন রূপকথার রাজকন্যা! এ ধরনের পোশাকের গল্প হয় রূপকথায় শোনা যায়, না হয় খুব বড় ফ্যাশন ডিজাইনারের ড্রেসিংরুমে, কিন্তু ছোট শহর থেকে আসা একজন উঠতি ফ্যাশন ডিজাইনার, যার কিনা কোনো ফ্যাশন ডিগ্রি, পড়াশোনা, রেকগনিশন কিছুই নেই, এলাকার মার্কেট থেকে কেনা কাপড়ে একটিমাত্র হাতে চালানো সেলাই মেশিন সম্বল করে, একমাস ধরে একা একা খেটে এরকম একটি গাউন বানিয়ে ফেলতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভবই বটে।
এ অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন ন্যান্সি ত্যাগী। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এরকম একটা সম্মাননা সোজা কোনো কথা নয়। তবে ন্যান্সির সাফল্যের মুকুটে আরো একটি পালক যুক্ত করেছে নিজের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির উপর গর্ব। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল যেখানে সারা বিশ্বের সব অতিথিরা আসেন এবং ইংরেজিতে এই প্রধান ভাষা হিসেবে বেছে নেন, সেখানে ন্যান্সি ত্যাগী সম্মান ও গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলেছেন। লঞ্চের সাথে একজন অনুবাদক ছিল যিনি তাকে সাহায্য করেছেন। তবে ইংরেজি না জানার কারণে কোনো রকমের কোনো জড়তা অথবা অস্বস্তি দেখা যায়নি ন্যান্সির মধ্যে। খোলাখুলি ভাবেই নিজের মাতৃভাষায় কথা বলে গিয়েছেন তিনি।
ন্যান্সির দ্বিতীয় ও তৃতীয় লুক
সিনড্রেলার মত ফোলানো গোলাপি গাউনটিই এবারের কানে ন্যান্সির একমাত্র লুক নয়। আরো বেশ কয়েকটি লুক করে চমকে দিয়েছেন তিনি দর্শকদের। কান চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় লুকে ন্যান্সি নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন, তার সাথে যোগ করেছেন একটা টুইস্ট।
চলচ্চিত্র উৎসবের ন্যান্সির দ্বিতীয় পোশাক ছিল হালকা ল্যাভেন্ডার রঙের এমব্রয়ডারি করা একটি শাড়ি। শাড়ি হলেও তার সাথে যুক্ত লম্বা ট্রেইল। এ ব্যাপারে ন্যান্সির বক্তব্য ওয়েস্টার্নরা এ ধরনের ট্রেন পছন্দ করেন। তাই তিনি ট্র্যাডিশনাল শাড়ির সাথে এই ট্রেন জুড়ে দিয়ে জিনিসটাকে ইউনিক করার চেষ্টা করেছেন। শাড়ির কাপড়ের ছিল খুব সূক্ষ্ম ও দক্ষ হতে করা এমব্রয়ডারি। প্রতিটি অংশই ন্যান্সির নিজের হাতে করা।
গোলাপি রঙের গাউনটির মত ন্যান্সির এই শাড়ি আউটফিট দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি বড় বড় স্টারদের চোখেও পড়েছেন ন্যান্সি। অন্য ফ্যাশন ডিজাইনাররাও খোলাখুলি প্রশংসা করেছেন ন্যান্সির মেধা ও পরিশ্রমের।
প্রথম দুই লুকে নিজের হালকা রং, এলিগ্যান্স, ও সফটনেস দেখানো ন্যান্সি সবাইকে চমকে দেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে করা তার তৃতীয় লুক দিয়ে। দারুণ প্রথম দুই ড্রেসের পুরোপুরি উল্টো এই আউটফিট। কালো রঙের করসেট টপ ও ফিস টেইল স্কার্ট, ফেদারের তৈরি স্কার্ফ ও অনেক বেড এবং স্টোন এর ব্যবহার করে ন্যান্সি তার রয়াল এবং বোল্ড লুককে তুলে ধরেন। বাকি দুটির মতো এই লুকেও অনেক প্রশংসা পেয়েছেন ন্যান্সি।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে নিজের চতুর্থ লুকে ন্যান্সি প্রমোট করেছেন সাসটেইনেবিলিটি। প্রথম তিনটি আউটফিট তার সম্পূর্ণ নিজের তৈরি হলেও স্পন্সর করেছে ভারতীয় ব্র্যান্ড মোহ- দ্য ইটারনাল ধাগা জয়পুর “। তাদের এই কালেকশনের নাম মাসুম, ন্যান্সির পরনে ছিল একটি কটন টপ স্যুট এবং ব্লেজার এবং একই কাপড়ের স্কার্ট। ১০০% অর্গানিক কটন থেকে তার এই ড্রেস তৈরি। এর নকশার প্রিন্টের ডিজাইন ব্যাংককের গ্রান্ড প্যালেস এর ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত। পরিবেশের উপকার, সতর্কতা এবং ইকো ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্টকে প্রমোট করতে ন্যান্সি এই লুকটি করেন। আগের তিনটি লুকের তুলনায় এটা ছিল বেশ সিম্পল এবং ফরমাল। তবে সব কয়টি লুকেই নজর কেড়েছেন ন্যান্সি। কান চলচ্চিত্র উৎসবের মতো বড় উৎসবে সাধারণত বিখ্যাত ডিজাইনারদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বড় বড় অভিনেত্রী, মিডিয়া পার্সোনালিটি, টিভি স্টার, ইনফ্লুয়েন্সার সবাই ধর্ণা দেন তাদের কাছে। বিখ্যাত ডিজাইনারের তৈরি আউটফিট গায়ে না চড়ালে যেন মান থাকবে না। কিন্তু এই সব ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে নিজের তৈরি তিনটি আউটফিট পরে সবার আলো কেড়ে নিয়েছেন ন্যান্সি একাই।
এ প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘ইন্টারনেটে পাওয়া তার ফলোয়ার আর ফ্যানরা তাকে প্রতিনিয়তই সাপোর্ট করে গেছে ও সাহস যুগিয়েছে। তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়াকে স্বপ্ন সত্যি হওয়াই মনে করেন। তিনি সবার কাছ থেকে পাওয়া সাপোর্ট ও ভালোবাসায় অভিভূত। এই যাত্রা খুব কঠিন হলেও তার ফল শেষ পর্যন্ত মিষ্টি হয়েছে।’
উল্লেখযোগ্য যে প্রতিবছর অনেক অনেক স্টার এবং ডিজাইনার কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করলেও ন্যান্সিই প্রথম যিনি সম্পূর্ণ নিজের ডিজাইন এবং তৈরি করা ড্রেসে রেড কার্পেটে হেঁটেছেন। এর আগে কানের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি।
ভবিষ্যৎ ভাবনা
ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন ন্যান্সি? এত বড় এচিভমেন্টের পর তার ফিউচার প্ল্যান কী? ন্যান্সি জানান, তিনি তার নিজস্ব বুটিক শপ ও ব্র্যান্ড বানাতে চান। এতদিন তিনি শুধু নিজের জন্যই তৈরি করেছেন কিন্তু এখন সবার মধ্যে তার ডিজাইন ও পরিশ্রম ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। এছাড়াও নিজের মাকে নিয়ে অনেক ভাবনা ন্যান্সির। ন্যান্সি জানান, তাদের পরিবারের খরচ চালাতে গিয়ে তার মাকে নিজের অনেক সোনার গয়না বিক্রি করে দিতে হয়েছে। ন্যান্সি তার মাকে অনেক গয়না কিনে দিতে চান। তিনি বলেন, অনেক বেশি টাকা আমি কখনোই চাইনি, আমি শুধু অতটুকু চেয়েছি যতটা হলে আমার মা খুশি থাকবে।
কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ফিরতে ফিরতেই মিনত্রা, আমাজন, মিশো সহ আর বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্র্যান্ডের সাথে কোলাবরেট করতে শুরু করেছেন ন্যান্সি। এর মাধ্যমে ফ্যাশন জগত ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ফিল্ডে তার প্রভাব আরো শক্ত হয়েছে। নিজের স্বপ্নের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন ন্যান্সি।
ন্যান্সির গল্প এটাই প্রমাণ করে যে সদিচ্ছা, মেধা আর পরিশ্রমের সাহায্যে কোনো বাধা যতই বড় হোক না কেন তাকে পার করা যায়। নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বাইরের বড় জগতে পা দিয়ে নিজের অসম্ভব স্বপ্নকেও সার্থক করা যায়।