চাকরির শেকলে বন্দি না থেকে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কি শুধু ইচ্ছা থাকলেই হয়? মোটেও নয়! আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে সফলতার জন্য আপনাকে জানতে হবে বেশ কয়েকটি স্কিল। ব্যবসা ম্যানেজ করার জন্য হার্ড স্কিল যেমন – টেকনিক্যাল ও ফাইন্যান্সিয়াল স্কিল বেশ জরুরি। সেই সাথে সফট স্কিল যেমন – কমিউনিকেশন ও লিডারশীপেরও প্রয়োজন। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো সব ধরনের স্কিল সম্পর্কে, কীভাবে সেগুলো ডেভেলপ করা যায় এবং কীভাবে এই আপনার রিজ্যুমে, কভার লেটার ও ইন্টারভিউতে এই স্কিলগুলো অ্যাড করতে পারবেন।
এন্ট্রোপ্রিনিউয়াল স্কিল কী?
এটি এমন এক স্কিল যেখানে টেকনিক্যাল স্কিল, লিডারশীপ, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কিল ও ক্রিয়েটিভ থিংকিং থাকে। এই স্কিল বিভিন্ন জব রোল ও ইন্ড্রাস্ট্রিতে অ্যাপ্লাই করা হয়। ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে এই ম্যানেজমেন্ট স্কিলগুলো ডেভেলপ করতে হবে। চলুন তাহলে এই স্কিলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যে স্কিলগুলো আপনার জানতে হবে
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কিল
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবার আগে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কিল জানতে হবে এবং ব্যবসা চালাতে হবে। এর মানে হচ্ছে আপনি নিজের মধ্যে মাল্টিটাস্ক করার অ্যাবিলিটি বাড়াচ্ছেন, সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন এবং ব্যবসার প্রফিট বাড়ানোর জন্য আপনাকে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
টিমওয়ার্ক ও লিডারশীপ স্কিল
সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আপনার যেমন লিডারশীপ রোল প্লে করতে হবে, তেমনই টিমের একটি অংশ হয়েও কাজ করতে হবে। ব্যবসায়ী মানেই হচ্ছে আপনাকে একইসাথে সুপারভাইজার ও টিমের অংশ হয়ে যেতে হবে। কারণ ইফেক্টিভ লিডারশীপ স্কিল থাকলেই আপনি টিমকে মোটিভেট করে কাজ করাতে পারবেন।
কমিউনিকেশন স্কিল
ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা – আপনি যাই হন না কেন, সবার আগে আপনাকে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। যে কোনো মিটিং এ অ্যাকটিভ লিসেনিং হওয়া থেকে শুরু করে আলোচনা করা – সব জায়গাতেই ইফেক্টিভলি কমিউনিকেট করলে বিজনেস বিল্ড করা সহজ হবে। সেই সাথে এটি আপনার বিজনেসের অ্যাওয়ারনেসকেও প্রমোট করে। ই-মেইল, কন্টেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য অ্যাডভার্টাইজিং মেথডের মাধ্যমে আপনি যে ক্লিয়ার ম্যাসেজ দিবেন, তাতে টার্গেট মার্কেটের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে।
কাস্টমার সার্ভিস স্কিল
উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি যে ইন্ড্রাস্ট্রিতেই পা রাখুন না কেন, আপনাকে ইফেক্টিভ কাস্টমার সার্ভিস স্কিল জানতেই হবে। এই স্কিল আপনাকে সাহায্য করবে কাস্টমার বেইজ তৈরি করতে এবং নিশ্চিত করবে মার্কেটে যে প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের চাহিদা রয়েছে, সেটা আপনি পূরণ করতে পারছেন কিনা।
ফাইন্যান্সিয়াল স্কিল
একটি বিজনেস চালানো মানে হচ্ছে অর্গানাইজেশনের ফাইন্যান্সিয়াল আসপেক্টের দিকে খেয়াল রাখা। আপনি ফাইন্যান্সিয়াল স্কিলগুলো কোনো ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানার, গাইডবুক থেকে বা সফটওয়্যার ইউজ করে শিখতে পারেন। এতে আপনি বিজনেসের ফাইন্যান্সিয়াল প্রসেস ট্র্যাক রাখতে পারবেন এবং অর্গানাইজও করতে পারবেন।
অ্যানালিটিক্যাল ও প্রবলেম সলভিং স্কিল
আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে আপনার মধ্যে অ্যানালিটিক্যাল ও প্রবলেম সলভিং স্কিল অবশ্যই থাকতে হবে। বিজনেসে বা ব্র্যান্ড বিল্ড আপ করার সময় অনেক কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যত বাঁধা আসে সেগুলোর সমাধান খুঁজতে হয়, বিজনেস গোল অ্যাচিভ করার জন্য প্ল্যান ও স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করতে হয় ক্রিয়েটিভ থিংকিং ব্যবহার করে।
ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কিল
ক্রিটিক্যাল থিংকিং স্কিল যেমন অ্যানালিটিক্যাল স্কিল যে কোনো ইন্ট্রিপ্রিনিউরাল স্কিল ডেভেলপ করার জন্য জরুরি। যে কোনো প্রবলেম, সিচ্যুয়েশন, প্রজেক্ট ও অপারেশনকে ভিন্ন ভিন্ন এংগেল থেকে দেখতে পারলে সমস্যা সমাধান করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়। স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং করার জন্য এবং বিজনেসে কোনো ধরনের চেঞ্জ আসলে সেটা ইমপ্রুভ করার জন্য এই স্কিল বেশ কাজে আসে।
টেকনিক্যাল স্কিল
ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস, প্ল্যানিং, মার্কেটিং ও অন্যান্য বিজনেস প্রসেসের জন্য সফটওয়্যার প্রোগ্রাম অ্যাভেয়লেবল থাকা জরুরি। আর তাই টেকনিক্যাল স্কিল ডেভেলপ করতে হবে আবশ্যিকভাবে। উদ্যোক্তাদের যদি বিভিন্ন সফটওয়্যার ও ডিজিটাল অ্যাপ্রোচ সম্পর্কে আইডিয়া থাকে, তাহলে প্রজেক্ট ম্যানেজ করতে, সেলস ট্র্যাক করতে বা বিজনেস গ্রোথের জন্য পারফরম্যান্স মেজার করা সহজ হবে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট ও অর্গানাইজেশন স্কিল
উদ্যোক্তাদের জন্য এই দুটো স্কিল থাকাও ভীষণ জরুরি। ব্রেকিং ডাউন টাস্ক থেকে শুরু করে টু ডু লিস্ট ম্যানেজ করা, ডেডলাইন সেট করে কাজ শেষ করা, নিজের ও টিমের অবজেক্টিভ অ্যাচিভ করা সবই এই দুটো স্কিলের সাথে জড়িত। সেই সাথে আপনাকে জানতে হবে বিজনেস ফাইল কীভাবে অর্গানাইজ রাখতে হয়, প্রয়োজনে একজন অফিস অ্যাসিসতেন্ট নিয়োগ দিন যিনি সকল পেপারওয়ার্ক, বিজনেস রেকর্ড ও কাস্টমার ফাইল অর্গানাইজ করে রাখতে পারবে।
ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং ও নেটওয়ার্কিং স্কিল
উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগ সময়ই দিতে হয় মার্কেটিং এ এবং ব্র্যান্ড গড়ে তোলার জন্য প্রফেশনালদের কাছে নেটওয়ার্ক বাড়াতে। সাকসেসফুল ব্র্যান্ডিং মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ইমপ্লিমেন্ট করতে পারলেই উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়া সম্ভব। মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর বিভিন্ন বিষয় বোঝার জন্য আপনি চাইলে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। তাছাড়া এমন আরও উদ্যোক্তাদের সাথে দেখা করতে পারেন যারা আপনার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়াবেন যেভাবে
ব্যবসায়িক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নানা রকম মেথড আছে। আপনি কোনো ক্লাসে, সেমিনারে বা নেটওয়ার্কিং ওয়ার্কশপে অ্যাটেন্ড করতে পারেন। স্কিল ইমপ্রুভ করার জন্য আরও যে যে কাজ আপনি করতে পারেন-
১) কোর্স করুন
এন্ট্রোপ্রিনিউয়ার স্কিল ইমপ্রুভ করার ইফেক্টিভ একটি মেথড হচ্ছে নিজের ব্র্যন্ড ডেভেলপ করার জন্য বিজনেস, মার্কেটিং, ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং বা অন্য কোনো ম্যানেজমেন্ট বোঝার জন্য কোর্স করা। এগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন বিজনেসে কোন কোন জাউয়গায় আপনাকে ইমপ্রুভ করতে হবে।
২) ইভেন্ট ও ওয়ার্কশপে অ্যাটেন্ড করা
আপনি চাইলে বিভিন্ন ইভেন্ট ও ওয়ার্কশপেও অ্যাটেন্ড করতে পারেন। এ ধরনের ইভেন্টগুলোতে অভিজ্ঞ বিজনেস ওনাররা আসেন এবং তাদের বিজনেসের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও নেটওয়ার্কিং টপিক নিয়ে কথা বলেন। শুধু শেখাই নয়, এই জায়গাগুলোতে গেলে আপনি ভ্যালুয়েবল কনটাক্ট পাবেন, ব্র্যান্ড ওনারদের সাথে অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে পারবেন এবং নিজের বিজনেস সম্পর্কেও সবাইকে জানাতে পারবেন।
৩) এক্সপেরিয়েন্সড মেন্টর খুঁজে বের করা
কোনো ক্লাসে বেশি বেশি প্রশ্ন করলে মেন্টরদের থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। এর সবচেয়ে বড় যে সুবিধা হচ্ছে সেটি হচ্ছে আপনি অবজার্ভ করতে পারবেন তিনি কীভাবে বিজনেস ম্যানেজ করছেন, প্রফেশনাল গ্রুপের সাথে একবার হলেও মিট করতে পারবেন এবং তাদের সাথে ব্র্যান্ড বিল্ড করার জন্য বিভিন্ন স্কিল ও রিসোর্স নিয়ে কথা বলতে পারবেন। প্রায় সময়ই, এক্সপেরিয়েন্সড ও সাকসেসফুল উদ্যোক্তারা উঠতি উদ্যোক্তাদের মেন্টরশীপ ও প্রফেশনাল অ্যাডভাইস দিতে বেশ আগ্রহী থাকেন।
৪) লিডারশীপ স্কিল বিল্ড আপ করা
আপনি হয়ত টিম লিডার বা ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। আপনি যদি লিডারশীপ রোল প্লে করতে চান তাহলে টিমমেটদের থেকে ফিডব্যাক নিতে হবে এবং কলিগদেরকেওম্যানেজমেন্ট ও লিডারশীপ স্কিল ডেভেলপ করার জন্য হেল্প করতে হবে।
৫) ফাইন্যান্স ম্যানেজ করা শিখতে হবে
বিজনেসে আর্থিক যে লেনদেন হয়, সেটা যদি আপনি ক্লিয়ারলি বুঝতে না পারেন তাহলে আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারবেন না। এজন্য ফাইন্যান্স ম্যানেজ করা শিখতে হবে।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনেকেই তেমন কোনোকিছু না ভেবে প্ল্যানিং করা শুরু করে দেন। এতে বেশ বড় ধাক্কা আসে কিছুদিন পর। কারণ বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপে গ্যাপ থেকে যায়। তাই সবার আগে এই গ্যাপ ফিলআপ করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন দক্ষতায় নিজেকে দক্ষ করে তুলুন, বিজনেসে সফল হোন।
All said perfect information. Thanks your very much. God bless you.