ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য সঠিক লোগো তৈরি করা কেন জরুরি?

ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য যতগুলো স্টেপ আছে, সবগুলো স্টেপ পূরণ করা হলেও লোগো তৈরির ব্যাপারটা কেন যেন তেমন গুরুত্ব পায় না। অনেকেই ভাবেন, ‘আমার ব্যবসার সবচেয়ে জরুরি জিনিস হচ্ছে আমার পণ্য বা সেবা। এখানে লোগোর কী কাজ? মানুষ তো আর লোগো দেখে জিনিস কিনবে না? লোগো না তৈরি করলেও তো হয়!’ এই ভাবনা একদমই ভুল। একটা সুন্দর ও মিনিংফুল লোগো হচ্ছে ব্যবসার শোভা। আপনার ব্র্যান্ড যদি সাকসেসফুল হয় তখন এই লোগো দেখেই মানুষ আপনাকে চিনে নিবে। আপনার ব্যবসার অথেনটিসিটি বাড়বে। শুধু এইটুকুই লোগোর কাজ? যদি অল্প কথায় বলি, তাহলে উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ লোগোর প্রধান কাজের মধ্যে এগুলো আছে। আর বিস্তারিত বললে সেই ব্যাখ্যা কিছুটা লম্বা। চলুন সেই ব্যাখ্যাটা আজ জানা যাক।

ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য লোগোর প্রয়োজনীয়তা

১) অ্যাটেনশন বাড়ায়

বর্তমানে অ্যাটেনশন ধরে রাখা খুব কঠিন, বিশেষ করে কনজিউমারদের জন্য। কারণ এখন অপশন এত বেশি যে কেউই বেশিক্ষণ এক জায়গায় স্থির থাকতে পারেন না। সত্যি বলতে সময় এত কম যে যে কোনো কোম্পানির হাতে মাত্র ২/৩ সেকেন্ড সময় থাকে কাস্টমারদের মনোযোগ গ্র্যাব করার জন্য। আর এই ক্ষেত্রে লোগো খুব দ্রুত অ্যাটেনশন সিকিং এর কাজটা করে। একটা লোগো খুব সহজে দর্শকের মনোযোগ কেড়ে নেয় এবং কোম্পানির কোর ভ্যালুর সাথে কমিউনিকেট করায়। এই ছোট্ট একটা অ্যাটেনশনই কনজিউমারকে আপনার ব্যবসার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। আপনার লোগো আপনার ব্যবসার হয়ে কথা বলতে পারছে কিনা সেটা বোঝার উপায় এই লোগো।

২) ফার্স্ট ইমপ্রেশন শক্তিশালী করে তোলে

আপনার কাছে শুধু একটিমাত্র সুযোগ আছে ফার্স্ট ইমপ্রেশন শক্তিশালী করে তোলার। কোম্পানির লোগো হচ্ছে কনজিউমারদের জন্য ফার্স্ট ইন্ট্রোডাকশন। এটা যদি ভালোভাবে ডিজাইন করা হয়, তাহলে লোকের আগ্রহ বাড়বে, কোম্পানির ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য তাদের ইনভাইট করতে পারবেন। যদি লোগো ভালো না হয়, তাহলে কাস্টমার বেইজ দুর্বল হয়ে যাবে এবং ব্যবসার প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাবে। প্রথম ইমপ্রেশন যদি ভালো হয় তাহলে প্রোডাক্টের সাথে ইমিডিয়েট কানেকশন তৈরি হবে এবং কেনার জন্য কাস্টমারের মনে আগ্রহ তৈরি হবে।

 

৩) ব্র্যান্ড আইডেনটিটির ফাউন্ডেশন এটি

কাস্টমারের ইমোশনকে ইনফ্লুএন্স করতে পারলে সেই ব্র্যান্ড সাকসেসফুল হয়। আর ব্র্যান্ডের পরিচয় যেহেতু লোগো তুলে ধরে সেজন্য লোগোও হতে হয় আকর্ষণীয়, তবে সহজ। এটা সত্যি যে ব্র্যান্ডের অনেকগুলো পার্টের মধ্যে একটি হচ্ছে লোগো। তবে ব্র্যান্ড দাঁড় করতে এটি ফাউন্ডেশন হিসেবে কাজ করে। আপনি যে গল্পটা বলতে চাচ্ছেন তার অনেকটাই নির্ভর করে লোগোর কালার, টোন, ফন্টের উপর। লোগোই গল্পের ভিত্তি স্থাপন করতে হেল্প করে। ব্র্যান্ডিং আরও ম্যাটারিয়াল যেমন- লেটারহেড, বিজনেস কার্ড, ল্যান্ডিং পেইজ, নাম এগুলো নিয়েও কাজ করতে হবে, কারণ এগুলোও ব্র্যান্ড আইডেনটিটি তুলে ধরার জন্য কনক্রিট হিসেবে কাজ করে।

৪) মনে রাখা যায়

আপনি কেমন লোগো বানাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে দর্শক কীভাবে আপনার কোম্পানিকে গ্রহণ করবে। লোগো হচ্ছে চিহ্নিত করার একটি উপায়, আপনার ব্র্যান্ডকে কাস্টমার যেন মনে রাখে সেটার একটা চিহ্ন। আপনি চান যে মানুষ আপনার লোগো মনে রাখুক, কিন্তু এমন জটিলভাবে সেটা বানিয়েছেন যে কারও পক্ষে বেশিক্ষণ সেটা মনে রাখা সম্ভব না। তাহলে কীভাবে আপনার ব্র্যান্ড দাঁড়াবে?

একটা সুন্দর লোগো যদি সামনে আসে তখন চোখে আরাম লাগে, দেখে প্রশান্তি লাগে, ব্র্যান্ডের সম্পর্কে পজিটিভ চিন্তা আসে। কিন্তু লোগো ভালো না লাগলে এসবের কিছুই তখন ঘটে না। সত্যি বলতে তখন কাস্টমার দ্রুত আপনার ব্যবসার নাম ভুলে যায় (এটা অবশ্য মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি), কিন্তু লোগোর সাথে যদি তাদের একবার কানেক্ট করিয়ে দিতে পারেন, তখন অবশ্যই সেটি কাস্টমারদের মনে রয়ে যাবে।

৫) প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা রাখে

লোগো নিয়ে একটা ঝুঁকি নিলে সেটা সফল হতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু তাই বলে তো জাস্ট কিছু একটা বানালেও হবে না। কোম্পানির লোগোই বলে দেয় আপনার ব্যবসা কতটা আলাদা অন্যদের থেকে। ধরুন, আপনি একটি কফিশপ দিতে চান। কিন্তু আপনার শহরে অলরেডি ৫০টি কফিশপ আছে। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন স্থায়িত্বে, আবার আপনি ম্যাসেজ দিচ্ছেন সবুজ পৃথিবীর লোগো যেটা কাস্টমারকে ভাবাচ্ছে এবং বিশ্বাস বাড়াচ্ছে।

একটি সুন্দর লোগো কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড (প্রফেশনাল, রিল্যাক্স, ফান) তাদের মিশন (বিনোদন, পর্যাপ্ততা, ইনোভেশন) সবকিছুকেই ফোকাস করে, সেই সাথে সঠিক আইকন ও ফন্ট ব্যবহারের ব্যাপার তো আছেই। অন্যভাবে যদি বলি, লোগো সব সময় ভ্যালুকে গুরুত্ব দেয় এবং কাস্টমারকে বোঝায় যে আপনি অন্য প্রতিযোগীদের মতো নন, বরং আপনি তাদের চেয়ে ভালো।

৬) ব্র্যান্ড লয়্যালিটি গড়ে তোলে

কনজিউমাররা কিন্তু কনসিসটেন্সি পছন্দ করে। আপনার ব্র্যান্ড যত গ্রো করে, আপনার লোগো তত পরিচিত হতে থাকে বিশাল বড় একটি কনজিউমারের কাছে। আপনার বিশ্বস্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়তে থাকে।

ধরুন, আপনি ওয়ার্কআউটের জন্য জিনিস কিনতে শপে গিয়েছেন। সেখানে যেয়ে নাইকি’র নতুন লঞ্চ করা প্যান্ট পেলেন, তখন কি দ্বিতীয়বার ভাববেন সেটা কেনার জন্য? আপনি ইন্সট্যান্ট সেতা কিনে ফেলবেন। কারণ নাইকি’র উপর আপনার ভরসা আছে। নাইকিকে আপনি ভরসা করেন। একটা ভালো লোগো বিশ্বাস তৈরি করাতে পারে। আর ব্র্যান্ড লয়্যালিটি যে গুরুত্বপুর্ণ সেটা তো ব্যবসা করতে এসে আপনি বুঝতেই পেরেছেন।

একবার যদি কাস্টমার আপনাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে, পণ্যের প্রতি আস্থা পায়, তখন তারা বারবার আপনার কাছে আসবে, আপনার লোগোকেই তারা প্রথমে খুঁজে নেবে।

৭) দর্শক লোগো দেখতে চায়

লোগো হচ্ছে সেই প্রথম জিনিস, যেটা দর্শকেরা যে কোনো কমিউনিকেশনের শুরুতে দেখতে চায়। এজন্য এটা একদম ফ্রন্টে থাকা উচিত, যেমন- বিজনেস কার্ড, ফ্লায়ারস, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। যদি এসবের কোনোটাতে লোগো না থাকে, তাহলে আপনি ব্যবসাকে দর্শকের সামনে তুলে ধরাটা মিস করছেন। তাদেরকে সুযোগই দিচ্ছেন না আপনার ব্যবসাকে মনে রাখার জন্য।

লোগো তৈরিতে সঠিক রঙ নির্বাচন করা কেন জরুরি?

লোগো সব সময় নির্ধারণ করে কীভাবে কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নিবে। কারণ রঙ ইমোশনকে ট্রিগার করে এবং লোগোর সাথে পণ্যের কানেকশন তৈরি করে। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যদি বলি, তাহলে লোগোর রঙ ব্যবসার পরিচিতি ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে তোলে। সঠিক রঙ এর উপর ইন্ড্রাস্ট্রি ও টার্গেট মার্কেট নির্ভর করে। আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন, কিছু কোম্পানি সব সময় একটি নির্দিষ্ট রঙের উপর স্টিক থাকে। যেমন- ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন বেশিরভাগই নীল বা ডিপ গ্রিন কালার ব্যবহার করে, কারণ এতে সিকিউরিটি ও রিল্যায়াবিলিটি থাকে।চফাস্ট ফুড চেইন শপ ব্যবহার করে উজ্জ্বল, ওয়ার্ম কালার যেমন- লাল, হলুদ ও কমলা, কারণ এই রঙগুলো আর্জেন্সি, ক্ষুধা ও চিয়ারফুলনেস বাড়ায়। টেক ব্র্যান্ড যেমন- অ্যাপল, টেসলা ও উবার কালো রঙ ব্যবহার করে পাওয়ার, প্রেস্টিজ ও স্ট্রেন্থ বোঝাতে।

আপনার কাস্টমার কী চাচ্ছে, তারা কেমন হবে, তারা কী ভাবছে, সেগুলোর উপর নির্ভর করে আপনাকে লোগোর রঙ বেছে নিতে হবে। হিউম্যান সাইকোলজি, কালচার, ট্রেন্ড, কনটেক্সট বোঝা খুব জরুরি লোগো বানানোর জন্য। আপনার ব্র্যান্ড কালার আপনার ব্যবসার গল্প বলে, ভ্যালু কমিউনিকেট করে, অন্যদের সাথে কনফিউশন যেন ক্রিয়েট না হয়, সেজন্য নিজেই ইউনিক হয়।

লোগো কীভাবে ব্র্যান্ডকে রিপ্রেজেন্ট করে, কেন ব্যবসার জন্য লোগো জরুরি, কী রঙের লোগো কোন ব্যবসায় লাগে এসব নিয়ে বিভিন্ন তথ্য আজ আপনাদের জানিয়ে দিলাম। যারা এখনও লোগো তৈরি করবেন কি করবেন না, এসব নিয়ে ভাবছেন, তারা আর অপেক্ষা না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। কারণ আপনার ব্যবসাকে আপনি কীভাবে অন্যের কাছে তুলে ধরবেন, সেটা আপনিই ভালো জানেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *