ব্র্যান্ড সফল হওয়ার পেছনে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয়?

ব্র্যান্ড বলতে আমরা কী বুঝি? হয়তো সাধারণ উত্তর আসবে, ব্র্যান্ড মানে হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানি, যার বাজারে ছাড়া জিনিসপত্রগুলো আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু ব্র্যান্ড বলতে কি শুধুই এইটুকু?

আমরা একটু ভেবে দেখলে বুঝতে পারব, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সব জায়গাতেই ব্র্যান্ড জড়িয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠে যে টুথপেস্টটা দিয়ে আমরা দাঁত মাজি, সেটার ব্র্যান্ডটাও আমরা নিজেরা দেখে কিনতে ভালোবাসি। নির্দিষ্ট একটা ব্র‍্যান্ডের স্কিন কেয়ার আইটেম না হলে কারো কারো চলেই না। অথবা হয়তো পছন্দের ব্র্যান্ডের জামা কাপড় না হলে উৎসবকে উৎসবই মনে হয় না। কিন্তু, ব্র্যান্ড কীভাবে আমাদের জীবনে এতটা জায়গা করে নেয়? একটা ব্র্যান্ডের উপর যে আমাদের আস্থা, এবং তার প্রতি ভালোবাসা, এসব কি একটা কোম্পানি শুধু প্রোডাক্ট দিয়েই অর্জন করে নিতে পারে?

একটা উদাহরণ দিয়েই না হয় আমরা কথা বলি, ম্যাগির নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। বাংলাদেশের একদম প্রথম দিকের নুডুলস এবং ইনস্ট্যান্ট নুডুলস এর ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ম্যাগি একটি। এখন বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড রয়েছে, যেকোনো সুপারশপে খুঁজলে কম করে হলেও ১০-১৫ টা নুডুলস এর ব্র্যান্ড পাওয়া যাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাগির হলুদ প্যাকেটের লাল লোগোতে যে আবেগ, যে পরিচিতি, তা কি অন্য কোনো নুডুলসে আমরা পাই? অনেকে তো এখনো ইনস্ট্যান্ট নুডুলস বলতে শুধু ম্যাগিকেই বোঝেন। মানুষের মনে কীভাবে ম্যাগি এত বড় জায়গা করে নিল?

আজকে আমরা ব্র্যান্ডিং কী, কীভাবে কাজ করে এবং পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে কীভাবে জনপ্রিয় ও বড় করে তোলা যায় সেগুলো নিয়ে কথা বলব। ব্র্যান্ড হচ্ছে অনুভূতির একটা গল্প। একটি ভালো ব্র্যান্ড গড়ে ওঠার পেছনে থাকে কাস্টমারের আস্থা ও ভালোবাসা। শুধুমাত্র ব্যবসা নয়, জীবনের বিভিন্ন ছোট ও বড় মুহূর্তগুলোকে রঙিন করে তোলার মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ড আমাদের মনে জায়গা করে নেয়।

ব্র‍্যান্ডিং কী?

ব্র‍্যান্ডিং হলো কোনো একটি কোম্পানি ও তার প্রোডাক্টের বিশেষ ও ভিন্নরকমের পরিচয় তৈরির একটি পদ্ধতি। ব্র‍্যান্ডের পরিচয় শুধুমাত্র নাম অথবা লোগোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে তার নিজস্বতা কাস্টমারের কাছে তুলে ধরা, কাস্টমারের জীবনের ছোট ছোট ঘটনার সাথে জড়িয়ে যাওয়া, এবং তার নিজস্ব দর্শন, মূল্যবোধ ও মার্কেটিং স্ট্রাটেজির মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে নিজেকে স্পেশাল করে তোলাই ব্র্যান্ডিং। অল্প কথায় বলতে গেলে, একটি কোম্পানির নিজস্বতা হচ্ছে ব্র্যান্ডিং।

বর্তমান সময়ে কাস্টমাররা শুধু প্রোডাক্ট কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, প্রোডাক্ট কেনার যে  এক্সপেরিয়েন্সটা, সেটাও বিশেষ হোক এটাই তাদের চাওয়া থাকে। ব্র্যান্ডিং সঠিকভাবে করতে পারলে কাস্টমারের কাছে সেটা লাইফস্টাইল হয়ে ওঠে, এবং সেই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টের মার্কেট কাস্টমারের কাছে পাকাপাকিভাবে তৈরি হয়ে যায়। এক্ষেত্রে শুধু প্রোডাক্টই নয়, শোরুম, প্যাকেজিং, প্রোডাক্টের বিশেষত্ব এগুলো সবই নির্ভর করে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা অ্যাপল কোম্পানির কথা বলতে পারি। অ্যাপলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট, বিশেষ করে নতুন নতুন এডিশনের আইফোন এখন অভিজাত শ্রেণীর হাই ক্লাস কাস্টমারদের জিনিস বলেই ধরা হয়। অ্যাপলের ইনোভেশন, নিত্য নতুন মন কাড়া ডিজাইন এবং অ্যাপলের সাথে কাস্টমারদের যে এক্সপেরিয়েন্স, তার ওপর ভিত্তি করেই অ্যাপল নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছে। অ্যাপলের ডিজাইনগুলোকে স্লিক, স্মার্ট এবং স্টাইলিশ ধরা হয়। অ্যাপলের ক্যামেরার সাথে অন্য খুব কম ফোনের ক্যামেরারই তুলনা করা যায়। এছাড়াও আইওএস এ অ্যাপল ইউজাররা পান বিশেষ সুবিধা ও নিত্য নতুন অ্যাপ। এসব কারণে অ্যাপলে অভ্যস্ত হওয়া কাস্টমাররা অন্য কিছুতে মানিয়ে নিতে পারেন না, যা অ্যাপলের একটি স্ট্রং কাস্টমার বেইজ তৈরি করে দিয়েছে।

অথবা আমরা দেশি ব্র্যান্ড হিসেবে আড়ং এর কথা বলতে পারি। আড়ং এর শোরুমগুলো বিশেষভাবে সাজানো হয়, যা সাধারণ মার্কেট থেকে আলাদা হয়ে থাকে। প্রতিটা জিনিসের আলাদা আলাদা সেকশন থাকে, কাস্টমার নিজের মন মত ঘুরে প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে পারেন। এছাড়াও একদম লো রেঞ্জ থেকে শুরু করে একদম হাই রেঞ্জের প্রিমিয়াম প্রোডাক্টও আড়ং এ থাকে, যার ফলে প্রায় সব শ্রেণীর কাস্টমাররাই পছন্দমত কিছু না কিছু নিতে পারেন। হোম ডেকর, ড্রেস, জুয়েলারি এমনকি ডেইরি প্রোডাক্টও আড়ং এর নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয়, ও তাদের শোরুমে সবসময় পাওয়া যায়। একই ব্র্যান্ডে এত ভেরিয়েশন পেয়েও কাস্টমাররা এদিকে আকৃষ্ট হন।

সুতরাং উদাহরণে বলা দুইটি ব্র্যান্ড দুই রকমের স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে নিজেদের বিশেষত্ব তৈরি করেছে। এর পিছনে বেশ অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে, একই স্ট্র্যাটেজি যে সবক্ষেত্রে সমান কাজ করে না এটা তার একটা গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

ব্র‍্যান্ডিং কেন জরুরি?

একটা কোম্পানির জন্য তার পরিচয় তৈরি এবং ব্র্যান্ডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্র‍্যান্ডিং এর মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার নিজস্ব লয়াল কাস্টমার বেইজ তৈরি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিয়ে আসা এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ব্র্যান্ড তৈরির পিছনে আরো বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

১.নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে বিশেষ করে তোলার জন্য ব্র‍্যান্ডিং এর বিকল্প নেই।

বর্তমান বাজার হচ্ছে প্রতিযোগিতার বাজার। প্রতিনিয়তই নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসছে। যে কোনো প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে কাস্টমার অনেকগুলো অপশন পাচ্ছেন, যা থেকে তিনি পছন্দমত বেছে নিতে পারেন। একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় আপনি বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবেন। কাস্টমারের মনে একবার জায়গা করে নিতে পারলে পরেরবার তিনি আপনার ব্র্যান্ডকেই আগে খুঁজবেন। এর ফলে বাজারে চলতে থাকা শত শত কোম্পানির মধ্যে আপনার কোম্পানির বিশেষত্ব বোঝা যাবে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা সিঙ্গার সেলাই মেশিনের কথা বলতে পারি। ছোটবেলা থেকেই দর্জির দোকানে এবং মা কাকিদের ঘরে সেলাই মেশিন হিসেবে আমরা সিঙ্গারের পরিচিত কালো মেশিনটিই দেখে এসেছি। এ কারণে এখন সেলাই মেশিন পরিচিতি পেয়েছে সিঙ্গার মেশিন নামে, যে কেউ সেলাই মেশিন কিনতে গেলে সিঙ্গার কোম্পানির মেশিনে এখন সবার আগে খোঁজেন। এতে সিঙ্গারের ব্র্যান্ডিংয়ের সফলতা বোঝা যায়।

২. কাস্টমারের আস্থা অর্জন ও ভরসা জিতে নেয়া ব্র‍্যান্ডের জন্য অপরিহার্য।

আপনার কোম্পানি ব্র্যান্ড হিসেবে তখনই সফল হবে যখন কাস্টমারের আস্থা অর্জন করতে পারবে। যখন কোনো ব্র্যান্ডের জিনিস কয়েকবার ব্যবহার করে কাস্টমার সন্তুষ্ট হন তখন তিনি বারবার সেই ব্র্যান্ডেই ফিরে আসেন। এবং এই আস্থা অর্জন শুধুমাত্র প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে করা যায় না। এর জন্য কাস্টমারের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, ব্র্যান্ডের কাস্টমার সার্ভিস, যথাযথ কমিউনিকেশন এবং ব্র্যান্ডের নিজেকে প্রেজেন্ট করার ধরনও এর পেছনে কাজ করে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা আমাদের প্রতিদিনের কেনাকাটা নিয়ে ভাবতে পারি। আমরা যখন কিছু একটা কিনতে যাই, তখন যেসব ব্র্যান্ড আমাদের পরিচিত, বা যার নাম আমরা শুনেছি, যার জিনিস ব্যবহার করে ভালো পেয়েছি, সেই ব্র‍্যান্ডের জিনিসই কেনার চেষ্টা করি।

৩. ঠিকঠাক ব্র‍্যান্ডিং করতে পারলে একটি লয়াল কাস্টমার বেইজ পাওয়া সম্ভব।

বেশিরভাগ ব্র‍্যান্ডই ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারে তার কাস্টমারদের জন্য। এটাই কোনো জেনেরিক কোম্পানি থেকে একটা ব্র্যান্ডকে আলাদা করে। কোনো কোম্পানি যখন ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে, তার মানে হচ্ছে তারা এমন একটি কাস্টমার বেজ পেয়েছে, যারা এই ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, এবং ভবিষ্যতেও এই ব্র‍্যান্ডের প্রোডাক্ট নিতেই আগ্রহী। লয়াল কাস্টমাররা অনেক ক্ষেত্রে তার পরিচিত ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে তার পছন্দের ব্র্যান্ডের প্রচারণাও চালান।

আমরা নিজেরাই ভেবে দেখতে পারি, কোনো ব্র্যান্ডে ভালো কোনো জিনিস পেলে সেটা আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, পরিচিতদের সাথে শেয়ার করি। এতে তারাও ভালো জিনিস পেয়ে উপকৃত হয়, আবার একই সাথে আমাদের পছন্দের ব্র‍্যান্ডের গ্রাহক সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

৪. প্রোডাক্টের মানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্র‍্যান্ড জরুরি।

সাধারণ একটি কোম্পানি থেকে ব্র‍্যান্ড হওয়া মানে হচ্ছে, আপনার প্রোডাক্টের উপর কাস্টমারের এমন আস্থা জন্মানো, যে তারা ভালো মানের প্রোডাক্টই প্রতিবার পাবেন। আপনার বিজনেস যদি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়, তাহলে ক্রেতারা এই ভরসাটা পাবেন যে, প্রোডাক্ট এর মান নিয়ে এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না, যেটা একটা ব্যবসার টিকে থাকার জন্য খুবই জরুরি।

উদাহরণ হিসেবে আমরা আবারও অ্যাপলের কথা বলতে পারি। অ্যাপলের নতুন যে সব প্রোডাক্ট বের হয়, যেমন আইফোনে নতুন নতুন মডেল, দেখা যায় আগের ক্রেতারাই একটি আইফোন থাকা সত্ত্বেও আবার নতুন মডেলটি কিনে নেন। তাদের মনে সন্দেহ আসে না নতুন মডেলটি আগেরটার মতো ভালো হবে কিনা। কারণ অ্যাপলের প্রোডাক্টের মান ও বিশেষত্ব সম্পর্কে তারা আগে থেকেই জানেন, নিশ্চিন্ত মনে তাই নতুন প্রোডাক্টও কিনে নিতে পারেন।

৫. কোনো নতুন প্রোডাক্ট আনার পর সেটা ব্যর্থ হওয়ার রিস্ক কমে যায়।

সাধারণত নিজেদের বিজনেসে আমরা যদি নতুন কোনো প্রোডাক্ট লঞ্চ করতে চাই, তাহলে সেটা একটা রিস্ক এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আগের সফল প্রোডাক্টগুলোর মত এটা চলবে কিনা, কাস্টমার ভরসা করে নতুন জিনিসটা কিনবে কিনা, লাভের চাইতে লোকসান বেশি হবে কিনা এ চিন্তাগুলো মাথায় চলেই আসে। কিন্তু আপনার ব্যবসা যদি একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েই যায়, তাহলে আপনার আগের প্রোডাক্টগুলোর প্রতি আস্থা থেকে কাস্টমার নতুন পণ্যের প্রতিও আগ্রহ দেখাবে। যে কারণে নতুন প্রোডাক্ট আনার রিস্কটা অনেকটাই কমে আসবে। এছাড়াও আগে থেকেই যথেষ্ট পরিচিত থাকার কারণে এই ক্ষেত্রে মার্কেটিং এ আপনার খরচ অনেকটাই কমে যাবে।

যেমন, বাজারে বর্তমানে থাকা প্রাণ গুঁড়া মসলার কথা আমরা সবাই জানি। প্রাণ প্রথমে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, গরম মসলা গুঁড়া এরকম সাধারণ কয়েকটি প্রোডাক্ট দিয়ে বাজারে এসেছিল। জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে এখন প্রাণের নিজস্ব বিরিয়ানি মসলা, কাবাব মসলা, খিচুড়ি মিক্স, ফালুদা ও ক্ষীর মিক্স ইত্যাদি অনেক নতুন নতুন প্রোডাক্টই বাজারে এসেছে, এবং কাস্টমাররা সেগুলোকে সেভাবেই নিয়েছে। প্রাণ নামটা গুঁড়া মসলার জগতে আগে থেকেই পরিচিত থাকার কারণে কাস্টমাররা নিশ্চিন্ত হয়ে এই নতুন প্রোডাক্টগুলো নিয়ে ব্যবহার করতে পেরেছে।

৬. প্রিমিয়াম মূল্যমানে নিয়ে যাওয়া যায়।

আমরা অনেকেই জানি, বাজারে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর বেশিরভাগেরই মূল্যমান প্রিমিয়াম ধরনের হয়ে থাকে। এর মানে হলো, তাদের প্রোডাক্টের জন্য তারা একই ধরনের অন্যান্য প্রোডাক্টের তুলনায় বেশি দাম চাইতে পারে। এই বেশি দামটা মূলত প্রোডাক্টের প্যাকেজিং, বিশেষত্ব, মূল্যবোধ, গুণগতমান ইত্যাদির উপর হিসাব করা হয়। এবং কাস্টমাররা তাদের পরিচিত এবং বিশ্বাসী ব্র্যান্ডের পণ্যের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি দাম দিতে রাজি থাকেন। কারণ ব্র্যান্ড তাদেরকে সেই ভরসা দেয়, যে একটু বেশি টাকা খরচ করেও কাস্টমার হতাশ হবেন না, গুনে মানে সেরা পণ্যটি পাবেন।

উদাহরণ হিসেবে, জুতা কিনতে গেলে সাধারণত আমরা নাইকি, এপেক্স, বাটা, লোটো এই ধরনের ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টের খোঁজ করি। কিন্তু এদের প্রোডাক্ট এর চাইতে কম দামেও মার্কেটে জুতা পাওয়া যায়। এই ব্র্যান্ডগুলো তাদের প্রোডাক্টের ডিজাইন, টিকে থাকার ক্ষমতা, প্যাকেজিং এবং সার্ভিস এর মধ্য দিয়ে নিজেদের জন্য নাম তৈরি করে নিয়েছে। অর্ধেক দামে সাধারণ জুতা কিনে তিন-চার মাস চললেও, একটু বেশি দামে ব্র্যান্ডের জুতা কিনে আরো বেশি দিন চালাতে অনেক কাস্টমাররাই আগ্রহী হন। তাই এসব ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্ট এর জন্য প্রিমিয়াম মূল্য চাইতে পারে।

৭. ভালো বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়

ব্যবসা লম্বা সময় ধরে ভালোভাবে চালিয়ে রাখতে বিনিয়োগের ভালই গুরুত্ব রয়েছে। বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা ও বিনিয়োগকারী, দুই পক্ষেরই উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার ব্র্যান্ড যখন শক্তিশালী ও বড় হবে, তখন বিনিয়োগকারীরা দেখতে পায় যে, আপনার ব্র্যান্ডের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ভালো, এটি প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বস্ত। যা তাদেরকে পরে ভিডিও করার জন্য আগ্রহী করে তোলে। এটা শেয়ার মার্কেটেও উচ্চ মূল্য পাওয়া যায়।

কী কী মূল উপাদান থাকতেই হবে একটা ব্র‍্যান্ডে?

একটি ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে বেশ কিছু জিনিসের উপর প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে। মূলত যেসব জিনিসের উপর ভিত্তি করে ব্র্যান্ড পরিচিত হয়ে ওঠে, সেগুলো যেন ঠিকঠাক হয় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু বিষয় নিয়েই আমরা এখানে আলোচনা করব।

১. ব্র‍্যান্ডের নাম

নাম হচ্ছে ব্র্যান্ডের পরিচিতি প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ধাপ। এটির মাধ্যমেই ব্র্যান্ড সবার কাছে পরিচিত হবে, এবং সবখানে নিজের ছাপ রাখবে।

ব্র্যান্ডের নাম হবে সহজ ও ক্যাচি। যা একই সাথে গ্রাহকের মনে থাকবে এবং মনোযোগ নিয়ে নেবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা এক শব্দের হয় অথবা দুই তিন শব্দের ও হতে পারে। ব্র্যান্ডের নাম যেন ব্র্যান্ডের পণ্য ও ভাবমূর্তির সাথে যায় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

যেমন নাইকি ব্র্যান্ডের নাম রাখা হয়েছিল গ্রীক মিথলজির বিজয়ের দেবী নাইকির নামে।

২. ব্র‍্যান্ডের লোগো ও তার রঙ

ভিজ্যুয়াল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে লোগো। লোগো হচ্ছে ব্র্যান্ডের নিজস্ব চিহ্ন বা ডিজাইন, যার দ্বারা ব্র্যান্ডের পরিচয় এবং কাজ বোঝা যায়। বিজনেস এর ফেস হিসেবেও লোগো অনেকটাই ভূমিকা পালন করে, নাম মানুষ সহজে ভুলে যেতে পারে কিন্তু একটা ভালো লোগো মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বার্গার কিং এর লোগোর কথা আমরা বলতে পারি। লাল রংয়ের বার্গার কিং লেখা, তার উপরেও নিচে হলুদ বানের মতো দেখতে দুটি চিহ্ন, যা দেখে সহজেই বার্গারের কথাই প্রথম মনে আসে।

শুধুমাত্র লোগো ডিজাইন নয়, লোগোর কালারও মানুষের মনে ছাপ ফেলতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন লাল রং কে ক্ষুধা উদ্রেককারী বলে বিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছেন, তাই ম্যাগি, কেএফসি, পিৎজা হাট ইত্যাদি খাবারের ব্র্যান্ডগুলো লোগোর রং হিসেবে লালকে বেছে নিয়েছে।

৩. ব্র‍্যান্ড স্লোগান

একটা ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াতে ব্র্যান্ডের স্লোগানও কিন্তু বেশ ভূমিকা রাখে। সব ব্র্যান্ড হয়তো স্লোগান ব্যবহার করে না, তবে স্লোগান মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনার ব্র্যান্ডকে বেশ অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে।  আপনার ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট ভাবমূর্তিকে গ্রাহকের কাছে স্লোগান তুলে ধরে। কাস্টমার যদি আপনার স্লোগানের সাথে নিজেকে মেলাতে পারেন, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের নাম বেশি পাকাপাকি ভাবেই তার মনে গেঁথে যাবে, যেটা একটা ব্র্যান্ডের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন ম্যাকডোনাল্ডস এর “আই’ম লাভিন ইট” স্লোগানের মাধ্যমে তাদের খাবারের স্বাদ এবং কাস্টমারদের ভালো অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়, যার ফলে আরো বেশি কাস্টমার আকৃষ্ট হয়।

৪. ব্র‍্যান্ডের টার্গেট অডিয়েন্স

টার্গেট অডিয়েন্স মানে হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য উপযুক্ত গ্রাহকদের খুঁজে বের করা। এখন সব ব্র্যান্ডের টার্গেট অডিয়েন্স সব স্তরের মানুষ হয় না। আপনি কোন ধরনের প্রোডাক্ট সেল করছেন, আপনার ব্র্যান্ডের লক্ষ্য কী, প্রোডাকশন ক্ষমতা কতটুকু, এ সবের উপর ভিত্তি করে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত গ্রাহকদের আপনার খুঁজে বের করতে হবে।

যেমন, প্রিমিয়াম ধরনের ব্র‍্যান্ডগুলোর গ্রাহক সাধারণত একদম হাই ক্লাসের ক্রেতারা হয়ে থাকেন। খুব দামি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির শাড়ি, গহনাগাটি, পোশাক অথবা জুতা যে ক্রেতারা কিনবেন, তারা আবার সালোয়ার কামিজ, টি-শার্ট, টপস, স্কার্ট এই ধরনের ক্যাজুয়াল জিনিসপত্র নাও কিনতে পারেন। যারা ট্রেডিশনাল খাবারদাবার পছন্দ করেন, তারা ফিউশন, ফাস্টফুড, অথবা অন্য কোনো ন্যাশনালিটির খাবার হয়তো পছন্দ করবেন না। একইভাবে যারা বাগান করতে পছন্দ করেন, তাদের কাছে গাছ মাটি সারের যেমন চাহিদা, অন্যদের কাছে সেটা নাও থাকতে পারে। আপনার ব্র্যান্ডের জন্য উপযুক্ত টার্গেট অডিয়েন্স আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে। এটা অনেকটাই নির্ভর করে আপনার গ্রাহকের পেশা, বয়স, এলাকা, জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদির উপরে।

৫. ব্র‍্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স

ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স এর মানে হচ্ছে, আপনার ব্র্যান্ড ক্রেতাদের মনে কীরকম প্রভাব ফেলছে, আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে তারা কেমন বোধ করেছেন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, আপনার ব্র্যান্ডের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা কেমন। অনলাইন হোক বা অফলাইন স্টোর, প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, তার গুণগত মান, কাস্টমার সাপোর্ট, ফিডব্যাক ইত্যাদি সবকিছুই কাস্টমারের মনে প্রভাব ফেলে। আপনার ব্র্যান্ডের জিনিস কিনতে কাস্টমারদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, কেনাকাটার প্রসেস কতটা সোজা, শোরুমে এসে কাস্টমার কতটা ভালোভাবে শপিং করতে পারছেন, আপনার স্টাফরা কতটুকু হেল্পফুল সবকিছুই এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমারের এক্সপেরিয়েন্স আপনার সাথে যত ভালো হবে, ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার কোম্পানি ততটাই এগিয়ে যাবে এবং শক্তিশালী হবে।

৬. ব্র‍্যান্ড ভিশন

ব্র্যান্ড ভিশন হচ্ছে ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার লক্ষ্য অথবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আপনার ব্র্যান্ডকে আপনি কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, কতটুকু সময়ে কতটুকু পরিবর্তন এবং উন্নতি আপনি দেখতে চান, কী পরিমাণ লাভের টার্গেট নিয়ে আপনি কাজ করছেন, আপনার ব্র্যান্ডকে কত বড় করতে চান এর সবগুলোই ব্র্যান্ড ভিশনের মধ্যে পড়ে।

ঠিকঠাক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করে রাখলে ব্র্যান্ড নিয়ে কিন্তু খুব বেশি দূর আগানো যায় না। তাই কয়েক বছর পর যাতে ব্যবসা বন্ধ না করে দিতে হয়, ব্র্যান্ডকে যাতে আরো বড় করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারেন, এভাবে মাথায় রেখেই আপনার ভিশন এবং টার্গেট সেট করতে হবে।

৭. ব্র‍্যান্ড স্টোরি

জেনেরিক যে কোনো কোম্পানির সাথে ব্র্যান্ডের পার্থক্য হচ্ছে, ব্র‍্যান্ডের সাথে জুড়ে থাকে একটি গল্প বা ইতিহাস। ব্র্যান্ডের ভাষা এবং গল্পের সাথে কাস্টমার নিজের মিল পান। ব্র্যান্ডের ইতিহাস, প্রতিষ্ঠার পেছনের ঘটনা, মূল্যবোধ ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা এসব কিছুই ক্রেতার মনে প্রভাব ফেলে। শুধুমাত্র প্রোডাক্ট কেনাবেচা নয়, ব্র্যান্ড এর চাইতেও বড় কিছু। ব্র্যান্ডের ব্যাকগ্রাউন্ড ও তার স্টোরির প্রতি কাস্টমার যতটা আকৃষ্ট হবেন, ততোই তার প্রতি কাস্টোমারের পজিটিভ মনোভাব বৃদ্ধি পাবে।

যেমন বিভিন্ন ক্রুয়েলটি ফ্রি কসমেটিক ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতারা আগ্রহী হন, কারণ তারা প্রোডাক্ট পশুপাখি বা অন্য কোনো প্রাণীর উপর টেস্ট করে না। এর ফলে অন্য কোনো প্রাণীর কষ্ট পেতে হয় না, যা সমাজ ও পরিবেশের জন্য ভালো পদক্ষেপ।

যেভাবে পার্সোনাল ব্র‍্যান্ড তৈরি করবেন

ব্র্যান্ডিং কী, কীভাবে কাজ করে, কেন প্রয়োজন, কী কী দরকার এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু এই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি নিজে কীভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ড গড়ে তুলবেন? শুধু জানা থাকাই যথেষ্ট নয়, সেই জ্ঞান ঠিকঠাক মতো কাজে লাগাতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই, এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আমরা পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারি, এবং কী কী পদক্ষেপ নিলে সফলতার সাথে এগিয়ে যাওয়া যাবে।

১. ব্র‍্যান্ডের লক্ষ্য স্থির করা

আপনার ব্র্যান্ডের জন্য একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ প্রথমেই জরুরি। আপনি কী কারণে ব্র্যান্ড বানাতে চান, আপনার ব্র্যান্ডের ফলে কাস্টমারদের কী কী সমস্যার সমাধান হবে, অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে কাস্টমার উপকৃত হবে, মূল লক্ষ্য কী থাকবে এসব সবার আগে নির্ধারণ করতে হবে। যেকোনো সাধারণ কোম্পানির সাথে ব্র্যান্ডের একটা মূল পার্থক্য হচ্ছে, বেশিরভাগ কোম্পানির চিন্তা শুধুমাত্র ব্যবসা নির্ভর। প্রোডাক্ট বিক্রি এবং লাভ করা। কিন্তু একটা ব্র্যান্ডের লক্ষ্য হতে হয় এই গণ্ডি ছাড়িয়ে, যাতে কাস্টমারও এই ব্র্যান্ডকে তাদের খুব কাছের মনে করে।

২. টার্গেট অডিয়েন্সকে খুঁজে নেয়া

টার্গেট অডিয়েন্স কারা হয় এ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার এই টার্গেট অডিয়েন্সকে আপনি কীভাবে খুঁজে পাবেন। এই ব্যাপারে প্রচুর রিসার্চ জরুরী। আপনি কোন শ্রেণীর ক্রেতাদের জন্য ব্র্যান্ড করছেন, তাদের চাহিদা কী হতে পারে, তাদের সুযোগ সুবিধা কেমন হবে, এর উপরে নির্ভর করবে কীভাবে মার্কেটিং করলে আপনি তাদের খুঁজে পাবেন।

এক্ষেত্রে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ট্রেন্ড ফলো করে, ওপেন সার্ভে, এংগেজমেন্ট এগুলো হোস্ট করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে বুস্টিং করে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে খুঁজে পেতে পারেন। মনে রাখতে হবে এটা মার্কেটিং এর জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর উপরেই অনেকটা নির্ভর করবে আপনার ব্র্যান্ড কতটা এগোতে পারবে।

৩. ব্র‍্যান্ডের নাম ও লোগো

আপনার ব্র্যান্ডের সাথে একদম পারফেক্ট ভাবে যায় এমন একটি নাম এবং লোগো খুঁজে নেয়ার দায়িত্ব আপনারই। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিখ্যাত কোম্পানির নাম ও লোগো সিলেক্ট করার টেকনিক সম্পর্কে রিসার্চ করে দেখতে পারেন। আপনার ভিশনের সাথে পারফেক্টভাবে কেমন নাম ও লোগো যায় সেটা আপনিই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবেন। লোগো ও ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রফেশনাল কারো সাহায্য নেওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ আপনার লোগো দিয়ে আপনার ব্র্যান্ড একসময় সবার কাছে পরিচিত হবে। কোনো রকম ভাবে বানানো একটা লোগো ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য ভালো হবে না। তাই, এখানে একটু বেশি ইনভেস্ট করে হলেও একটা আই ক্যাচি ভালোমানের লোগো সিলেক্ট করা উচিত। খুব বেশি হিজিবিজি বা গর্জিয়াস লোগোও দেখতে ভালো লাগে না। তাই সিম্পল এবং আপনার ব্র‍্যান্ডের সাথে মিলে এমন একটি লোগোই দেখে নিতে হবে।

৪. ব্র‍্যান্ড ভয়েস এবং টোন

ব্র‍্যান্ড ভয়েস এবং টোন মূলত ব্র‍্যান্ডের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। আপনি যে ধরনের কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে চান, তার উপর নির্ভর করবে আপনার ব্র‍্যান্ড টোন কেমন হবে। আপনার ব্র্যান্ডের টোন দেখেই কাস্টমার আগ্রহী হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি বাচ্চাদের প্রোডাক্ট এর একটি ব্র্যান্ড চালু করতে চান, সেক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের টোন হতে হবে হালকা এবং ফানি, বাচ্চাদের উপযোগী, যেমন জনসন এন্ড জনসন। আবার যদি অফিস করা বা কর্পোরেট গ্রাহকদের টার্গেট করতে চান, তাহলে সেই রকম ফরমাল টোন হতে হবে।

মার্কেটিং এর সব ক্ষেত্রেই আপনার ব্র্যান্ডের টোন ধারাবাহিক রাখতে হবে।

৫. প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ও কাস্টমার সার্ভিস

আপনার ব্র্যান্ড ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে তখনই, যখন প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ও কাস্টমার সার্ভিস দিয়ে আপনি আপনার কাস্টমারকে খুশি করতে পারবেন। কোন কোন উপায়ে আপনার প্রোডাক্টের সর্বোচ্চ কোয়ালিটি করতে পারবেন, কোয়ালিটিতে কোনো সমস্যা হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কাস্টমার সার্ভিস কেমন হবে, কোন কোন মাধ্যমে কাস্টমার যোগাযোগ করতে পারবে, কাস্টমারের জন্য কী কী সুবিধা থাকবে, তাদের কমপ্লেইন কীভাবে হ্যান্ডেল করা হবে এই সব কিছুর সম্পর্কে আপনার এবং আপনার স্টাফদের পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।

প্রোডাক্ট ও সার্ভিসে যদি কাস্টমার সন্তুষ্ট না হন তাহলে আপনার ব্র‍্যান্ড সফলভাবে গড়ে উঠতে পারবে না।

৬. মার্কেট রিসার্চ

এখন মার্কেটে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। একই ধরনের অনেক অনেক প্রোডাক্ট চয়েজ কাস্টমারের সামনে থাকে। তাই, কাস্টমার যাতে আপনার প্রোডাক্টই বেছে নেন, সেভাবেই নিজের ব্র‍্যান্ডকে গড়ে তুলতে হবে।

এই ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত একই ধরনের প্রোডাক্টগুলো কী কী, তাদের কোয়ালিটি কেমন, তারা কোন কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ফলো করছে, তাদের ব্র্যান্ড টোন কেমন, কীভাবে মার্কেটিং করলে তাদের প্রোডাক্ট থেকে এগিয়ে থাকা যাবে এসব সম্পর্কে প্রথমে ভালোভাবে রিসার্চ করে নিন। শুরুর আগেই আপনার ব্র্যান্ডকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেবে।

৭. অনলাইনে নিয়মিত থাকা

অনলাইনে উপস্থিতি থাকা বর্তমানে যে কোনো ব্র্যান্ডের সফলতার জন্য অপরিহার্য। সারা বিশ্বের প্রায় ৬৩.৭% মানুষ কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সংযুক্ত থাকে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারলে খুব কম মার্কেটিং খরচেই অনেক বেশি কাস্টমারদের কাছে আপনার ব্র্যান্ড পৌঁছে যাবে। এজন্য আপনি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে পারেন। এসব অ্যাকাউন্টে কাস্টমাররা সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন, কোনো সমস্যা হলে তার সমাধান পাবেন, এছাড়াও মাঝেমধ্যে শুধু কনটেন্ট তৈরি করেই গ্রাহকের সাথে কানেকশন বাড়াতে পারবেন। এছাড়াও একটি ওয়েবসাইট থাকা খুবই জরুরী। একটি আধুনিক এবং ইজি টু ইউজ ওয়েবসাইট আপনার ব্র্যান্ডের নামে খুলে ফেলুন। এতে আপনার ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রোডাক্ট ডিটেলস এবং ইনফরমেশন থাকবে। অনলাইন শপিং এর ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।

৮. কনসিসটেন্ট থাকা

এই কনসিসটেন্সি আপনার ব্র্যান্ড কোয়ালিটি, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার সাপোর্ট সবকিছুতেই থাকতে হবে। যদি এমন হয় যে প্রথম কিছুদিন ভালো সার্ভিস দিলেও পরে সেই কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারছেন না, সেটা দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। একটা ব্র্যান্ড তখনই সফল হয় যখন সেটা লম্বা সময় ধরে একই রকম ভালো মানের সার্ভিস দিয়ে যেতে পারে। তাই ব্র্যান্ডের সফলতার জন্য কনসিসটেন্সি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে বলা যায়, একটি ব্যবসা সফল ব্র্যান্ড একদিন দুই দিনে গড়ে ওঠে না। এর জন্য ধৈর্য, সময়, শ্রম এবং ক্রমাগত চেষ্টা করেই যেতে হয়। ব্র্যান্ডিংয়ের যে গল্প, মূল্যবোধ, এবং অভিজ্ঞতা থাকে, সেটা একটি ব্র্যান্ডকে অন্যান্য সাধারণ বিজনেসের চাইতে ভিন্নভাবে তুলে ধরে। কাস্টমারের মনে একটা আলাদা স্থান তৈরি করে নিতে পারে একটি সফল ব্র্যান্ড। তাই এর ধাপগুলোকে মাথায় রেখে ধীরে ধীরে এগোতে পারলেই আপনার বিজনেস একটি সফল ব্র্যান্ডে পরিণত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *