রোজ রোজ অফিসে যাচ্ছেন ঠিকই, অথচ কাজে ভালোভাবে মন বসাতে পারছেন না। আবার যখন যে জিনিসটা দরকার সেটা হাতের কাছেও খুঁজে পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে প্রোডাক্টিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটির অবস্থা হয়ে যাচ্ছে বেগতিক। আপনি কি জানেন, আপনি কীভাবে অফিস ডেস্ক সাজাচ্ছেন, অর্থাৎ আপনার ডেস্কে কী কী জিনিস আছে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করে ব্রেইন কীভাবে কাজ করবে। সত্যি বলতে ডেস্ক আসলে আমাদের ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশ। তাই পারসোনাল স্টাইল দিয়ে আপনি যখন ডেস্ক ডেকোর করবেন তখন কাজের প্রোডাক্টিভিটিও যেমন বাড়বে, তেমনই কাজ করতেও বেশ ভালো লাগবে। প্রোডাক্টিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর জন্য কীভাবে অফিস ডেস্ক সাজাতে পারেন সেটা নিয়েই আজ আলোচনা করব।
অফিস ডেস্ক সাজানোর আইডিয়া
আপনি যখন ওয়ার্ক ডেস্ক অর্গানাইজেশন আপগ্রেড করার কথা ভাববেন, তখন আগে চিন্তা করবেন আপনার কী কী ভালো লাগে এবং কোন বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখলে কাজ করতে সুবিধা হবে। চলুন তাহলে কিছু পরামর্শ জানা যাক।
১) গাছ অথবা ফুল
ওয়ার্কস্পেস মানে হচ্ছে এমন জায়গা যেখানে বসলে মন ভালো হয়ে যায়। কাজ শুরু করার আগে মুখে হাসি থাকলে সেই কাজ আরও ভালো হয়। আর অফিস ডেস্ক এর সৌন্দর্য অল্পতেই ফুটিয়ে তোলে গাছ অথবা ফুল। আপনি আপনার পছন্দের যে কোনো গাছ ডেস্কে রাখতে পারেন। যেমন- সাকুলেন্ট, মানিপ্ল্যান্ট, লাকি ব্যাম্বু ইত্যাদি। গাছের পাশাপাশি রাখতে পারেন পছন্দের কোনো ফুল। তবে যেটাই রাখেন না কেন, গাছে পানি দেয়া বা পানি বদলে দেয়ার কাজটা নিয়মিত করতে হবে। চাইলে ফেইক প্ল্যান্টও রাখতে পারেন।
২) ওয়াল আর্ট
অফিসের ওয়াল চাইলে আপনি বেশ ভালোভাবেই ডেকোরেট করে ফেলতে পারেন। কীভাবে দেয়ালের স্পেস কাজে লাগাবেন চলুন জেনে নেয়া যাক-
পছন্দের মানুষের ছবি- কাজের বাইরে যেয়ে আপনজনদের সময় কি ঠিকমতো দেয়া হয়? অথচ কাজে বসলেও আপনি তাদের ঠিকই মিস করতে থাকেন। পরিবার, বন্ধু বা পোষা প্রাণিটির ছবি তাই ঝুলিয়ে রাখতে পারেন ডেস্কের সামনে বা পাশের দেয়ালে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছবিগুলোর দিকে তাকালেও বেশ খানিকটা রিফ্রেশ লাগবে।
ওয়াল গ্রিড প্যানেল- যদি সরাসরি দেয়ালে কিছু লাগানোর উপায় না থাকে, তাহলে ওয়াল গ্রিড প্যানেল লাগিয়ে নিন। পেপার ক্লিপ দিয়ে একসাথে অনেক ছবি, দরকারি নোটস, ডেকোর আইটেম ইত্যাদি ঝুলিয়ে রাখা যাবে।
ইন্সপায়ারিং কোটস- অনেক সময় কাজ করতে করতে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছা হয়। এমন সময় কিছু ইন্সপায়ারিং কথাও মন ভালো করে দেয়। কাজে উৎসাহ বাড়ায়। আপনি চাইলে অফিস ডেস্কে এমন কিছু কথা দিয়ে তৈরি করা ক্যানভাস বা পিকচার ফ্রেম রাখতে পারেন।
৩) ডেস্ক স্টোরেজ
অফিস ডেস্কের সাথে ড্রয়ার বা আলাদা স্টোরেজ থাকে। অর্গানাইজ থাকতে হলে এই জায়গাগুলো কাজে লাগাতে হবে। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য এটা খুবই জরুরি। পুরো ডেস্ক জুড়ে দরকারি জিনিসগুলো এলোমেলোভাবে ফেলে রাখলে দেখতেও যেমন বাজে লাগে, তেমনই কাজ করতেও ভালো লাগে না। তাছাড়া ক্লাটার আপনাকে আরও বেশি ডিপ্রেসড করে তুলতে পারে। জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য ডকুমেন্ট হোল্ডার, ফোল্ডেবল ফাইল হোল্ডার, পেপার ক্লিপ, ডেস্ক অর্গানাইজার, পেন্সিল হোল্ডার ইত্যাদি অবশ্যই ডেস্কে রাখুন।
৪) পছন্দের কাপ
কাজের শুরুটা যদি এক কাপ চা বা কফি দিয়ে শুরু করা যায়, তাহলে মন বেশ ফুরফুরে লাগে। তাই ডেস্কে আপনার পছন্দের একটি কাপ রাখুন। কাপটি হতে পারে পছন্দের কোনো ক্যারেক্টারের, পছন্দের নকশার, মোটিভেটিং কোটসের, অথবা শুধুই এক রঙের। এমন ধরনের কাপগুলো সব সময় আপনার মুড ভালো রাখবে, পজিটিভ ভাইব দিবে, হাইড্রেটেড রাখবে।
৫) প্ল্যানার
সারাদিনে কী কী কাজ করবেন তার জন্য নিশ্চয়ই আপনাকে শিডিউল এবং টু ডু লিস্ট করতে হয়। একটা প্ল্যানার থাকলে এই কাজটা আরও সহজ হয়ে যাবে। এমন একটা প্ল্যানার ইউজ করুন যেটা দেখতেও সুন্দর লাগবে, আবার আপনার নিজের লিখতেও মজা লাগবে।
৬) স্ন্যাকস
যে কোনো ব্যস্ত দিনকে মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তুলতে স্ন্যাকসের বিকল্প নেই। কালারফুল বয়ামে সেগুলো সাজিয়ে রাখলে যেমন দেখতেও সুন্দর লাগবে, তেমনই হুটহাট ক্ষুধা নিবারণেও এগুলো বেশ হেল্পফুল। তবে খেয়াল রাখবেন, স্ন্যাকস যেন সব সময় মিষ্টি না হয়।
৭) পছন্দের বই
ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর প্রেশার তো পড়েই, তাছাড়া এটা ব্রেইনের জন্যও বেশি ভালো না। তাই মাঝে মাঝে কাজ থেকে বিরতি নিন। চা-কফি ও আড্ডা দেয়ার পাশাপাশি কয়েক মিনিট বইও পড়তে পারেন। তাই ডেস্কে পছন্দের বই রাখুন, যেন হাত বাড়ালেই সেটি ধরা যায়।
৮) কালারফুল স্টেশনারি
আমাদের বয়স যতই বাড়ুক না কেন, কালারফুল স্টেশনারি দেখলে কিন্তু আমাদের এখনও কিনতে ইচ্ছা করে, তাই না? আপনি যদি অফিস ডেস্কও এসব স্টেশনারি দিয়ে সাজান তাহলে কাজ করার সময় আপনারও বেশ ফুরফুরে লাগবে। পেন্সিল, কলম, ইরেজার, স্কেল, স্টিকি নোটস, মার্কার পেন, সিজার, স্ট্যাপলার মেশিন, টেপ ডিসপেনসার, টিস্যু বক্স হোল্ডার এমন বিভিন্ন জিনিস আপনি রাখতে পারেন ডেস্কে।
৯) কালারফুল কি বোর্ড ও মাউস ম্যাট
সারা দিন যেখানে বসে আপনি কাজ করছেন, সেই জায়গাটা যদি একদম সাদাসিধা আর বোরিং হয়, তাহলে কাজ করতেও ভালো লাগে না। তাই সবকিছুর পাশাপাশি কি বোর্ড ও মাউস ম্যাটও কালারফুল রাখার চেষ্টা করুন। এতে ওয়ার্ক স্টেশন আরও ব্রাইট লাগবে। চাইলে পছন্দের টিভি শো, মুভি বা পছন্দের কোনো ক্যারেক্টারের ছবি দিয়ে কাস্টমাইজও করে নিতে পারেন। ওয়্যারলেস মাউস ইউজ করলেও ওয়ার্ক স্টেশন দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে।
১০) আয়না
অফিস ওয়ার্কস্পেস সব সময় ছোটই হয়। ঘরের মতো বিশাল জায়গা এখানে পাওয়া যায় না। তাই অল্পের মধ্যেই সাজিয়ে নিতে হয় নিজের জায়গাটুকু। অল্প জায়গাকে বড় দেখাতে হেল্প করতে পারে আয়না। ডেস্কে একটি আয়না ঝুলিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে জায়গাটুকুও পারসোনালাইজড করা হলো, আবার দেখতেও ভিন্ন লাগলো।
১১) কুশন বা ছোট বালিশ
ডেস্ক সাজানোর পাশাপাশি যে চেয়ারে বসে আপনাকে কাজ করতে হয় সেটা যেন আরামদায়ক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরি। নইলে ব্যাকপেইনের সমস্যা হতে পারে। তাই ব্যাক সাপোর্টের জন্য চেয়ারে একটি কুশন বা ছোট বালিশ রাখুন। পছন্দের কভার লাগালে কুশনের লুকটাই বদলে যাবে। ডেস্কে বসে কাজ করতেও ভালো লাগবে।
ওয়ার্কিং স্পেসকে আরও কমফোর্টেবল করা যায় কীভাবে?
যে ধরনের ডেস্কেই আপনি কাজ করেন না কেন, কমফোর্টেবলভাবে কাজ করার জন্য চেয়ার বাছাই করা খুব জরুরি। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যেটাই হোক না কেন ডেস্কের জন্য চেয়ার চুজ করতে হবে বুঝেশুনে। বিশেষ করে যদি ডেস্কটপ হয়, তাহলে মনিটর ও কি বোর্ড কেনার সময়ও আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। ডেস্ক ও চেয়ারের হাইট ঠিক করে নিতে হবে। আপনার হাইটের তুলনায় চেয়ার খুব বেশি উঁচু বা নিচু হওয়া যাবে না।
দিনের একটা দীর্ঘ সময় আমাদের যেখানে কাটে, সেই জায়গাটা যদি মনের মতো না হয়, তাহলে দিনশেষে কাজের প্রতি ভালোবাসাটা আর থাকে না। সেই সাথে কমতে থাকে ক্রিয়েটিভিটি। তাই নিজে ভালো থাকার জন্য এবং কাজে প্রোডাক্টিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর জন্য অফিস ডেস্ক গুছিয়ে রাখা খুব জরুরি। আমি আজ কিছু আইডিয়া দিলাম। এগুলো আপনি নিজের ডেস্ক সাজানোর কাজে ব্যবহার করতে পারতে পারেন, আবার নিজের মতো করেও সাজিয়ে নিতে পারেন সবকিছু। যেটাই করুন না কেন, আপনার ভালো লাগা থাকাটা জরুরি। কাজের প্রতি প্যাশন ক্রিয়েট করার জন্য এটা খুব ভালো একটি উপায়।