কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন? ফলো করুন এই টিপসগুলো

কর্মক্ষেত্র বলতে আপনি কী বোঝেন? শুধুই অফিস? মতেই না! কর্মক্ষেত্র আপনার নিজের বাসাও হতে পারে। বাসা হোক বা অফিস, যেখানে বসে আপনি কাজ করছেন সেই জায়গাটিকে আমরা বলছি কর্মক্ষেত্র। কাজ করতে যেয়ে আপনার কি এমন হয়েছে যে ডেস্ক বেশ এলোমেলো, দরকারের সময় ডায়েরি বা কলম খুঁজে পাচ্ছেন না, যে মগে কফি খেয়েছেন সেটা দিনশেষে সেখানেই পড়ে রয়েছে? তাহলে বলতে হবে আপনি এখনও অর্গানাইজড ভাবে কাজ করতে পারছেন না। যে কোনো কাজ কমপ্লিট করার জন্য ওয়ার্কপ্লেস গুছিয়ে রাখা জরুরি। কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করার জন্য কী কী টিপস ফলো করতে পারেন সেগুলোই জানাবো আজ।

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করবেন যেভাবে

১) টু ডু লিস্ট তৈরি করুন

অফিস হোক বা বাসা, যেখানে বসেই আপনি কাজ করুন না কেন, সারাদিনে অনেক ধরনের কাজই করতে হয়। কিন্তু সব কাজের গুরুত্ব সমান নয়। তাই কাজ শুরুর পূর্বে একটি টু ডু লিস্ট করে নিন। কোন কাজের গুরুত্ব বেশি সে অনুযায়ী লিস্ট সাজিয়ে নিন। কাজ হয়ে গেলে কাজের পাশে একটি টিক চিহ্ন দিবেন এবং চেষ্টা করবেন কাজটি সময়ের মধ্যে শেষ করার। এতে কাজের প্রতি যেমন আগ্রহ বাড়বে, তেমনই কর্মদক্ষতাও বাড়বে।

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করার উপায়

২) মাল্টিটাস্কিং করবেন না

অনেকেই দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য মাল্টিটাস্কিং শুরু করেন। কিন্তু এতে উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশি। মাল্টিটাস্কিং করলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ডেডলাইন মিস হয়ে যেতে পারে। তখন কাজে আগ্রহ কমে যায়। তাই যে কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি আগে শুরু করুন। এরপর একে একে বাকিগুলো শেষ করুন।

৩) সঠিক টুলস ব্যবহার করুন

আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করুন না কেন, কিছু সফটওয়ার ও টুলস ব্যবহারে কাজ বেশ সহজ হয়ে যায়। কোন টুলসগুলো আপনার কাজে হেল্প করতে পারে সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবহার করা শুরু করুন। এতে কাজ অনেকটাই গোছানো হয়ে থাকবে।

৪) মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন

যে কোনো জায়গাতেই কাজের সময় ফোনের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোনে গেইম খেলা বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে বেশ সময় নষ্ট হয়। তাই দরকার ছাড়া ওয়ার্কিং টাইমে ফোন ইউজ না করাই ভালো। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই ফোন সাইলেন্ট রাখার অভ্যাস করুন।

৫) ডেস্ক অর্গানাইজড রাখুন

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করবেন যেভাবে

যে কোনো পরিষ্কার ওয়ার্কস্পেস কাজে মোটিভেটেড থাকতে, ফোকাসড ও প্রোডাক্টিভ থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া দ্রুত ও সহজে ডকুমেন্ট ও বিভিন্ন পেপার খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ড্রয়ার পরিষ্কার করে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু সরিয়ে ফেলুন। অবশ্যই ডেস্ক ও ড্রয়ার অর্গানাইজ রাখুন। লেখার জন্য দরকারি জিনিসপত্র, নোটবুক, পিন, পেপার ক্লিপ সহ ছোট ছোট সবকিছু গুছিয়ে রাখুন। একই ধরনের জিনিস একপাশে রাখুন যেন ডেস্ক ও ড্রয়ারের অন্য পাশেও ভিন্ন কিছু রাখা যায়। ডেস্কে আপনার পছন্দের গাছও রাখতে পারেন। আর অবশ্যই একটি পানির বোতল রাখতে ভুলবেন না। কারণ নিজেকে হাইড্রেটেড রাখাও বেশ জরুরি।

৬) নিয়মিত কাজে বিরতি নিন

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করা মানে সারাদিন শুধু কাজই করে যাওয়া নয়। কাজের ফাঁকে বিরতি নেয়াটাও বেশ জরুরি। ডেস্ক থেকে উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন, বাইরের বাতাস গায়ে লাগান, চা বা কফি পান করুন। ফ্রেশ লাগবে। এরপর নতুনভাবে আবার শুরু করুন।

৭) ক্যালেন্ডার ও প্ল্যানার ব্যবহার করুন

ক্যালেন্ডার কিংবা প্ল্যানারে কোন কাজটি কবে করবেন তা আপডেট করে রাখুন। এজন্য গুগল ক্যালেন্ডার বা ডদেস্কটপে থাকা ক্যালেন্ডারও ব্যবহার করতে পারেন। কাজ হয়ে গেলে মার্ক করে রাখুন।

৮) দরকারি তথ্য লিখে রাখুন

দরকারি সব তথ্য যে জোর করেই আপনার মনে রাখতে হবে, বিষয়টি এত জটিল করার কিছু নেই। যে তথ্যটি প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে সেটি লিখে রাখুন। যখন দরকার হবে, তথ্য টুকে নিলেই হবে। আপনি কাগজে বা ডিজিটাল নোটবুকে যেখানে ভালো লাগে লিখতে পারেন। মিটিং এর বিভিন্ন নোট, দরকারি তারিখ, টু ডু লিস্ট সবই লিখে রাখুন।

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করবেন যেভাবে

৯) রুটিন তৈরি করুন

ডেইলি রুটিন তৈরি করা মানে হচ্ছে আপনি প্রতিদিনের অভ্যাসকেই তালিকাবদ্ধ করছেন। রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আপনার প্রতিটি দিন বেশ স্মুথভাবেই কাটবে। হয়তো রুটিন অনুযায়ী দিনের শুরুটা আপনি ই-মেইল চেকিং, ভয়েস মেইল শোনা এবং নতুন কোন লেখা লিখবেন সেটি দিয়েই হতে পারে। তাই কোনটির পর কোনটি করবেন সেটির একটি রুটিন থাকলে কোনো কাজই মিস হবে না।

১০) সহকর্মীর সাহায্য নিন 

কখনো কখনো কাজ করতে যেয়ে বিরক্তি চলে আসতে পারে, এমন কাজ সামনে আসতে পারে যেটি আপনি জানেন না। তখন দায়িত্ব নিয়ে ভুল করার বদলে সহকর্মীর সাহায্য নিন। যে কাজটি পারে তাকে জিজ্ঞেস করুন কীভাবে সেটি কমপ্লিট করা যায়। নিজের কাজে অর্গানাইজ থাকার এটিও একটি অংশ।

১১) নিজেকে পুরস্কৃত করুন

অর্গানাইজড থাকার জন্য নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করার অভ্যাস তৈরি করুন। যে কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ সম্পন্ন হলে কোথাও ঘুরতে চলে যান, নিজেকে কোনো গিফট দিন, ভালো কোনো রেস্টুরেন্টেও খেতে যেতে পারেন।

১২) অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দেয়ার অভ্যাস করুন

কাজ করতে করতে আমরা অনেক জিনিস জমিয়ে ফেলি। বেশিরভাগ জিনিসই হয়ত অপ্রয়োজনীয় থাকে। পরে কখনো লাগবে বলে রেখে দেই। চেষ্টা করুন এমন জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলতে। এগুলো শুধু জায়গাই নষ্ট করে না, সেই সাথে পরবর্তীতে কী করবেন তা নিয়ে চিন্তাও বাড়ায়।

১৩) প্রোগ্রেস ট্র্যাক করুন

প্রোগ্রেস ট্র্যাক করুন

কাজ করার সময় সবচেয়ে জরুরি প্রোগ্রেস ট্র্যাক করা। কীভাবে কাজ করলে ভালো হচ্ছে, সকালে-দুপুরে-বিকালে কখন কাজ করলে ভালো আউটপুট আসছে এগুলো অবশ্যই বোঝার চেষ্টা করুন।

১৪) ডিভাইসের ব্যাকআপ রাখুন

আপনি ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা অন্য যে কোনো ডিভাইসই ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই সেতার ব্যাকআপ রাখার চেষ্টা করুন। এতে আপনার কাজ, ব্যবসা, ব্যক্তিগত তথ্য সবকিছুই যে কোনো অ্যাক্সিডেন্ট বা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের কারণে হারিয়ে যাবে না।

১৫) অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল ডিলিট করে ফেলুন

কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করা মানে শুধু ডেস্ক গুছিয়ে রাখাই নয়। অনলাইনেও গোছানোভাবে কাজ করা শিখতে হবে। আমাদের প্রতিদিন অনেক ই-মেইল আসে। সেগুলো ডিলিট করা হয় না বলে ওভাবেই রয়ে যায়, পরে মেইল সেন্ড বা রিসিভ ব্লক হয়ে যায়। তাই অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল ডিলিট করে ফেউলন। ইনবক্স অর্গানাইজ রাখাও অর্গানাইজড থাকার একটি পার্ট।

১৬) টাইমার ব্যবহার করুন

কাজ শুরু করার আগে টাইমার ব্যবহার করতে পারেন। কোন কাজটি করতে কতক্ষণ লাগছে, সময়ের মধ্যেই সেটি শেষ করতে পারছেন কিনা সেটির হিসেব রাখা সহজ হবে তাহলে। টু ডু লিস্ট অনুযায়ী কোন কাজটিকে প্রাধান্য দিবেন, টাইমার সেট করলে সেটি বোঝা আরও সহজ হবে। একবার টার্গেট অনুযায়ী কাজ করে ফেলতে পারলে দেখবেন আপনারও বেশ ভালো লাগছে। তখন নতুন কাজ করতেও উৎসাহ পাবেন।

টাইমার ব্যবহার করুন

যে কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারলে বেশ ভালোভাবে সেটা সম্পন্ন করা যায়। তাই যে কাজটাই করবেন, চেষ্টা করবেন গুছিয়ে করার। কোনো কাজকেই ছোট মনে করবেন না। যেখানে কাজ করছেন, সেটা অফিস হোক বা বাসা- অবশ্যই মন দিয়ে কাজ করুন। অর্গানাইজ ওয়েতে কাজ করুন। গুছিয়ে কাজ করার সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, বেশ ইফেক্টিভ ওয়েতে কাজ করা যায়। ওয়ার্কফ্লো থাকে। কাজে ভালো করতে হলে এবং প্রশংসা পেতে হলে এর চেয়ে ভালো উপায় খুব কমই আছে। আশা করি, এই টিপসগুলো আপনার কর্মক্ষেত্রে কাজে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *