প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় নার্ভাস না হওয়ার জন্য কী কী করা যায়?

নতুন কারও সাথে কথা বলার সময়, স্পীচ দেয়ার সময় অথবা স্টেজে কথা বলার সময় আমরা অনেকেই নার্ভাস হয়ে যাই। এমনটি যদি আপনার সাথেও হয়ে থাকে, তাহলে আপনি একা নন। কয়েক ধরনের পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি আছে। যেমন- হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপা, অথবা অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি। আর এগুলো খুবই নরমাল। পাবলিক স্পিকিং এও অনেকের ভয় আছে। তবে আপনি যতই এসব অবস্থা থেকে বের হয়ে আসবেন, ততই আপনি কমফোর্টেবল হয়ে উঠবেন। প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় যেন আপনি নার্ভাস না হয়ে পড়েন সেজন্য কয়েকটি টিপস আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় আমরা নার্ভাস কেন হই?

ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাংজাইটি সেন্টারের দেয়া তথ্যমতে, পাবলিক স্পিকিং এর যে ভয়, সেটা বেশ কমন একটি ফোবিয়া। এই ভয়ের অফিসিয়াল নাম হচ্ছে গ্লসোফোবিয়া। স্টেজ ভীতি আসলে তখন দেখা দেয়, যখন আপনার মনে হতে থাকে যে, আপনার সামনে যে মানুষগুলো বসে আছে, তারা আপনাকে জাজ করবে। আমরা যখন স্ট্রেসড হয়ে যাই, তখন আমাদের স্ট্রেস হরমোন রিলিজ হতে থাকে। আর আমরা ফ্রিজ হয়ে যাই এবং কথা বলা বন্ধ করে দেই।

নার্ভাস হওয়ার মধ্যে কোনো দোষ নেই। আমাদের সবার সোশ্যাল কমফোর্ট জোন, কমিউনিকেশন স্টাইল ও প্রেজেন্টেশন স্কিল আলাদা। কিন্তু আমরা যদি কগনিটিভলি ফ্লেক্সিবল হই, তাহলে আমরা আমাদের স্কিল যেমন ইমপ্রুভ করতে পারবো, তেমনই স্কিল বাড়াতেও পারবো। আমাদের আচরণ ও মনোভাবে কগনিটিভ ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক বড় একটি রোল প্লে করে। এর সাহায্যে ভয়কে আপনি জয় করতে পারবেন। সবার সামনে দুর্দান্ত প্রেজেন্টেশন দিতেও আপনার হাত পা কাঁপবে না।

প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় আমরা কেন নার্ভাস হই?

কীভাবে নার্ভাসনেস কাটাবেন?

প্রেজেন্টেশন এক্সপেরিয়েন্স ভালো করার জন্য কয়েকটি তেকনিক আপনি ফলো করতে পারেন। যেমন-

প্রেজেন্টেশনের আগেঃ

১) টপিক সম্পর্কে জেনে নিন

প্রেজেন্টেশন যে কোনো টপিকেই হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি যত ভালো করে বিষয়টি সম্পর্কে জানবেন, তত কনফিডেন্ট ফিল করবেন। প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর দিতে পারবেন এবং লিখিত নোটের উপর নির্ভর করতে হবে না। প্রেজেন্টেশনের সময় যদি আপনাকে কোনো প্রশ্ন করতে হয় বা উত্তর দিতে হয় তাহলে সেগুলো সম্পর্কে কিছু পয়েন্ট লিখে রাখুন। সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করে নিন। এতে কথা বলার সময় কমফোর্ট ফিল করবেন।

২) অর্গানাইজড থাকুন

প্রতি প্রেজেন্টেশনের আগে নিজেকে সময় দিন। যেমন- কোনো পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড তৈরি করা বা ভিডিওর মতো কোনো ভিজ্যুয়াল তৈরি করা। যিনি অর্গানাইজার থাকবেন তার সাথে ফরম্যাট এবং যে টেকনোলজি আপনি ব্যবহার করবেন সেগুলো সম্পর্কে কথা বলে নিন। যদি এটা ভার্চুয়ালও হয়, তবু আপনার রুমের ব্যাকগ্রাউন্ড ও রুম অর্গানাইজড রাখুন। এতে স্ট্রেস অনেকটাই কমবে এবং প্রেজেন্টেশনও স্মুথ হবে।

৩) প্র্যাকটিস করুন

আপনি যখন আয়নার সামনে, ফ্যামিলি মেম্বার বা পোষা প্রাণীর সামনে দাঁড়িয়ে রিহার্সেল করছেন, তখন এটুকুই যথেষ্ট নয়। বডি ল্যাংগুয়েজ, আই কন্টাক্ট, এবং আপনি কতটুকু জোরে কথা বলতে পারেন সেগুলো সম্পর্কে ফিডব্যাকও জানা দরকার। আপনি যদি কোনো ভিডিও কনফারেন্সে প্রেজেন্টেশন দেন, তাহলে সেটি রেকর্ড করে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে সেই ভিডিও দেখে ও সাউন্ড শুনে আর কোথায় কোথায় নিজেকে বদলাতে হবে সে সম্পর্কে আপনি বুঝতে পারবেন।

প্রেজেন্টেশন দেয়ার আগে প্র্যাকটিস করে নিন

৪) সাকসেস ভিজ্যুয়ালাইজ করুন

আমরা সবাই পজিটিভ রেজাল্টের চিন্তা করি। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে আপনি যেমনটা ভাবছেন, তেমন ফলাফল হচ্ছে না। তাই বলে কি সেটা নিয়েই বসে থাকবেন? এতে কিন্তু আপনারই ক্ষতি হতে পারে। আর সব সময় নেগেটিভ চিন্তাভাবনা নিয়ে থাকলে আপনার মেন্তালিটিও এক সময় নেতিবাচক সব চিন্তা দিয়ে পূর্ণ হয়ে থাকবে।

আপনি যত আপনার চিন্তাভাবনা পজিটিভ রাখবেন এবং সাকসেস ভিজ্যুয়ালাইজ করবেন, ততই স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে পারবেন। আপনার কনফিডেন্স বাড়ানোর জন্য পজিটিভ সেলফ টক খুব ভালো একটি উপায় হতে পারে। প্রেজেন্টেশনের পুরো সময় ভাবনায় শুধু সফলতার চিন্তাই রাখুন।

প্রেজেন্টেশনের সময়ঃ

১) মনোযোগ দিন কথায় 

যে বিষয় নিয়ে কথা বলবেন সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিন, দর্শকের দিকে নয়। তারা শুধু আপনাকেই দেখছে না, আপনার তৈরি করা কালারফুল স্লাইডের দিকেও তার তাকিয়ে আছে এবং আপনি কী বলছেন সেগুলো শুনছে। তাদের মস্তিষ্ককে অনিশ্চয়তা দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন না।

২) নীরবতায় ভয় পাবেন না

কথা বলতে বলতে যদি আপনি হুট করে থেমে যান তাহলে এতে খারাপ কিছু নেই। পরবর্তী সময়ে কী বলবেন, সেটা ভাবার জন্য এটুকু আপনি থামতেই পারেন। এটা খুব অল্প সময়ের জন্য। থেমে যাওয়া খারাপ কিছু নয়।

৩) গভীর শ্বাস নিন এবং পানি পান করুন

ব্রিদিং আপনার ব্রেইনে অক্সিজেন ডেলিভার করে, আরও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। পানি পান করলে এনার্জি বাড়ে এবং কিছু সময়ের জন্য আপনাকে ভাবতে সাহায় করে।

পানি পান

৪) ধীরে কথা বলুন

প্রেজেন্টেশন অ্যাংজাইটি অনেক সময় নার্ভাস এনার্জি তৈরি করে, যার কারণে আমরা নরমাল সময়ের চেয়ে বেশি কথা বলি। এতে আমরা কথা বলার সময় তোতলাতে থাকি অথবা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলে যাই। এই সমস্যা এড়াতে চাইলে ধীরে কথা বলুন। দর্শক শ্রোতারা যদি আপনার কথা বুঝতে পারে তাহলে তারা আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে, আপনার কথা বলার ধরনে আপনি নিজেই শান্ত থাকবেন। তাই নিজেকে যতটুকু সম্ভব অর্গানাইজড রাখুন।

৫) হাসুন

প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় নার্ভাসনেস কাটাতে হাসি খুব ইফেক্টিভ একটি উপায়। এন্ড্রোফেন রিলিজ হওয়ার কারণে আপনি ফিজিক্যালি আরও বেশি কনফিডেন্ট হবেন। দর্শকের কাছে আরও মন খুলে কথা বলতে পারবেন।

৬) ৩টি ‘অডিয়েন্স ট্রুথ’ মনে রাখুন

এই সত্যগুলো হচ্ছে- ১) প্রেজেন্টেশনের সময় দর্শকরা বিশ্বাস করবে যে আপনি যা বলছেন, সত্য বলছেন ২) তারা সব সময় আপনার সাথে থাকবে এবং ৩) তারা জানে না আপনি কখন ভুল করছেন।

অডিয়েন্স

৭) সফলতাকে উদযাপন করুন

প্রেজেন্টেশন দিতে পারাটা সহজ কিছু নয়। তাই একে উদযাপন করুন। সবাই প্রেজেন্টেশন দিতে পারে না। পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী সবার সাথেই সাফল্য ভাগ করে নিন।

৮) ফিডব্যাক নিন

পরবর্তীতে যদি আরও ভালো করতে চান তাহলে ফিডব্যাক খুব ভালো একটি গিফট হতে পারে। দর্শকদের জিজ্ঞেস করুন তাদের আপনার কোন কথাটি ভালো লেগেছে আর কোনটি নয়। মনে রাখবেন, ভুল থেকেই আপনি নতুন করে শিখতে পারবেন।

নার্ভাসনেস কন্ট্রোল করার টেকনিক

নার্ভাসনেস বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে কখনো কখনো এটি আমাদের আনন্দের মাঝে বাঁধা হয়েও দাঁড়াতে পারে। নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য ৫টি উপায় আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছিঃ

১) কারও সাথে কথা বলুন

ইমোশন এক প্রকার সংক্রামক। অন্যের পজিটিভ ভাইবও আমরা অ্যাবজর্ব করি। এমন কারও সাথে বলুন যারা আপনাকে নিয়ে এক্সাইটেড থাকে এবং আপনার প্রেজেন্টেশনের ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রেজেন্টেশন ছাড়াও আপনার জীবনে একজন চিয়ারলিডার অবশ্যই দরকার। এমন কেউ যে কিনা আপনাকে বুঝবে এবং আপনার নার্ভাসনেস কাটাতে আপনাকে সাহায্য করবে।

২) ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন

শ্বাস প্রশ্বাস যেন ভালোভাবে হয় সেজন্য মাইন্ডফুল ব্রিদিং করুন। ব্রিদওয়ার্ক এর বেশকিছু বেনিফিট আছে। যেমন- স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, মনোযোগ বাড়ায় ও ফোকাসড থাকা যায়।

প্রেজেন্টেশনের আগে নীরব একটি জায়গায় বসুন। শুরু করার আগে মিনিটখানেক গভীরভাবে শ্বাস নিন, ফোকাস করুন। এই প্র্যাকটিসের কারণে আপনার বডি ও মাইন্ড একসাথে কাজ করবে।

ব্রিদিং এক্সারসাইজ

প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য যে উপায়গুলো নিয়ে আজ আলোচনা করলাম, আশা করি সেগুলো আপনাদের কিছুটা হলেও কাজে আসবে। নিজেকে প্রেজেন্টেবল করার জন্য এগুলো আপনারা প্র্যাকটিস করতে পারেন। ভয় না পেয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন। জয় আপনারই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *