কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসম্মানিত হচ্ছেন? আপনার কাজকে ভালোভাবে ট্রিট করা হচ্ছে না? তাহলে এখনই সময় নিজের জন্য নিজে স্ট্যান্ড নেয়া। কাজটি করা খুব সহজ নয়, বিশেষ করে কোনোকিছু যখন আপনার কাছে নিজ থেকে আসছে না। কিন্তু তাই বলে তো থেমে গেলে চলবে না, তাই না? কর্মক্ষেত্রের এই সমস্যাগুলো কয়েকটি উপায়ে হ্যান্ডেল করা যায়। নিজের জন্য কথা বলতে ভয় পাবেন না। কারণ আপনিও অন্যদের মতো সম্মান ডিজার্ভ করেন। কর্মক্ষেত্রে নিজের সম্মান বজায় রাখার কয়েকটি উপায় সম্পর্কেই আজ আপনাদের জানাবো।
কর্মক্ষেত্রে নিজের সম্মান বজায় রাখার উপায়
যত যাই কিছু হোক, শান্ত থাকুন
রাগের মাথায় আমরা অনেকেই অনেক কিছু বলি, যেগুলো বলা মোটেই উচিত নয়। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা বেশ কঠিন। তবু নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করুন। থামুন, কয়েক সেকেন্ড শ্বাস নিন, কোনোকিছু বলার আগে কিছুক্ষণ সময় নিন। যদি মনে হয় কিছু সময় হেঁটে আসবেন, তাহলে তা করতে পারেন। এরপর আবারও আগের জায়গায় ফিরে আসুন, প্রফেশনালভাবে কথা বলুন। যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারা খুব ভালো একটি বিষয়। এতে অন্যরাও আপনাকে খুব ভালোভাবে জানতে পারে।
মতের মিল না হলে সম্মানের সাথে জানান
কথা বলুন, কিন্তু এমনভাবে বলুন যেন অপর ব্যক্তি কষ্ট না পায়। আপনি যদি কলিগের কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন বা কোনো সমস্যার তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে কথা বলাতে কোনো ভুল নেই। তাদের আইডিয়াকে সরাসরি বাতিল করে দিলে বা রুডভাবে জানালে আপনাকেই তারা এগ্রেসিভ বলে জানবে। এর চেয়ে অপর পক্ষের কথাও শুনুন এবং আপনার মতামত তাদের সামনে সুন্দরভাবে পেশ করুন।
অন্য কোনো জায়গায় বসে কথা বলুন
যে কলিগের সাথে সমস্যা হচ্ছে তাকে যদি আপনি সবার সামনে কিছু বলে বসেন তাহলে সে সেটা ভালোভাবে নাও নিতে পারে। অন্যান্য কলিগের সামনে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা বললে হয়তো পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। ধরুন, কোনো মিটিং এর মাঝখানে সহকর্মী এমন কোনো বিষয়ে কথা বলছে যেটা তার বলা উচিত হয়নি। কিন্তু সে সেটা বুঝতে পারছে না। মিটিং শেষ হলে আপনি তাকে নিয়ে আলাদাভাবে বসুন এবং বুঝিয়ে বলুন যে মিটিং এ সব সময় সব কথা বলা যায় না।
দোষ না দিয়ে প্রশ্ন করুন
আপনি যদি সহকর্মীকে সরাসরি দোষ দিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন, তাহলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। তাই যে কোনো কনভারসেশন শুরু করার আগে এগ্রেসিভ না হয়ে সুন্দরভাবে বলুন অথবা প্রশ্ন করুন। আপনি যদি সরাসরি তাকে বলেন যে, ‘আপনি যেভাবে কাজটি করেছেন সেটা আমার পছন্দ নয়’ অথবা ‘আপনি যে পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন সেটি একদম ভুল!’ – এভাবে বলাতে সে নিজেকে বেশ ছোট ভাবতে পারে। এর বদলে আপনি তাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন- ‘আমার কাজ বুঝতে আপনার কী কী সমস্যা হচ্ছে সেটি কি আপনি আমায় একটু বুঝিয়ে বলবেন?’ অথবা ‘আপনি কি আমাকে নতুন শিডিউলটা একটু বুঝিয়ে বলবেন? কেন আপনি এটা চেঞ্জ করেছেন সেটার পিছনে অবশ্যই ভালো কিছু কারণ রয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস’। এভাবে বললে সেও বুঝতে পারবে তার ভুল কোথায়।
বুলিং এর শিকার হলে এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন
যে কোনো জায়গায় বুলি করা একটি অপরাধ। যদি কোনো সহকর্মী দ্বারা আপনি বুলিং এর শিকার হন, তাহলে এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আওয়াজ তুলুন। চুপচাপ এগুলো সহ্য করে যাবেন না। ভরসা করেন এমন সহকর্মীর সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করুন। এর আগেও হয়তো অনেকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। তাদেরকে একত্রিত করুন। সবাই মিলে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করুন, একে অপরকে সাপোর্ট করুন। বসের কাছে যেয়ে সবাই বিষয়টি খুলে বলুন। অবশ্যই কোনো না কোনো সমাধান পাবেন।
সুপারভাইজারকে সবকিছু খুলে বলুন
যে কোনো প্রবলেম প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করার জন্য এটা অন্যতম ভালো একটি উপায়। আপনার যদি কারো বিরুদ্ধে ফরমাল কমপ্লেইন করতে হয়, তাহলে সরাসরি সুপারভাইজারের সাথে কথা বলুন। যদি তাকে আপনি কিছুই না জানান, তাহলে ফরমাল ইনভেস্টিগেশন হলে আপনার পক্ষ থেকে কোনো কথাই শোনা হবে না।
নেগেটিভ ইমোশন আছে কিনা বুঝে নিন
কর্মক্ষেত্রে নিজের সম্মান ধরে রাখার জন্য সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে আপনার কোনো নেগেটিভ ইমোশন আছে কিনা। যদি থেকে থাকে এবং এই বিষয়টিকে আপনি ইগনোর করেন, তাহলে দিন দিন আপনার দুশ্চিন্তা ও হতাশা বাড়তে থাকবে। ইমোশনের চাপে ডুবে যাওয়ার আগে পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসুন। এতে সমস্যার সমাধান পাওয়া সহজ হবে।
না বলতে শিখুন
মানুষকে না বলতে পারার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। আপনি যদি এমন কোনো পরিবেশে থেকে থাকেন যেখানে আপনার অস্বস্তি হচ্ছে অথবা আপনি কাজটি করতে চাচ্ছেন না, তাহলে না বলুন। বুঝতে শিখুন যে না বলাটা খারাপ কিছু নয়। ধরুন আপনার সহকর্মী আপনাকে এমন কোনো কাজের কথা বলেছে যেটা আপনি বেশি ভালোভাবে করতে পারবেন না। তখন আপনি তাকে বলুন যে, আপনার কাজের শিডিউল অলরেডি করা আছে এবং এই মুহূর্তে অন্য কাজ আপনি করতে পারবেন না। মানসিক স্বাস্থ্যের উপর চাপ দিয়ে কখনো বাড়তে কাজ করতে যাবেন না।
অনুভূতিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করুন
যদি কর্মক্ষেত্রে কোনোকিছু আপনি বিব্রত হন বা আপনার মন খচখচ করে, তাহলে সঠিকভাবে মনের সেই ভাব প্রকাশ করুন। যদি সহকর্মীর কোনো আচরণে আপনি কষ্ট পেতে থাকেন, তাহলে তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন তাদের কোন কোন আচরণে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন, অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। আর এসব কারণে কীভাবে আপনার কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে সেটাও বলুন। এই ধরনের আলোচনাগুলোর কারণে আপনি নির্ধারিত লক্ষ্যে সহজে পৌঁছাতে পারবেন এবং সহকর্মীদের সাথে কাজের ক্ষেত্রেও উৎসাহ বাড়বে।
কনফিডেন্সের সাথে কথা বলুন
অন্যের সাথে কীভাবে কথা বলছেন সেটা কর্মক্ষেত্রে নিজের সম্মান ধরে রাখার জন্য খুবই জরুরি। আমতা আমতা করে কথা বলা বা বিড়বিড় করে বলা কোনোটাই আপনার কনফিডেন্স শো করবে না। বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে কনফিডেন্স বোঝানোর চেষ্টা করুন। সোজা হয়ে দাঁড়ান, শান্তভাবে কথা বলুন, কথা বলার সময় অবশ্যই আই কন্টাক্ট করুন।
কখন দূরে থাকতে হবে, সেটা বুঝুন
যদি কোনো কলিগ পরিবেশকে টক্সিক করে তোলে, তখন সেই জায়গা থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকাই ভালো। যে টপিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, আপনি হয়ত সেটাতে আগ্রহী নন। তখনই রুম থেকে বের হয়ে আসুন, খোলা বাতাসে শ্বাস নিন, নিশ্চিত করুন যে শারীরিক কোনো ক্ষতির মুখোমুখি আপনি হবেন না। সামনে থেকে চলে আসা সব সময় মাথা নত করা বোঝায় না, বরং এতে সেলফ কেয়ার হয়। আপনাকে সবার আগে বুঝতে হবে কোন টপিকগুলো থেকে আপনাকে দূরে থাকতে হবে, কোন বিষয়গুলো আপনাকে ভালো লাগা দিবে।
কর্মেক্ষেত্রে নিজের সম্মান ধরে রাখার জন্য অনেকেই অনেক কিছু করে। আপনি খুঁজে বের করুন আপনাকে কী করতে হবে। কোন বিষয়গুলো আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, কোনগুলো থেকে আপনাকে সরে আসতে হবে, কেন আপনার নিজের মতো করে গুছিয়ে কাজ করা প্রয়োজন সেগুলো বুঝুন। আপনি যদি নিজেই নিজেকে সম্মান করতে না পারেন, তাহলে অন্য কেউ আপনার জন্য এগিয়ে আসবে না। নিজেকে কখনো ছোট ভাববেন না এবং নিজের জন্য স্ট্যান্ড নিতে পিছপা হবেন না। তবেই ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করা সম্ভব।
ছবিঃ সংগৃহীত