ওভারথিংকিং বন্ধ করে স্বাভাবিক থাকার সহজ কয়েকটি উপায়

আড্ডা দিতে আপনি বেশ ভালোবাসেন। কিন্তু আড্ডা দেয়ার সময় বুঝতে পারেন না কীভাবে সবার সাথে কথা বললেন। আড্ডা শেষে বারবার মনে হলো যেভাবে যার সাথে কথা বলেছেন সেটা কি ঠিক আছে? পুরোটা দিন মাথার ভেতর এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে থাকলেন। বারবার এসব কথা নিয়ে চিন্তা করা ওভারথিংকিং এর সবচেয়ে বড় একটি উদাহরণ। আর এমনটা হলে সবাই নিজেকে অপরাধী ভাবে। আপনি যখন ওভারথিংক করতে থাকেন, তখন নানা ধরনের দুশ্চিন্তা ও ইনসিকিওরিটি আপনাকে ঘিরে ধরে। আর তাই এটা বদলানো খুব দরকার। কীভাবে ওভারথিংকিং বন্ধ করে স্বাভাবিক থাকবেন তারই কয়েকটি সহজ উপায় সম্পর্কে জানাবো আজ।

ওভারথিংকিং কী?ওভারথিংকিং বন্ধ করে স্বাভাবিক থাকার সহজ কয়েকটি উপায়

আমরা যখন অতীতের কোনো কথা, খারাপ কোনো মুহূর্ত বা ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকি, তখনই ওভারথিংকিং তৈরি হয়। এসব ভাবলে শুধু দুশ্চিন্তাই বাড়বে। আপনি হয়তো ভাবছেন, নিশ্চয়ই আপনি কোনো ভুল করেছেন অথবা ভবিষ্যতে কোনো না কোনো ভুল আপনি করবেন। তাই এসব ভাবনা না ভেবে বর্তমানে বাঁচুন। আর কীভাবে এটি সম্ভব? চলুন সেটা নিয়েই আজ আলোচনা করা যাক।

ওভারথিংকিং

কীভাবে বুঝবেন ওভারথিংকিং করছেন কিনা?

১) অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে পারেন না

আপনার যদি দিনের শুরু ও রাতের শেষ হয় এলোমেলো চিন্তা দিয়ে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ওভারথিংক করছেন। আর এসব চিন্তা যদি আপনার মনে গেঁথে যায়, তাহলে আপনার কাজ ও সম্পর্ক দুই জায়গাতেই এর প্রভাব পড়বে।

২) কাজে মনোযোগ দিতে না পারা

কখনও কখনও আপনার সিদ্ধান্তের সাফল্য বা ব্যর্থতা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের কারণগুলির উপর নির্ভর করতে পারে। আপনি যখন ওভারথিংক করবেন, তখন কোনো কাজেই সহজে মনোযোগ বসাতে পারবেন না।

৩) সিদ্ধান্তে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা

কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় যদি আপনি ওভারথিংকিং করতে থাকেন, তাহলে কোন সিদ্ধান্ত সঠিক এবং কোনটি ভুল, সেটি আপনি সঠিকভাবে নিতে পারবেন না। অথচ এই সিদ্ধান্ত নেয়া আপনার নিয়ন্ত্রণেও থাকে না।

৪) মানসিকভাবে ভেঙে পড়া

ওভারথিংকিং করলে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে যা কিনা আপনার মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দিবে।

৫) রিল্যাক্স করা যায় না

অতিরিক্ত চিন্তা করা যেমন একদিনে হয় না, তেমন একদিনে এটা শেষও হয় না। ধীরে ধীরে আপনার স্বর্বস্ব শেষ হতে থাকে। আপনি কোনোভাবেই রিল্যাক্স হতে পারবেন না, প্রতি মুহূর্তে স্ট্রেস আপনাকে ঘিরে রাখবে। এ থেকে যে যে সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ঘাড়ে ব্যথা হওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়া সহ নানা ধরনের সমস্যা।

ওভারথিংকিং

যে যে সমস্যা হতে পারে

ওভারথিংকিং এর কারণে শারীরিক ও মানসিক নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন-

শারীরিক অসুস্থতা

  • ইনসমনিয়া
  • ক্লান্তি
  • মাথা ব্যথা
  • বমিভাব
  • ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া

মানসিক অসুস্থতা

  • স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দেয়
  • ডিপ্রেশন
  • দুশ্চিন্তা

ওভারথিংকিং বন্ধ করে স্বাভাবিক থাকার কয়েকটি উপায়

১) গভীরভাবে শ্বাস নিন

চোখ বন্ধ করুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। গভীরভাবে শ্বাস নিলে ব্রেইনে অক্সিজেন ভালোভাবে পৌঁছায়। প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম অ্যাক্টিভেট হয়, যেটি কিনা আপনাকে বিশ্রাম নিতে ও হজমে সাহায্য করবে। এক কথায়, এটি আপনাকে শান্ত রাখবে, দুশ্চিন্তা কমাবে, ভয় কমাবে এবং খারাপ চিন্তা থেকে দূরে রাখবে।

২) মনোযোগ সরিয়ে নিন

আপনাকে ভাবাচ্ছে, চিন্তা করাচ্ছে, দুশ্চিন্তায় ফেলছে এমন যে কোনো কিছু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিন।। এতে আপনি কিছুটা হলেও রিচার্জড হতে পারবেন। এ জন্য যা যা করতে পারেন-

বই পড়ুন

  • সিনেমা দেখা
  • বেকিং
  • ব্যায়াম করা
  • বই পড়া
  • নতুন কোনো সেলাই শেখা

প্রথম প্রথম যে কোনো কিছু করাতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন লাগতে পারে। ঘন্টাখানেক সময় ধরে চেষ্টা করলে একটা সময় সবই আয়ত্তে চলে আসবে।

৩) সাফল্য উদযাপন করুন

কোনো কাজ তা যতই ছোট বা বড় হোক না কেন, তাতে যদি সাফল্য আসে তাহলে অবশ্যই সেটা উদযাপন করা উচিত। কখনো হেরে গেলে নিজেকে ছট ভাববেন না। প্রতিটি ভুল শেখার একেকটি ধাপ।

৪) ভয়ের মুখোমুখি হন

অতীতকে বদলানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে অতীতে কী হয়েছে সেটা থেকে জীবনের নতুন শিক্ষা নেয়াই যায়। মনের মাঝে পজিটিভ চিন্তাগুলো ধারণ করা মানে জীবনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। তাই ভয়কে জয় করা জরুরি। তবে সত্যি বলতে কখনো কখনো একটু ভয় পাওয়া ভালো, তবে সব ভুলে লক্ষ্য পূরনে এগিয়ে যাওয়াই ভালো।

৫) জার্নালিং করুন

আপনার প্রতিদিনের উন্নতি ও প্রচেষ্টাকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য জার্নালিং খুব ভালো একটি উপায় হতে পারে। ওভারথিংকিং করলে কীভাবে দুশ্চিন্তা কমাবেন তারই সহজ একটি পদ্ধতি এটি। আপনার ভীষণ ব্যস্ত সময় থেকে কিছুটা সময় বের করে জার্নালিং করলে নতুন কোনো কাজ করার স্পৃহাও বাড়বে।

জার্নালিং

৬) বর্তমানে বাঁচুন

আপনার সকল চিন্তাভাবনা নিয়ে বর্তমানে বাঁচুন। জোর করে কোনোকিছু পাওয়ার চেয়ে পরিস্থিতিকে গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়। আপনি যত মস্তিষ্ককে অতিত ও ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে মুক্ত রাখবেন, তত বেশি অতোম্যাটিক হতে পারবেন। তাই চিন্তা ভাবনায় ও কথা বলায় পজিটিভিটি রাখুন।

৭) সাহায্য নিন

ওভারথিংকিং সবাই সব সময় করে না। কিন্তু যখন এটাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না, তখন একজন মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালের সাহায্য নিন। প্রফেশনাল হেল্পার যেমন কোচ বা থেরাপিস্ট আপনাকে ডার্ক মোমেন্ট থেকে বের করে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

৮) অন্যের জন্য ভালো কিছু করুন

সব সময় নিজের ভালো চাওয়া, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা কিছুটা স্বার্থপরের মতো শোনায়, তাই না? তাই কখনও কখনও চেষ্টা করুন অন্যের জন্যও কিছু করার। যখন আপনি কঠিন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। ধরুন আপনার কোনো বন্ধুর ডিভোর্স হয়েছে তাকে মাঝে মাঝে সময় দিন। কোনো বন্ধুর সন্তানকে কিছুটা সময় নিজের কাছে রেখে তাকে কিছুটা কোয়ালিটি টাইম পেতে সাহায্য করতে পারেন। যদি কোনো প্রতিবেশি অসুস্থ হয়ে থাকে তাহলে তাকে মাঝে মাঝে বাজার করে দিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার কাছে এমন শক্তি আছে যা দিয়ে অন্যের খারাপ সময়কেও ভালো করে দেয়া যায়। এতে আপনি নিজেও ওভারথিংকিং বন্ধ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

ওভারথিংকিং বন্ধ করে অন্যকে সাহায্য করুন

৯) নিজেকে বিচার করুন

  • আগের ভুল অবশ্যই মনে রাখুন। আগের সপ্তাহে যে ভুল হয়েছে সেগুলো নিয়ে নিজেকে বেঁধে রাখবেন না। নিজেকে তাই বিচার করুন। যেমন-
  • স্ট্রেসফুল চিন্তাগুলো লিখে রাখুন
  • ইমোশনের প্রতি মনযোগ দিন
  • যখন যে মুহুর্ত পাচ্ছেন সেটা উপভোগ করুন
  • নিজেকে একটি কথা সব সময় বলুন, ‘আমি যেমন তেমনই আমাকে গ্রহণ করছি’ অথবা ‘আমিই আমার জন্য যথেষ্ট’

১০) সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিন

সমস্যা শুধু তৈরি করে গেলেই হবে না, এর সমাধানও জরুরি। যদি এরকম কোনো পরিস্থিতি চলেই আসে তাহলে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিন। যে স্ট্র্যাটেজি ফলো করলে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন সেটাই ফলো করুন।

জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন আমরা চাইলেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে ওভারথিংকিং বন্ধ করে জীবনকে সহজ করার জন্য কিছু উপায় আজ আপনাদের জানালাম। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। জীবনে সব সময় সবকিছুতে হতাশ হয়ে যেতে নেই। সবার আগে নিজেকে ভালোবাসুন। আপনার মতো আরও অনেকেই আছে যারা একই সমস্যায় ভুগছে। তাই নিজেকে একা ভাববেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *