একইভাবে একই জায়গায় কাজ করতে করতে আমরা প্রায়ই কমফোর্ট জোন এ পড়ে যাই। একবার এই জোনে পড়ে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে যায়। যে কোনো ক্যারিয়ারের জন্যই এখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। কিন্তু ক্যারিয়ারে সফল হতে চাইলে এই কমফোর্ট জোন থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করতে হবে, নতুন অভিজ্ঞতা নিতে হবে এবং নতুন নতুন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। কিন্তু কীভাবে এই জোন থেকে বের হয়ে আসা যায়? আজ সে বিষয়েই আমরা জানার চেষ্টা করব।
কমফোর্ট জোন কী?
সহজ ভাষায় কমফোর্ট জোন বলতে বোঝায় এমন জায়গা যেখানে স্ট্রেস কম, যেখানে আপনি নিরাপদ অনুভব করেন। আপনি একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকেন, কারণ আপনি ঝুঁকি নিতে চান না। নতুন কোনো অভিজ্ঞতা যদি অপরিচিত বা চ্যালেঞ্জের মনে হয়, তাহলে অন্য কিছু বিষয়ও এর সাথে যুক্ত হয়। যেমন – নতুন অভিজ্ঞতা, স্কিল ইমপ্রুভমেন্ট, প্রফেশনাল ও পারসোনাল গ্রোথের সুযোগ।
কী কী বেনিফিট পাওয়া যায়?
ভালোই তো এক জায়গায় অনেকদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন, তাহলে নতুন জায়গায় যাওয়ার কী দরকার? কলিগ বন্ধুর মতো হয়েছে, স্যালারি ঠিকমতো পাচ্ছেন, প্রমোশন হয়েছে এরপরও কি নতুন জায়গায় যাওয়া উচিত? ব্যাপারটা এভাবে না ভেবে যদি একটু ভিন্নভাবে ভাবেন তাহলে? পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন জায়গায় যাওয়া, নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ – সবকিছুর সাথে কীভাবে এডজাস্ট হবেন বা কী কী বেনিফিট পাওয়া যাবে এখান থেকে? চলুন জেনে নেয়া যাক।
১) প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায়
যখন কোনো নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অথবা ভিন্ন কিছু শুরু করা হয়, তখন প্রোডাক্টিভিটি ইমপ্রুভ করার সুযোগ তৈরি হয়। এতে আপনি আপনার নিজের পোটেনশিয়াল সম্পর্কে জানতে পারবেন, দায়িত্ব সম্পর্কে কনফিডেন্ট হবেন এবং রেজাল্ট ভালো আসবে।
২) মানিয়ে চলার ক্ষমতা বাড়ে
নতুন অভিজ্ঞতা সবসময় আপনাকে অপরিচিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। যখন নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে আসে তখন আপনি সেটা পূরণ করতে ফোকাসড থাকেন এবং এমন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়।
৩) গ্রোথ প্রমোট করে
কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার পর আপনার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে আপনার প্রফেশনাল ও পারসোনাল গ্রোথ হয়।
কীভাবে কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়া যায়?
কমফোর্ট জোন থেকে বের হলে বেশ কিছু বেনিফিট পাওয়া যায় সেটা তো জানা হলো। কিন্তু বের হওয়া যায় কীভাবে? এবার জানাবো এ সম্পর্কেই।
১) নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানা হয়
আপনি যত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ বা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানবেন, তত আপনার ভয় কাটবে। পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করার পর, আপনি বুঝতে পারবেন কী কী জানেন এবং কীভাবে পরের কাজগুলো হ্যান্ডেল করবেন। যে কোনো ইভেন্ট বা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার জন্য যা যা করতে পারেন-
- টিউটোরিয়াল দেখুন
- টপিক সম্পর্কে অনলাইনে সার্চ করুন
- যে টপিক নিয়ে কাজ করতে হবে সেই সম্পর্কিত বই পড়ুন
- সাবজেক্ট এক্সপার্টদের সাথে কথা বলুন
২) প্ল্যান বানান
এরপরের কাজটি হচ্ছে বাউন্ডারি বাড়ানোর জন্য একটি প্ল্যান তৈরি করা। নতুন কাজ শুরু করতে যেয়ে কী কী বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলো আগে চিহ্নিত করুন এবং ওভারকাম করার আইডিয়া বের করে নিন। এরপর কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার জন্য কী কী করবেন সেগুলো একটি কাগজে লিখুন, শুরু করুন সবচেয়ে সহজ কাজ দিয়ে। এতে ধীরে ধীরে আপনি বেঞ্চমার্ক ক্রিয়েট করতে পারবেন এবং ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করার দিকে এগিয়ে যাবেন।
৩) ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন
ছোট ছোট পদক্ষেপ সব সময় আপনাকে নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। লক্ষ্য পুরণের জন্য আপনার ভেতর আত্মবিশ্বাস তৈরি করবে। বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিলে কাজ ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়।
৪) পরিচিতজনদের জানান
কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে পরিকল্পনা সফল করার জন্য কী কী করতে চাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে কমবেশি পরিচিতজনদের জানিয়ে রাখতে পারেন। আপনার লক্ষ্য কী তা পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের জানিয়ে রাখুন। যদি কাজ সম্পর্কিত হয়, তাহলে ম্যানেজার ও প্রফেশনাল মেন্টরকে জানিয়ে রাখুন। এতে আপনি অন্যদের সাথে যেমন যুক্ত থাকবেন, তেমন কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন পছন্দমতো।
৫) পজিটিভ থাকুন
কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার সময়, মনের ভেতর যত ধরনের নেতিবাচক চিন্তা আছে সেগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। যতই অপছন্দের জায়গায় নিজেকে মানিয়ে চলার চেষ্টা করবেন, তত পজিটিভ থাকতে হবে এবং নেতিবাচক চিন্তাকে বাদ দিতে হবে। কারণ নেতিবাচক চিন্তাই সর্বপ্রথম মনের মধ্যে খারাপ ভাবনা নিয়ে আসে এবং নতুন কিছু শিখতে বাধা তৈরি করে।
৬) ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ভাবুন
যত ক্রিয়েটিভলি চিন্তা করবেন, তত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সহজ হবে। এতে কমফোর্ট জোন থেকেও বের হতে পারবেন এবং পরিচিত কাজ নতুনভাবে করার উপায় বের করা যাবে। ক্রিয়েটিভলি চিন্তা করতে পারলে নতুন নতুন সুযোগ সামনে আসে যেগুলো হয়ত অন্য সময় আপনার ভাবনায় আসবে না।
৭) ভয় দূর করার চেষ্টা করুন
ভয়কে কীভাবে ওভারকাম করবেন সে সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ নেয়া জরুরি। যেসব কাজ আপনাকে নার্ভাস করে সেগুলো থেকে বের হওয়া জরুরি। ইনসিকিওরিটির মুখোমুখি হলে কঠিন অবস্থাতেও কমফোর্টেবল অনুভব করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। কোন কোন বিষয় আপনাকে অনিরাপদ ফিল করাচ্ছে সেগুলো নিয়ে ভাবুন। মনে রাখবেন, ভয় দূর করার প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রাথমিক ইমোশনকে ওভারকাম করা। কীভাবে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া যায়? আগে ভাবুন এগুলো নিয়ে। আপনি কি অনেক মানুষের সামনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন? কেন? কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলবেন এমন কিছু নিয়ে ভয়? কন্ঠ নিয়ে ইনসিকিওরড? নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য খুব কম সময় পেয়েছেন? দেখুন এমন কোন কোন বিষয় আপনাকে অপ্রস্তুত করছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করুন।
৮) হার থেকে শিক্ষা নিন
‘অভিজ্ঞতা অনেক সময় এমন হয়, যা আপনি কখনো পেতে চান না। আবার অভিজ্ঞতা এমনও হয় যে, সেটি আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা চেষ্টার ভয়ে সামনেই আগাতে চান না। হারকে সব সময় শিক্ষা হিসেবে নিন। হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে কী কী শিক্ষা পেলেন? পরবর্তীতে সফল হওয়ার জন্য কী কী আপনাকে শিখতে হবে? এগুলো জানা থাকলে কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়া সহজ হবে।
৯) একটি একটি করে কাজ করুন
আপনি হয়ত অনেক কাজ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু সব একসাথে করা কি সম্ভব? আপনি একা নন, এমন অনেকেই আছেন। অনেকেই বাকেট লিস্ট পূর্ণ করে রেখেছি এসব উইশ দিয়ে। কিন্তু একবারেই সব সম্ভব নয়। নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিন কোন কাজটি আপনি সবার আগে করতে চাচ্ছেন। সেটি নিয়ে আগে রিসার্চ করুন, পড়ুন, জানুন। একটি একটি করে কাজ শুরু করুন।
১০) নতুন নতুন স্কিল শিখুন
প্রফেশনাল গ্রোথ পাওয়ার জন্য কমফোর্ট জোন থেকে বের হতেই হবে। একটা জোনে বেশি স্টাক হয়ে গেলে ক্যারিয়ারে একদমই মুভ করতে পারবেন না। কমফোর্ট জোনকে পিছনে ফেলার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে নতুন নতুন স্কিল শেখা। নিজেকে সব সময় আপডেটেড রাখা। প্রতিষ্ঠানের লার্নিং ও ডেভেলপমেন্ট রিসোর্স সম্পর্কে নিজেকে যতটা সম্ভব আপডেটেড রাখুন।
কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পারলে সবচেয়ে বেশি কোন জিনিসটি বাড়ে জানেন? আত্মবিশ্বাস। আপনি পারেন, আপনাকে দিয়ে সম্ভব এটা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। ভয় কাটে বলে কোনো কাজ করতেও বেগ পেতে হয় না। তাই নিজেকে ইমপ্রুভ করার জন্য কমফোর্ট জোন থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন। ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে সফল আপনি অবশ্যই হবেন।