প্রফেশনাল লাইফে আপনি আসলে কী করতে চাচ্ছেন সেটা সব সময় খুঁজে বের করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। আপনি হয়ত সদ্য কোনো চাকরিতে জয়েন করেছেন অথবা কয়েক বছর ধরে চাকরি করছেন এবং একটা পরিবর্তন চান। কিন্তু কী করতে চান সেটা আসলে দিনশেষে আসলে নির্ভর করে কাজের পরিবেশের উপর। এজন্য ক্যারিয়ার ফিল্ড নিয়ে রিসার্চ করা এবং জীবনের বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করার মাধ্যমেই খুঁজে বের করা সম্ভব প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে আপনি কী কী করতে চান। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো আপনি কোন কোন কাজে প্যাশনেট সেটা কীভাবে খুঁজে বের করবেন এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার জন্য আপনি আসলে কী করতে চাচ্ছেন।
কেন আপনাকে এই বিষয়টি বুঝতে হবে?
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন কাজ করতে হবে বলে করে। কিন্তু কোন কাজে আসলে কতটুকু ভালোলাগা কাজ করছে সেটা বোঝার উপায় কী? এজন্য নিজেকে আগে কিছুটা সময় দেয়া দরকার। আপনাকে আগে বুঝতে হবে কোন কাজ করতে আপনার ভালো লাগে এবং আপনি যে ধরনের লাইফস্টাইল চান সেটা মেইনটেইন করতে পারছেন কিনা। ড্রিম জব পাওয়ার আগে নিজের স্ট্রেন্থ ও স্কিল সম্পর্কে বোঝা জরুরি। কোন কাজ আপনাকে মোটিভেট করে এবং কোন কাজ করলে ক্যারিয়ার বদলে নিজের পছন্দের কাজ বেছে নিতে পারবেন সেটা বুঝতে পারা জরুরি।
কীভাবে বুঝবেন প্রফেশনাল লাইফে আপনি কী করতে চাচ্ছেন?
প্রফেশনালি কীভাবে কী করতে হবে সেটা বোঝার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় আছে। সত্যিকারের প্যাশন খুঁজে পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। চলুন জেনে নেয়া যাক এগুলো সম্পর্কে-
১) বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করুন
বর্তমানে আপনি কী কাজ করছেন সেটা আগে চিন্তা করুন। এই কাজের কোন কাজটি আপনার ভালো লাগে এবং কোনটি নয় সেটা কি বুঝতে পারছেন? কাজের ক্ষেত্রে কোনগুলো আপনার স্কিল ও স্ট্রেন্থ সেগুলো খুঁজে বের করুন এবং উইকনেসগুলো জানুন। এতে আপনারও জানা হবে কাজ করতে আপনি কেন আনন্দ পাচ্ছেন এবং কীসে আপনি প্যাশনেট। তাছাড়া আরও একটি কাজও আপনি করতে পারেন। কাজ করতে করতে আপনার যখন মনে হচ্ছে আপনি কী করতে চান বা কোন কাজটি করতে আপনার ভালো লাগছে না সেগুলোর একটি তালিকা করে ফেলতে পারেন। এতে পরবর্তীতে ক্যারিয়ার চুজ করার সময় সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।
২) প্যাশন খুঁজে বের করুন
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিজেকে খানিকক্ষণ সময় দিন। ভাবুন, আপনাকে কোন কাজগুলো মোটিভেট করছে এবং আনন্দ দিচ্ছে। আপনার হাতে যদি অফুরন্ত সময় ও আর্থিক নিরাপত্তা থাকতো তাহলে আপনি কোন কাজগুলো করতেন, ভাবুন। এটাই আপনার প্যাশন। আপনি যা করছেন তাতে যদি প্যাশনেট হয়ে থাকেন, তাহলে ক্যারিয়ার ফিল্ড বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ হবে।
৩) কী কী স্যাক্রিফাইস করতে হবে বোঝার চেষ্টা করুন
বর্তমান ক্যারিয়ার নিয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এবং সত্যি সত্যি আপনি কোন বিষয়ে প্যাশনেট সেটা বোঝার পর, সেখানে পৌঁছানোর জন্য কোন কোন বিষয়ে আপনি স্যাক্রিফাইস করতে পারবেন সেই বিষয়গুলো বোঝা জরুরি। যেমন ধরুন- আপনি হয়তো সিদ্ধান্ত নিলেন নার্স হবেন। এজন্য আপনাকে আগে বুঝতে হবে এই পেশায় লং শিফটিং এ কাজ করতে হবে, সাথে আরও পড়াশোনা করতে হবে। এসব জেনে যদি আপনি এই পেশায় যুক্ত হন, তাহলে ক্যারিয়ার নিয়ে ইফেক্টিভ সিদ্ধান্ত নেয়া আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি বুঝতে পারবেন আপনাকে জীবনে কোন কোন জায়গায় স্যাক্রিফাইস করতে হবে।
৪) গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য পরিকল্পনা করুন
প্রফেশনালি গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকুন। এতে আপনি জীবনের অন্যান্য দিক নিয়েও ভাবতে পারবেন, যা আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে অনেকখানি সহায়তা করবে। আগ্রহ বুঝে বিভিন্ন স্কিল ট্রেনিং এ যোগ দিন, টেকনোলজি কোর্স করুন। প্রফেশনাল এরিয়াতে কোন কোন স্কিলগুলো ইমপ্রুভ করলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন, সেগুলো জেনে নিজেই চেষ্টা করুন ইমপ্রুভ করার।
৫) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
নিজের পছন্দের ক্যারিয়ারে যুক্ত হতে সব সময় শর্ট টার্ম বা লং টার্ম গোল সেট করুন। শুধু লক্ষ্য সেট করলেই হবে না, সে অনুযায়ী যে আপনাকে কাজ করতে হবে সেটাও বুঝুন। ধরুন- আপনার প্যাশন ও ড্রিম যদি হয় ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করা, তাহলে ওয়েব পেইজ ক্রিয়েট করার জন্য যে কোডিং স্কিল জানতে হয় সেটা শেখার জন্য সাপ্তাহিক কিছু গোল সেট করে নিন। এছাড়া ওয়েবসাইট কীভাবে পরিচালনা করবেন তা নিয়েও শর্ট টার্ম গোল তৈরি করতে পারেন।
পছন্দের ক্যারিয়ার তৈরির জন্য কয়েকটি টিপস
প্রফেশনালদের সাথে কথা বলুন
আপনি যে ফিল্ডে আসতে চাচ্ছেন সেখানে কারা কাজ করে? তাদের সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? আপনি কি তাদের ফলো করেন? উত্তরগুলো যদি ‘না’ হয়ে থাকে, তাহলে এখনই উত্তরকে ‘হ্যাঁ’ করার জন্য চেষ্টা শুরু করুন। আপনি যদি না-ই জানেন, আপনার পছন্দের ফিল্ডে কী কী কাজ হয়, তাহলে কীভাবে সামনে আগাবেন? সম্ভব হলে আপনার পছন্দের ফিল্ডে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করুন। তাদের সাথে আপনার প্যাশন নিয়ে কথা বলুন। তারা কী বলেন সেই পরামর্শগুলো শুনুন। তারা নিজেদের এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে কী কী করেছেন, কোন কোন বিষয় তাদের জানতে হয়েছে, কী কী স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে সব জানুন। এই তথ্যগুলো আপনাকে আপনার পছন্দের ফিল্ডে স্ট্যাবল হতে হেল্প করবে।
পছন্দের ফিল্ড সম্পর্কে আরও জানা
যদি আপনার পছন্দের কাজ নিয়ে সরাসরি কোনো ভলান্টিয়ারিং কাজ পাওয়া যায়, তাহলে সেই সুযোগটা নেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার যা যা জানার আছে এই কাজের মাধ্যমে আপনি তা জানতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন এই ফিল্ডে আপনি কতটুকু প্যাশনেট হয়ে কাজ করতে পারবেন। ঠিক একইভাবে, ইতিমধ্যে যারা এই কাজে যুক্ত আছে তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন তথ্য জানুন যেন ক্যারিয়ার চুজ করা সহজ হয়।
প্রফেশনাল ও সেলফ ডেভেলপমেন্ট করুন
আপনি যখন জানেন যে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে কী করতে হবে, তখন সফল হওয়ার জন্য স্কিল ডেভেলপ করাও জরুরি। ধরা যাক- আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কার সেলসে ক্যারিয়ার গড়বেন। তাহলে এজন্য আপনাকে জানতে হবে কাস্টমার সার্ভিস, কমিউনিকেশন, ইন্টারপারসোনাল ও টেকনোলজি স্কিল সম্পর্কে। বিভিন্ন এডুকেশনাল সেমিনার, ইনফরমাল লেকচার শোনা অথবা স্থানীয় কোনো কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস অ্যাটেন্ড করলেও ইমপ্রুভমেন্ট কন্টিনিউ করতে পারেন।
ধৈর্য ধরুন
আপনি যখন পছন্দের কোনো কাজ করতে যাবেন তখন সেখানে সময় লাগবেই। তাই, ধৈর্য ধরুন। রাতারাতি কেউই মনের মতো কোনো কাজ পায় না (যদি পেয়ে যায় তাহলে তাকে সৌভাগ্যবান বলতেই হবে!)। যতক্ষণ না পাচ্ছেন, ততক্ষণ নিজেকে সময় দিন। কাজ শিখুন যেন পরের ধাপে যেয়ে থমকে না যেতে হয়। যারাই আপনাকে নিয়োগ দিবে, তারা যেন বোঝে আপনিই সেরা। ভালো জিনিস সময়ের সাথে সাথেই তো আসে, তাই না বলুন?
প্রফেশনালি লাইফে আপনি আসলে কী করতে চাচ্ছেন- এর উত্তর যেমন এক কথায় দেয়া কঠিন, আবার উত্তর একদম অজানাও নয়। তবে এজন্য শিওর হওয়া জরুরি যে নিজেকে আপনি যে জায়গায় দেখতে চাচ্ছেন, সেখানে যাওয়ার জন্য আপনি চেষ্টাও করছেন। সবকিছু একদিনে হাতে আসে না। এজন্য দিনের পর দিন নিজের প্রতি গ্রুমিং করে যেতে হয়। প্রফেশনাল লাইফের সাথে সাথে ব্যক্তিজীবনকেও গুছিয়ে রাখুন। এতে কাজে মন বসবে। শান্ত পরিস্থিতিতে চিন্তা করতে পারবেন সবকিছু নিয়ে।