ওয়ার্ক ইথিক কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে ইমপ্রুভ করবেন?

আপনি কখনো অফিসে মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছেন? যদি এমনটি আপনি করে থাকেন, তবে আপনি একা নন। আপনার মতো এমন অনেকেই আছে যারা মিথ্যা বাহানা দিয়ে অফিস থেকে ছুটি নেয়। এই কাজটি অনেকেই করে থাকেন, হয়ত জরুরি কোনো কাজের জন্য তার ছুটি দরকার কিন্তু অফিস থেকে ছুটি মিলবে না সেই কারণে। তবে বেশিরভাগই করেন কারণ সেদিন হয়ত তাদের আর কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না সেইজন্য। আপনি কি জানেন এই কাজটি সাধারণত কারা করে থাকে? যাদের ওয়ার্ক ইথিক স্ট্রং নয়। কী এই ওয়ার্ক ইথিক? চলুন এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ওয়ার্ক ইথিক কী?

বর্তমানে জব মার্কেট ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। এখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই ওয়ার্ক ইথিক সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেগুলো কঠিনভাবে মানতে হবে। বর্তমানে কোম্পানিগুলো এমন কর্মী চায় যারা অযাচিত ছুটি নিবে না, কাজে সময়মত আসবে, কাজ নিয়ে গর্ব করবে, ডেডলাইন মেনে চলবে এবং এমন আরও অনেক কিছু। ক্যারিয়ারে সফল হওয়া এবং পারসোনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য স্ট্রং ওয়ার্ক ইথিক কাল্টিভেট করা এবং তার ভ্যালু দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়ার্ক ইথিক এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তি তার কাজের ভ্যালু দিবেন এবং বিশ্বাস করবেন তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাটিটিউড, এফোর্ট লেভেল আর প্রফেশনাল ডিউটি ও রেসপনসিবিলিটির কনসিসটেন্সি ধরে রাখার জন্য যে স্ট্যান্ডার্ড দরকার হয় তার সবই এর মধ্যে পড়ে। আরও ভালোভাবে বোঝাতে গেলে বলতে হয়, সততা, দৃঢ়তা, পরিশ্রম এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের বেস্টটুকু দেয়ার নামই গুড ওয়ার্ক ইথিক। এর আরও একটি অর্থ হচ্ছে ফোকাস ধরে রাখা, অ্যাকাউন্টেবল থাকা, এবং যত যাই কিছু হোক নিজেকে প্রতিটি কাজের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলা। সহকর্মীদের নিজেদের মধ্যে পারসোনাল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে বিশ্বাস ও সম্মান তৈরি করতে ওয়ার্ক ইথিক খুব ভালো কাজ করে।

ওয়ার্ক ইথিক

এর মূল বিষয়গুলো কী কী?

যাদের স্ট্রং ওয়ার্ক ইথিক আছে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে সম্মানিত হন। এগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় তারা কী কী কাজ করছেন এবং এর বিনিময়ে তারা কী কী পেতে পারেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক ওয়ার্ক ইথিকের মূল বিষয়গুলো কী কীঃ

পাংচুয়ালিটি

যে ব্যক্তির ওয়ার্ক ইথিক বেশ ভালো তিনি অবশ্যই সময়মতো কাজে আসবেন এবং সঠিক সময়ে কাজ শুরু করবেন। তারা জানেন সহকর্মীদের বিনা কারণে অপেক্ষা করিয়ে রাখতে হয় না এবং নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া মিটিং দেরিতে শুরু করা উচিত নয়।

প্রোডাক্টিভিটি

স্ট্রং ওয়ার্ক ইথিক আছে এমন কর্মীদের অবশ্যই প্রতিটি সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে এবং সকল ধরনের অমনোযোগিতা দূর করতে হবে। যেমন ব্যক্তিগত ফোন কলে বেশি সময় দেয়া বা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে শুধু ব্রাউজ করতে থাকলে কাজের প্রতি আগ্রহ কমতে থাকবে। সব সময় হাই কোয়ালিটির কাজ ডেলিভারি করার মানসিকতা থাকতে হবে।

পজিটিভিটি

যে কোনো ধরনের স্ট্রেসফুল সময়েও এ ধরনের ব্যক্তিরা আশাবাদী হয়ে থাকেন, পজিটিভ আচরণ করেন। কথায় কথায় অভিযোগ করেন না এবং খোলা মন মানসিকতার হয়ে থাকেন। ফলাফল, পুরো টিমের লক্ষ্য এক হয় এবং তারা সবাই মোটিভেটেড হয়।

পারসেভারেন্স

ওয়ার্ক ইথিক যদি স্ট্রং হয়, তাহলে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ ও কঠিন অবস্থা পাড়ি দেয়া যায়। এমন ব্যক্তি কোনো কাজ করতে যেয়ে সহজে হাল ছেড়ে দেন না এবং শেষ পর্যন্ত কাজ করে যান। আর কাজের প্রতি এই ডেডিকেশনের কারণে রেজাল্টও ভালো আসে।

ওয়ার্ক ইথিক এর মূল বিষয়

অ্যাকাউন্টেবিলিটি

এ ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে তারা দায়িত্ব নিতে শেখেন। তারা অন্যকে দোষারোপ করেন না। নিজেদের ভুল হলে শুধরে নেন এবং সেই ভুল যেন পরবর্তীতে না হয়, সেই চেষ্টাও করেন।

প্রোঅ্যাক্টিভনেস

প্রোঅ্যাক্টিভ এমপ্লয়ীরা কোনো নির্দেশনার অপেক্ষায় থেকে কাজ করা বন্ধ রাখেন না। তারা অনেক কিছু জানেন, আর এ কারণেই তারা বলার আগেই কাজ করা শুরু করেন। এছাড়া তারা সব সময় চেষ্টা করেন হাই কোয়ালিটির কাজ জমা দিতে। যার কারণে যে কোনো ছোটখাটো ভুলও তারা অকপটে স্বীকার করেন। তাদের চেষ্টা থাকে সব সময় সবচেয়ে ভালো কাজটাই উপহার দেয়া।

টাইমলিনেস

উপরে যতগুলো কী পয়েন্ট নিয়ে জানালাম, সেগুলোর সাথে সাথে টাইমলিনেস থাকাটাও যে কোনো কর্মীর জন্য খুবই জরুরি। কারণ ডেডলাইনের মধ্যে কাজ জমা দিতে না পারলে দিনশেষে লাভ নেই। স্ট্রং ওয়ার্ক ইথিক আছে এমন ব্যক্তিরা বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথেই সব কাজ সম্পন্ন করেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা জানেন কীভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল এর কদর করতে হয়।

এর যত সুবিধা

নিজের মধ্যে ওয়ার্ক ইথিক তৈরি করতে পারা মানে একজন ব্যক্তির নিজেরই নিজের সাথে বেস্ট কমিটমেন্ট ক্রিয়েট করা। এর অবশ্যই অনেকগুলো সুবিধা আছে। নিচে এমনই কয়েকটি সুবিধার কথা জানাচ্ছিঃ

১) প্রোডাক্টিভিটি ও এফিসিয়েন্সি বাড়ায়

এই বিষয়টি যারা নিজেদের মধ্যে ক্রিয়েট করতে পেরেছেন তারা অল্প সময়ে এবং মনোযোগের সাথে কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এতে আউটপুটও খুব ভালো হয়, দায়িত্ব নেয়ার ক্যাপাসিটি বাড়ে এবং কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়।

২) রেপুটেশন ও ক্রেডিবিলিটি বাড়ায়

ওয়ার্ক ইথিক থাকলে কলিগ, ম্যানেজার ও ক্লায়েন্টদের মধ্যে বিশ্বাস ও সম্মান তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠানে সবাই তখন তাকে ডিপেন্ডেবল, হার্ডওয়ার্কিং ইমপ্লয়ী হিসেবে চিনে।

৩) বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়

যে কর্মীরা কাজের প্রতি ডেডিকেশন দেখান, কাজ করতে আগ্রহী থাকেন এবং নতুন নতুন কাজের দায়িত্ব নিতে পছন্দ করেন, তাদেরকেই এক সময় লিডার হিসেবে দেখা যায়। তাদের কাজের কারণেই তারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এই লিডারশীপই একদিন তাদের পুরস্কৃত করে।

জব সিকিউরিটি

৪) জব সিকিউরিটি বাড়ে

কোনো কর্মী যদি বোঝাতে পারেন যে তাদের স্ট্রং ওয়ার্ক ইথিক রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানে আরও বেশি ভ্যালু পান। তাদের ডেডিকেশনের কারণে ম্যানেজাররাও তাদেরকে দলে রাখতে চান।

৫) ক্যারিয়ার স্যাটিসফেকশন বাড়ে

কর্মীরা যখন তাদের পুরোটা দিয়ে কাজ করেন, তখন তারা আরও বেশি এংগেজড থাকেন। এতে তারা নিজেরাও ক্যারিয়ার নিয়ে স্যাটিসফায়েড থাকেন। এছাড়া তারা সব সময় স্কিল ইমপ্রুভ করতে চান, যার কারণে কাজ নিয়ে তাদের ভীতি কেটে যায়।

৬) স্ট্রেস কমে

গুড টাইম ম্যানেজমেন্টের কারণে স্ট্রেস কম থাকে। ওয়ার্ক বার্ন আউট নিয়েও ভাবতে হয় না এবং হেলদি ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স হয়।

কীভাবে এই ইথিক ডেভেলপ করা যায়?

এক দিনে বা একবারে ওয়ার্ক ইথিক ভালো করা যায় না। এটা নিজের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। কীভাবে ধাপে ধাপে এই ইথিক ডেভেলপ করবেন চলুন জেনে নেয়া যাকঃ

১) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

ওয়ার্ক ইথিক ভালো করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে কিছু কাজ মন দিয়ে করা। যেমন- সময়ানুবর্তি হওয়া, কাজের কোয়ালিটি ভালো রাখা এবং কর্মক্ষেত্রে বাকি সব দিক মেনে চলা। এজন্য কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিন। যেমন- ‘আজ আমি অফিসে ৫ মিনিট আগে যাব’ অথবা ‘টু ডু লিস্টে থাকা ৩টি কাজ আজ অবশ্যই শেষ করবো’। কোনো কিছুকে খুব বেশি জটিল বানানোর দরকার নেই। সবকিছু যত সিম্পল রাখবেন তত লক্ষ্য পূরণের দিকে আপনি এগিয়ে যাবেন।

২) নিজের কাজের জন্য দায়ী থাকা

যে কাজ আপনি করবেন সেটার দায়ভার নিজেই নিতে শিখুন। যখন আপনি অন্য কাউকে এ জন্য দায়ী করবেন, তখন বুঝবেন আপনি এখনও রেসপনসেবল হননি। আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য এক্সটারনাল কোনো ফ্যাক্টরকে দায় নিতে দিয়েন না। যদি লক্ষ্য পূরণ নাও হয়, তবু নিজের কাজে সৎ থাকুন। এটা আপনারই দায়িত্ব যে কীভাবে ট্র্যাকে ফিরবেন এবং জয় সেলিব্রেট করবেন।

৩) টাইম ম্যানেজমেন্টে ফোকাস করুন

টাইম ম্যানেজমেন্ট

টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল আপনার প্রোডাক্টিভিটি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এজন্য ক্যালেন্ডার, টু ডু লিস্ট ম্যানেজ করা এবং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করা জরুরি। তাছাড়া এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কতটুকু সময় আপনি কোথায় কাটালেন এবং কোথায় কোথায় ফোকাস বাড়ানো জরুরি। এতে আপনার মাঝে ভালো অভ্যাস তৈরি হবে।

৪) কমিউনিকেশন ক্লিয়ার হবে

চ্যালেঞ্জ নিলে সেটার কিছুটা এফেক্ট আপনার উপরেও পড়তে পারে। এর মানে এই নয় যে সব দোষ নিজের উপর নিয়ে নিবেন। আপনি আপনার কাজ কতটুকু করছেন সেটা ম্যানেজারকে জানিয়ে রাখুন। কমিউনিকেশন ভালো থাকলে দুশ্চিন্তাও অনেকটা কমে যায়। এতে আপনার ও বসের মধ্যে সম্পর্কেরও বেশ উন্নতি হবে।

৫) নিজের উন্নতি হতে থাকে

গুড ওয়ার্ক ইথিক কাল্টিভেট করতে থাকলে সেটা কখনো বন্ধ হয় না। এতে সব সময় নতুন নতুন জিনিস শেখার ও তৈরি করার আগ্রহ থাকে। নিজেকে তাই নতুন নতুন বিষয় ও দক্ষতা শেখার মধ্যে ডেডিকেট করুন। সুযোগ থাকলে বিভিন্ন ট্রেনিং এ অংশ নিন। চাইলে আপনি বিভিন্ন কোর্স, ওয়ার্কশপ ও কনফারেন্সেও যোগ দিতে পারেন। নিজেকে আপনি যত ইমপ্রুভ করবেন, তত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য আপনি পারদর্শী হয়ে উঠবেন।

আমরা এতক্ষণ জানলাম ওয়ার্ক ইথিক নিয়ে। আমাদের মধ্যে অনেকের মাঝেই হয়ত বিষয়গুলো উপস্থিত। তবে আমরা এটির একচুয়াল নাম হয়ত জানতাম না। আজ সেটাও জানা হয়ে গেলো। এতদিন হয়ত নিজ থেকেই এসব করেছেন, কিন্তু আজ বুঝতে পারলেন তো ক্যারিয়ারে ও ব্যক্তিগত সফলতার জন্য কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? আজ তাহলে এ পর্যন্তই। জলদি ফিরব নতুন কোনো টপিক নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *