ক্যারিয়ারে সাকসেসফুল হতে কে না চায়? কিন্তু যত দিন যায়, তত বোঝা যায় কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সবার চেয়ে পিছিয়েই থাকতে হচ্ছে। ব্যাপারটি সবার জন্য হয়ত সত্যি নয়। তবে বেশিরভাগই এ সমস্যার ভুক্তভোগী। আর এই প্রবলেম ফেইস করার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে প্রফেশনাল রিলেশনশীপ মেইনটেইন না করা। ক্যারিয়ারে গ্রোথ ও সাকসেস চাইলে এটি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষয়টি আপনাকে ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে জানাবে, নতুন জব খোঁজার সুযোগ বাড়বে এবং কলিগ ও মেন্টরদের সাথে নেটওয়ার্ক স্ট্রং হবে। কিন্তু কীভাবে এই রিলেশনশীপ বিল্ড আপ করবেন? চলুন জেনে নেয়া যাক এ বিষয়েই।
প্রফেশনাল রিলেশনশীপ মেইনটেইন করবেন যেভাবে
সত্যি বলতে এই রিলেশনশীপ বিল্ড আপ ও মেইনটেইন করা পুরোটাই নির্ভর করে এফোর্ট ও অ্যাটেনশনের উপর। কীভাবে ইফেক্টিভলি এটি করা যায় তারই কিছু টিপস দিচ্ছি আজ-
জেনুইন ও অথেনটিক হোন
লোকেরা আপনার সাথে কাজ করতে এবং প্রফেশনাল রিলেশনশীপ মেইনটেইন করতে চাইবে, যদি তারা বুঝতে পারে যে আপনি একজন জেনুইন ও অথেনটিক মানুষ। আপনি যা নন, তা বোঝানোর দরকার একদম নেই। আপনি যতটুকু জানেন তার চেয়ে বেশি বেশি বোঝানোর প্রয়োজন নেই। এর বদলে নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে সৎ থাকুন। অন্যদের থেকে শেখার চেষ্টা করুন। গবেষণাও বলে, যে কোনো রিলেশনশীপে বিশ্বাস তৈরি করার জন্য অথেনটিসিটি থাকা খুব জরুরি।
অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখান
শুধু নিজের জন্যই প্রফেশনাল রিলেশনশীপ তৈরি করতে হয় না। অন্য সহকর্মীও কী কাজ করছে, তার লক্ষ্য ও অভিজ্ঞতা কী- সেগুলোও জানার চেষ্টা করুন। প্রশ্ন করুন এবং শুনুন তারা কী বলতে চায়। এতে তাদের সাথে আপনার সম্পর্কও ভালো হবে এবং কানেকশন স্ট্রং হবে। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এর দেয়া এক তথ্যমতে, অন্যের প্রতি আগ্রহ দেখানো অন্তত ৫০% বিশ্বাস ও পজিটিভিটি বাড়ায়।
ভ্যালু অফার করুন
প্রফেশনাল রিলেশনশীপ বিল্ড আপ ও মেইনটেইন করার আরও একটি শর্ত হচ্ছে, অন্যের জন্য ভ্যালু অ্যাড করা। এটা হতে পারে যে কোনো বিষয়ে তথ্য, রিসোর্স অথবা কানেকশন। ভাবুন আপনি অন্যের জন্য কী কী করতে পারেন এবং কীভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে পারেন।
ইফেক্টিভলি কমিউনিকেট করুন
প্রফেশনাল রিলেশনশীপ তৈরির জন্য ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন থাকা খুব জরুরি। এর মানে হচ্ছে যে কোনো ম্যাসেজই ক্লিয়ার ভাবে দেয়া জরুরি, সেই সাথে দায়িত্বশীল হতে হবে ই-মেইলের জবাব দেয়াতে এবং কল রিসিভ করাতে। অন্যের মতামতের সাথে যদি একমত নাও হোন, তবু তাদের প্রতি রেসপেক্টফুল থাকতে হবে। ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন থাকলে কর্মীদের আরও বেশি এংগেজ করা যায় এবং কর্মক্ষেত্রেও বিশ্বাস বাড়ে।
প্রশংসা করুন
অন্যের অবদানেও প্রশংসা করতে পারা প্রফেশনাল রিলেশনশীপ তৈরির অন্যতম একটি উপায়। এটা হতে পারে একটি থ্যাংক ইউ নোট, একটি ছোট্ট গিফট অথবা কোনো স্বীকৃতি। অন্য একজন সহকর্মী যতটুকু ইফোর্ট দিয়েই কাজ করুন না কেন, তাকে সম্মান জানালে সম্পর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাছাড়া কোনো কর্মী যদি যথাযথ সম্মান পায়, তাহলে প্রোডাক্টিভিটিও ইমপ্রুভ হবে এবং টার্নওভার কমবে।
নির্ভরযোগ্য হোন
প্রফেশনাল রিলেশনশীপে বিশ্বাস তৈরি করার জন্য নির্ভরযোগ্য হওয়া জরুরি। এর মানে হচ্ছে সময়মত অফিসে আসা, ডেডলাইন অনুযায়ী কাজ করা, কমিটমেন্ট ধরে রাখা। যদি এগুলো সঠিকভাবে না করা হয়, যত দ্রুৎ সম্ভব করার চেষ্টা করুন এবং এর বিকল্প কী কী করা যায় খুঁজে বের করুন।
যোগাযোগ রাখুন
আপনি যদি সহকর্মীর সাথে একই প্রজেক্টে কাজ নাও করেন, তবু তার কাজ কেমন হচ্ছে তা নিয়ে জানার জন্য যোগাযোগ রাখুন। নেটওয়ার্ক বজায় রাখার জন্য যতটুকু যোগাযোগ রাখা দরকার তার জন্য ইফোর্ট দিন এবং নিজের কাজ ও অর্জন সম্পর্কে আপডেট রাখুন। এটা হতে পারে রেগুলার চেক ইন, নিউজ লেটার বা সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো আপডেট।
কলিগদের থেকে সাহায্য নিন
আপনি যে টাইম কাজ করছেন সেটি আসলে কেমন? আপনি যেটুকু সময় কাজ করছেন সেটুকু কি খুশি মনে করছেন? টাইট ডেডলাইন থাকলেও কি কাজ করে মজা পাচ্ছেন? হয়ত আপনার আরও কথা বলা প্রয়োজন সবার সাথে। যদি সত্যিই তাই হয়, তাহলে সহকর্মীদের সাথে কথা বলুন। হতে পারে আপনার সহকর্মীর এমন কোনো স্কিল আছে যেটা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এর বদলে আপনি যা জানেন, সেটাও তাদের জানাতে পারেন। এতে আপনার স্ট্রেন্থ ও উইকনেস বোঝা যাবে।
পরনিন্দা থেকে দূরে থাকুন
ওয়ার্কপ্লেসে পরনিন্দা ও অফিস পলিটিক্স থাকে। আবার এতাও সত্যি যে, এগুলোর কারণে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পিঠ পিছে কারও নিন্দে করা থেকে বিরত থাকুন। সরাসরি তাদের বলুন যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে। এতে যোগাযোগের পথ আরও বিস্তৃত হবে এবং ওয়ার্কপ্লেসও বেটার হবে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সে ফোকাস করুন
নিজেকে চিনতে পারার অন্যতম একটি দক্ষতা হচ্ছে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন অন্যরা আপনাকে কী বলতে চাচ্ছে। এই ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপ করতে পারলে যে কোনো পরিস্থিতি সামলানো আপনার জন্য সহজ হবে।
সময় দিন
ওয়ার্কপ্লেসে পজিটিভ রিলেশনশীপ বিল্ড করা সময়ের ব্যাপার। প্রতিদিনের সায়িত্ব শেষ করে আলাদা করে সহকর্মীদের জন্য সময় বের করা কিছুটা কঠিন। তবে একদমই কথা না বললে নিজেদের মধ্যে জানাশোনাও হবে না, আর এতে প্রভাব পড়বে নিজের কাজে। তাই কিছুটা সময় আলাদা করে হলেও তাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। সারাদিনে অন্তত লাঞ্চ টাইমে বা অফিস শেষে ১০ মিনিট হলেও দেয়ার চেষ্টা করুন। অনেক অফিসে সহকর্মীরা কাজ শেষে কোনো জায়গায় বসে আড্ডা দেন। এটাও সম্পর্ক তৈরির জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
নিজের স্ট্রেন্থ ও উইকনেস সম্পর্কে জানুন
প্রফেশনাল রিলেশনশীপ গড়ে তোলার আগে, নিজের স্ট্রেন্থ ও উইকনেস সম্পর্কে বোঝা জরুই। যোগাযোগ, মন দিয়ে কথা শোনা এবং সমস্যা সমাধান করতে পারলে রিলেশনশীপ ডেভেলপ হয়। তবে তার আগে নিজের স্ট্রেন্থ ও উইকনেস সম্পর্কে নিজেকেই আগে জানতে হবে। যেমন-
সেলফ অ্যাওয়ারনেস- আপনার কী প্রয়োজন এবং আপনি কী চাচ্ছেন সেটা বোঝার দক্ষতা থাকা জরুরি
সেলফ রেগ্যুলেশন- এর মাধ্যমে আপনি আপনার ইমশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং লং টার্ম গোল সম্পর্কে চিন্তা করতে পারবেন
এমপ্যাথি- অন্যের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা তৈরি হয় এর মাধ্যমে
সোশ্যাল স্কিল- সোশ্যাল স্কিল যেমন- টিমওয়ার্ক, প্রবলেম সলভিং স্কিল ও কমিউনিকেশন – এগুলো খুব জরুরি সোস্যাল স্কিল। প্রফেশনাল রিলেশনশীপ ডেভেলপ করার জন্য এই দক্ষতাগুলো থাকা খুবই জরুরি।
ওয়ার্কপ্লেসে কী ধরনের রিলেশনশীপ থাকা জরুরি?
যে কোনো সাকসেসফুল ও প্রোডাক্টিভ ওয়ার্কপ্লেসে নানা ধরনের ওয়ার্ক রিলেশনশীপ থাকে। গুরুত্ব অনুযায়ী সব সম্পর্ককেই গড়ে তুলতে হয়। কিছু সম্পর্ক হয়ত নিজের জন্য এবং কিছু সামাজিক কারণেই গড়ে তুলতে হয়। যে ওয়ার্কপ্লেস রিলেশনশীপগুলো আপনাকে বিল্ড আপ করতে হবে-
ম্যানেজার- কর্মক্ষেত্রে যার সাথে আপনাকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে তিনি হচ্ছেন আপনার ম্যানেজার। এখানে আপনাকে ট্রাস্ট যেমন তৈরি করতে হবে, তেমন সাপোর্টও পাবেন। সরাসরি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে বা যোগাযোগ করে এই সম্পর্ক আপনি ভালো করতে পারেন। যে সহকর্মীদের সাথে আপনি বেশি ক্লোজ তাদের সাথেও একই কাজ ক্রতে পারেন। এতে রিলেশনশীপ স্ট্রং হবে।
টিমমেট- টিমমেটদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে, আপনি কাজকে কতটুকু উপভোগ করছেন। যদি সহকর্মীর সাথে হাসিখুশিভাবে কাজ করা যায়, ভ্যাকেশন প্ল্যান করা যায় বা মন খুলে যে কোনো কথা বলা যায়, তাহলে বলাই যায় আপনাদের প্রফেশনাল রিলেশনশীপ বেশ ভালো।
ক্লায়েন্ট ও ভেন্ডর- ভেন্ডর ও ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা খুবই জরুরি। তাদের সাপোর্ট ছাড়া আপনার ব্যবসা টিকবে না। যদি কোনো ক্লায়েন্টের সাথে চ্যালেঞ্জিং টাইম হয়ে যায়, তবু আপনাকে প্রফেশনাল থাকতে হবে এবং নেগেটিভ ভাইব এড়িয়ে চলতে হবে।
নিজের সাথে- সবকিছুর পর সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে নিজের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখা। নিজেকে চিনুন, বুঝুন, নিজের সাথে কথা বলুন। সেলফ কেয়ার করুন আবশ্যিকভাবে।
প্রফেশনাল রিলেশনশীপ বিল্ড আপ না করতে পারায় অনেকেই ক্যারিয়ারে পিছিয়ে যান। কিন্তু কী করলে এই রিলেশন ইমপ্রুভ করা যায়, তা অনেকেই বোঝেন না। আজ জানিয়ে দিলাম এ নিয়েই বিস্তারিত। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য হেল্পফুল ছিল।