যেভাবে একটি সাকসেসফুল ব্র্যান্ড তৈরি করবেন

Building A StoryBrand | Donald Miller | How to Build a Successful Brand | Kendrobindu

ব্র্যান্ড শব্দটি শুনেনি এমন মানুষ এই সময়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সাধারণত আমরা ব্র্যান্ড বলতে কোনো একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের লোগো, প্রতীক, নাম ইত্যাদিকে বুঝে থাকি। আমেরিকান মার্কেট এসোসিয়েশনের মতে, ‘‘ব্র্যান্ড এমন একটি নাম, শব্দ, ডিজাইন, প্রতীক বা অন্য কোনো ফিচার—যা কোনো একজন বিক্রেতার পণ্য বা সেবাকে অন্যান্য পণ্য বা সেবা থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করে।’’ অর্থাৎ ব্র্যান্ড মূলত বাজারে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা এবং স্বকীয় একটা অবস্থান দেয় ।

কোনো একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড কথাটি বললেই আপনার মাথায় ঐ পণ্যের বা প্রতিষ্ঠানের আলাদা একটা ছবি ভেসে ওঠে। যেমন, জামাকাপড় বা ফ্যাশন হাউজের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে আপনাকে যদি ‘আড়ং’ নামটা বলা হয় তবে নিশ্চিতভাবে আড়ং প্রতিষ্ঠানটির আলাদা একটি চেহারা, তাদের পণ্যের ধরণ, তাদের জামাকাপড়ের ডিজাইন বা ধরণ আপনার মনে আপনা-আপনি খেলে যাবে। এই কাজটি করা হয় ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে তথা প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ডকে আপনার কাছে পরিচিত করবার মাধ্যমে।

একইভাবে চিন্তা করুন গুগল, ফেসবুক, মার্সিডিজ কিংবা কোকাকোলার কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান, কোমল পানীয় অনেক আছে। কিন্তু যখনই আপনি এই নামগুলো শুনবেন তখন আলাদাভাবে এদের পণ্য বা সেবার একটা স্বকীয় ছবি আপনার মাথায় আসবে। এই নামগুলো, বা এদের প্রতীকগুলো একেকটি ব্র্যান্ড। এই যে আপনার কাছে আলাদাভাবে এদের পরিচিত করা, এই কাজটিই ব্র্যান্ডিং।

ব্র্যান্ডিং যে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের লোগো বা নামকে চেনানো, তা শুধু নয়। এটি একটি লম্বা এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত আপনার চোখের সামনে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন আসে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, বা আপনি সামাজিক মেলামেশাতেই অনেক পণ্যের নাম শুনে থাকেন। এগুলো সবই ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে পড়ে। এছাড়া পণ্যের প্যাকেজিংয়ের ধরন, ক্রেতার পণ্য ব্যবহারের অভিজ্ঞতা এগুলোও ব্র্যান্ডিং!

আপনার প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই জরুরি একটি বিষয়। এর কারণগুলো দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।

  1. ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে মানুষের মধ্যে আলাদাভাবে পরিচিত করে।
  2. ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানকে আলাদা অবস্থান দেয়।
  3. ব্র্যান্ডিং আপনার ক্রেতার সাথে আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের আবেগময় সম্পর্ক তৈরি করে।
  4. ব্র্যান্ডিংয়ে আপনার পণ্যের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হলে ক্রেতার কাছে আপনার পণ্যটি বেছে নেওয়া সহজ হয়।
  5. প্রতিষ্ঠানে ভাল কর্মী আকৃষ্ট করতেও আপনাকে সহায়তা করে ব্র্যান্ডিং।

ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের একটি সামাজিক মূল্য তৈরি করে। আপনার ব্র্যান্ডিং যত ভাল হবে, আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি তত মেধাবী ও সৃজনশীল কর্মীরা আকৃষ্ট হবে। এর ফলাফল সুদূরপ্রসারী, কারণ তখন আপনি একটি দক্ষ কর্মীদলের মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ মাইক্রোসফট বা গুগলের কথা চিন্তা করুন। বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও মেধাবী কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের স্বপ্ন থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সফল ব্র্যান্ডিং তাদের যেমন বিশাল বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনি এরকম দক্ষ কর্মীদের কাছেও পরিণত করেছে আকাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে । মোট কথা, আপনার ব্যবসায়িক খাতে সাফল্য লাভের একটি বড় ও অপরিহার্য অংশ হল ব্র্যান্ডিং।

কিভাবে একটা সাকসেসফুল ব্র্যান্ড তৈরি করা যায়? এটা সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পুরা পৃথিবী খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হচ্ছে এবং সময়ের সাথে যদি আপনি নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কটে পড়বেন।

চাকুরীর বাজারের অবস্থা কঠিন কিন্তু বিজনেসের বাজারে কেউ নাই। ব্যবসাকে সবাই ভয় করে কিন্তু ডিজিটাল বিজনেস অনেক সহজ এবং পুরা ফিল্ড ফাঁকা। শুধু প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন যাতে সঠিক ভাবে শুরুটা হয়।

প্রতি বছর অনেক স্টার্টআপ শুরু হচ্ছে আবার অনেক স্টার্টআপ হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু স্টার্টআপ নয়, অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিও হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? প্রশ্ন উঠতেই পারে, যারা সাকসেসফুল তাদের সাকসেসের রহস্য কী? শুধুই কী ভালো আইডিয়া সাথে বড় ইনভেস্টমেন্ট নাকি অন্য কিছু?

এ সমস্ত কিছুর উত্তর খুঁজতে পড়ে ফেলুন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বেষ্ট সেলার, ডোনাল্ড মিলারের লেখা “𝐁𝐮𝐢𝐥𝐝𝐢𝐧𝐠 𝐚 𝐒𝐭𝐨𝐫𝐲𝐁𝐫𝐚𝐧𝐝” বইটি। ডোনাল্ড মিলার একজন আমেরিকান লেখক, পাবলিক স্পিকার এবং একজন ব্যবসায়ী। তিনি “StoryBrand” নামক মার্কেটিং কোম্পানির সিইও। মার্কেটিংয়ের উপর তার লেখা একটি অন্যতম বই “Building a StoryBrand” আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ি বা মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রির একজন হয়ে থাকেন অথবা আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যাল্যু তৈরি করতে চান, তাহলে এই বইটি পড়া অতিব জরুরী। যারা বইটির নাম আগে কখনো শোনেননি বা শুনেছেন কিন্তু পড়েননি তাদের অনুরোধ করবো দ্রুত এই বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলার জন্য।

বইটির শুরুতেই লেখক বলেছেন, এই বইটি আপনার কোম্পানির গল্প বলার জন্য লিখা হয়নি। এমনটা ভেবে বইটা পড়লে আপনার সময় নষ্ট হবে। কাস্টমার সাধারণত নিজেদের গল্প শুনতে চায়, তারা আপনার গল্প শুনতে চায় না। কাস্টমারই আপনার ব্র্যান্ড এর গল্পের নায়ক, আপনার ব্র্যান্ড নয়। প্রতিটি অসাধারণ সফল ব্যবসার রহস্য এটিই৷

মার্কেটিংয়ে টাকা নষ্ট করার পরিবর্তে তারা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বার্তা প্রকাশের স্বচ্ছতা ধরে রাখার ব্যাপারে। মিলার এই বইয়ে খুব সুন্দর ভাবে যে বিষয় গুলো তুলে ধরেছেন তা হলো একটা স্টোরি কিভাবে সাজাতে হবে, স্টোরি টেলিং এর শুরুতে কি থাকবে মাঝে কি থাকবে শেষে কি থাকবে?

এই গল্পের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মিলার ৭টা সুন্দর একদম বেসিক স্টেপ সাজিয়ে দিয়েছে। এই সাতটা স্টেপ যদি কেউ ফলো করে তাহলে যেকোনো ব্র্যান্ডস্টোরি এতো সিম্পল ও অর্গানাইজড হবে যে কাস্টমারের কনভার্সন রেট অনেকগুন বেড়ে যাবে।

স্টোরিটেলিং এর সাতটি ইউনিভার্সাল এলিমেন্ট শিখতে চান? জানতে চান কিভাবে কাস্টোমারের সাথে আপনার কমিউনিকেশন ড্র্যামাটিক্যালি ইম্প্রুভ করা যায়? এই বইটা পড়ার পর থেকে আপনি প্রতিটা ব্লকবাস্টার মুভির স্টোরি এনালাইসিস করা শিখে যাবেন, যেকোনো ভাল গল্প বইয়ের ব্যবচ্ছেদ করা পদ্ধতি জেনে যাবেন, যেকোনো সাকসেসফুল এড এর সাইকোলোজিক্যাল ফ্যাক্টর এনালাইসিস করতে শিখবেন।

এই বইতে শেয়ার করা আইডিয়াগুলো আপনার মার্কেটিং কমিউনিকেশন পুরোপুরি বদলে দিতে পারে, এবং সেই সাথে আপনাকেও একজন বেটার স্টোরিটেলার হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

ডোনাল্ড মিলার এই ফর্মূলাটির নাম দিয়েছেন এসবি৭ ফর্মূলা। আপনি যদি আপনার একটি স্টোরিব্র্যান্ড তৈরি করতে চান, আপনি যদি আপনার মেসেজ আপনার টার্গেটেড অডিয়্যান্সের নিকট সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চান তাহলে যতো দ্রুত সম্ভব “বিল্ডিং এ স্টোরি ব্র্যান্ড” বইটি পড়ে ফেলুন। আমি বিশ্বাস করি এই বইটি আপনার ব্যবসার মোড় ঘুরিয়ে দিবে।

আপনি যদি “বিল্ডিং এ স্টোরিব্র্যান্ড” বইটি পড়ে এই ফর্মূলাটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে আপনার কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ডের প্রেমে পড়ে যাবে আর আপনার বিজনেস কম্পিটিটর আপনার কোম্পানির ধারে কাছেও আসতে পারবেনা।

আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী ব্লগে এই বই থেকে আরও দারুন কিছু কৌশল নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। ততোদিন সবাই ভালো থাকুন। আমাদের আজকের এই আলোচনাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন এবং আরও অনেকের উপকারের স্বার্থে শেয়ার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *