জরুরি একটি কাজ নিয়ে বসেছেন কিন্তু কোনোভাবেই সমাধান হচ্ছে না? অনেক সময় দিচ্ছেন, প্রচুর পরিশ্রমও করছেন, কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও কমতি থেকেই যাচ্ছে? আমরা অনেক সময় কঠিন সমস্যার মধ্যে পড়ে যাই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা এখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি না। এর সহজ অর্থ হচ্ছে, আমাদের জেনেটিকসে সেই প্রবলেম সলভ করার মতো বিষয়টি নেই। ক্রিয়েটিভিটি খুব কম মানুষের জন্যই ব্লেসিং। কিন্তু তার মানে কি আপনি সব কাজে আশা ছেড়ে দিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকবেন? মোটেও নয়! জেনেটিকসে না থাকলেও কিছু কাজের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভিটি আপনি নিজেই বুস্ট আপ করতে পারবেন। কীভাবে? চলুন জেনে নেই।
সিক্স থিংকিং হ্যাটস ইউজ করুন
Six Thinking Hats! সেটা আবার কী! আর এটি ইউজ করেই বা কীভাবে ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানো যায়? বলছি। ‘Six Thinking Hats’ ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হওয়া একটি বইয়ের নাম। এই বইয়ে মূলত বলা হয়েছে কীভাবে ছয়ভাবে আপনার ব্রেইন আপনাকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। প্রতিটি থিংকিং হ্যাট চিন্তা করার জন্য একেকটি দুয়ার খুলে দেয়। এই হ্যাটগুলো যেভাবে কাজ করে-
হোয়াইট হ্যাট- আপনার সামনে যে ডাটা বা তথ্যগুলো দেয়া আছে সেগুলোর দিকে ভালোভাবে খেয়াল করুন। আগেরবার কীভাবে সেগুলো সলভ করা হয়েছে এবং কী কী নলেজের ঘাটতি থাকতে পারে সেগুলো খুঁজে বের করুন।
রেড হ্যাট- কাজের প্রতি আপনার ইমোশন বুঝুন। একই কাজের জন্য অন্যরা কীভাবে রিয়্যাক্ট করে খেয়াল রাখুন সেদিকেও।
ব্ল্যাক হ্যাট- কাজ করবে না এমন সবগুলো আইডিয়া আগে ভেবে নিন। এক কথায়, ক্রিটিক্যাল ওয়েতে চিন্তা করা শুরু করে দিন।
ইয়েলো হ্যাট- সমস্যাগুলোকে পজিটিভভাবে দেখা শুরু করুন। যে সিদ্ধান্ত আপনি নিতে যাচ্ছেন তার বেনিফিটগুলো চিন্তা করুন।
গ্রীন হ্যাট- ‘Get crazy with your ideas!’ আপনি যা ভাবছেন, যা করতে চাচ্ছেন সেগুলো করার জন্য খুব বেশি ভাবার দরকার নেই। আপনি যে সমস্যায় পড়েছেন সেগুলোর এমন সমাধান ভাবুন, যেগুলো সচরাচর কেউ ভাবে না।
ব্লু হ্যাট- এই ক্যাটাগরিতে আপনি পুরো থিংকিং প্রসেসকে কন্ট্রোল করবেন। অর্থাৎ আপনি যেখানে যাদের সাথে কাজ করছেন সেই গ্রুপের লিডার হিসেবে নিজেকে ভাবুন। যদি আপনার কাছে প্রবলেম সলভিং এর দায়িত্ব থাকে, ভাবুন সেটা কীভাবে অন্যদের দিয়ে সল্যুশন করানো যায়। একটি সমস্যার সমাধান একেকজন একেকভাবে ভাববে। তখন সমাধান করাও সহজ হবে।
নিজেকে অন্য কাজে ইনভলভ করুন
আমরা যখন টানা কাজ করতে থাকি, তখন আমাদের ব্রেইন সেই কাজে আর মন বসাতে পারে না। যখনই এমন কিছু হবে, তখন চেষ্টা করুন কাজ থেকে কিছু সময়ের বিরতি নিতে। সেই সময়ে হয়ত কলম দিয়েই টুকটাক আঁকিবুঁকি করলেন, ডুডলিং করলেন অথবা গান শুনেই কাটিয়ে দিলেন। এতে আপনার হাত ও মস্তিষ্ক এংগেজ হয়ে যাবে। এবার যখন নতুন করে কাজে ফিরবেন, তখন সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজটি শুরু করতে পারবেন।
অদ্ভুত কিছু কাজ করুন
আমরা কোনো কাজ করার সময় শুধু সেটা নিয়েই পড়ে থাকি। এতে গৎবাঁধা কাজে মনোযোগ তো হারিয়ে যায়ই, সেই সাথে ক্রিয়েটিভিটির চর্চাও আর হয় না। এই রেগুলার কাজের মধ্যে ভিন্ন ধারার কিছু কাজ আপনার মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। ‘Time Wise’ গ্রন্থের লেখিকা আমান্থা এমবার এর মতে, ক্রিয়েটিভিটি বুস্ট করার কিছু অদ্ভুত হ্যাকস আছে। যেমন-
- ডান হাতে কাজ করার সময় বাম হাত দিয়ে একটি নরম রাবারের বল বার বার স্কুইজ করতে থাকুন।
- আইব্রো কুঁচকে রাখুন
- চিন্তা যখন অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন খানিকটা সময় ঘুমিয়ে নিন
- প্রিয় কোনো কোম্পানির লোগোর দিকে তাকিয়ে থাকুন
শুনতে অবাক লাগছে না? মজার বিষয় হচ্ছে, কাজ যখন আটকে যায়, তখন কিন্তু এই প্রতিটি বিষয় বেশ হেল্প করে নতুন উদ্যমে ফিরে আসতে!
ব্রেইন ফুড খান
সকালটা শুরু করুন হেলদি একটি ব্রেকফাস্ট দিয়ে। প্রোটিন, ফ্যাট, কার্ব সহ যে কোনো একটি ফল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখুন। দিনের যে কোনো একটি সময় এক মুঠো বাদাম খান। কাজের টেবিলে কিছু খাবার সব সময় রাখুন। কারণ যখন ক্ষুধা লাগে, তখন আমাদের ব্রেইন কাজের প্রতি ফোকাস ঠিকঠাক রাখতে পারে না, যার কারণে ক্রিয়েটিভ যে কোনো কাজ করা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। তাই, ক্ষুধা লাগলে অবশ্যই কিছু না কিছু খেয়ে নিবেন।
হাঁটুন
আমাদের অনেকেরই অফিসিয়াল কাজগুলো ডেস্কে বসে করতে হয়। সেই অনুযায়ী হিসাব করলে ঘরে বাইরে মিলিয়ে একেকজনের প্রায় ৭-১৫ ঘন্টা বসে থাকতে হয়। Crazy, Right! এই টানা বসে থাকা কিন্তু শুধু আপনার শরীর বা মুড খারাপ রাখার জন্যই নয়, বরং ক্রিয়েটিভ থিংকিং করতেও বাঁধা দেয়। তাই সকালে বা সন্ধ্যায় কিছু সময় হলেও নিয়মিত হাঁটুন।
পরামর্শ বা ফিডব্যাক নেয়ার চেষ্টা করুন
হয়ত একটি সমস্যার খুব কাছাকাছি গিয়েও আপনি সমাধান পাচ্ছেন না, ঠিক তখন আশেপাশের কারও সাহায্য নেয়া মোটেও খারাপ কিছু নয়। সাহায্য চাওয়াকে কখনও নিজের দুর্বলতা ভাববেন না। বিশ্বাস ও সম্মানের জায়গা থেকে সাহায্য আপনি চাইতেই পারেন। কারণ প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা স্কিল, এক্সপেরিয়েন্স আর নলেজ আছে। সেখান থেকে সে যখন পরামর্শ দিবে, সেটি আপনার কাজে লাগতেও পারে। যদি সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ আপনি নাও করেন, তবু সেখান থেকে নতুন কোনো ক্রিয়েটিভ আইডিয়াও বের হয়ে আসতে পারে, যা আপনার কাজকে দিতে পারে নতুন মাত্রা।
কৌতূহলী হোন
আপনি যা জানেন না, সেই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করুন। যে বিষয়ে আগ্রহ আছে সেগুলো নিয়ে বই পড়ুন, নতুন নতুন স্কিল শিখুন। যত তথ্য আপনি মাথায় রাখতে পারবেন, তত ক্রিয়েটিভ কাজ আপনাকে দিয়ে করা সম্ভব।
পছন্দের কাজ করুন
কোনো কাজ করতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন? বুঝতে পারছেন না কী করবেন? যদি প্রতিনিয়ত এমন হতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্বাভাবিক যে চিন্তাভাবনা সেটাতেই ব্যাঘাত হচ্ছে। যে কাজ করতে আপনি ভালোবাসেন চেষ্টা করুন সেটা নিয়মিত করতে। ভালোবাসার কাজ আর ক্রিয়েটিভিটি দুটো বিষয় আসলে একই সাথে সম্পৃক্ত। আপনার যদি মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে, দৌড়াতে, স্ট্যাম্প কালেক্ট করতে ভালো লাগে তাহলে সেই কাজগুলো নিয়মিত করার চেষ্টা করুন। ব্যস্ত জীবনে আপনার ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে এই কাজগুলো আপনাকে বেশ সাহায্য করবে।
পরিবেশ বদলে নিন
কাজ করতে করতে প্রায়ই আমরা স্ট্রেসড হয়ে যাই, যার কারণে ক্রিয়েটিভিটি একদম কমে যায়। তাই যখন আপনার স্ট্রেসড লাগছে, প্রেশার ফিল হচ্ছে, তখন নিজেকে রিল্যাক্স করার জন্য কাজের জায়গা থেকে উঠে বাগান বা ব্যালকনিতে একটু হেঁটে আসুন। ব্রেইনের সেলগুলোকে কানেক্টেড করার জন্য গান শুনুন। কিছুটা সময় বিরতি নিয়ে আবারও কাজে বসুন।
ক্রিয়েটিভিটি সবার সমানভাবে থাকে না। নিজস্বতা একেকজনকে একেকভাবে আলাদা করে। তাই চেষ্টা করুন নিজ আদলে ক্রিয়েটিভিটি বুস্ট আপ করার জন্য। সবাই ভালো থাকুন।
ছবিঃ Cooking Light, Gitmind, Bright Star, Bay Atlantic University, Renata Schoeman