আপনি কি আঁকাআঁকি করতে খুব ভালোবাসেন? অবসর সময়ে খাতায় ডুডল (আঁকিবুকি), বিভিন্ন ছবি এঁকেই পার করে ফেলেন? তাহলে আজকে আপনাকে বলবো আপনার এই শখের কাজটা দিয়ে কীভাবে আয় করতে পারবেন।
বর্তমান যুগে মোবাইল, কম্পিউটারে প্রায় সব ধরনের কাজ করা যায়। পিছিয়ে নেই আঁকাআঁকির ব্যাপারটাও। যেকোনো ডিভাইসে আঁকা কোনো ছবি, ডিজাইন এগুলোকেই মূলত ডিজিটাল আর্ট বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটি যেমন জনপ্রিয় তেমন অনেকেই এটিকে প্রফেশন হিসেবে নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ছেন। তাই চাইলে আপনিও আপনার এই শখের কাজটি নিয়ে হয়ে যেতে পারেন পেশাদার ডিজিটাল আর্টিস্ট।
ডিজিটাল আর্ট থেকে কীভাবে আয় করবেন?
ডিজিটাল আর্ট কীভাবে করে তার বিষয়ে জানার আগে আমরা জেনে নেই যে এটিকে আমাদের ক্যারিয়ার হিসেবে নিলে আয় করা যাবে কীভাবে। বর্তমানে ডিজিটাল আর্টের ক্ষেত্র যেমন বিশাল তেমন চাহিদাও বেশি। টি শার্ট অথবা জামাকপড়, কোনো কোম্পানির লোগো থেকে শুরু করে ব্যানার, বিজ্ঞাপনের টেম্পলেট, খবরের কাগজ, আর্কিটেকচারাল ব্লুপ্রিন্ট পর্যন্ত- সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল আর্টের প্রয়োজন পড়ে। তাই বর্তমানে প্রায় সব কোম্পানিতেই স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবেও গ্রাফিক ডিজাইনার ও ডিজিটাল আর্টিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সার আর্টিস্ট হিসেবেও আপনি নিজেই আপনার প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন এবং দেশী বিদেশী নানা কোম্পানীর সাথে্ কাজ করতে পারবেন। তাই শখের কাজকে সহজেই আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে তৈরি করতে পারেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে এই ক্ষেত্রে স্কিল বেশি প্রাধান্য পায় তাই ছাত্র অবস্থায়ও এই কাজ করা সম্ভব। নিজের কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে তা ডিজিটাল ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই ডিজিটাল আর্টিস্ট হওয়া সম্ভব।
ডিজিটাল আর্টের মাধ্যম
ডিজিটাল আর্টের প্রথম ও সরাসরি মাধ্যম হলো কোনো ডিজিটাল ডিভাইস। হতে পারে সেটি ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ। সুন্দর ও সূক্ষ্মভাবে আর্টের জন্য প্রয়োজন পড়ে ডিজিটাল পেন এর। তবে প্র্যাকটিস করলে ডিজিটাল পেন ছাড়াও খালি হাতে আঁকা সম্ভব। এরপর প্রয়োজন হয় আঁকাআঁকির জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যাপ্লিকেশন এর। এছাড়া বিভিন্ন এলিমেন্ট বা আঁকার আনুষঙ্গিক টুলস এর জন্য কিছু সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইটের।
আসুন আমরা এখন জেনে নেই ডিজিটাল আর্টের জন্য কিছু জনপ্রিয় এপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার সম্পর্কেঃ
১। ক্যানভা (Canva):
বর্তমানে ডিজিটাল আর্টিস্টদের কাছে একটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন হলো ক্যানভা (Canva)। অস্ট্রেলিয়ার তৈরি এই গ্রাফিক ডিজাইনিং অ্যাপটি তার সহজ ব্যবহার, দারুণ সব ফিচার ও এলিমেন্টের জন্য সারা বিশ্বের আর্টিস্ট ও ডিজাইনারদের কাছে অতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারের জন্য ফ্রি বিভিন্ন ব্যানার, ছোট ভিডিও, পোস্ট, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির রেডি টেম্পলেট এর জন্য এটি বিখ্যাত। সাধারণত ফ্রি তে ব্যবহার করতে পারলেও সাবস্ক্রিপশন করে অল্প কিছু মূল্যের বিনিময়ে আর প্রিমিয়াম কন্টেন্ট ও ব্যবহার করা যায়। মিলিয়নের উপর কন্টেন্ট, নিজের পছন্দমতো এলিমেন্ট ব্যবহার ও তৈরির সুযোগ তরুণ ডিজাইনারদের কাছে এটিকে খুব সহজেই পছন্দনীয় করে তুলেছে। এছাড়া এটির মাধ্যমে আপনি নিজের টিম তৈরি করে কাজ করতে পারবেন। রয়েছে কোম্পানী ও পারসোনাল ব্যবহারের ভিত্তিক আলাদা ফিচার। এমন কি চাকরির জন্য প্রফেশনাল সিভি অথবা প্রোফাইল তৈরির টেমপ্লেটও পেয়ে যাবেন এখানে। নানারকম টিউটোরিয়াল ও প্রি-লোডেড টেমপ্লেট আপনার কাজকে বুঝতে সাহায্যও করবে। এছাড়া রয়েছে ক্যানভার ৫ জিবি পর্যন্ত ক্লাউড স্টোরেজ ফলে ডিভাইস হারিয়ে গেলেও আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সংরক্ষিত থাকবে। এটি উইন্ডোজ, আপেল আইওএস(Mac iOS), এন্ড্রয়েড সবরকম অপারেটিং সিস্টেমেই চালানো যায়। তাই আপনি যদি ডিজিটাল ডিজাইনিং এর কাজে একদমই অপক্ক হন, তাহলে ক্যানভা হতে পারে আপনার হাতেখড়ির জন্য সেরা।
২। অটোডেস্ক স্কেচবুক (Autodesk sketchbook):
আপনি যদি একদম খালি হাতে আঁকতে অভ্যস্ত হন এবং আপনার শুধুই একটি খালি ক্যানভাসের প্রয়োজন হয় ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা ফোনে, তাহলে অটোডেস্ক এর স্কেচবুক হতে পারে দারুণ একটি সফটওয়্যার। এটি এনিমেটর ও ডিজিটাল আর্টিস্টদের কাছে এর রিয়েলিস্টিক সব ফিচারের জন্য অত্যন্ত দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর ইন্টারফেস ও ফিচার অত্যন্ত সাদামাটা হলেও কাজের জন্য বেশ উপযোগী তাই এটি ব্যবহার করা সহজ। পেইন্টিং ও আঁকাআঁকির জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পেন্সিল, মার্কার অথবা ব্রাশ-তুলির অপশন। প্রয়োজনীয় সাইজ, ইরেজার , রঙ স্কেল এর নানা ব্যবহারও করা যায় এই সফটওয়্যারে। ক্যানভাস রিটেশন ফিচারের কারণে ক্যানভাস প্রয়োজনীয় দিকে ঘুরানো যায় যা সূক্ষ্ম কাজের ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে। রয়েছে স্ক্রিনশট টুলস যা দিয়ে পেইন্টিং এর রেফারেন্স অথবা নোট যুক্ত করা যায়। এটি দিয়ে অ্যানিমেশন অথবা ফ্লিপবুকও তৈরি করা যায়, আছে লেয়ার (layer) ফিচার। কাজেই ডিজিটাল আর্টিস্টদের জন্য এটি যে বেশ পছন্দের সফটওয়্যার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আপনি যদি মন খুলে নিজের পছন্দ মতো আঁকাআঁকি করতে চান আপনার ডিজটাল ডিভাইসে তবে স্কেচবুক হতে পারে একটি যোগ্য সফটওয়্যার। এটি উইন্ডোজ, আপেল আইওএস(Mac iOS), অ্যান্ড্রয়েড সবরকম অপারেটিং সিস্টেমেই চালানো যায়।
৩। অ্যাডোবে ইলাস্ট্রেটর (Adobe illustrator):
১৯৮৫ সালে অ্যাপলের জন্য অ্যাডোবে ইলাস্ট্রেটর নামের এই গ্রাফিক্স সফটওয়্যারটি তৈরি শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে রিলিজ পাওয়া এই সফটওয়্যারটি ডিজাইনার, অ্যানিমেটর সকলের কাছে ডিজিটাল আর্টের প্রিয় মাধ্যম হয়ে ওঠে। একবারে শুরুর শিক্ষানবীশ থেকে পরিপক্ক প্রোফেশনাল শিল্পী- সকলেই ব্যবহার করে থাকেন বহুল প্রচলিত এই সফটওয়্যারটি। নানারকম ডেভোলপমেন্ট ও ফিচার তৈরি করার পর এই সফটওয়্যারটি বর্তমানে উইন্ডোজ, ম্যাক আইওএস এবং আইপ্যাড আই ও ওস এ ব্যবহার করা যায়। এর হেভি ফিচারের কারণে এখন অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ইলাস্ট্রেটর এ অ্যানিমেশন, টু ডি (2D), থ্রি ডি (3D), ভেক্টর- সবরকম ডিজিটাল ফর্মে আঁকাআঁকি করা যায়। পছন্দমতো ক্যানভাস কিংবা প্রিলোডেড ক্যানভাস নেয়া যায়। এছাড়া লাখ লাখ ভেক্টর এলিমেন্ট অনলাইন থেকে সংগ্রহ করে কাজ করতে পারবেন ইলাস্ট্রেটর এ। ব্রাশ, তুলি, পেন, পেন্সিল, ইরেজার সহ লক্ষাধিক ফিচার সম্বলিত এই সফটওয়্যার এ আপনার তৈরি যেকোনো ডিজাইন আপনার প্রয়োজনীয় ফরম্যাটে সেভ করতে পারবেন। লোগো, ব্যানার, টি-শার্ট ডিজাইন, বিজনেস কার্ড, বিয়ের কার্ড কিংবা নিজের কার্টুন পোর্ট্রেট সবই আঁকাতে বা বানাতে পারবেন। এতে আছে অ্যাডোবের ক্লাউড স্টোরেজও। ফলে ডিভাইস ছাড়াও ক্লাউডে আপনার কাজগুলো সংরক্ষণ করতে পারবেন। ইলাস্ট্রেটর এ কাজের বিস্তৃতি ব্যপক ও সম্ভাবনাও অনেক। তাই ডিজিটাল আর্ট ও গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এ অ্যাডভান্স হতে গেলে ইলাস্ট্রেটর হতে পারে আপনার নিত্যসঙ্গী।
৪। অ্যাফিনিটি ডিজাইনার (Affinity Designer):
অ্যাফিনিটি ডিজাইনারকে বলা হয় ইলাস্ট্রেটর এর বিকল্প। ইলাস্ট্রেটর এর অনেক পরে রিলিজ হলেও আধুনিক সব ফিচারের জন্য এটি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে রিলিজ পাওয়া এই সফটওয়্যারটি যেকোনো ধরনের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায়। বহুল প্রচলিত অ্যাডোবে ফটোশপের নানা ফিচার ও ইলাস্ট্রেটর এর জটিল সব ফিচারকেই সহজ করে তুলেছে। ফলে এটি ব্যবহার করে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে বেশি। ভেক্টর পেন, শেইপ ড্রয়িং টুলস, বিভিন্ন ব্রাশ এবং যেগুলোর ডিজাইনও ফটোশপ থেকে ইম্পোর্ট করা যায়, ডিজিটাল সিম্বল, ইনফিনিটি লেয়ার, লেখার নানারকম ফন্ট ও স্টাইল, এবং ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর থেকে বিভিন্ন জিনিস একসাথে এনে কাজ করার ফিচারগুলো এই সফটওয়্যারটিকে সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাই ইলাস্ট্রেটর এ কাজ করতে করতে একবার অ্যাফিনিটি ডিজাইনার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতেই পারেন।
৫। অ্যাডোবে ফটোশপ (Adobe Photoshop):
প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র ছবি সম্পাদনার (photo editing) এর জন্য তৈরি করা হলেও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এই সফটওয়্যারটি দিয়ে বর্তমানে আঁকাআঁকি, অ্যানিমেশন এবং ছবি সম্পাদনা তো করাই যায়। নানারকম ডিজিটাল আর্টের জন্য বর্তমানে এটি আর বেশি সমাদৃত সবার কাছেই। ফটোশপ হিসেবেই বহুল পরিচিত এই সফটওয়্যারটি বহুদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা গেলেও বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাক আই ও এস সহ স্ব অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়। তাই ডিজিটাল পেন এর সাহায্যেও ট্যাব অথবা ফোনেও আঁকা বা কাজ করা যায়। বিভিন্ন ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন ফটোশপের ব্রাশ স্ট্রোক্স অত্যন্ত নিখুঁত ফলে ছবি আঁকানো বেশ সুন্দর ও সুক্ষ্ম হয়। লেয়ারিং এর মাধ্যমে ছবির সৌন্দর্য ও ডিটেলস ফুটিয়ে তোলা যায়। এছাড়াও কালার কারেকশন, থ্রি-ডি ইফেক্ট ও নানারকম ভিএফএক্স (VFX) এর ব্যবহার করে বাস্তবের মতো ছবি আঁকা যায়। ১৯৯০ সালে রিলিজ করা এই সফটওয়্যারটি রিলিজের পরপরই সকল ধরনের আর্টিস্টদের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। এমন কি ফটোশপে ছবি এডিটিং এর মাধ্যমে অনেকেই প্রোফেশনাল ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন। তাই আপনি যদি ছবি এডিটিং এর পাশাপাশি ছবিতে নিজস্ব ছোঁয়া দিতে ভালোবাসেন, তবে ফটোশপ হতে পারে আপনার প্রিয় একটি সফটওয়্যার।
৬। ইনফিনিট পেইন্টার (Infinite painter):
২০১২ সালে রিলিজ পাওয়া এই অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার অ্যাপটি আপনার শিল্পীসত্ত্বাকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করবে। আপনি যে ধরনেরই আঁকান, হোক সে থ্রি-ডি অথবা স্কেচ, কমিক স্টাইল অথবা অয়েল পেইন্ট- যেকোনো মাধ্যমে আঁকার স্বাদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপনি পেয়ে যাবেন এই অ্যাপটির মাধ্যমে। এতে রয়েছে ১৬০ টির উপরে আলাদা আলাদা ব্রাশ ও পেন্সিল। দারুণ একটি ফিচার হলো ব্রাশ স্ট্রোকের প্রেসার ও পছন্দমতো বাছাই করতে পারবেন ফলে ব্রাশ স্ট্রোক হালকা হবে নাকি গাঢ়- সেটিও সুন্দরভাবে করা যাবে। আছে জিওমেট্রিক ও পার্সপেক্টিভ ড্রইং এর ফিচার ফলে আর্কিটেকচারাল কাজ করা যাবে সহজে। ছবি এডিটিং এর অপশনও রয়েছে, সাথে রয়েছে ইন্টারফেসে রেফারেন্স ছবি রাখার সুবিধা। ফলে আঁকার সময় রেফারেন্স ছবি দেখে আঁকতে কোনো সমস্যাই হবে না। এছাড়া লেয়ার, নানারকম শেইপের অপশন, প্যাটার্ন তৈরি করা, ক্যানভাস রোটেটিং এমন কি আঁকার পদ্ধতি ভিডিও রেকর্ডিং করার ফিচারও রয়েছে। ব্যবহারকারীদের মাঝে এবং ইউটিউবে অনেক আর্টিস্টই এই এওয়ার্ড প্রাপ্ত অ্যাপটিকে আঁকাআঁকির এন্ড্রয়েড আপ এর মধ্যে সেরা বলেছেন। এটি অ্যাপেল ও এন্ড্রয়েড দুটো অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যবহার করা যায়। সাবসক্রিপশনের বিনিময়ে প্রিমিয়াম কন্টেন্ট নেয়া যায়। তাই আপনি যদি ট্যাব বা ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল আর্টের দুনিয়ায় প্রবেশ করতে চান তবে ইনফিনিট পেইন্টার হতে পারে একটি পারফেক্ট সঙ্গী।
৭। পিক্সার্ট (Picsart):
নতুন আর্টিস্টদের জন্য আরো একটি সহজ ও মজার অ্যাপ হলো পিক্সার্ট। যদিও এটি আপনাকে পুরোপুরি নিজের আঁকার স্বাধীনতা দেবে না তবে এটি দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারবেন অসাধারণ সব ডিজিটাল আর্ট। আরমেনিয়ান-আমেরিকান এই কোম্পানিটি ২০১১ সালে এই অসাধারণ অ্যাপটি রিলিজ করে। প্রথমে এটি দিয়ে শুধুই অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ছবি এডিট করা যেত । আস্তে আস্তে এটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে ডেভেলপাররা কম্পিউটার এবং অ্যাপেল আই ও ওস এর জন্যও তৈরি করেন। বর্তমানে এটিতে নানারকম ছবি ও ভিডিও এডিটিং ফিচার তো রয়েছেই সাথে রয়েছে ক্যানভাস ফিচার যেখানে আঁকাআঁকির ফিচার রয়েছে, লেয়ার রয়েছে। রয়েছে আঁকাআঁকির জন্য প্রয়োজনীয় বেসিক ফিচার- ব্রাশ, টুলস, পেন, পেন্সিল ইত্যাদি। ছবির সাথে ডিজিটাল আর্টের একটি মেলবন্ধন তৈরি করতে পিক্সার্ট একটি অসাধারণ অ্যাপ। এটি দিয়ে ফটো কোলাজ, যেকোনো পোর্ট্রেট এর স্কেচ, দুটি ছবি একসাথে মিলিয়ে কোনো হাইব্রিড ছবি তৈরি এমন কি বর্তমানে এ আই (AI) দিয়েও ছবি তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া পিক্সার্ট এর আলাদা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের পিক্সার্ট দিয়ে তৈরি করা ছবি, ভিডিও দিয়ে থাকেন। চাইলে আপনিও সেখানে আপনার কাজ শেয়ার করতে পারবেন ও পিক্সার্ট এর নানারকম ব্যবহার তো জানবেনই। এখানে আরো রয়েছে নানারকম এডিটিং টিউটোরিয়াল ও রেডি টেমপ্লেট। সাবস্ক্রিপশন কিনে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে প্রিমিয়াম দারুণ সব ফিচার ও কন্টেন্ট। তাই আপনি যদি একদমই নবীন হন এবং ডিজিটাল আর্ট শুরু করতে চান, তবে পিক্সার্ট আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতেই পারেন।
৮। ক্রিটা (Krita):
আগের সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মতো অনেক জনপ্রিয় ও বিখ্যাত না হলেও ক্রিটা আপনার ডিজিটাল আর্টের জন্য একটি দারুণ সফটওয়্যার হতে পারে। সম্পূর্ণ ফ্রি এই সফটওয়্যারটি আপনার আঁকার জন্য দেবে পূর্ণ স্বাধীনতা। “ক্রিটা” নামটি সুইডিশ শব্দ যার অর্থ “ক্রেয়ন” বা “চক” এবং “রিটা” যার অর্থ “আঁকা” তা থেকেই রাখা হয়। মূলত লিনাক্সে অপারেটিং সিস্টেমের (Linux) জন্য তৈরী করা নেদারল্যান্ডের এই সফটওয়্যারটি বর্তমানে হাইকু, উইন্ডোজ, অ্যাপল আইওএস(Mac iOS), অ্যান্ড্রয়েড সবরকম অপারেটিং সিস্টেমেই চালানো যায়। বিভিন্ন ব্রাশ, স্ট্রোকস, কালার ম্যানেজমেন্ট ,লেয়ার, ক্লিপিং ইত্যাদি সকল প্রয়োজনীয় ফিচারসহ এই সফটওয়্যারটি টু-ডি (2D) ছবি আঁকানোর জন্য সবচেয়ে বেশি পারফেক্ট। সুইডিশ শিল্পী ডেভিড রেভয় এই ক্রিটা দিয়েই সবার জন্য ফ্রি ওয়েব কমিক “পেপার এন্ড ক্যারোট” (Pepper and carrot) এঁকেছেন। তাই বুঝতেই পারছেন ডিজিটালি আঁকাআঁকির জন্য ক্রিটা হতে পারে আপনার এক দারুণ সঙ্গী।
৯। অ্যাডোবে ফ্রেসকো (Adobe Fresco):
অ্যাডোবে ক্রিয়েটিভ ক্লাউডের আরেকটি দারুণ অ্যাপ হচ্ছে অ্যাডোবে ফ্রেসকো। এটি ডিজিটাল আর্ট করার জন্যই মূলত তৈরী করা। প্রাথমিকভাবে এটি মূলত আই পেন (ipen) দিয়ে অ্যাপলের ট্যাব এবং ফোনে ব্যবহারের জন্য বানানো হলেও বর্তমানে উইন্ডোজ এ ও এটি ব্যবহার করা যায়। তবে এখনো এটি অ্যান্ড্রয়েড এ ব্যবহার করা যায় না। ২০১৯ সালে রিলিজ পাওয়া এই সফটওয়্যারটিতে আঁকানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ফিচার যেমন ব্রাশ, পেন, পেন্সিল, ইরেজার, লেয়ার, ক্লিপিং মাস্ক এসবের সাথে সাথে রয়েছে লাইভ ব্রাশ-এই ব্রাশ দিয়ে আঁকানো হলে সেটি মূলত ছবিটিতে রিয়েলস্টিক ইফেক্ট দেয়। অর্থ্যাৎ ওয়াটার কালার ব্রাশ দিয়ে আঁকালে ছবিটিতে রঙে ভেজা ভেজা ইফেক্ট থাকবে। এই ফিচারটি এই সফটওয়্যারটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়া ছবি এডিটিং এর ফিচার তো আছেই। তাই যদি আপনার কাছে ব্যবহারযোগ্য অপারেটিং সিস্টেম ও ডিভাইস থাকে, তবে আঁকাআঁকি করার জন্য সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে দেখতেই পারেন।
১০। আইবিস পেইন্ট এক্স (ibis Paint X):
অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল ফোনে আঁকার আরেকটি বেশ জনপ্রিয় ও দারুণ অ্যাপ হলো আইবিস পেইন্ট এক্স। মূলত জাপানভিত্তিক এই অ্যাপটি ম্যাঙ্গা বা কমিক স্টাইল আঁকার জন্য এটি বেশি সুবিধাজনক। এতে রয়েছে ৪৭,০০০ ব্রাশ, ২১,০০০ ম্যাটেরিয়াল, ২,১০০ এর উপর ফন্ট বা লেখার স্টাইল, ৮৪ টি ফিল্টার, ৪৬ টি স্কিনটোন রঙ, ২৭ টি ব্লেন্ডিং মোড, আঁকার পদ্ধতি ভিডিও করার ফিচার, স্ট্রোক মসৃণ করার ফিচার সহ নানারকম প্রয়োজনীয় ফিচার। আছে অগণিত লেয়ার ব্যবহারের ফিচার। এটি উইন্ডোজ এও ব্যবহার করা যায়। তবে ফোনে এটি ব্যবহার বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময়। তাই এটি ফোন বা ট্যাব ব্যবহারকারী ডিজিটাল আর্টিস্টদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই আপনি যদি বিশেষ করে কার্টুন বা কমিক্স স্টাইল নিয়ে কাজ করতে চান তবে আইবিস পেইন্টিং এক্স ব্যবহার করে দেখতেই পারেন।
ডিজিটাল আর্টিস্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়ার জন্য আপনি এমন একটি সফটওয়্যার পছন্দ করবেন যেটি আপনার প্রয়োজন ও মনের ইচ্ছার পূর্ণ স্বাধীনতা দেবে। আপনার বাজেট, আপনার দক্ষতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি পছন্দ করে নিতে পারেন আপনার সফটওয়্যারটি। ডিজিটাল আর্ট এর ক্ষেত্রে যত বেশি অনুশীলন তত বেশি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। তাই ধৈর্য্য ও চেষ্টার সাথে সঠিক সফটওয়্যারটি বেছে নিয়ে ডিজিটাল আর্টিস্ট হিসেবে কাজে লেগে যেতে পারেন।