কাস্টমার সার্ভিস ভালো হলে কীভাবে ব্যবসার উন্নতি হয়?

যে কোনো বিজনেস এরই একটা বেশ বড় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কাস্টমার সার্ভিস। মূলত কাস্টমারের জন্যই বিজনেস দাঁড়িয়ে থাকে, তাই কাস্টমার সার্ভিস বিজনেসের একটা মূল পয়েন্ট। কোনো বিজনেস এর সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হচ্ছে কাস্টমার। একজন সন্তুষ্ট কাস্টমার বারবার আপনার কাছেই ফিরে আসবেন, যার কারণে একই সাথে সেল বেশি হবে এবং কাস্টমারের সাথে সম্পর্ক গাঢ় হবে। বেশিরভাগ বিজনেসেই আমরা সফলতা ও কাস্টমারের সন্তুষ্টির গল্প বলতে দেখি, কাস্টমার নিয়ে বিভিন্ন ব্যর্থতার গল্পগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামনে আসে না। তবে মোটামুটি জোর দিয়ে বলা যায়, সব বিজনেসই কখনো না কখনো কাস্টমার সার্ভিস নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

বর্তমানে ই-কমার্সে প্রচুর প্রতিযোগিতা। প্রত্যেককেই নিজের সেরাটা দিয়ে টিকে থাকতে হয়। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে কাস্টমাররা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন তারা জানেন আপনি যদি তাদেরকে ঠিকঠাক ভাবে সার্ভিস দিতে না পারেন, খুব সহজেই তারা অন্য কোথাও তাদের পছন্দমতো সার্ভিস খুঁজে নিতে পারবে। তাই কাস্টমারদের সন্তুষ্ট রাখা এখন বিজনেসের জন্য খুবই জরুরী।

কীভাবে কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করা যায়?

এখানে একটা জিনিস আমাদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে, সব কাস্টমার একরকম নয়। তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধরন ও সন্তুষ্টি আছে। এক্ষেত্রে কোনো “ওয়ান সাইজ ফিটস অল” অ্যাপ্রোচ চলে না। শপ হোক বা অনলাইন, ভিন্ন ভিন্ন কাস্টমার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সাপোর্ট পছন্দ করেন। যেমন- কোনো কোনো কাস্টমার শপে ঢুকেই অ্যাসিস্ট্যান্স চান, আবার কেউ কেউ অ্যাসিস্ট্যান্স একদমই পছন্দ করেন না, নিজের মতো শপিং করতে পছন্দ করেন। তাই অবশ্যই কাস্টমারের ধরন বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

কাস্টমার সার্ভিস

এখনকার সময়ে কাস্টমার সার্ভিস শুধুমাত্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাস্টমারের সাহায্য করা নয়, বরং কাস্টমারের নিজস্ব কী চাহিদা রয়েছে, অথবা সমাধান প্রয়োজন তা দেখা, এবং সে অনুযায়ী তার সমাধান করাই বর্তমানে আদর্শ কাস্টমার সার্ভিস। কাস্টমারকে খুব ভালো সার্ভিস প্রোভাইড করা একটি বিজনেসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিজনেসের গ্রোথ এবং লং টার্ম সাকসেসের ক্ষেত্রে খুব বড় ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সময় কাস্টমাররা যখন খুশি হন, তারা নিজ থেকেই বিজনেস বা ব্র্যান্ডের প্রমোট করেন। তাদের আশেপাশের মানুষজনের কাছে সেই কোম্পানি নিয়ে ভালো কথা বলেন। যার ফলে নতুন কাস্টমার তৈরি হয়, এবং আগে থেকেই থাকা কাস্টমার রিপিট কাস্টমারে পরিণত হয়।

স্ট্যাটিস্টিক্স কী বলে?

এখন আমরা গাণিতিক কিছু ডেটায় আসি, যেখানে কাস্টমার সার্ভিসের গুরুত্ব প্রমাণ ও হিসাব সহ দেখানো হয়েছে।

  • ৯৫% কাস্টমার এর মতে কোনো ব্র্যান্ডের লয়ালটির জন্য ভালো কাস্টমার সার্ভিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • ৭৫% এরও বেশি কাস্টমার কোনো অটোমেটেড সফটওয়্যার অথবা চ্যাটবটের সাথে যোগাযোগ করার চাইতে সরাসরি কোনো একজন এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে প্রেফার করেন।
  • অন্তত ৯২% কাস্টমাররা বলেছেন কোনো স্টোর থেকে তাদের যদি একবার খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা পরে ওই স্টোর থেকে আর কখনো কেনাকাটা করবেন না।
  • ৩৩% এরও বেশি কাস্টমার মনে করেন, যদি কোনো সমস্যা সমাধানে বারবার কোম্পানি বা বিজনেসের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, তবে তাকে ভালো কাস্টমার সার্ভিস হিসেবে ধরা যায় না।
  • ৬২% এর মতো কাস্টমার জানিয়েছেন, তারা কোনো ব্র‍্যান্ড বা শপ এর সাথে তাদের খারাপ অভিজ্ঞতা তাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন অপরিচিত মানুষের সাথে শেয়ার করেছেন।

সুতরাং আমরা স্ট্যাটিস্টিকস দেখে সহজেই ধারণা করে নিতে পারি যে, ভালো কাস্টমার সার্ভিস বিজনেসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা বিজনেসের বেড়ে ওঠা এগিয়ে যাওয়া অথবা একদমই নিচে পড়ে যাওয়ায় কাস্টমার সার্ভিসের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। এই সবগুলো তথ্যই বিভিন্ন স্টাডির মাধ্যমে পাওয়া এবং ম্যাথমেটিক্যালি অনেকটাই সঠিক।

কাস্টমার সার্ভিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিটি

এই ক্ষেত্রে, আপনার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে, কাস্টমার সার্ভিস কী এবং কেন এটা আপনার সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো কিছু কাস্টমার সার্ভিস কোয়ালিটি নিয়ে, যা বর্তমান ই-কমার্স রাউন্ডে প্রত্যেকটি অনলাইন বিজনেস এরই থাকা উচিত।

১) বন্ধুত্বপূর্ণতা (ফ্রেন্ডলিনেস)

একটি অনলাইন বিজনেস হিসেবে টার্গেট অডিয়েন্স এর চাহিদা ও পছন্দ জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। মডার্ন যুগে কাস্টমাররা যে সকল ব্র্যান্ড তাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয় এবং সে অনুযায়ী সমাধান করার চেষ্টা করে পছন্দ করে এবং তাদের রিপিট কাস্টমার হয়। এই বিশেষভাবে সমাধান দেওয়া ছাড়াও সাপোর্ট এজেন্টদের ভালোভাবে ট্রেন্ড করতে হবে যাতে কাস্টমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সলিউশন দেন অথবা পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

কাস্টমার সার্ভিস

২) সহমর্মিতা (এমপ্যাথি)

কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে ব্র্যান্ডগুলোর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো সহমর্মিতা। কাস্টমাররা চান তাদের প্রিয় ব্র্যান্ড তাদের নিজস্ব চাহিদা এবং পরিস্থিতি বুঝবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করবে।

এই ক্ষেত্রে কাস্টমারের পূর্ববর্তী কেনাকাটা চেক করুন, বেশি করে কাস্টমার ডাটা জোগাড়ের চেষ্টা করুন এবং তার অসুবিধা অনুযায়ী সলিউশন দেয়ার চেষ্টা করুন।

৩) স্বচ্ছতা (ট্রান্সপারেন্সি)

পছন্দের ব্র্যান্ড থেকে কাস্টমার সব সময় সততা ও স্বচ্ছতা আশা করেন। তা হোক প্রোডাক্ট প্রাইসের ক্ষেত্রে, ডিসকাউন্ট, শিপিং, রিটার্ন বা রিফান্ড যাই হোক না কেন। তাই এক্ষেত্রে আপনার টিমকে অবশ্যই ভালোভাবে ট্রেনিং দিতে হবে যাতে কাস্টমারের কাছে স্বচ্ছ থাকা যায়, এবং এমন কিছু না হয় যাতে কাস্টমার মনে করেন তাকে ঠকানো হচ্ছে। কাস্টমার যদি আপনার বিজনেসে স্বচ্ছতা পান, তাহলে তিনি ভরসা পাবেন, এবং রিপিট কাস্টমারে পরিণত হবেন।

৪) পছন্দ (অপশন)

আমরা সবাই দুই বা ততোধিক জিনিস এর মধ্যে বিকল্প খুঁজি। একই প্রোডাক্ট বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থাকলে আমরা তার মধ্য থেকে ভালোটা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি, যেটা যদি একটাই থাকে তাহলে সম্ভব হয় না। কাস্টমারদের বিভিন্ন চয়েসের মুখোমুখি করলে তারা বুঝতে পারবেন যে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে এবং একটি পছন্দ না হলে আপনার কাছেই পেয়ে যাবেন।

৫) তথ্য (ইনফরমেশন)

যেকোনো প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস এর ক্ষেত্রে কাস্টমারদের প্রশ্ন থাকবেই, এবং সেটাই স্বাভাবিক। এবং সেগুলোর ঠিকঠাকভাবে সুন্দর করে উত্তর দেয়াও আপনার বিজনেসের দায়িত্ব। সাপোর্ট টিমকে এক্ষেত্রে ভালোভাবে ট্রেনিং দিতে হবে, যাতে তারা সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং কাস্টমারের যেকোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন, তা প্রোডাক্ট প্রাইস, শিপিং অথবা প্রোডাক্ট সম্পর্কেই।

৬) দ্রুততা (প্রমটনেস)

বলা হয়ে থাকে যে “টাইম ইজ মানি”। কোনো একটা প্রশ্নের উত্তরের জন্য কেউই সারাদিন অপেক্ষা করে থাকতে রাজি নয়। সাপোর্ট টিমকে এমনভাবে ট্রেনিং দিতে হবে, যাতে সময় মত কাস্টমারের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং কাস্টমার বিরক্ত হয়ে চলে না যান।

অখুশি কাস্টমার

কাস্টমার সার্ভিসে যে ভুলগুলো কখনোই করবেন না

সাপোর্ট টিমকে ঠিকভাবে ট্রেনিং না দেয়া

চিন্তা করে দেখুন, আপনি কোথাও সার্ভিস দিতে যাচ্ছেন, কিন্তু কাস্টমার সাপোর্ট এজেন্টের কাছে কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না. বরং তারা আপনাকে ম্যানুয়াল দেখতে বা ওয়েবসাইটে বিবরণ পড়ে নিতে বলছে। সেই জায়গায় কি আপনি দ্বিতীয়বার যাবেন? তেমনি কাস্টমারদের সাথে এটা করাও আপনার ব্যবসার সুনাম একেবারে নষ্ট করে দিতে পারে। যেহেতু তারা আপনার সাপোর্ট টিমকে খুঁজে নিচ্ছেন, তার মানে তারা আশা করছেন যে সেখানে তাদের সমস্যার ঠিকঠাক সমাধান পাওয়া যাবে। এই বিপদে না পড়তে সাপোর্ট এজেন্টদেরকে কাস্টমার সার্ভিসে ভালোভাবে ট্রেনিং দিতে হবে, এমপ্লয়েড এর জন্য প্রয়োজনে নতুনভাবে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করুন।

কাস্টমারের সাথে ফলোআপ না রাখা

ফলোআপ মানে হচ্ছে ইনিশিয়াল সেল শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ রাখা, ফিডব্যাক নেয়া অথবা রিভিউ পাওয়া। একজন কাস্টমার কাজ শেষের পরে যদি তার পছন্দের বিজনেস থেকে কোনো ফলোআপ কোশ্চেন বা ফিডব্যাক দেবার অনুরোধ পান, তখন তিনি সন্তুষ্ট হন এবং আরো কেনাকাটার উৎসাহ পান। তাই সাপোর্ট এজেন্টদেরকে এই ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে বলুন, এই স্ট্র্যাটেজি ফলো করলে আপনার রিপিট সেলের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

কাস্টমারের প্রয়োজন এর সময় অ্যাভেলেবল না থাকা

লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করা কেউই পছন্দ করেন না। আপনার ওয়েবসাইট থেকে সময় মতো ভালো রেসপন্স না পেলে কাস্টমাররা অবশ্যই বিকল্প খোঁজা শুরু করেন, এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটে দেখতে থাকেন। তাই আপনি যদি আপনার কম্পিটেটরদের চাইতে এগিয়ে থাকতে চান, তাহলে ওয়েবসাইটের সব সময় প্রেজেন্ট থাকা এবং কাস্টমারদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই জরুরী। এটা আপনি বিভিন্ন শপেই দেখতে পাবেন, যাদের টাইমলি রেসপন্স রেট অনেক বড়, তাদের চাইতে যাদের টাইমলি রেসপন্স রেট খুব অল্প সময়, তাদের রিভিউ ভালো থাকে।

মিথ্যা আশ্বাস দেয়া

কাস্টমার সার্ভিস এক্সপেরিয়েন্স অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কতটা ভালো কমিটমেন্ট রাখতে পারছেন তার উপরে। যা করতে পারবেন না, তা কাস্টমারদের কাছে কখনো প্রমিস করা উচিত হবে না। এক্ষেত্রে কোম্পানি পলিসির দিক থেকে ট্রান্সপারেন্ট থাকতে হবে। মিথ্যা আশ্বাস পাওয়া ও সেটা নিয়ে বারবার ঘুরতে কোনো কাস্টমারই পছন্দ করবেন না। কাস্টমার যদি কোনো সার্ভিস পাবেন বলে আপনি আশ্বাস দেন, এবং কাস্টমার পরবর্তীতে তা না পান, কাস্টমার অসন্তুষ্ট হবেন, আপনার বিজনেস এর উপরে খারাপ প্রভাব পড়বে এবং আপনি কাস্টমার হারাবেন তাই কোনোভাবেই মিথ্যা আশ্বাস দেয়া যাবে না।

মোটামুটি থেকে কীভাবে ফাইভ স্টার কাস্টমার সার্ভিসে রূপান্তর করবেন?

পলিসি পরীক্ষা করে দেখুন এবং গ্যাপ খুঁজে বের করুন

গ্যাপ খুঁজে বের করা

কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করার প্রথম ধাপ হলো আপনার অলরেডি থাকা পলিসিকে ভালোভাবে চেক করা, এবং তার কোথাও কোনো কমতি আছে কিনা তা খুঁজে বের করা। কোথাও যদি কোনো কমতি থাকে তা ঠিক করার চেষ্টা করুন, সাপোর্ট টিমকে ভালোভাবে ট্রেনিং দিন, কাস্টমাররা সন্তুষ্ট কিনা সে ব্যাপারে ফিডব্যাক নিন, প্রয়োজনে থার্ড পার্টির হেল্প নিন। কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে কাস্টমারের ইনফরমেশন থাকা খুবই জরুরী। মার্কেটে আপনার কম্পিউটার কোম্পানিরা কী ধরনের স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করছে, তা আপনার চাইতে ভালো না খারাপ এগুলোও দেখার চেষ্টা করুন।

কাস্টমারের ধরন বুঝে সাপোর্ট দিন

প্রত্যেক কাস্টমারই আলাদা আলাদা ধরনের। কেউ কেউ অনলাইনে যোগাযোগ করতে এবং কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ অফলাইনে এবার সরাসরি সব থেকে সার্ভিস নিতে পছন্দ করেন। এছাড়াও তাদের অনলাইন প্রেজেন্স ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন কেউ টুইটারে টুইট করে ইন্টারাক্ট করতে ভালোবাসেন, অনেকে ফেসবুকে পোস্ট করেন ছবি সহ, আবার অনেকে হোয়াটসঅ্যাপে পার্সোনালি জিজ্ঞাসা করতে পছন্দ করেন। রিসার্চ বলে যেসব ব্র্যান্ড বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সমানভাবে ভালো সেবা দিতে পারে তাদের বৃদ্ধি অন্যান্যদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ দ্রুত হয়। কাস্টমারের স্যাটিসফ্যাকশন বাড়াতে আপনার কাস্টমারের পছন্দ অনুযায়ী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তার সাথে কানেক্টেড হওয়া উচিত এবং সেখানেই তার ফিডব্যাক নেওয়া উচিত।

ফিডব্যাক বা রিভিউ চান

কাস্টমারের কাছ থেকে পাওয়া রিভিউ অথবা ফিডব্যাক আপনার ব্র্যান্ডের জন্য বিশাল একটি প্লাস পয়েন্ট। একদম সরাসরি রিভিউ অথবা রেটিং না দিলেও কাস্টমারের ওভারঅল ফিডব্যাক অথবা সার্ভিস সম্পর্কে কমেন্ট আপনার বিজনেসের প্রফেশনাল দিকটা কাস্টমারদের সামনে তুলে ধরবে।এমনকি এটা না বললেও চলে যে, এই ফিডব্যাক আপনার বিজনেসকে আরও ইম্প্রুভ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আপনার সাথে কাস্টমারের একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে, যে কারণে কাস্টমার কোনো কিছু কেনার সময় আপনার ব্র্যান্ডকেই প্রাধান্য দেবেন।

নিজের ভুল স্বীকার করে নিন

একটি চিরন্তন সত্যি কথা হচ্ছে, ভুল না করে কেউ কখনো কিছু করতে পারে না। তাই আপনি যত চেষ্টাই করুক না কেন, কোথাও না কোথাও ভুল থেকে যেতেই পারে এমনকি অনেক বড় বড় ব্র্যান্ডেও কাস্টমারের সাথে ডিল করার ক্ষেত্রে কোথাও না কোথাও ভুল হয়েই যায়। এবং কিছু কিছু জিনিস আসলে আপনার ইচ্ছাকৃত ভুলও নয়। সব সময় সবকিছু আয়ত্তে না থাকাই স্বাভাবিক। যেমন কোনো কারণে কোনো একটি লটের প্রোডাক্ট নষ্ট হয়ে গেলে সে প্রোডাক্ট আপনি যেমন বিক্রি করতে পারবেন না, তেমনি পরের প্রোডাক্ট আসতে সময়ও লাগবে বেশি। আবার আপনি যখনই অর্ডার পাচ্ছেন, তার সাথে সাথেই প্রোডাক্ট রেডি করে, প্যাকেজিং করে শিপিং এ পাঠিয়ে দেয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।

কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করতে কাজ অবশ্যই করতে হবে। তবে মাঝেমধ্যে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেলে সেই ভুলকে মেনে নেওয়াও উচিত। অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমাররাও বুঝতে পারেন যে ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে কেউই নয়। তবে সেক্ষেত্রে কাস্টমার আপনার ভুলটা দেখবেন না, দেখবেন ভুলটা করার পরে সেটাকে সঠিক করতে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এবং আপনি বিনয়ের সাথে নিজের ভুল মেনে নিচ্ছেন কি না। কারণ একজন রিপিট কাস্টমারের বিশ্বাস হারানো বিজনেসের জন্য বড় সময়ের ক্ষতি। তাই কোনো ক্ষেত্রে ভুল হয়ে গেলে আপনার কাস্টমারের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভুল ঠিক করে আবার তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এতে দিনশেষে আপনার ব্র্যান্ডেরই উন্নতি।

কাস্টমারের জার্নিকে বিশেষ করে তুলুন

হ্যাপি কাস্টমার

জেন ডেস্ক এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৬৭ পার্সেন্ট এরও বেশি কাস্টমার যদি কেনাকাটায় নিজের বিশেষ এক্সপেরিয়েন্স পান, তবে তারা প্রিমিয়াম লেভেলের মূল্য দিতেও রাজি আছেন। আপনার বিজনেস যদি কম্পিটেটরদের তুলনায় আলাদা ও সবার চোখে স্পেশাল বানাতে চান, তাহলে প্রত্যেক কাস্টমারকেই বিশেষভাবে ট্রিট করতে হবে। যেহেতু সব কাস্টমার একরকম নয়, তাই আপনি একটি জেনেরিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সব কাস্টমারের উপর অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। এতে কাজ হবে না এবং কিছু কাস্টমার হারাতেও হতে পারে। কাস্টমারদের পিছনে আপনার সময় ও সোর্স ব্যয় করুন, কাস্টমারের পছন্দ অপছন্দ জেনে নিন, এবং তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী পার্সোনালাইজ সল্যুশন দেয়ার চেষ্টা করুন।

দ্রুততম সময়ে কাস্টমারকে রিপ্লাই করুন

আমরা আগেও বলেছি যে, এখন অনলাইন বিজনেসগুলোর মধ্যে কম্পিটিশন প্রচুর। তার মধ্যে কাস্টমার ধরে রাখতে হলে আপনার অবশ্যই কাস্টমারকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। কাস্টমাররা এখন জানেন যে, আপনি সময় মতো রিপ্লাই না করলেও আরো অনেক বিকল্প আছে, যেখান থেকে তারা সেবা পাবেন। এছাড়াও আপনার সার্ভিস এজেন্টের উত্তরের অপেক্ষা করা ছাড়া কাস্টমারদের আরো কাজ আছে, তাই তারা এখানেই সব সময় ব্যয় করতে চাইবেন না। এ কারণে আপনার নিজেরও চেষ্টা করতে হবে এবং সার্ভিস এজেন্টদেরও ট্রেনিং দিতে হবে এমনভাবে, যাতে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে কাস্টমারের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও রেসপন্স করা যায়।

ডাটা ও অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করুন

বিজনেস এর ক্ষেত্রে কাস্টমারের ডাটা ও ইনফরমেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনার কাছ থেকে আন্দাজ করার প্রয়োজন দূর করবে, এবং কাস্টমার সার্ভিস স্ট্র্যাটেজিতে কী কী ভুল থাকতে পারে বের করতে সাহায্য করবে। টেকনোলজির যুগে এখন ডাটা ট্র‍্যাক করার বিভিন্ন টুল আছে, যা আপনি আপনার বিজনেস এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি কাস্টমারের কাছে সার্ভে ফর্ম অথবা এক্সপেরিয়েন্স জানতে চেয়ে অটোমেটিক ম্যাসেজও পাঠাতে পারেন এসব টুলের সাহায্যে।

নিজেকে কাস্টমারের জায়গায় রেখে ভাবুন

আপনি নিজে যদি কাস্টমার হতেন তাহলে আপনার পছন্দের বিজনেস থেকে কী আশা করতেন? কেমন ফ্যাসিলিটিস অথবা প্রোডাক্ট চাইতেন, কী ধরনের সার্ভিস হলে খুশি হতেন? কাস্টমারের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে একবার পুরো প্রচেষ্টা দেখার চেষ্টা করুন। এতে কাস্টমারের চাহিদা সম্পর্কে অনেক কিছুই ক্লিয়ার হয়ে আসবে এছাড়াও কোনো ফাঁকফোকর থাকলে তাও সহজেই ধরতে পারা যাবে।

অনেক বিজনেস এই এমন হয় যে বিজনেস অনার শুধুমাত্র কীভাবে বিজনেস বাড়াবেন, অথবা নিজের ক্ষেত্রে উন্নতি করবেন সেটাই ভাবেন। নিজের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে কাস্টমারের কথা ভুলে যান, ফলে কাস্টমারের চাহিদার চাইতে নিজের ইচ্ছায় বেশি গুরুত্ব দেন।  অথচ কাস্টমারই হচ্ছে একটা বিজনেসের টিকে থাকার মূল শর্ত। তাই অবশ্যই কাস্টমারের দিকটা ভেবে দেখতে হবে।

কাস্টমার সার্ভিসের বিভিন্ন চ্যানেল

ফোন সাপোর্ট

কাস্টমার সার্ভিসএর বিভিন্ন সাপোর্ট

কাস্টমারদের সাথে কমিউনিকেশনের পুরনো চ্যানেলগুলোর একটা হল ফোন। যা আগে টেলিফোন দিয়ে করা হতো, তার জায়গায় এখন মোবাইল ফোন ও মোবাইল নাম্বার নিয়ে নিয়েছে। কাস্টমার সাপোর্টে ফোনকে মনে করা হয় সবচেয়ে দ্রুত সমাধান পাওয়ার মাধ্যম। বেশ অনেক কাস্টমারই এখনো অনলাইনে ম্যাসেজ করে অপেক্ষা করার চাইতে সরাসরি ফোন করে প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতে পছন্দ করেন। তাই খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার বিজনেস এর ফোন নাম্বারটি সব সময় চালু থাকে, এবং রিসিভিং এন্ডে কেউ না কেউ অবশ্যই থাকে।

লাইভ চ্যাট

লাইভ চ্যাটের ধারণাটা প্রযুক্তির কারণে অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। লাইভ চ্যাটে ওয়েবসাইটে একটি চ্যাটের অপশন দেখা যায় যেটার দায়িত্বে সাধারণত সব সময় কেউ না কেউ থাকেন, এবং রেসপন্স করেন। লাইফ চ্যাট রিয়েল টাইম রেসপন্স দেয়, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাস্টমাররা এই অপশনটি পছন্দ করেন। আপনার ওয়েবসাইটে একটি লাইভ চ্যাট অপশন থাকলে নতুন কাস্টমার খুব সহজেই আকৃষ্ট হবেন। অবশ্যই দিনরাত ২৪ ঘন্টা লাইভ চ্যাট সাপোর্ট রাখা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনি একটা নির্দিষ্ট টাইম লিমিট করে দিতে পারেন যেমন সকাল ন’টা থেকে রাত দশটা।

ইমেইল

মোটামুটি ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর থেকেই ইমেইল মানুষের মধ্যে তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে এখনো প্রায় সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ই-কমার্স বিজনেসেই ইমেইল খুব প্রচলিত একটা চ্যানেল। ইমেইল মূলত ফরমাল হয়, এছাড়াও সাথে সাথে রেসপন্স ইমেইল থেকে আশা করা যায় না। তবুও অনেক কাস্টমারই সাবেকি পদ্ধতিতে ইমেইল করে প্রশ্ন করতে এবং উত্তর পেতে পছন্দ করেন। তাই বিজনেসের সাথে যুক্ত ইমেইলটি ঘনঘন চেক করুন। কাস্টমারের প্রশ্নের জবাব দিন, এবং জেনেরিক টেমপ্লেট না পাঠিয়ে কাস্টমারের প্রবলেম দেখে সে অনুযায়ী উত্তর দেবার চেষ্টা করুন।

সোশ্যাল মিডিয়া

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগই নেই। ২০২৪ সালে দেখা যায় ৫.১৭ বিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। সোশ্যাল মিডিয়া এখন শুধু পার্সোনাল ছবি শেয়ার, পোস্ট অথবা ভিডিও পোস্টের জন্যই ব্যবহৃত হয় না। বিজনেসও ই কমার্সের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া খুব জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। আপনার ব্র্যান্ডের একটি ভেরিফাইড পেজ খুলে কাস্টমার এবং ফ্যানদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। বিভিন্ন সার্ভে করে অথবা কুইজ ধরনের গেম খেলে তাদের চাহিদা বুঝতে চেষ্টা করুন, কাস্টমার এংগেজমেন্ট বাড়ান। অনেক বড় বড় ই কমার্স শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই বড় হয়েছে তাই কাস্টমারদের কাছাকাছি থাকতে সোশ্যাল মিডিয়া খুব ভালো একটা বুদ্ধি।

ব্লগ

ব্লক কথাটি এসেছে ওয়েব লগ থেকে। ব্লগে মূলত প্রোডাক্টের সাথে সাথে বিভিন্ন ইনফরমেটিভ পোস্ট, বিজনেস সম্পর্কে তথ্য এবং কাস্টমারের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব থাকে। আপনার বিজনেস এর একটি ব্লগ থাকলে, এবং তাতে ভালো মানের কনটেন্ট থাকলে আপনার বিজনেসের জন্য ভালোই হবে। আপনি কী কী প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন সেসব প্রোডাক্টের বর্ণনা, ব্যবহার, উপকারিতা ইত্যাদি সবই ব্লগে কনটেন্ট হিসেবে রাখা যেতে পারে। একই সাথে কাস্টমারদের সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর পোস্ট আকারে দেয়া যেতে পারে যাতে তা দেখে নতুন কাস্টমাররাও উপকৃত হন, এবং একই জিনিস বারবার জিজ্ঞেস করতে না হয়।

ব্যবসাতে কাস্টমার সার্ভিস কেন জরুরি এবং কীভাবে এটি মেইনটেইন করতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম। আশা করি আর্টিকেলটি হেল্পফুল ছিল। তাহলে নিজের ব্যবসাতে কাস্টমার সার্ভিস ভালো করার জন্য প্ল্যান শুরু করুন যত দ্রুত সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *