কপিরাইটিং সিক্রেটস | জায়গায় পড়ে জায়গায় কিনে

কপিরাইটিং সিক্রেটস | কেন্দ্রবিন্দু | ডেভিড অগিলভি | কপিরাইটার

আপনাদের কি মনে আছে ভুবন বাদ্যকারের সেই বিখ্যাত গানের কথা?

পায়ে তোড়া হাতের বালা থাকে যদি

সিটি গোল্ডের চেন, দিয়ে যাবেন

তাতে সমান সমান তোমরা বাদাম পাবেন।

বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম,

আমার কাছে নাইকো বুবু ভাজা বাদাম,

আমার কাছে পাবে শুধু কাঁচা.. বাদাম…

অথবা রাস্তা ঘাটে চলতে ফিরতে অবশ্যই শুনেছেন…

দাগ দিলেই মরে ঘষা দিলেই মরে।

জায়গায় খায় জায়গায় মরে,

কাইত হইয়া খায় চিত হইয়া মরে,

লাফাইয়া খায় দাফাইয়া মরে…

অথবা শুনেছেন পাগলা মলমের সেই বিখ্যাত কথাগুলো…

রানে কানে আঙ্গুলের চিপায় চাপায়

চুলকানি কিন্তু একটা মজার রোগ,

যখন চুলকানি শুরু হয় মনে হয়

৭০টাকা রোজের কামলা লইয়া চুলকাই…

আসলে এগুলো কি শুধুই গান, কবিতা বা ছড়া? না ! আসলে এগুলো হলো বিখ্যাত সেলস কপি। তারা হয়তো নিজেরাও জানেনা কি অসাধারণ কপি তারা লিখেছে, কিন্তু তাদের এই বিখ্যাত কপিগুলো নিজেদের এলাকার গণ্ডি পেড়িয়ে দুনিয়া জোড়া আজ সকলের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর যেই উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরি করা হয়েছিলো তা  অবশ্যই দেখেছে সার্থকতার মুখ। আর উদ্দেশ্যটা ছিলো তাদের পন্য টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে উপস্থাপন করা এবং বিক্রি করা। এতে তারা অবশ্যই সফল। শুধু সফল বললে ছোট করা হয় আসলে তারা ভয়ংকর রকমের সফল।

এখন প্রশ্ন হলো কপিরাইটিং আসলে কি?

নাম শুনেই মনে হতে পারে এটি বুঝি কপিরাইট আইন সম্পর্কিত কিছু কিংবা মনে হতে পারে কোনো কপি-পেস্ট করার কাজ বুঝি! কিন্তু কপিরাইটিং একদমই তেমন কিছু নয়।কপিরাইটিং হচ্ছে এমন লেখা যা কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্যে কিংবা কাউকে কোনো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য লেখা হয়। সোজা কথায় একজন কপিরাইটারের কাজ হচ্ছে একটা পণ্য কিনতে একজন ক্রেতাকে উদ্বুদ্ধ করা।

আমরা ফেসবুকের নিউজফিডে প্রায়ই বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। কিংবা শহুরে রাস্তায় দেখি বিলবোর্ডে ছাপানো নানা চটকদার কথায় মুখরিত বিজ্ঞাপন।

এসব বিজ্ঞাপনে পণ্যের সম্পর্কে সুন্দর সুন্দর কথাবার্তা লেখা থাকে। যেটা আমাদের ওই পণ্য সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা দেয় এবং ওই পণ্য কেনার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। এই যে সুন্দর ক্যাপশন- এটাই কোনো একজন কপিরাইটারের কাজ!

কপিরাইটিং কেন প্রয়োজন?

ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা অন্যান্য ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় আমরা অহরহই বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। কখনও কখনও ইমেইলেও নানা ধরনের বিজ্ঞাপন আসে। সব বিজ্ঞাপনই কোনো না কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়ে থাকে।

বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় সব ব্যবসাই মার্কেটিংয়ের উপর নির্ভরশীল। যে যত ভালোভাবে মার্কেটিং করতে পারবে, তার ব্যবসা তত বাড়বে। স্বভাবতই সকল উদ্যোক্তাই চাইবেন তার ব্যবসার পরিধি বাড়ুক।

সুতরাং ব্যবসা বাড়াতে চাইলে বিজ্ঞাপনকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এখানেই আসে একজন কপিরাইটারের ভূমিকা। একজন কপিরাইটার যত সুন্দরভাবে একটি পণ্যকে ক্রেতার কাছে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, পণ্য বিক্রির সম্ভাবনা তত বেশি। এখানেই একজন কপিরাইটারের সার্থকতা।

একজন কপিরাইটার কী কী কাজ করেন? একজন কপিরাইটারের কাজ বহুমুখী হতে পারে। উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ নিচে দেওয়া হলো-

  • বিজ্ঞাপন লেখার কাজ
  • স্লোগান ও ট্যাগলাইন লেখা
  • ল্যান্ডিং পেজ লেখা
  • ইমেইল ক্যাম্পেইনের জন্য ইমেইল লেখা
  • টিভি বা রেডিওর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লেখা
  • কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা
  • ক্যাটালগ লেখা
  • বিলবোর্ড লেখা
  • ব্রশিউর লেখা
  • ভিডিও বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লেখা ইত্যাদি।

কপিরাইটিং ও কন্টেন্ট রাইটিং এর পার্থক্য

কপিরাইটিং ও কন্টেন্ট রাইটিং দুটোর মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও কার্যত এগুলো এক নয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়-

কপিরাইটিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে টার্গেট অডিয়েন্স বা ক্রেতার কাছে কোনো পণ্য বিক্রি। কিন্তু কন্টেন্ট রাইটারের কাজ হচ্ছে কোনো তথ্য দেওয়া, কোনো কিছু শেখানো কিংবা বিনোদন দেওয়া।

কপিরাইটিং সাধারণত খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। কিন্তু কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘ ফরম্যাটে লেখা হয়।

কপিরাইটিং মূলত বিজ্ঞাপন, স্লোগান, ট্যাগলাইন কিংবা ল্যান্ডিং পেজ লেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। আর Content writing সাধারণত ফিচার, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ব্লগ, আর্টিকেল, ইমেইল নিউজলেটার, রিপোর্টের ক্ষেত্রে লেখা হয়।

কপিরাইটিংয়ের কার্যকরিতা স্বল্পমেয়াদে মাপা হয়। কিন্তু কন্টেন্ট রাইটিং এর কার্যকারিতা দীর্ঘমেয়াদে পরিমাপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কপিরাইটিং এ পাঠককে অল্প কথার মধ্যে পণ্যটির ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হয়। এটা কিছুদিন বা কিছু মাস পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। কিন্তু কন্টেন্ট রাইটিং এ চিত্রটি ভিন্ন। এখানে একজন কন্টেন্ট রাইটার পাঠককে লেখার মাধ্যমে কোনো কিছু শেখান, জানান কিংবা বিনোদন দেন। যা বছরের পর বছর ধরে ইফেক্টিভ হতে পারে। 

কপিরাইটিং কেমন হওয়া উচিৎ?

যেহেতু একই প্রোডাক্ট এর জন্য বিভিন্ন রকম ওয়েবসাইট থাকে এবং প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটে আলাদা আলাদা ডিসক্রিপশন এবং রিভিউ লেখা থাকে। তাই কপিরাইটিং করার সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যেন অন্যান্য ওয়েবসাইটের যে কপিরাইটিং কনটেন্ট গুলো রয়েছে সেগুলোর চেয়ে অবশ্যই ভালো মান এবং ভালো কোয়ালিটির লেখা হতে হবে।

যখন আপনার লেখা সেলস কপিটি অন্যান্য ওয়েবসাইটের লেখার চেয়ে কোয়ালিটি সম্পন্ন এবং আকর্ষণীয় হবে তখন অবশ্যই আপনার লেখাটিকে অডিয়্যান্স প্রায়োরিটি দেবে।

কপিরাইটারদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরির সুযোগ। একজন ভাল মানের কপিরাইটার কখনো বেকার থাকেনা। আপনি যদি একজন ভালো কপিরাইটার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অনলাইনে যেকোনো পণ্য অনায়াশেই বিক্রি করতে পারবেন। এতেকরে নিজে ব্যবসা করেও ভালো আয় করতে পারবেন।

কপিরাইটাররা এমন ব্যক্তি যারা কোম্পানির সাথে কাস্টমারদের সংযোগ স্থাপন করে এবং তাদের পণ্য কিনতে আগ্রহী করে। সকল ভালো ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসার সমৃদ্ধির জন্য এক বা একাধিক ইন-হাউস কপিরাইটার নিয়োগ করে থাকে। একজন কপিরাইটার কাস্টমারদের সাথে সর্বোত্তমভাবে সংযোগ স্থাপন ও তাদের সমস্যা বোঝার এবং তার সমাধান বের করার কৌশল তৈরি করে।

কপিরাইটার ওয়েবপেজ, ব্লগ, নিবন্ধ, বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ইমেল, পোস্টার, বিলবোর্ড, গাইড, কেস স্টাডি নিয়ে কাজ করে ও এসব জায়গায় কন্টেন্ট সরবরাহ করেন। তারা কাস্টোমারদের জানাতে, তাদের উপর প্রভাব ফেলতে এবং আগ্রহী করতে লেখার মাধ্যমকে উপায় হিসেবে ব্যবহার করে। ব্র্যান্ড ও কৌশলভেদে এসব কৌশল পরিবর্তন হতে পারে।

এখন বড় কথা হলো কিভাবে আমরা এই ইমোশনাল সেলস কপি লিখবো?

এই বিষয়ে জিম এডওয়ার্ডস তার লিখা বই “কপিরাইটিং সিক্রেটস” এ খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন। যারাই সেলস, মার্কেটিং বা ব্র্যান্ডিং-এ আগ্রহী তাদের জন্য এই বইটি পড়া অতিব জরুরী।

এই বইটি মূলত কপিরাইটিং নিয়ে। এই বইয়ের কপিরাইটিং সিক্রেটস ও টেকনিক্স নিয়ে যদি আলোচনা শুরু করি তবে এই লেখাটি বিশাল বড় হয়ে যাবে। শুধু এইটুকু বলতে চাই আপনি যদি একজন ভাল মানের কপিরাইটার হতে চান, শুধু কথা দিয়েই অডিয়েন্সের মনে দাগ কাটাতে চান তবে এই বইটি আপনার জন্য ফরয।

আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী ব্লগে এই বই থেকে আরও দারুন কিছু কৌশল নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। ততোদিন সবাই ভালো থাকুন। আমাদের আজকের এই আলোচনাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন এবং আরও অনেকের উপকারের স্বার্থে শেয়ার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *