অনলাইন/অফলাইন মিলিয়ে দেশে এখন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার সংখ্যা নেহায়েত কম না। তবে ব্যবসায়িক জগতে তাকালে খুব দুঃখজনক একটি বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। আর এটি হচ্ছে—যারা কাস্টমারকে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বার্তা দিতে পারছে এবং কাস্টমারের সাথে যাদের কমিউনিকেশন এবং অ্যাঙ্গেজমেন্ট সবচেয়ে বেশি ভালো, তাদের বেশিরভাগই কোয়ালিটি পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করছে না। আবার কোয়ালিটি সম্পূর্ণ পণ্য ও সেবা নিয়েও বহু কোম্পানি কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
এখান থেকে একটা বিষয় অন্তত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ভালো কোয়ালিটি কিংবা সেবাই সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডকে একা টেনে তুলতে পারে না। এটির জন্য কাস্টমারের সাথে কমিউনিকেশন শক্তিশালী থাকা এবং অ্যাঙ্গেজমেন্ট ভালো হওয়া জরুরী। দুঃখের বিষয় বহু ভালো কোম্পানি এই সেক্টরে দুর্বল। ফলে তারা ব্যবসায়িক জগতে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। কারণ তাদের অধিকাংশেরই ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং নিয়ে পর্যাপ্ত জানাশোনা নেই। আর এসবের জন্যই দরকার উপযুক্ত ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি।
ডোনাল্ড মিলারের “বিল্ডিং এ ব্র্যান্ড স্টোরি”, বইটি ব্র্যান্ডিং-এর একটি রত্ন বলা চলে। যার অনুবাদ করেছেন সবার প্রিয় ত্বাইরান আবির ভাই৷ তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন পেশাদার লেখক এবং অনুবাদক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
বইটিতে ডোনাল্ড মিলার কোনো জটিল তত্ত্ব ছাড়াই সহজ ও মজা করে আলোচনা করেছেন ব্র্যান্ডিং এর সকল ধাপ।প্রথমে তিনি ব্র্যান্ডিং আইডিয়ার ব্যাপারে ধারণা দিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন ঘটনা বা ক্যাম্পেইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। সব শেষে, আইডিয়ার প্রয়োগ কীভাবে করবেন, কোথায় কিভাবে ভুল হতে পারে, কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে ইত্যাদি, তুলে দিয়েছেন। যা পাঠক এবং ব্যবসার মালিকের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করবে।
এই বইয়ে মূলত বিজনেস প্রফেশনালদেরকে তাদের ব্যবসায়িক অবস্থান আরও ওপরে তোলার বিভিন্ন কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো৷
প্রথম অধ্যায়ে এসেছে, মার্কেটিং এর কৌশল; সেখানে দেখানো হয়েছে কি কারণে বহু ব্যবসায়িক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এবং কিভাবে স্টোরিই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখে। কারণ গল্পের বার্তাই ব্র্যান্ডিং এর মূল চাবিকাঠি, তাই বার্তা সুস্পষ্ট করা খুব জরুরী। একটা ভালো স্টোরি পারে বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে যেতে এবং ব্যবসাকে প্রসারিত করে তার সফলতা ছিনিয়ে আনতে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসেছে, নিজের স্টোরিব্র্যান্ড তৈরি; দ্বিধাদ্বন্দে না ভুগে সবার আগে ব্র্যান্ডস্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে। এমন ভাবে স্ক্রিপ্ট সাজাতে হবে যেন কাস্টমার হয় গল্পের হিরো এবং গল্পে অবশ্যই একটি ভিলেইনও রাখতে হবে। ঠিক যেভাবে স্ক্রিনরাইটাররা ভিলেইনকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে স্টোরি শক্তিশালী করে। এই একই ব্যাপার ঘটে থাকে ব্যবসায়িক জগতেও। তাই ইতিবাচক ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরি করতে হবে যেভাবে সম্ভব। ব্র্যান্ডিং এর বিভিন্ন প্লানিং এর মাধ্যমেই মূলত এগুলো করতে হবে। কীভাবে এগুলো করা সম্ভব, তা গল্পে গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
তৃতীয় অধ্যায়ে এসেছে, স্টোরিব্র্যান্ড এর ব্র্যান্ডস্ক্রিপ্টের বাস্তবায়ন। যার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন উপযুক্ত ওয়েবসাইট নির্মাণ। এই অধ্যায়ে উপযুক্ত ওয়েবসাইট তৈরি এবং তাতে কি কি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তার বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।
এছাড়াও স্টোরিব্র্যান্ড ব্যান্ডস্ক্রিপ্ট তৈরি করার পর নিজেদের মার্কেটিং কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ও ব্যবসা বৃদ্ধি করতে আরো যা যা কাজ করা যায়, তা ‘স্টোরিব্র্যান্ড মার্কেটিং রোডম্যাপ’ এ আলোচনা করা হয়েছে। এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অনলাইন কিংবা অফলাইন ব্র্যান্ডিং এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন ‘স্টোরি বলা’। বইটি আপনাকে শেখাবে মেসেজিং এবং টোন কিভাবে স্পষ্ট করতে হবে। যার ফলে আপনি আপনার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন এবং ব্যবসার সফলতার দিকে এগিয়ে যাবেন।
এছাড়াও বইটিতে ব্র্যান্ড বা ব্যবসার পিছনের এমন কিছু গল্প তুলে ধরা হয়েছে যা ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি জাগিয়ে তোলবে এবং সফলতার চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌচ্ছে দিবে, ইনশাআল্লাহ।