মার্ক টোয়েন বলেছেন, “একটি ভালো লাইব্রেরিতে কোনো বইয়ে থাকা সকল জ্ঞান ও উপাদান আপনি এমনভাবে অনুভব করবেন, যেন তা কোনো অলৌকিক উপায়ে আপনার শরীর ভেদ করে একদম মনের ভেতরে প্রবেশ করে।” আসলেই বইপ্রেমীরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বইয়ের রাজ্যে ঢুকে যেতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। আর এজন্য পাঠকরা হাজার হাজার মাইল দূরত্বও বিনা দ্বিধায় পার করে। আপনি যদি হন একজন বইপ্রেমী আর যদি এজন্য যেতে রাজি হন পৃথিবীর যেকোনো স্থানে, তবে আপনার জন্য আজকে জানাবো কয়েকটি স্থানের নাম। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসকল জায়গাগুলো বইপ্রেমীদের জন্য যেন অমূল্য সম্পদের খনি। চলুন ঘুরে আসি বইপ্রেমীদের তীর্থস্থানগুলো থেকে।
বইপ্রেমীদের তীর্থস্থান যে সব জায়গা
বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনা
যদি পুরোনো বইয়ের দোকানে সারাদিন ঘোরাঘুরি হয় আপনার প্রিয় কাজ, তবে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স আপনার বইপ্রেমী মনের খোরাক পূরণের জন্য লিস্টের শুরুর দিকে থাকবে। আর্জেন্টিনার রাজধানী এ শহরটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে রিও দে লা প্লাতার পশ্চিম তীরে অবস্থিত। বুয়েন্স আয়ার্সে বসবাসরত মানুষের তুলনায় বইয়ের দোকানের সংখ্যা পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। ২০১৬ সালের এক জরিপ অনুযায়ী ২০৩ বর্গকিলোমিটার এর এই নগরীতে বইয়ের দোকান আছে ৬৯০ টি। এর মধ্যে একটি পুরোনো সিনেমা থিয়েটারে গড়ে ওঠা বইয়ের দোকান “এল এতেনিও গ্রান্ড স্প্লেন্ডিড”, ২০১৫ সালে “দ্যা গার্ডিয়ান” কর্তৃক সবচেয়ে সুন্দর বইয়ের দোকানগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। তাই নানারকম বইয়ের খোঁজে ঘুরে আসতেই পারেন চমৎকার এই সুসজ্জিত রাজধানী নগরীটিতে।
প্যারিস, ফ্রান্স
সেন নদীর তীরে অবস্থিত ফ্রান্সের রাজধানী এই প্যারিস শহরটি বিশ্ববাসীর কাছে স্বপ্নের শহর। দারুণ বিখ্যাত সব জায়গা আর খাবারের এই আলোর শহরটিকে খুব সহজেই সাহিত্যের শহর বলা যায়। ফরাসি ও ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত সব কবি সাহিত্যিকদের জন্মস্থান এ নগরী ফরাসি লেখক মার্সেল প্রুস্ট, এমিল জোলা, আলেকজান্ডার দ্যুমা, জুল ভার্নের থেকে আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ে, গার্ট্রুন্ড স্টেইন এর মতো লেখকদের অনুপ্রেরণার উৎস। প্যারিসের থেকে বেশি সাহিত্যের শহর হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ শহরে আপনি খুঁজে পাবেন ‘শেক্সপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের ১৯৫১ সালের বিখ্যাত বইয়ের দোকানটি, যা নটরডেম থেকে সেন এর তীর জুড়ে অবস্থিত। এই বইয়ের দোকানে আড্ডা দিতেন ফরাসি ও ইংরেজি সাহিত্যের নাম করা সব লেখকেরা। আরো আছে ক্যাফে ডি ফ্লোর- ১৮৮০ সালে খোলা এই ক্যাফে যেখানে বিখ্যাত সব সাহিত্যিক চায়ের কাপের সাথে লিখেছেন বিখ্যাত সব উপন্যাস, কবিতা আর তৈরি করেছেন ইতিহাস। আরো ঘুরে আসতে পারেন ২৭ রু ডি ফ্লুরেসের সেলুন থেকে – যেটি বিখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক গার্ট্রুড স্টাইনের। এছাড়াও গ্যালিগনানি লাইব্রেরি, ভায়োলেট অ্যান্ড কোং, লেস এডিটার্স, ক্যাফে ডে লা পে এর মতো বিখ্যাত সব লাইব্রেরি আপনার বইপ্রেমকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলবে।
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডন এর কথা কে না জানে! বিখ্যাত এই রাজধানী নগরীটি কিন্তু বইপোকাদের স্বর্গরাজ্যও বটে। আপনি যে ধরনের বইই পছন্দ করেন না কেন- উপন্যাস, কমিক্স বা পুরনো ও নতুন সব বই- লন্ডনে আপনি সহসাই খুঁজে পাবেন এসব মুদ্রিত শব্দকে উৎসর্গ করে কোনো না কোনো বইয়ের দোকান। এখানের বইয়ের দোকানগুলো বেশ উন্নত আর সুসজ্জিত। আরও মজার ব্যাপার আপনি আপনার পছন্দের পারসোনালাইজড বই নিতে পারবেন কোন দোকান থেকে, কোন কোন দোকান কেনাকাটার সাথে কফিও অফার করবে আপনাকে। এখানে পাবেন ১০০ বছরের পুরনো বইয়ের দোকান আর্থার প্রোবস্টেইন কিংবা শার্লক হোমসের “হাউন্ড অফ দ্যা বাস্কারভিলস” এর উল্লেখিত বুকশপ স্টানফোর্ড যা ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও আছে ভাসমান বইয়ের দোকান “ওয়ার্ড অন দ্যা ওয়াটার”।
লন্ডন বিশ্বের সকল দেশের বইপ্রেমীদের আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে “শার্লক হোমস” ও “হ্যারি পটার” সিরিজের মাধ্যমে। তাই আপনি যদি হয়ে থাকেন শার্লকের ভক্ত, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন “২২১ বি বেকার স্ট্রিট” খ্যাত শার্লক হোমস মিউজিয়ামে। আর হ্যারি পটারের জাদুর দুনিয়ায় প্রবেশ করতে চলে যেতে পারেন কিংস ক্রস স্টেশনে, যেখানে আছে প্ল্যাটফর্ম ৯ ৩/৪। লাইব্রেরিতে পড়তে পারেন বই, যেখানে ইলেকট্রিক ডিভাইস জমা দিয়ে পড়তে হবে, যেন এ সকল যান্ত্রিকতা বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়। তাছাড়া লন্ডনের অলিতে গলিতে পাবেন নানারকম বইয়ের দোকান, বিখ্যাত সব সাহিত্যিকদের স্মৃতিচিহ্ন বা বিখ্যাত সব বইয়ের স্থান। তাই বইপ্রেমী হলে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন লন্ডনে।
এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
২০০৪ সালে এডিনবার্গকে বিশ্বের প্রথম ইউনেস্কো সাহিত্যের শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে এডিনবার্গ বইপ্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য। স্কটল্যান্ডের রাজধানী ও যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এই এডিনবার্গ প্রতিবছর “ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার” বা “আন্তর্জাতিক বইমেলা”র আয়োজন করে থাকে। এছাড়া সারাবছর ছোট, বড় নানারকম আন্তর্জাতিক সাহিত্য আয়োজন হয় এ শহরে। এখানে আপনি সহজেই ঘুরতে যেতে পারেন “রাইটার্স মিউজিয়াম” এ। যেটি মূলত স্যার ওয়াল্টার স্কট, রবার্ট লুই স্টিভেনসন এবং রবার্ট বার্ন্সকে কেন্দ্র করে তৈরি। এই মিউজিয়ামে নানারকম সাহিত্যের রসদ মজুদ আছে৷ আরো আছে স্কটল্যান্ডের জাতীয় গ্রন্থাগার, যেটি আপনাকে ইতিহাসের বিভিন্ন পাতায় নিয়ে যাবে, এখানে আরও আছে ওয়ার্কশপ, রিসার্চের জায়গা, কফি খাওয়ার জন্য কফিশপও।
এছাড়াও আছে আকর্ষণীয় “স্কটিশ স্টোরি টেলিং সেন্টার” যেখানে গান ও আইরিশ ঐতিহ্যবাহী নাচ, বিভিন্ন খেলার মাধ্যমে জানতে পারবেন তাদের ইতিহাস। এ ছাড়াও এডিনবার্গে ঘুরতে ঘুরতে দেখা পেতে পারেন জে. টম বেরি, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, স্যার ওয়াল্টার স্কট কিংবা জে. কে রাউলিং এর মতো বাঘা বাঘা সব লেখকদের আড্ডাখানা। এডিনবার্গের জাদুঘর, বইয়ের দোকানগুলো এমন কি রাস্তাঘাটে হাঁটতে হাঁটতেও হয়তো আপনি বিখ্যাত সব লেখকদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করতে পারেন যা এডিনবার্গকে করে তোলে অনন্য। তাই আপনার পরবর্তী সাহিত্য যাত্রার বাকেট লিস্টে রাখতেই পারেন এডিনবার্গকে।
কলকাতা, ইন্ডিয়া
কলকাতাকে ভারতের “সাহিত্য ও সংস্কৃতির রাজধানী” বলা হয়। পুরোনো দিনের হাজার হাজার স্মৃতি বিজড়িত এই শহরটি কিন্তু বইপ্রেমীদের জন্য একটি মন জয় করা স্থান। শুধুমাত্র কলেজ স্ট্রীট এলাকাতেই রয়েছে ২৫০০ এরও বেশি ছোট বড় বইয়ের দোকান, যেখানে পাওয়া যায় অনেক দুর্লভ বই, প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়া বইয়ের প্রথম এডিশন থেকে একদম নতুন প্রকাশিত হওয়া বইও। আছে বিখ্যাত সব প্রকাশনা সংস্থা। এছাড়া কলেজ স্ট্রীটেই আছে বিখ্যাত সেই “কফি হাউজ”, যেখানে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আড্ডা চলছে সাহিত্যপ্রেমীদের। এখানে এসে পদধূলি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন এর মতো বাংলা সাহিত্যের দিকপালরা। পার্ক স্ট্রীটে গেলেই আপনাকে স্বাগত জানাবে ১৯২০ সালে নির্মিত “দ্যা অক্সফোর্ড” নামের বিখ্যাত বইয়ের দোকান। যে দোকানে ঢুকলে আপনি হারিয়ে যাবেন পুরোনো দিনের আমেজে সব বইয়ের ভীড়ে। দারুণ সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো হাজারো বইয়ের ভীড় আপনার বইপ্রেমী মনকে করবে আনন্দিত।
এছাড়াও কলকাতায় আছে “শেক্সপিয়ার সোসাইটি অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া” যা ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখানে শুধু শেক্সপিয়ার নিয়েই নয় বরং খ্যাতিমান সব আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় লেখকদের নিয়ে সেমিনার, কর্মশালা, নাটক ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার মতো অনুষ্ঠান পাবেন। আছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তিনিকেতন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। যা বাংলা সাহিত্যের আনাচে কানাচে নিয়ে যাবে আপনাকে। এছাড়াও কলকাতার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে যাবেন ছোট বড় নানারকম ক্যাফে যার সাথে আছে বইয়ের দোকান, বই পড়তে পড়তে কফি খাওয়ার জন্য পাবেন সুসজ্জিত জায়গা। আর যদি যেতে যেতে পৌঁছে যান গোলপার্ক অথবা মির্জা গালিব স্ট্রীট, পেয়ে যাবেন ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় পুরোনো বইয়ের দোকানের বাজার। যেখানে দেখা মিলবে বিখ্যাত সব বই অথবা দুর্লভ সব বইয়ের সেকেন্ড হ্যান্ড কপি। আর যদি ব্রিটিশ আমলের বইয়ের পাতার স্বাদ নিতে চান, চলে যেতে পারেন চিৎপুর, যেটি ছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ছাপাখানার কেন্দ্রস্থল। আজও সেখানে খুঁজে পাবেন গুটেনবার্গের ১৪৫০ সালের প্রিন্টিং পদ্ধতি, এমন কি কিছু রুপির বিনিময়ে ছাপিয়ে নিতে পারেন এক পাতা নিজের লেখাও। তাই আপনি যদি বইপ্রেমী হোন, তবে একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত কলকাতায় যেখানে ব্রিটিশ আমলের সব স্মৃতির মাঝে লুকিয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের সম্ভার।
হো-অন-ওয়ে, ওয়েলস
বইয়ের শহরের ধারণা একদম প্রথম হয়তো শুরু হয়েছে হো-অন-ওয়ে থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এই বইয়ের শহরকে ১৯৬১ সালে রিচার্ড বুথ নামকরণ করেন এবং বইয়ের শহরে পরিণত করেন। লন্ডন থেকে মাত্র তিন ঘন্টার দূরত্বে ছবির মতো সাজানো এই শহরটি যেন বইয়ের স্বর্গ। এ শহরে রয়েছে নানারকম আর্ট আর ক্র্যাফটের দোকানের পাশাপাশি পুরোনো বইয়ের দোকান, যা এই শহরটিকে বইয়ের শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রতিবছর মে ও জুন মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হয় “হে সাহিত্য ও শিল্পকলা উৎসব” যা আকৃষ্ট করে প্রচুর বইপ্রেমী পর্যটকদের। কিছু কিছু বইয়ের দোকান নির্দিষ্ট কিছু ধারার বই বিক্রি করে- যেমন রহস্য ও ভৌতিক, অথবা শিশুতোষ বই। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার শহরটিতে যেন মেলা শুরু হয়, ভীড় হয় নানা ধরনের মানুষের। এখানে তারা নানারকম তথ্য আদান প্রদান করে। তাই আপনি যে ধরনের বইপ্রেমীই হন না কেন, হে-অন-ওয়েতে অবশ্যই আপনার মনের খোরাক মেটানোর জন্য কিছু না কিছু পাবেনই।
রোম, ইতালি
ইতিহাস ঐতিহ্যের তীর্থস্থান ইতালির রাজধানী রোম, বইপ্রেমীদের জন্যও অপার বিস্ময় নিয়ে বসে আছে৷ রোমান ঐতিহ্য খুঁজতে খুঁজতে আপনার বইপ্রেমী মন পেয়ে যাবে তার মনের মতো সব বইয়ের সম্ভার। ফ্লোরেন্সের পাশাপাশি রেনেসাঁ যুগে প্রাচীন রোম বিশ্বব্যাপী শিক্ষার একটি কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রাচীন রোমের ঝুলিতে আছে নামকরা ও উচ্চমানের সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, শিক্ষাকেন্দ্র ও লাইব্রেরী। কী নেই রোমে? ঐতিহাসিক সব স্থাপনা থেকে সুন্দর সব লাইব্রেরি- সবই পাবেন ৭৫৩ খ্রীষ্টপূর্বে স্থাপিত এই প্রাচীন শহরে। রোমের ট্রেভি ফাউন্টেনের রাস্তায় স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে চলে যেতে পারেন “পালম্বি অ্যান্টিক বুক স্টোর” এ- যেখানে পাবেন পৃথিবীর সব দুর্লভ অ্যান্টিক বইসমূহ। হয়তো এমন সব বই পেয়ে যেতে পারেন যা কেবলমাত্র আপনারই সংগ্রহে থাকবে। আপনার যদি ঝোঁক থাকে থিয়েটার ও নাট্যশিল্পের দিকে, টারমিনি স্টেশন থেকে একটু হেঁটেই পৌছে যেতে পারেন “লা আল্ট্রা সিনা বুক স্টোর” এ। এখানে এসকল বিষয়ের উপর পাবেন অজস্র বই।
বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যের জন্য পাবেন “বাইবেল বুকস্টোর” কে- যেটি সান্তা মারিয়াতে অবস্থিত। রোমে এসেছেন আর কোলোসিয়াম দেখবেন না তাই কি হয়? এই কলোসিয়াম দেখতে দেখতে অল্প একটু হেঁটে মন্টি এর দিকে গেলেই পেয়ে যাবেন ভ্রমণ বিষয়ক বইয়ের দোকান “দ্যা ট্রাভেলার্স বুক স্টোর”। এখানে ভ্রমণের বিভিন্ন গাইড থেকে শুরু করে নানা দেশের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এমনকি রান্নার উপরও পাবেন নানারকম বই। বিখ্যাত “সার্সো ম্যাসিমো” বা “সার্কাস ম্যাক্সিমাস” এ ঘুরতে গেলে ঘুরে আসতে পারেন “দ্যা ওমেন্স বুকস্টোর অফ রোম” যেখানে নারীবাদ আন্দোলনের আদ্যোপান্ত খুঁজে পাওয়া যায়৷ এছাড়াও বিবলিওটেকা ক্যাসেনেটস (ঐতিহাসিক লাইব্রেরি), ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ আর্কিওলজি, ভ্যাটিকান লাইব্রেরি, অ্যাঞ্জেলিকা এবং ভ্যালিসেলিয়ানা লাইব্রেরিগুলোতে গাইডেড ট্যুরও দিতে পারবেন। এখানে দেখতে পাবেন বিখ্যাত শেলী, ডিকেন্স এবং বাইরনের বিখ্যাত পানশালা “ক্যাফে গ্রেকো”। দেখতে পাবেন কিটস-শেলী এর বাড়ি যেটিকে বর্তমানে একটি জাদুঘর বানানো হয়েছে। দেল করসো তে খুঁজে পাবেন বিখ্যাত “ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে” এর বাড়ি। পুরো রোমেই এমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাহিত্যের নানা রসদ, যা আপনাকে প্রাচীন সাহিত্য থেকে আধুনিক সাহিত্যের চড়াই উৎরাই দেখাবে। তাই আপনি সাহিত্যপ্রেমী হলে, আপনার পরবর্তী ভ্রমণ তালিকায় রোম জায়গা করে নিতেই পারে।
শুধু বইপ্রেমী হিসেবেই নয়, আপনি যদি ভ্রমণ করতেও ভালোবেসে থাকেন তাহলে এই জায়গাগুলোতে গেলে নানা অজানার দেখা মিলবে। এক কথায়, বইপ্রেমীদের তীর্থস্থানগুলো একইসাথে জ্ঞান ও ভ্রমণের খোরাক মিটাবে।
ছবিঃ সংগৃহীত