আপনি একজন ফ্রেশার হিসেবে জব অ্যাপ্লাই করতে চাচ্ছেন কিন্তু দেখছেন সব জায়গাতেই অভিজ্ঞতা চাচ্ছে- এমনটি কি আপনার সাথে কখনো হয়েছে? যদি হয়ে থাকে, তবে জেনে রাখুন এমনটি শুধু আপনার সাথেই নয়, আরও অনেকেই এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে- ‘You need experience to get experience’। অর্থাৎ চাকরি পেতে হলে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু যেখানে আপনি চাকরিই খুঁজছেন সেখানে আগে থেকে অভিজ্ঞতা কীভাবে থাকবে? এই প্রশ্নেরই সহজ উত্তর হচ্ছে ইন্টার্নশীপ। আজকের লেখায় আমরা জানবো ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য ইন্টার্নশীপ কীভাবে সাহায্য করে এবং এর প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে।
ইন্টার্নশীপ কী?
কলেজ শেষ করে আমরা যখন ইউনিভার্সিটিতে উঠি, তখন ধীরে ধীরে ইন্টার্নশীপ শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বা বিনা পারশ্রমিকে কাজ শেখা, দক্ষতা বৃদ্ধি বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ করাকেই ইন্টার্নশীপ বলে। যারা করে তাদেরকে বলা হয় ইন্টার্ন বা শিক্ষানবীশ।
সাধারণত যে যেই বিষয়ে লেখাপড়া করে বা যে বিষয়ে দক্ষ হয়, সে রিলেটেড কাজের উপরেই ইন্টার্নশীপ করা হয়। যেমন- সায়েন্স, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, কম্পিউটার ইত্যাদি। বর্তমানে এই ক্ষেত্রগুলোর পরিসর আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষাজীবনেই মূলত ইন্টার্নশীপের শুরু হয়। ইউনিভার্সিটি জীবনের শেষ সেমিস্টারেই সাধারণত ইন্টার্নশীপের সুযোগ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানই যে কোনো সেমিস্টার দেখেই কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি জীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতাও পাচ্ছে, বাড়তি আয়েরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এক কথায় ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য ইন্টার্নশীপ অন্যদের থেকে নিজেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখে।
ইন্টার্নশীপ কত ধরনের হয়?
আগেই বলেছি, ইন্টার্নশীপ পারিশ্রমিকের বিনিময়েও হতে পারে, আবার বিনা পারিশ্রমিকেও হতে পারে। এর মানে হচ্ছে এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়। ১) Paid Internship ২) Unpaid Internship। এর বাইরেও চাইলে নিজেরই অর্থ প্রদান করে ইন্টার্নশীপ করার সুযোগ থাকে। এই পদ্ধতিতে মূলত সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, যা পরে সেই সেক্টরে কাজে লাগানো যায়। ইন্টার্নশীপের মেয়াদ সাধারণত ১ মাস থেকে ১ বছরের হয়ে থাকে। তাছাড়া কাজের সময়ের উপর ভিত্তি করে ইন্টার্নশীপকে পার্ট টাইম ও ফুল টাইম ইন্টার্নশীপ এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য ইন্টার্নশীপ
ইন্টার্নশীপ কীভাবে ক্যারিয়ারে সফলতা এনে দেয় তার উত্তর এক কথায় দেয়া একটু কঠিন। কারণ এর গুরুত্ব একেকজনের কাছে একেকরকম। শিক্ষার্থীদের কাছে, ইন্টার্নশীপ মানে ক্লাসরুম ও টেক্সটবুকের বাইরে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার উপায়। আবার অনেকে হয়ত শিক্ষা জীবনেই কর্ম জীবনে পরিচিত হওয়ার আগে ক্লাস প্রজেক্ট, কেইস স্টাডিজ, ক্লিনিক্যাল অবজারভেশন নিয়েই কাজ করতে বেশি ভালোবাসে।
নিয়োগদাতাদের মতে, ইন্টার্নশীপ বেশ পাওয়ারফুল রিক্রুটমেন্ট অপরচুনিটি ক্রিয়েট করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানও ফ্রেশ ট্যালেন্ট খুঁজে পায় এবং নতুন জেনারেশনের মধ্যে হার্ডওয়ার্কিং ইমপ্লয়ি খুঁজে পায়। ইন্টার্নদের দিয়ে কাজ করানোর ঝুঁকিও বেশ কম থাকে, কারণ তারা মাত্র কয়েক মাসের জন্য আসে। ইমপ্লয়িরা যদি তাদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে তাদের জন্য রিক্রুটমেন্ট, হায়ারিং বা অনবোর্ডিং হওয়ার সুযোগ থাকে।
চলুন তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক ইন্টার্নশীপের সুবিধাগুলো সম্পর্কে-
স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণ কর্মজীবনে প্রবেশের আগে কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করা যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্যই আনন্দের। তাহলে এবার জানা দরকার সত্যি সত্যি কী উপকার হয় শিক্ষার্থীদের এতে জয়েন করলে, তাই না? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক-
১) নতুন দুনিয়া এক্সপ্লোর হয়
দক্ষতার সাথে মানানসই হয় এবং আপনার কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত করে এমন একটি ইন্টার্নশীপই সাধারণত শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশীপের প্রথম ধাপ। এই সময়ে স্কিল ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি, আপনি অনেক কানেকশন তৈরি করতে পারবেন এবং অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন – যা আপনাকে ক্যারিয়ারে অনেক দূর নিয়ে যাবে। ইন্টার্নশীপের মাধ্যমে অনেক নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হবে এবং বিভিন্ন তেকনিক সম্পর্কে জানতে পারবেন যা অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। এক্সপ্লোরিং ও নিউ এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া ইন্টার্নশীপের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ বড় একটি সুযোগ। তাই, নতুন নতুন স্কিল শিখতে কখনোই পিছপা হওয়া যাবে না।
২) সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নিতে সাহায্য করে
ইন্টার্নশীপ স্টুডেন্টদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে এটিও একটি। সেই সাথে কাজ করতে করতে আপনিও বুঝতে পারবেন আপনার জন্য সঠিক কাজ কোনটি। আপনি যে অফিসে কাজ করছেন সেখানকার পরিবেশ আপনার জন্য কতটুকু হেল্পফুল, আপনার চাওয়ার মতো কোম্পানি কালচার পাচ্ছেন কিনা- এর সবই এক্সপ্লোর করা যাবে ইন্টার্নশীপের সুযোগের মাধ্যমে। সহজ ভাষায়, আপনি বুঝতে পারবেন আপনি যেখানে কাজ করছেন সেটিকেই আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চান কিনা।
৩) ক্যারিয়ার পথ এক্সপ্লোর করুন
ইন্টার্নশীপকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার আরও একটি কারণ হচ্ছে আপনার মাঝে যে সম্ভাবনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে আকাঙ্ক্ষা আছে, তা বুঝতে সাহায্য করে। ইন্ড্রাস্ট্রি এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার সাথে সাথে আপনি আরও বুঝতে পারবেন জবটি আপনার সাথে স্যুট করছে কিনা। আপনার জীবনের লক্ষ্য বুঝতে সাহায্য করবে। তাই, শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশীপকে বেস্ট অপরচুনিটিস হিসেবেই ধরা হয়।
৪) কর্মজগত সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে
তরুণরা যখন কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই কর্মজগতে ঢুকে পরে তখন সেখানকার পরিবেশ কেমন হতে পারে বা কীভাবে মানিয়ে নিতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা থাকে না। তাই প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে সবারই কষ্ট হয়। যদি আগে ইন্টার্নশীপ করা থাকে, তাহলে এই সমস্যাটি হয় না। যে কর্মক্ষেত্রে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে চান সেখানকার পরিবেশ ও কাজ সম্পর্কে আগে থেকেই আপনার ধারণা তৈরি হওয়া থাকবে। নতুন প্রতিষ্ঠানে গেলেও আপনার কাছ থেকে কী চাওয়া হচ্ছে সেটাও সহজে বোঝা যায়।
৫) চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে
ইন্টার্নশীপ মানে যেহেতু অল্প সময়ের জন্য কর্মক্ষেত্রে কাজ করা, তাই কেউ যদি এই অল্প সময়ে ভালো কাজ দেখাতে পারে তাহলে তার সুযোগ থাকে ফুল টাইমার হিসেবে জয়েন করার। এটা অবশ্য নির্ভর করে আপনি কাজের প্রতি কতটুকু আগ্রহ দেখাচ্ছেন তার উপর। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে এবং কাজ ভালো করে থাকেন, তাহলে ইন্টার্নশীপ শেষে অন্য যে কোনো সময় অ্যাপ্লাই করলেও আপনি অগ্রাধিকার পেতে পারেন। এর মূল কারণ হচ্ছে তাদের কাজের ধরন সম্পর্কে আপনি জানেন। আর এ জন্য ইন্টার্নশীপের সুযোগ থাকলে সেটা মিস করা উচিত নয়।
৬) নতুন নতুন স্কিল শেখা হয়
আপনার যিনি মেন্টর আছেন তিনি আপনাকে হয়ত বেশ কয়েকবার বলেও ফেলেছেন কেন ইন্টার্নশীপ করা জরুরি। এর ফল আপনি বুঝতে পারবেন সত্যকার কর্মক্ষেত্রে যেয়ে। যখন আপনি সরাসরি শেখা শুরু করবেন তখন চেষ্টা করুন সব স্কিল ভালোভাবে বুঝে নেয়ার। ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য স্কিল শেখা খুব জরুরি। যে কাজটি আজ আপনার কাছে কঠিন মনে হচ্ছে, এক সময় দেখবেন বার বার করতে করতে সেটিও সহজ হয়ে গিয়েছে। ইন্টার্নশীপের আগে যেহেতু তেমন কোনো স্কিল নিয়ে কাজ করা হয় না, তাই এ সময় যে সুযোগগুলোই পাওয়া হয় সেগুলো লুফে নেয়া জরুরি।
৭) সিভি আপডেটেড থাকে
ইন্টার্নশীপ এর কারণে তৈরি হওয়া নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সিভিকে করে তোলে আরও সমৃদ্ধ। কারণ সিভিতে একটি অংশই থাকে ‘এক্সপেরিয়েন্স’ নামে। এখানে আপনি কী কী কাজ শিখেছেন, কী দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকে। যা আপনাকে ক্যারিয়ারে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
ইন্টার্নশীপ এর সুযোগ কীভাবে পাবো?
একটি কথা মনে রাখবেন, কোনো কিছুই আপনি অটোমেটিক পেয়ে যাবেন না। এ জন্য আপনাকে কিছু পরিশ্রম তো অবশ্যই করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে এবং বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। এছাড়া ইউনিভার্সিটির পরিচিত সিনিয়র যারা রয়েছে তাদেরকেও আপনার ইন্টার্নশীপের কথা জানিয়ে রাখতে পারেন। তাদের কোম্পানিতে সুযোগ থাকলে তারা যেন জানান। এখন তো বিভিন্ন ভার্সিটিতে কর্পোরেট ফেয়ার হয়, সেখানেও নিজের সিভি জমা দিয়ে রাখতে পারেন। সেই সাথে সশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও বিভিন্ন গ্রুপে ইন্টার্নশীপের নিয়োগ দেয়া হয়। মোট কথা, একটু নজর রাখতে হবে ভালো করে।
ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য ইন্টার্নশীপ কীভাবে সাহায্য করে সে সম্পর্কে তো জানা হলো। আপনি যদি বর্তমানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন এবং কোথাও জয়েন করে না থাকেন, তাহলে সুযোগ খুঁজে বের করুন কীভাবে ইন্টার্নশীপ করা যায়। কারণ ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য ইন্টার্নশীপ ই পারে আপনাকে অন্যদের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখতে।