চাকরির প্রথম দিনে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য কী কী করবেন?

নতুন চাকরি পেয়েছেন? অভিনন্দন! সবচেয়ে কঠিন অংশটুকু পার হয়ে এসেছেন আপনি! এবার পালা প্রথম দিন চাকরিতে জয়েন করার। কি নার্ভাস লাগছে? খুব স্বাভাবিক! নতুন চাকরির প্রথম দিন একইসাথে যেমন এক্সাইটিং হয়, তেমনই নার্ভাস লাগতে পারে। নতুন ও পুরাতন ওয়ার্কপ্লেস দুটো কখনোই এক হবে না। তাই অফিসের দরজা দিয়ে প্রথম যাওয়া হোক বা অনলাইন চ্যাটে প্রথম যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা- সবখানেই অন্য রকম একটা থ্রিল কাজ করবে। তবে ভয় পাওয়া যাবে না। জীবনের অন্যতম বড় এই দিনে, সবচেয়ে আগে যে কাজটি আপনাকে করতে হবে সেটি হচ্ছে- আপনার এক্সপেকটেশন কিছুটা কন্ট্রোলে রাখতে হবে এবং নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। এরপর কাজে যুক্ত হয়ে ফোকাস করতে হবে নিজের দিকে এবং তৈরি করতে হবে বেস্ট ইমপ্রেশন। মনে রাখবেন, চাকরির প্রথম দিনে শেখার সুযোগ অনেক বেশি থাকে।

আপনি কোন পদে যোগ দিচ্ছেন সেটা জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে প্রথম দিনে কীভাবে কাজ করছেন সেটা। প্রথম প্রথম কিছু করার চেষ্টা করলে জটিল মনে হতে পারে। এজন্য আপনাকে আমি কিছু টিপস দিচ্ছি যেগুলো কাজে লাগালে নতুন কর্মক্ষেত্রেও আপনি থাকবেন কনফিডেন্ট ও কমফোর্টেবল।

চাকরির প্রথম দিনে করণীয়

ভালো পারফরম্যান্স কন্টিনিউ করার জন্য চাকরির প্রথম দিনে কী কী করবেন সেটাই চলুন জেনে নেয়া যাক।

১) শেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন

চাকরির প্রথম দিনে করণীয়

প্রথম দিনেই প্রতিষ্ঠান হয়ত আপনাকে অনেক কিছু শেখার বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইবে না। কারণ তারাও জানে এতে কখনোই ভালো রেজাল্ট আসা সম্ভব নয়। যদিও প্রথম দিনে আপনাকে অনেক কিছু করতে হবে না, তারপরও আপনি নিজেকে একটা স্পঞ্জের মতো করে প্রস্তুত করবেন এবং যতটুকু সম্ভব জ্ঞান আহরণ করবেন। প্রথম দিন কর্মক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি জানতে পারেন-

  • কোম্পানির মিশন, ভ্যালু ও পলিসি
  • আপনার নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন করে জানা
  • বিভিন্ন টুলস, লগইন করা ও পাসওয়ার্ড সম্পর্কে জানা
  • টিম মেম্বারদের নাম ও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানা

আপনি যদি প্রথম দিন বেশ কিছু তথ্য নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত না করেন, তাহলে সপ্তাহ শেষে যেয়ে ঝামেলা হতে পারে। তার চেয়ে নতুন কনসেপ্ট অল্প অল্প করে গ্রহণ করতে শেখাটা জরুরি।

২) প্রশ্নের তালিকা করুন

প্রথম দিন কাজে যোগ দেয়ার আগে কয়েকটি প্রশ্নের তালিকা করে নিয়ে গেলে দিনটি বেশ ভালোই কাটবে। অফার লেটার পাওয়ার পর থেকে আপনার মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক করবে। এই প্রশ্নগুলোই একটা কাগজে লিখে রাখুন। অফিসে যাওয়ার আগে চট করে চোখ বুলিয়ে নিন। প্রথম দিন বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটতে পারে। তাই প্রশ্ন করা থাকলে কখন কী জিজ্ঞেস করবেন বোঝা যায়।

এ ধরনের কিছু প্রশ্নের মধ্যে আছে-

  • আমি কাকে রিপোর্ট করব? এখানে কি এমন কোনো অর্গানাইজেশনাল চার্ট আছে যেটা আমাকে ফলো করতে হবে?
  • আমার পারফরম্যান্স কীভাবে রিভিউ করা হবে? কতবার করা হবে?
  • দায়িত্বে থাকাকালীন আমি কী কী সিদ্ধান্ত নিতে পারব?
  • বর্তমানে টিমের ডায়নামিকগুলো কী কী? কোন টিমের সাথে আমাকে বেশি কাজ করতে হবে?

স্বাভাবিকভাবে সব প্রশ্ন আপনি একদিনে করতে পারবেন না। অসুবিধা নেই। প্রশ্নগুলো লিখে রাখুন। সুযোগ পেলে ম্যানেজার বা মেন্টরকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। তাছাড়া নতুন প্রশ্ন মনে এলেও লিখে রাখতে পারেন।

৩) পর্যাপ্ত ঘুমান

ঘুম

আপনার যদি অফিসের প্রথম দিনে কাজে যোগ দেয়ার আগের রাতে ঘুম না হয়, তাহলে কাজে ফোকাস করতে, তথ্য মনে রাখতে এবং নিজেকে প্রমাণ করতে বেশ কষ্ট হয়ে যাবে। রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে। এতে সবকিছু মিলিয়ে আপনারই প্রোডাক্টিভিটি কমে যাবে। চাকরির প্রথম দিনে কাজে যোগ দেয়ার আগের রাতে প্রোপারলি ঘুমানোর জন্য ঘুমের শিডিউল ঠিক করতে হবে এক সপ্তাহ আগে থেকে।

৪) কোম্পানি টুলস স্টাডি করুন

আপনি যখন ওয়ার্কপ্লেসের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আসবেন, তখন টিম মেম্বাররাও আপনার প্রশংসা করবে। প্রত্যেক কোম্পানিই অপারেট করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু টুলস ও প্রোগ্রাম ব্যবহার করে। আপনার উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব সেই টুলসগুল সম্পর্কে পরিচিত হওয়া। এদের মধ্যে কচিহু টুলস আছে যেগুলোর জন্য পেইড সাবস্ক্রিপশন লাগে, তবে কিছু কিছু আছে যেগুলোর ফ্রি ট্রায়াল দেয়া যায়। এমন কিছু টুলস হচ্ছেঃ

  • কমিউনিকেশনঃ জিমেইল, মাইক্রোসফট আইটেমস, জুম
  • প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টঃ আসানা (Asana)
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ গুগল অ্যানালিটিকস, SEMrush, Ahrefs
  • টাইম ট্র্যাকিংঃ TimeDoctor, Everhour, TaskBill.io
  • কাস্টমার রিলেশনশীপ ম্যানেজমেন্টঃ Salesforce, MuleSoft, Zoho CRM
  • ক্লাউড ব্যাকআপঃ DropBox, Jira Cloud, BetterCloud
  • শিডিউলিংঃ HourStack, Google Calendar
  • ডাটা অ্যানালাইসিস ও ডকুমেন্টেশনঃ Microsoft Excel, Google Sheets, Databox

টিম মেম্বারদের টেকনোলজি সম্পর্কে আইডিয়া থাকা জরুরি। আপনি যত কোম্পানির বিভিন্ন টুলস সম্পর্কে জানবেন, তত কাজ শিখতে কম সময় লাগবে।

৫) ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভালো রাখার চেষ্টা করুন

চাকরির প্রথম দিন শুরু করার আগে ওয়ার্কপ্লেসে নিজেকে কীভাবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন, তার জন্য কিছু বক্তব্য তৈরি করে রাখুন। ইন্টারভিউ দেয়ার সময় চাকরিদাতার সাথে হয়ত আপনার সম্পর্ক ভালোই তৈরি হয়েছে। তবে এর সাথে সাথে টিমের সামনেও নিজেকে মেলে ধরার জন্য ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভালো রাখা জরুরি।

নিজের সম্পর্কে বলার সময় আপনি কে, কী কাজ করবেন এবং আপনার লক্ষ্য কী এসব বিষয়ে আপনাকে কথা বলতে হবে। যেহেতু এটা ইন্ট্রোডাকশন, এতে যারা শুনছে তাদেরকেও ইনভলভ করতে হবে। এতে দুই পক্ষের মধ্যেই কথা হবে এবং আপনিও নিজেকে তাদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।

চাকরির প্রথম দিনে করণীয়

৬) টিমকে ভালোভাবে জানুন

নিজের পরিচয় তো দেয়া হলো, এবার আপনি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে জানার চেষ্টা করবেন। আমরা আমাদের দিনের এক তৃতীয়াংশ অফিসেই কাটাই। তাই নতুন টিমের সাথে কিছুটা সময় কাটানো উচিত। যদি তাদের সাথে আপনি না মিশেন, তাহলে কাজ করেও যেমন আনন্দ পাবেন না, তেমনই কঠিন কোনো প্রজেক্ট কমপ্লিট করার সময়ও তাদেরকে কাছে পাবেন না। তাই লাঞ্চব্রেক বা কাজের ফাঁকে একে অন্যকে জানার চেষ্টা করুন। যে ধরনের প্রশ্নগুলো নতুন টিম মেম্বারদের করা যায়ঃ

  • আপনার কি কোনো পোষা প্রাণী আছে?
  • এটা কি আপনার প্রথম চাকরি?
  • যারা নতুন আসে তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকে?
  • আপনি এই মুহূর্তে কী বই পড়ছেন?

এমন টুকিটাকি ব্যক্তিগত প্রশ্নে একে অন্যকে জানা বেশ সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া কোনো কাজ করতে যেয়ে আটকে গেলেও পরামর্শ নেয়ার জন্য যেতে পারেন।

৭) পজিটিভ এনার্জি ধরে রাখুন

চাকরির প্রথম দিনে ফার্স্ট ইমপ্রেশন ধরে রাখার সাথে সাথে পজিটিভ এনার্জি থাকাটাও জরুরি। এই এনার্জিই আপনাকে শেখাবে ক্যারিয়ারে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়। এতে আপনি মন দিয়ে কাজও করতে পারবেন। আর এনার্জি যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে রিলেশনশীপও ভালো থাকবে না এবং কাজেও মন বসবে না। তাছাড়া আপনার প্রতিদিনের কাজ, মিটিং এও প্রভাব ফেলবে। পজিটিভ মাইন্ডসেট নিয়ে কাজ করলে প্রোডাক্টিভিটি, ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে।

৮) টিমের প্রতি আগ্রহ দেখান

টিমের প্রতি ফার্স্ট ইমপ্রেশন ক্রিয়েট করার আরও একটি উপায় হচ্ছে তারা কে কী কাজ করছে সেগুলো জানা এবং তারা কী বলতে চায় সেগুলো শোনা। নানাভাবে সহকর্মীদের প্রতি এই আগ্রহ দেখানো যায়। যেমন-

  • তাদের চোখে চোখ রেখে
  • তারা কী বলছে সেটা শুনে
  • প্রশ্ন করে
  • তারা কী বলে সেটা মনে রেখে

টানা কথা শুনতে যেয়ে হয়ত পরে কী বলতে চাচ্ছেন তাতে ফোকাস করা নাও হতে পারে। এজন্য মাল্টিটাস্কিং অ্যাভয়েড করুন এবং কথা মন দিয়ে শোনার অভ্যাস করুন।

৯) শুনুন ও অবজার্ভ করুন

চাকরির প্রথম দিনে করণীয়

আপনাকে কী কী করতে হবে তার ট্রেনিং হয়ত আপনি প্রথম সপ্তাহেই পেয়ে যাবেন। তবে আপনি যদি কাজে আরও অগ্রগতি চান, তাহলে সবকিছু খুব ভালোভাবে অবজার্ভ করতে হবে। আপনার কোন টিম মেম্বার কীভাবে কথা বলছে, কী ভাষা ব্যবহার করছে, মিটিং এ কী কী টপিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এসব মন দিয়ে শুনুন। যখন আপনি শুনবেন, তখন জলদি জলদি বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। তার মানে এগুল পরবর্তীতে আপনারই কাজে আসবে।

১০) নলেজ শেয়ার করুন

নতুন চাকরিতে জয়েন করলে অনেক স্কিল সম্পর্কে যেমন জানতে পারবেন, তেমনই আগে শিখে আসা স্কিলগুলো সম্পর্কেও আপনি অন্যদের জানাতে পারেন। এতে টিম কোলাবোরেশন বাড়বে।

নতুন জায়গায় জয়েন করলে শুরুতে কিছুটা ভয় লাগতেই পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে সব আয়ত্তে চলে আসে। মনে রাখবেন, আপনি যেভাবে নিজেকে সময় দিবেন গড়ে তোলার জন্য, সেভাবেই ভবিষ্যৎ আপনার জন্য সুন্দরভাবে প্রস্তুত হতে থাকবে। তাই ভালো পারফরম্যান্সের জন্য নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠুন, শাইন করুন ক্যারিয়ারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *