আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান? –যেভাবে দিবেন এই প্রশ্নের উত্তর

ইন্টারভিউ দিতে গেলে যতগুলো প্রশ্ন করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে কমন একটি প্রশ্ন হচ্ছে, ‘আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান?’। এই প্রশ্ন করার পেছনে অবশ্যই একটি কারণ আছে। এতে চাকরিদাতা বুঝতে পারেন আপনি এই প্রতিষ্ঠান ও পজিশনের প্রতি কাজ করার জন্য কতটুকু আগ্রহী। আপনার জবাব এমন হওয়া উচিত যেটা কোম্পানির ভিশন, মিশন ও ভ্যালুকে স্পটলাইট করে এবং আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। যে কোনো সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের মতোই দুর্দান্ত চাপ রেখে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রিসার্চ করা ও প্রস্তুতি নেয়া। চলুন তাহলে আর দেরি না করে এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

‘আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান?’ – কেন জিজ্ঞেস করা হয়?

ইন্টারভিউতে এটি কমন একটি প্রশ্ন হলেও এর উত্তর দেয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে কখনো কখনো। সঠিক জবাব জানা না থাকলে আপনিও ভালোভাবে রেসপন্স করতে পারবেন না, আর ঠিক তখনই চাকরিদাতা বুঝে যাবেন আপনাকে নিয়োগ দেয়া হবে কি হবে না। বর্তমানে অনেক হায়ারিং ম্যানেজারই চাকরি প্রার্থীদের এই প্রশ্নটি করে থাকেন। এই প্রশ্নের উত্তর আপনি কীভাবে দিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনি কতটা প্রতিষ্ঠানের প্রতি কতটুকু সিরিয়াস এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে কতটুকু দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আপনি সাথে থাকবেন।

প্রার্থী কেন এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান সেটার জন্য যে জেনুইন উত্তর দেয়া উচিত সেটা অনেকেই দিতে পারেন না কারণ তাদের মধ্যে প্যাশন কম। আর যারা ভীষণ এক্সাইটেড থাকেন, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণের জন্য বেশ আগ্রহ দেখান, তারাই এংগেজড হতে পারেন। অল্পতে বললে, প্যাশন ও এক্সাইটমেন্ট এই দুটোই হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর।

আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান?

এই প্রশ্ন করা হচ্ছে মানে যে তারা আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছে বা কোনো ট্রিক করছে এমনটি নয়। তারা আসলে বুঝতে চান আপনি তাদের টিম বা কোম্পানির জন্য কতটুকু ভালোভাবে ফিট হচ্ছেন এবং তারা যে জব অফার করেছে তার সাথে আপনি যে জব খুঁজছেন সেটির কতটুকু মিল রয়েছে।

এই প্রশ্নটি কয়েকভাবে হতে পারে। যেমন-

  • আপনি কেন আমাদের সাথে কাজ করতে চান?
  • কেন আমাদের কোম্পানিতে কাজ করতে চান?
  • আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কী কী জানেন?
  • আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

সামঞ্জস্যপূর্ণ উত্তরের কয়েকটি উদাহরণ

চাকরিদাতা যখন আপনাকে এমন ধরনের কিছু প্রশ্ন করে তখন কিছু বিষয় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যেমন-

  • আপনি এই পজিশন, কোম্পানি ও ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে কতটুকু জানেন
  • আপনি কি শুধু নির্দিষ্টভাবে এই জবটিই চাচ্ছেন নাকি যে কোনো জব হলেই আপনার চলে
  • আপনার ক্যারিয়ার গোল এই পজিশনের সাথে অ্যালাইনড কিনা

ধরুন আপনাকেই এই প্রশ্নটি করা হলো। আপনি এর উত্তর দুইভাবে দিতে পারেন।

১) ‘আমি এখানে কাজ করতে চাই কারণ সম্প্রতি আমার পরিবারকে নিয়ে এখানে শিফট হয়েছি। নতুন একটি কোম্পানিতে আমি আমার প্রফেশন অনুযায়ী কাজ চাচ্ছিলাম আমার পরিবার চালানোর জন্য।’

২) আসলে আপনাদের অ্যাড ক্যাম্পেইনই আমাকে প্রথমেই এখানকার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। আপনাদের ক্রিয়েটিভিটি ও আউট অব বক্স অ্যাপ্রোচ অ্যাডভার্টাইজিং আমাকে প্রফেশনালি বেশ ইন্সপায়ার্ড করেছে, যার কারণে জব ওপেনিং দেখার সাথে সাথেই আমি অ্যাপ্লাই করেছি।’

দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এই দুটো উত্তরের মধ্যে সেকেন্ডটাই বেশি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট। যে কারণে এই উত্তরটি বেশি ইফেক্টিভ-

  • এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে কোম্পানির এক্সটেনসিভ নলেজ ও ভ্যালু সম্পর্কে আপনার আইডিয়া আছে
  • এই ফিল্ড সম্পর্কে প্রার্থীর প্যাশন সম্পর্কে হাইলাইট হয়
  • চাকরিদাতারা বেশ কনভিন্সিং হন কারণ তারা বুঝতে পারেন প্রার্থী লং টার্ম তাদের সাথে যুক্ত থাকবে

প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিবেন

আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান?

যে জবের জন্য অ্যাপ্লাই করতে চাচ্ছেন সেটার জন্য ‘আপনি এখানে কেন কাজ করতে চান?’ এর জিজ্ঞাসায় যা বলবেন-

১) কোম্পানি সম্পর্কে রিসার্চ করুন

ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে কোম্পানির ভ্যালু, মিশন, কালচার ও রিসেন্ট অ্যাচিভমেন্ট ও ইনিশিয়েটিভ নিয়ে জেনে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনি সব প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিতে পারবেন, ঠিক যেমনটি প্রতিষ্ঠান চাচ্ছে।

২) কোম্পানির ইমপ্যাক্ট মেনশন করুন

কাস্টমার, ইন্ড্রাস্ট্রি ও কম্যুনিটির প্রতি কোম্পানির পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আলোচনা করে তাদেরকে বোঝান আপনি তাদের ব্যাপারে কতটুকু আগ্রহী। বোঝান যে আপনি তাদের প্রতি জেনুইনলি ইন্টারেস্টেড এবং এ জন্য আপনি ভিন্ন ভিন্ন কী কী কাজ করতে পারেন।

৩) ক্যারিয়ার গোল সম্পর্কে বলুন

কীভাবে এই জব আপনার লং টার্ম ক্যারিয়ার গোলের সাথে অ্যালাইনড সেটা ব্যাখ্যা করুন। প্রফেশনালি আপনাকে আরও উচ্চ পদে নিয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে এই রোল ও কোম্পানির গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্ট সাহায্য করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা করুন।

৪) স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স কানেক্ট করুন

স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স

জবের জন্য কী কী স্কিল ও কোয়ালিফিকেশন চাওয়া হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করুন। এবার সেগুলোর সাথে আপনার নিজস্ব স্কিল ও এক্সপেরিয়েন্স অ্যালাইন করে দিন। ব্যাখ্যা করুন কীভাবে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড স্পেসিফিক এই রোলের জন্য একদম ফিট এবং কীভাবে আপনি কোম্পানির সাকসেসের জন্য কন্ত্রিবিউট করতে পারেন।

৫) রিসার্চ করেছেন সেটা বোঝান

রিসার্চের মাধ্যমে আপনি যে তাদের সম্পর্কে ইনকরপোরেট স্পেসিফিক ডিটেইলস জানতে পেরেছেন সেটা বোঝান। রিসেন্ট প্রজেক্ট, ইনিশিয়েটিভ ও কোম্পানির ভ্যালু সম্পর্কে মেনশন করুন এবং কীভাবে সেগুলো অর্গানাইজেশনের সাথে অ্যাট্রাক্ট করে তা ব্যাখ্যা করুন।

৬) কাজের প্রতি ভালোলাগার কথা বলুন

মার্ক টোয়েন একবার বলেছিলেন, ‘এমন একটি কাজ খুঁজে বের করুন যেটি করতে আপনার ভাল লাগে এবং জীবনে আর কখনো আপনাকে কাজ করতে হবে না।’ এটা একদম সত্যি একটি কথা, যখন আমরা কাজে আনন্দ খুঁজে পাই। তখন আমরা আরও বেশি সময় ভালোভাবে কাজ করে যেতে পারি। চাকরিদাতারা কর্মীদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কী চান? তাই আপনার কাজ হচ্ছে, আপনাকে এই প্রশ্ন করার পর আপনি জব স্যাটিসফেকশন ও পজিশনের মধ্যে কানেকশন তৈরি করে দিবেন যেন চাকরিদাতারা আপনার সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

‘এই কাজটি করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে’ বা ‘আমি আমার কাজকে খুব পছন্দ করি’ এসব কথা বললে আসলে সঠিকভাবে বোঝা যায় না আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। আপনাকে উত্তর দেয়ার সময় সঠিকভাবে বলতে হবে ঠিক কেন এই ইন্ড্রাস্ট্রিকে আপনি পছন্দ করেন এবং কীভাবে এই পজিশন আপনাকে কাজে আনন্দ দেয়।

কাজের প্রতি ভালোলাগা

৭) সব সময় সত্যি কথা বলবেন

আপনাকে যখনই আপনার স্ট্রেন্থ ও উইকনেস নিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে বা কেন আপনাকে নিয়োগ দেয়া হবে এসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে, কখনো সেগুলো নিয়ে মিথ্যা কথা বলবেন না। মিথ্যা বলে যদি আপনার নিয়োগ হয়েও যায়, পরবর্তীতে আপনার নিজের, সুপারভাইজার ও কোম্পানির সাথে অভিজ্ঞতা আরও খারাপ হতে পারে। সবশেষে সবাই এই নিয়োগ নিয়ে হতাশ হয়ে যাবে, অনেকটা সময় ও রিসোর্স নষ্ট হবে এবং এক সময় আপনাকেই নতুন চাকরি খুঁজতে হবে।

‘আপনি কেন এখানে কাজ করতে চান’ এর উত্তর অবশ্যই রিসার্চ ও প্রিপারেশনের মাধ্যমেই দিতে হবে। আপনাকে একটি ভালো কারণ খুঁজে বের করতে হবে, কেন আপনি কোম্পানির প্রতি আগ্রহী অথবা পুরনো ছেড়ে নতুনের প্রতি কেন আগ্রহী হলেন। মনে রাখবেন, আপনার উত্তর কোম্পানির ভ্যালু, গোল ও ভিশনের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। দুই পক্ষেরই যেন উইন উইন সিচ্যুয়েশন থাকে এমনভাবেই এই উত্তর দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আপনি কতটুকু এই কোম্পানি ও কাজের প্রতি প্যাশনেট সেটা বোঝানো। আশা করছি ইন্টারভিউ দেয়ার সময় এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া নিয়ে আর দ্বিধা থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *