ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুল | কীভাবে এড়িয়ে চলবেন এগুলো?

ব্যবসা ছোট হোক বা বড়, দায়িত্ব অনেক থাকে। তবে ছোট ব্যবসাতে লোকবল কম থাকে বলে দায়িত্ব অনেকটাই নিজের কাঁধে এসে পড়ে। ব্যবসা যখন শুরু করা হয়, তখন হয়ত অনেক চমৎকার পরিকল্পনা থাকে, কিন্তু সেগুলো এক্সিকিউশন করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে বেশ কিছু ভুল হয়ে যায়। এজন্য আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো কোন কোন ভুলগুলো হতে পারে। আপনি যদি আগে থেকেই জানেন কোন কাজগুলো আপনার করা উচিত নয়, তাহলে আরও দারুণ দারুণ আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এতে শুধু শর্ট টার্মই নয়, লং টার্মেও সফলতা পাওয়া সম্ভব। আজ আমরা জানবো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুল নিয়েই। সেই সাথে জানার চেষ্টা করবো কীভাবে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলা যায়।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুল

কোনো ব্যবসা করতে গেলে কী কী ধরনের ভুল হতে পারে সেগুলো নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ একেক ব্যবসার ক্ষেত্রে ভুলও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। তবে কিছু ভুল আছে যেগুলো প্রায় সবাই করে থাকেন। সেগুলো সম্পর্কেই চলুন জানা যাক।

১) পরিকল্পনা করার জন্য সময় না নেয়া

ব্যবসা করবো বলে হুট করে যে কোনো কিছু শুরু করাই বেশ বড় একটি ভুল। অনেকেই ব্যবসা শুরুর আগে সঠিক পরিকল্পনা করেন না। সময় নিয়ে পরিকল্পনা করে বিজনেস স্টার্ট করা মানে হচ্ছে আপনি সঠিক পথেই আছেন। নিয়মিত রিসার্চ ও অধ্যাবসায়ের কারণে সফল হওয়ার জন্য যা যা দরকার তার সবই আপনি পেয়ে যাবেন, যখন আপনি ব্যবসা শুরু করতে চাইবেন।

যে কোনো ব্যবসা শুরুর আগে আপনার যা যা করতে হবেঃ

  • মার্কেট রিসার্চ করা
  • বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা
  • প্রপার লিগ্যাল স্ট্র্যাকচার ফাইল করা
  • সঠিক বিজনেস ইন্স্যুরেন্স কেনা

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কিছু ভুল

২) স্টার্ট আপের জন্য গোল সেট করতে ভুলে যাওয়া

ব্যবসা শুরু করলে পরিশ্রম অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু এখানেই থেমে যাওয়া যাবে না। আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য থাকতে হবে একটি পরিকল্পনা। এটি আপনার শর্ট টার্ম ও লং টার্ম বিজনেস গ্রো করার জন্য খুবই জরুরি। ক্লিয়ার গোল থাকা মানে আপনি SMART ভাবে আগাচ্ছেন। অর্থাৎ আপনি যে যে দিকে খেয়াল রাখছেন-

S- Specific

M-Measurable

A-Achievable

R-Relevant

T-Time-based

৩) সবকিছু নিজে নিজে করার চেষ্টা করা

যে উদ্যোক্তারাই ব্যবসা করতে যেয়ে সফল হয়েছেন, তাদের কেউই একা একা কোনোকিছু করেননি। আপনার ছোট ব্যবসা যত বড় হবে, আপনার টিমকে তত বড় করতে হবে। পার্টনার নিতে হবে অথবা প্রতিদিনের কাজ সামলানোর জন্য কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। সেই সাথে ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য অ্যাডভাইজরের সাহায্যও নিতে হবে।

৪) কন্ট্র্যাক্ট স্কিপ করা

শুধুমাত্র মুখের কথায় বা হ্যান্ডশেক করে অ্যাগ্রিমেন্ট করা যে কোনো স্টার্টআপের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি ভুল। তাছাড়া এতে আইনি ঝামেলাও হতে পারে। অনেকে অবশ্য বলেন ‘তোমার মুখের কথাই বন্ড’। এসব কথা অন্য ক্ষেত্রে খাটলেও ব্যবসায়িক খাতে এসবের কোনো ভিত্তি নেই। ব্যবসায়িক সব ডিল বিশ্বাসের উপর হয় সত্যি, তবে ভারবাল অ্যাগ্রিমেন্ট অবশ্যই অ্যাভয়েড করে কাগুজে কলমে করা উচিত।

লিখিত কন্ট্র্যাক্ট

আপনি যদি ব্যবসা স্মুথলি চালাতে চান, তাহলে যাদের সাথে আপনার লিখিত কন্ট্র্যাক্ট করতে হবেঃ

  • কর্মী
  • ভেন্ডর
  • ইনভেস্টর

মনে রাখবেন, যে কোনো পার্টির সাথে কন্ট্র্যাক্ট যদি লিখিত হয়, তাহলে পরবর্তীতে কারও কোনো কথাতেও হস্তক্ষেপ করা সহজ হয় না।

৫) অতিরিক্ত বা একদম কম খরচ করা

এটা সত্যি যে, আপনি আপনার ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট একটি বাজেট অবশ্যই করেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুলের মধ্যে একটি হচ্ছে, এই বাজেট করা হয় ঠিকই, কিন্তু সেগুলো হয় অনেক বেশি খরচ করে ফেলে নইলে একদমই করে না। একটি বাজেট থাকলে, আপনি ব্যবসার ট্র্যাক ফলো করতে পারবেন এবং মাসিক খরচ কীভাবে করবেন সেটা সহজে বোঝা যায়।

আপনার যদি ব্যবসার জন্য কোনো বাজেট নাও থাকে, তবুও কিন্তু খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। বাজেট সেট করা হয়ত সহজ, তবে এতে কিছুটা সময় অবশ্যই লাগে। এটাকে আপনি যতটা সম্ভব সাধারণ রাখবেন। আর যেগুলোর খরচ আপনাকে ট্র্যাক করতে হবেঃ

  • পে রোল
  • অফিসের জিনিসপত্র
  • বিজ্ঞাপন
  • ম্যাটারিয়াল

৬) ফাইন্যান্সিং এর কথা ভুলে যাওয়া

স্টার্ট আপের আরও একটি বড় ভুল হচ্ছে ব্যবসার ফাইন্যান্সের এর কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া। আপনাকে হয়ত ফান্ডিং এর জন্য কোনো ইনভেস্টরের সাহায্য নিতে হতে পারে অথবা কোনো কিছু কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন হতে পারে, ফাইন্যান্সিং প্ল্যান আপনাকে ক্ষুদ্র ব্যবসার এই ক্যাশ ফ্লো ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ফাইন্যান্স নিয়ে যখনই কাজ শুরু করা হয়, ব্যবসায়ীরা সাধারণত বিজনেস লোন নেয় অথবা ব্যক্তিগত টাকা ব্যবহার করে নইলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। এই পন্থাগুলো অবলম্বন না করে বিভিন্ন ধরনের ইনভেস্টরের কাছ থেকেও অর্থ নেয়া যায়।

৭) মার্কেটিং বা অ্যাডভার্টাইজিং না করা

মার্কেটিং

অনেকে ভাবেন শুধু ওয়ার্ড অব মাউথ দিয়েই ব্যবসা দীর্ঘদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এতে ব্যবসায়ীরা পটেনশিয়াল কাস্টমার হারিয়ে ফেলতে পারেন। যদি প্রতিষ্ঠানের জন্য মার্কেটিং প্ল্যান না করা হয় অথবা অ্যাডভার্টাইজ না করা হয় তাহলে লাভ করা সম্ভব নয়।

যে কোনো স্টার্ট আপের জন্যই যখন মার্কেটিং এর কথা বলা হয় তখন সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। ব্যবসার জন্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করা যায় এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। ব্যবসাতে যখন কোনো অফারদেয়া হয়, গিভওয়ে বা প্রমশন দেয়া হয়, তখন বিশাল নেটওয়ার্ক বা কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটা খুব ভালো একটি মাধ্যম।

৮) নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে ভ্যালু না দেয়া

আপনার বিজনেস আইডিয়ার অবশ্যই গুরুত্ব আছে। এজন্য সবার আগে আপনার নিজের কাজকে সম্মান করতে হবে। নিজের প্রোডাক্টের ভ্যালু করতে হবে। নিজস্ব প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ভ্যালু না বুঝে সেগুলোকে কম দামে বিক্রি করা মানে প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া। আপনি যখন মার্কেট রিসার্চ করা শুরু করবেন, তখন কম্পিটিটরদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কেও ধারণা নিন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ব্যবসার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে কিনা। যদি হয়েও থাকে তাহলে কীভাবে তা পরিবর্তন করবেন সেটাও বুঝতে পারবেন।

৯) ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির সুরক্ষা না করা

ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি

নিজস্ব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির কদর করতে না পারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুলের মধ্যে একটি। ব্যবসা যত ছোটই হোক না কেন, এটা করা উচিত। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট বা রেজিস্টার্ড নামের জন্য পেপারওয়ার্ক করে রাখুন। আপনি যদি বুঝতে পারেন কেউ আপনার প্রোপার্টির ভায়োলেন্স করছে, তাহলে সরাসরি অ্যাটর্নির সাথে কথা বলতে পারেন। এই প্রোপার্টি যদি ঠিকঠাক না থাকে, তাহলে আইনি ঝামেলা হতে বেশি সময় লাগবে না।

১০) ফোকাস না থাকা

নতুন ব্যবসার আরও একটি ভুল হচ্ছে ফোকাস না থাকা। ব্যবসা করতে করতে যদি আপনার আগ্রহ কমে যায়, ভালো না লাগে, তাহলে ছোট ব্যবসাও টিকিয়ে রাখা আপনার জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে এক সময়। একে সফল ও বড় করার জন্য সব সময় আপনাকে কাজ করে যেতে হবে। ফোকাসড থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে স্টার্ট আপের জন্য ফিক্সড গোল সেট করা। এতে আপনি শর্ট টার্ম বা লং টার্মে কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছেন সেটা বুঝতে পারবেন।

নিজস্ব কিছু করার আগ্রহ থেকে অনেকেই হয়ত ব্যবসা শুরু করেন, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, আগ্রহ বা ফাইন্যান্সের অভাবে সেই ব্যবসা আর বড় হয় না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের করা কমন কয়েকটি ভুল সম্পর্কে জানিয়ে তো দিলাম, এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে আপনি এগোবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *