শিক্ষা জীবনে অনেকেই টিউশনি করে নিজের হাতখরচ চালান। যুগের বদলের সাথে সাথে অনেকেই এখন যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন পার্ট টাইম জবে। তবে শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, এমন অনেকেই আছেন যারা ফুল টাইম জবের পরিবর্তে পার্ট টাইম দুই ধরনের কাজ করছেন। যার কারণে তাদের শেখা হয়ে যাচ্ছে দুই প্রতিষ্ঠানের কাজ, একাউন্টে জমছে দুই এমাউন্টের অর্থও। বর্তমান যুগ চ্যালেঞ্জের। এ সময় অন্যদের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখাটাই যেন সবার কাছে মুখ্য। কেউ পার্ট টাইম জব করছে শুনলে কি আপনি তাকে ছোট করে দেখেন? তাহলে জেনে রাখুন আপনি বেশ ভুল ধারণায় আছেন। কারণ এই জবেরও আছে নানা ধরনের সুবিধা। এগুলো সম্পর্কেই আজ আমরা জানবো।
পার্ট টাইম জব এর সুবিধা
১) পরিবারকে বেশি সময় দেয়া যায়
ফুল টাইম জব করা মানে দিনের অর্ধেকের বেশি সময় কর্মক্ষেত্রেই কাটিয়ে দেয়া। এর বদলে যদি আপনি পার্ট টাইম কাজ করেন তাহলে পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবেন। যদিও ওয়ার্কপ্লেসের উপর অনেকটাই ডিপেন্ড করে যে আপনি কীভাবে শিডিউল ফ্লেক্সিবল করে নিবেন। যেমন- আপনার যদি সন্তানকে স্কুল থেকে আনতে হয় বা বাবা মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় তখন প্রতিষ্ঠানে কথা বলে শিডিউল বদলে নিলেন। এছাড়া পরিবারের কোনো সদস্য যদি অসুস্থ হয় তাহলে বাড়িতে বসে তাদের যত্নও নিতে পারবেন।
২) পড়ালেখার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়
আপনি যদি জবের পাশাপাশি লেখাপড়া করতে চান, তাহলে ফুল টাইমের বদলে পার্ট টাইম কাজ করাটাই আপনার জন্য ভালো হবে। ক্লাশের শিডিউলের সাথে মিলিয়ে কাজের সময় অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারবেন। এতে আপনি পড়ালেখার জন্যও বেশি সময় পাবেন এবং অ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিট করতে পারবেন।
৩) শখের কাজ করা যায়
পার্ট টাইম জব করলে আপনার হাতে বেশ খানিকটা ফ্রি সময় থাকবে। এ সময়ে আপনি আপনার শখের যে কোনো কাজ করতে পারেন, স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন। যেমন- মিউজিক ক্লাসে অ্যাটেন্ড করতে পারেন, ক্র্যাফটিং শিখতে পারেন অথবা থিয়েটারে শো দেখতে যেতে পারেন।
৪) ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপ হয়
পড়াশোনা চালানো অবস্থাতেই অনেকে প্রথম চাকরি হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করেন। এ সময় ফুল টাইম চাকরি করে যে দায়িত্ব পালন করতে হয় সেটা তখন করতে হয় না।যারা পার্ট টাইম কাজ করছেন তাদের আগে থেকেই টাকা আয় করার অভিজ্ঞতা থাকে। যার কারণে কীভাবে বাজেট করতে হবে, কোথায় কতটুকু টাকা খরচ করতে হবে সেগুলো আগে থেকেই প্ল্যান করতে হয়। যার কারণে টাকা জমানো ও খরচ করা নিয়ে ভালো আইডিয়া থাকে।
৫) টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপ হয়
পার্ট টাইম কাজ করা মানেই যে অঢেল সময় থাকা ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। বরং সময়ের মধ্যে সব কাজ করতে পারা যাবে বলেই এ ধরনের জব বেছে নেয়া। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে একসাথে অনেক কাজ করতে হয় বলে টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল ডেভেলপ হয়। যেমন- শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে পার্ট টাইম জব করছে, আবার ভলান্টিয়ারিং কাজও করছে। এ ধরনের স্কিলের সুবিধা হচ্ছে, কর্মীরা তাদের সময়কে বেশ ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে শেখে।
৬) আয় বেশি করা যায়
পার্ট টাইম জব এর ক্ষেত্রে পেমেন্ট নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই ইনকাম ডাবলও করতে পারেন। যখন আপনার টাকার প্রয়োজন হবে বা সময় বেশি থাকবে তখন আপনি ডাবল শিফটে কাজ করতে পারেন। এতে এক্সট্রা ইনকাম হবে।
৭) নেটওয়ার্ক তৈরি হয়
এই কাজ করার সময় আপনার এমন মানুষদের সাথে পরিচয় হবে যারা হয়তো আপনার মতো একই কাজ ফুল টাইম করছে। তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখলে যখন আপনি নতুন কোথাও সিভি দিবেন, তাদের ইনফরমেশনকে আপনি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলে প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যা কিনা নতুন চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে আপনার জন্য বেশ হেল্পফুল হয়।
৮) নতুন প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা কাজে লাগে
পার্ট টাইম কাজ করার জন্য এমন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয় যাদের অভিজ্ঞতা কম। চাকরিদাতারা এই কাজটি করেন কারণ এ ধরনের কর্মীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকে এবং ঘন্টা হিসেবে বেতন দেয়া যায়। ফুল টাইম হলে অবশ্যই তাদেরকে বেতন বেশি দিতে হয়। আর যারা পার্ট টাইম কাজ করেন তাদের দায়িত্বও তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তবে এই অভিজ্ঞতাই যে কারও জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। কারণ ফুল টাইম কাজ খোঁজার সময় অভিজ্ঞতা চায়, আর আপনি সহজেই আপনার অভিজ্ঞতা তখন জানাতে পারবেন।
৯) এনার্জি বেশি থাকে
কিছু মানুষের জন্য কম কাজ করা মানে বিশ্রাম বেশি নিতে পারা। তাছাড়া সেলফ কেয়ারের বিষয়টিও এর সাথে যুক্ত থাকে। হাতে যেটুকু সময় থাকে তখন ব্যায়াম করা বা রান্না করার মতো কাজগুলো করা যায়। আপনি যদি পূর্ণ বিশ্রাম নেন এবং নিজের দিকে খেয়াল রাখেন, তাহলে ঘরের কাজ করার জন্য আরও বেশি এনার্জি পাবেন।
১০) স্ট্রেস লেভেল কমে যায় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে
গবেষণা বলে, ফুল টাইম ওয়ার্কাররা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া ব্যক্তিগত কাজের সময় পান খুব কম। আর যারা পার্ট টাইম কাজ করেন, তারা সময় পান অন্যদের তুলনায় বেশি। এই কাজে যুক্ত হলে আপনি প্রতিদিনের বাজার সদাই করা, কাপড় ধোয়া, ঘরের অন্যান্য কাজ সহজেই করতে পারবেন। এসব কাজ করা যায় বলে ঘর কীভাবে সামলিয়ে রাখা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে যায়।
এই ধরনের কাজ যারা করেন তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্রেস নিয়ে তাদের একদমই দুশ্চিন্তা করতে হয় না, কারণ অলরেডি তারা তাদের ইনকামের পথ তৈরি করেই রাখে। আর স্ট্রেস কম থাকে বলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
১১) যাতায়াত খরচ কমে যায়
আপনাকে ফুল টাইমারদের মতো পুরো সপ্তাহ যেহেতু অফিসে যেতে হচ্ছে না, তাই যাতায়াত খরচটাও অনেকটাই কমে আসবে। যদি আপনার নিজের ঘাড়ি থাকে, তাহলে গাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন খরচ কমে যাবে। আবার যদি বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি বা রাইড শেয়ারও করেন, তবু সেই খরচও অনেকটাই কমে যায়।
১২) ক্যারিয়ারে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকা যায়
একজন পার্ট টাইম কর্মী হিসেবে, আপনি আগে থেকেই আপনার কাজ সম্পর্কে এবং সুপারভাইজারদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানেন। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে হয়ত সিনিয়র পজিশনের অনেকের সাথে দেখা করতে হয়। কে জানে তারাই হয়ত আপনাকে ভবিষ্যতে কোনো কাজের জন্য নিয়োগ দিয়ে দিল! আবার এমনও হতে পারে যে, আপনার জন্য সেই মুহূর্তে হয়ত তাদের কাছে ফুল টাইম জবের অফার নেই, কিন্তু আপনার কাজ দেখে তারা আপনাকে পার্ট টাইমার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিতে পারে। এতে কিন্তু অন্যদের তুলনায় আপনি ক্যারিয়ারে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকবেন।
- এমপ্লয়ী বেনেফিট পাওয়া যায়
- প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নিয়মের উপর নির্ভর করে আপনি এই জবের অংশ হিসেবে বেশ কিছু সুবিধাও পেতে পারেন। যেমন-
- পড়ালেখার জন্য টাকা
- বিভিন্ন প্রোডাক্টে ডিসকাউন্ট
- কর্মীদের ক্ষতিপূরণ
- সোশ্যাল সিকিউরিটি
- হেলথ ইন্স্যুরেন্স
- প্যারেন্টাল লিভ
- সরকারি ছুটি ইত্যাদি
পার্ট টাইম জব করলে কী কী সুবিধা পাবেন সেটা তো জানা হলো। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন আপনি এই কাজটি করতে পারেন। যুগ বদলেছে। এখন ছেলেমেয়েরা ছাত্র অবস্থা থেকেই নিজেদের হাত খরচ চালায়। কম বেতন দিতে হয় বলে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দেয়। এই কাজগুলো করলে অন্যদের তুলনায় অভিজ্ঞতাও বেশি সঞ্চয় হয়। তাই পার্ট টাইম কাজকে ছোট করে না দেখে, বরং ফুল টাইমাদের মতই সম্মান দিন।