আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পোশাক কেন ও কীভাবে সাহায্য করে?

কথায় বলে, ‘আপনি তাই যা আপনি পরেন’। মানুষের পোশাকই নাকি ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম। সত্যিই কি পোশাকের মাধ্যমে আপনি কেমন সেটা বোঝা যায়? এর উপরই কি নির্ভর করে অন্যজন আপনাকে কীভাবে দেখবে এবং আপনার সাথে কেমন আচরণ করবে? সত্যিটা হচ্ছে, পোশাক যে শুধু আপনার প্রতি অন্যের আচরণে পার্থক্য তৈরি করবে তাই নয়, সেই সাথে নিজের ভেতর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। দুনিয়ার সামনে আপনার ড্রেসিং স্টাইল বেশ গুরুত্ব বহন করে। কারণ আমরা যা পরই তাতে আমরা আমাদের কেমন ভাবি তার অনেকটাই রিফ্লেক্ট করে। চলুন জেনে নেই কেন আপনার ড্রেসিং স্টাইল অন্যের কাছে গুরুত্ব বহন করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পোশাক কীভাবে সাহায্য করে।

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ড্রেসিং স্টাইলের গুরুত্ব

ফার্স্ট ইমপ্রেশন ভালো থাকে

আমরা পছন্দ করি বা না করি, লোকে আসলে প্রথম দেখাতে আমাদের পোশাকের দিকেই আগে খেয়াল করে। অর্থাৎ ফার্স্ট ইমপ্রেশন কেমন হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের পোশাকের উপর। এ কারণে আপনি যদি এলোমেলোভাবে পোশাক পরেন বা ওয়্যারড্রবে থাকা একদম নরমাল পোশাকটাই পরেন, তাহলে আপনাকে তারা গুরুত্ব নাও দিতে পারে। তারা ভাবতে পারে, আপনি হয়ত অলস, অর্গানাইজ নন। যা কিনা আপনার কাছের মানুষ, বন্ধু বা সহকর্মী কারো কাছেই আপনার রেপুটেশন ভালো রাখতে দিবে না। সুন্দর পোশাক আপনাকে সব সময় অন্যের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। আপনি কতটা ম্যাচিউর, বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসী এর সবতাই প্রকাশ পায় সুন্দর আউটফিটের মাধ্যমে।

তাই আপনি যখন নতুন কোনো মানুষের সাথে দেখা করছেন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইভেন্টে যাচ্ছেন, তখন আপনার পোশাকই সবার আগে নজর কাড়বে। একটা সুন্দর পোশাক শেষ পর্যন্ত আপনার প্রতি পজিটিভ ইমপ্রেশন ধরে রাখবে, আপনি যা যা বলছেন তার প্রতি পুরো মনোযোগ থাকবে, সেই সাথে আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহও বাড়বে।

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পোশাক

ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে

আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম পোশাক। আপনি কেমন হতে পারেন তার অনেকতাই ফুটে ওঠে এর মাধ্যমে। এক কথায় কোনো কথা না বললেও পোশাকের রঙ, প্যাটার্ন, স্টাইলের মাধ্যমে আপনি কেমন তার অনেকটাই সহজে বোঝা যায়।

কনফিডেন্স বৃদ্ধি পায়

অনেক আউটফিট আছে যেগুলো পরলে আপনার নিজেকে কমফোর্টেবল ও স্টাইলিশ লাগে এবং কনফিডেন্স লেভেল বৃদ্ধি পায়। পোশাক পরে যখন আপনার নিজেকেই নিজের কাছে ভালো লাগে, তখন বুঝতে পারবেন আপনি সঠিক পোশাকটিই নির্বাচন করেছেন।

প্রফেশনালিজম বাড়ায়

প্রফেশনাল বিভিন্ন কাজে সঠিক পোশাক পরে গেলে আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমন প্রফেশনালিজমও বাড়ে। ক্যারিয়ারে সফলতা পাওয়ার জন্য এবং কাজে আরও উন্নতি করার জন্য পোশাক নির্বাচন করা বেশ জরুরি।

নিজেকে চেনা যায়

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পোশাক

নিজেকে আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে বিভিন্ন ধরনের স্টাইল এক্সপ্লোর করা জরুরি। এক্সপেরিমেন্ট করার, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসার এবং নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার এটা খুব ভালো একটা সুযোগ। আপনি যখন নিজের ভেতরের সত্তাকে বাইরে পোশাকের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারবেন, তখন পারসোনাল গ্রোথ বাড়াতে পারবেন।

মন মেজাজের উপর প্রভাব ফেলে

ভালো পোশাক মন মেজাজের উপরও বেশ প্রভাব ফেলে। ওয়েল ড্রেসড থাকলে মুডও যেমন ভালো থাকে, তেমনই ডিপ্রেশন কমে এবং মন হাসিখুশি থাকে। জীবন নানাভাবে নানাদিক থেকে আপনাকে প্রেশার দিবে, আপনি ক্রমাগত সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে থাকবেন। তবে এর মধ্যেও সত্যিটা হচ্ছে বেস্ট জিনিসটাই আপনাকে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর এজন্য যেসব ব্যাপারকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি, সেগুলোর মধ্যে ভালোভাবে পোশাক পরাটাও জরুরি। এতে ভিন্নভাবে আপনি প্রতিটি জিনিসকে দেখতে শুরু করবেন। ব্যাপারটা ঠিক অগোছালো রুমকে গুছিয়ে ফেলার মতো। এলোমেলো সবকিছু যখন আপনি গুছিয়ে ফেলেন, তখন দেখবেন মনটাও শান্ত হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে প্রতিদিন ওয়েল ড্রেসড থাকাও মন ভালো করে দেয়ার রসদও বলা যায়।

জব পারফরম্যান্স ইমপ্রুভ করে

আমরা যেমন পোশাক পরি, সেটা আমাদের জবের ক্ষেত্রেও তেমনভাবে প্রভাব ফেলে। যারা একদম সাধারণ পোশাক পরে তাদের দেখে মনে হয় তারা কম প্রফেশনাল। যার কারণে অনেক সময় প্রফেশনাল বিভিন্ন অর্জন যেমন- বেতন বৃদ্ধি বা প্রমোশনও হাতছাড়া হয়ে যায়। সঠিক পোশাক নির্বাচন করলে আপনি যেমন নিজেকে স্মার্টভাবে প্রকাশ করতে পারেবন, তেমনই অন্য কর্মীরাও আপনার সাথে সম্মান দিয়েই কথা বলবে। প্রশংসা ও সম্মান পাওয়া যায় বলে সহকর্মীদের সাথেও সম্পর্ক ভালো থাকে। বিষয়টি এক সময় আপনার জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে আপনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন এবং লাইফ ও ক্যারিয়ারেও পরিবর্তন আনার সাহস পান। এতে লিডারশীপ বাড়ে, সহকর্মী ও বসও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সর্বোপরি জব পারফরম্যান্স বেশ ভালো হয়।

জব পারফরম্যান্স

বিশ্বস্ততা বাড়ায়

যারা রেগুলার ক্যাজুয়াল পোশাক পরেন তাদের চেয়ে ফরমাল পোশাক পরিহিতদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস বেশি। আশেপাশের সবাই তখন ধরেই নেয়, ফরমাল পোশাক পরা ব্যক্তির মাঝে যে কোনো মুহূর্তে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বেশি। ঠিক একইভাবে লিডারশীপ দেয়ার সময়ও এমন ব্যক্তিকেই বেছে নেয়া হয়। ফরমাল পোশাক পরলে তাকে লিডার হিসেবে মেনে নিতে অন্যরা বেশি আগ্রহী হয়।

রঙও নির্ধারণ করে মনের অবস্থা

আগেই বলেছি, আমাদের মুড ভালো রাখতে পোশাকের সরাসরি প্রভাব আছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, মনের অবস্থা পরিবর্তন করতে রঙও যে অনেকখানি সাহায্য করে? উদাহরণ দিচ্ছি। উজ্জ্বল রঙ যেমন হলুদ বা কমলা আপনার স্পিরিটকে বাড়ায় এবং মনে আনন্দ দেয়, আশা বাড়ায়। অন্যদিকে, নীল বা সবুজ রঙ মন শান্ত ও স্থির রাখতে সাহায্য করে। তাই ইমোশনাল অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পোশাকের রঙ বাছাই করাও গুরুত্বপূর্ণ।

দেখতে ভালো লাগলে সবকিছুই ভালো লাগে

ইংরেজিতে একটা কথা বলে, ‘Look Good, Feel Good’। এটা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। আপনার যদি বাইরে যেতে ভালো পোশাক পরতে না ইচ্ছা না করে, ম্যাচিং আউটফিটের প্রতি কোনো আগ্রহ না থাকে, তাহলে এক সময় আপনিও নিজেকে আইসোলেটেড করে ফেলবেন এবং কোনো কিছু করতেও আপনার ভালো লাগবে না। আপনি হয়ত কিছুদিনের জন্য বাড়িতে একদম বন্দি অবস্থাতে আছেন, কোথাও যাচ্ছেন না। সপ্তাহ বা মাসজুড়ে ঘরের পোশাক পরেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন। দেখবেন একটা সময় আপনার নিজেকে অলস ও অবসন্ন মনে হচ্ছে কারণ আপনাকে উঠতে হচ্ছে না, ভালো পোশাক পরতে হচ্ছে না, বা এ ধরনের কোনো কাজই আপনাকে করতে হচ্ছে না। তাই আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং নিজেকে নতুন নতুন কাজের সাথে যুক্ত রাখতে ভালো ও সুন্দর পোশাক পরা জরুরি।

ওয়েল ড্রেসড

যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা যায়

আপনি হয়ত খুব সাধারণ পশাক পরে ঘরে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন, কারণ ভাবছেন আপনাকে তো আর বাইরে যেতে হচ্ছে না। কিন্তু যদি এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যে আপনাকে ঠিক তখনই বের হয়ে যেতে হবে? তখন যদি আপনি তৈরি হওয়ার সময় না পান? তাই মাঝে মাঝে নিজেকে ঘরেও পরিপাটি রাখুন। এর মানে এই নয় যে একদম ফরমাল পোশাকে থাকতে হবে। জাস্ট এমন কিছু পরা যেটা পরলে আয়নার সামনে দাঁড়ালে আপনারও নিজেকে দেখতে ভালো লাগবে। এটা কিন্তু আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও খুব জরুরি।

ওয়েল ড্রেসড থাকা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পোশাক শুধু আমাদের শরীরই ঢেকে রাখতে সাহায্য করে না, এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই আমাদের প্রতি অন্যের মনোভাব কেমন হতে পারে সেটাও বোঝায়। তাই এরপর থেকে আপনি যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা ইভেন্টে, অফিসে যাবেন, তখন ফরমাল আউটফিট পরতে ভুলবেন না যেন। কারণ আপনাকে যদি দেখতেই ভালো না লাগে, তাহলে কনফিডেন্টও কমে যাবে এবং ইমপ্রেশনও ভালো তৈরি হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *