রোজ অফিস না যেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িতে বসে কাজ করার। কিন্তু কাজ শুরু করতে যেয়ে বুঝলেন ব্যাপারটি যতটা সহজ ভেবেছিলেন, আসলে ততটা সহজ নয়। কাজে মন বসে না, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না, কীভাবে করবেন বুঝতে পারছেন না সব মিলিয়ে বেশ এলোমেলো অবস্থায় পড়ে গেলেন। সেই সাথে প্রডাক্টিভিটি তো লস হচ্ছেই। আজ আপনাদের সাথে বাড়িতে বসেই কীভাবে প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে কাজ করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বাড়িতে বসে কাজ করবেন যেভাবে
১) শুরু থেকেই এক্সপেকটেশন ক্লিয়ার রাখুন
যাদের সাথে কাজ করছেন তাদের সবার সাথে শুরু থেকেই এক্সপেকটেশন ও কাজের বিভিন্ন নিয়ম কানুন ট্রান্সপারেন্ট রাখুন। সবকিছু জানা থাকলে বাড়ি থেকে কাজ করাতে স্ট্রেস কম হবে। যে এক্সপেকটেশন সেট করে রাখতে পারেন-
- ডেইলি ও উইকলি চেক ইন ও স্ট্যাটাস রিপোর্ট
- আউটকাম, রেজাল্ট ও পারফরম্যান্স
- আপনার ও টিমের ওয়ার্কিং আওয়ার
- আর্জেন্ট সিচ্যুয়েশনে স্ট্র্যাটেজি ডিল করার উপায়
২) কলিগদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
যখন টিম মেম্বার ও ম্যানেজারের সাথে সরাসরি কাজের সময়ে দেখা হয় না তখন ম্যানেজার ভাবতেই পারে, ‘আমার ম্যাসেজের রিপ্লাই দিচ্ছে না কেন? আসলেই কি সে কাজ করছে? বাড়িতে থেকে কাজ করা মানে ছুটি কাটানো নয়!’
বাড়িতে বসে কাজ করার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস থাকা খুবই জরুরি। আর প্রোপার কমিউনিকেশন না হলে এই বিশ্বাস ভাঙতে সময় লাগবে না।
তাই যে কাজগুলো এ সময় করতে পারেন-
- কাজের ফাঁকে নির্দিষ্ট সময় রাখুন ম্যাসেজ চেক করার জন্য
- ই-মেইল করার সময় বা অন্য যে কোনো কাজ করার সময় ভিডিও কল করার জন্য একটি শিডিউল রাখতে পারেন
- যদি কম্পিউটার থেকে উঠে অন্য কোনো কাজে যান তাহলে কতক্ষণে অনলাইনে আসবেন সেটা ম্যাসেজে একটি নোট রেখে যান
- যদি কোনো সাহায্যের দরকার হয়, তাহলে ম্যানেজারকে জানান। একইভাবে রিমোট ওয়ার্কিং এ টিমমেটদের কাছ থেকেও হেল্প নেয়া যায়।
৩) একটি রুটিন ডেভেলপ করুন
আপনি যখন বাড়িতে বসে কাজ করছেন, তখন এই ঘরই আপনার অফিস হয়ে ওঠে, ঘরের লোকগুলোই হয় অফিসের কলিগ, আবার ব্রেকরুম হয়ে ওঠে আপনার ঘরের কিচেন। আপনি ঠিক পুরনো রুটিনে চাইলেও এখন ফিরতে পারবেন না। আর এজন্য অবশ্যই আপনাকে দিনের একটি স্ট্রাকচার তৈরি করে নিতে হবে। যেভাবে একটি রুটিন বা স্ট্রাকচার আপনি তৈরি করতে পারেন-
- সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠুন এবং কাজ শুরু করার আগে নিজেকে বেশ খানিকটা সময় দিন।
- হয়তো অফিসিয়াল পোশাক পরতে হচ্ছে না কিন্তু বেসিক কিছু কাজ যেমন- দাঁত ব্রাশ করা, শাওয়ার নেয়া, রাতের পোশাক বদলে ফেলা ইত্যাদি করলে কাজে মন বসানো সহজ হবে।
- দিনের শুরুতে সিদ্ধান্ত নিন কী কী কাজ আজ সারাদিন করবেন। মনে রাখার জন্য টু-ডু লিস্ট করে ফেলতে পারেন।
- ক্যালেন্ডারে মিটিং ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট অর্গানাইজ করে রাখতে পারেন।
৪) ওয়ার্কপ্লেস ক্রিয়েট করুন
রিমোট ওয়ার্কিং এ প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য এবং ডিসট্র্যাকশন কমানোর জন্য কাজের জায়গা ও লিভিং স্পেস আলাদা রাখা জরুরি। ধরুন, আপনার ঘরে যে কাউচটি আছে সেটি কিন্তু আরাম করে টিভি দেখার জন্য, অফিসের কাজ করার জন্য নয়। কাজের জন্য যদি নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকে, তাহলে আপনার ব্রেনও সিগন্যাল পায় যে এখন কাজে বসতে হবে। বেডরুমকে কাজের জায়গা না বানিয়ে ঘরেই আলাদা একটি জায়গাকে অফিসের মতো বানিয়ে ফেলুন। একটি আলাদা ডেস্ক ও চেয়ার রাখুন। যতক্ষণ কাজ করা প্রয়োজন এখানে বসেই করুন। এতে কাজে মনোযোগ বসানো সহজ হবে।
৫) অপটিমাল ওয়ার্ক আওয়ার ঠিক করে নিন
যেহেতু এখন অফিসে যেতে হচ্ছে না, তাই বাড়িতে বসেই আপনাকে বুঝতে হবে কোন সময়ে কাজ করলে আপনার প্রডাক্টিভিটি বেশি হচ্ছে। সেভাবেই শিডিউল ঠিক করে নিন। ধরুন, আপনার সকালে, বিকালে বা সন্ধ্যায় কাজ করলে ভালো প্রডাক্টিভিটি ভালো হচ্ছে। তাহলে কাজ একদম সকাল সকাল শুরু করার চেষ্টা করুন। এতে পুরো দিন জুড়ে আপনি এনার্জেটিক থাকতে পারবেন।
৬) কাজে বিরতি নেয়া
একটানা কাজ করলে বেশিক্ষণ কাজে মনোযোগ থাকে না। অফিসে রেগুলার ব্রেক নেয়া হতো, আর বাড়িতে আছেন বলে যে ব্রেক নিতে পারবেন না এমন নয়। যখন আপনি শিডিউল তৈরি করছেন, তখন নিজেকে এনার্জেটিক ও মোটিভেটেড রাখতে কাজের ফাঁকে ব্রেক নিন এবং লাঞ্চ করে নিন। বাড়িতে বসে কাজ করলে যে ন্যাচারাল বাতাস ও আলো পাবেন তা কিন্তু আপনার মস্তিষ্ককে ফ্রেশ রাখতে হেল্প করবে। কাজ শেষ করে পার্কে অথবা বাড়ির আশেপাশে কোনো জায়গায় হাঁটতেও যেতে পারেন।
৭) টেকনোলজির দিকে খেয়াল রাখুন
বাড়িতে বসে কাজ করার সময় টেকনোলজির উপর ডিপেন্ডেন্ট হতেই হয়। সেই সাথে স্ট্রং ইন্টারনেট কানেকশন থাকাটাও জরুরি। আপনার যে ল্যাপটপ বা পিসি আছে, সেটিতে অফিসের কাজ করার জন্যপর্যাপ্ত মেমোরি স্পিড আছে কিনা দেখে নিন। কাজে যেন কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য ইন্টারনেট কানেকশন স্ট্রং হওয়া জরুরি। একজোড়া হেডফোন থাকলে ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ নিয়েও আর ভাবতে হবে না।
৮) বাড়িতে রুলস সেট করে দিন
রিমোট ওয়ার্কিং করার সময় বাড়ির ছোট বড় সকলকে বলে দিন কাজের সময় আপনি কী ধরনের পরিবেশ চাচ্ছেন। আপনার কাজের সময় যেন অন্য কোনো কাজে না ডাকে, মিটিং এর সময় যেন ঘরে কেউ না আসে এমন বিভিন্ন রুলস সবাইকে জানিয়ে রাখুন।
রিমোট ওয়ার্কিং এর সুবিধা
বাড়িতে বসে কাজ করার বেশ কিছু সুবিধা আছে, যেগুলো অফিসে থাকলে আপনি পেতেন না। যেমন-
ফ্লেক্সিবিলিটি ও ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স হয়
বাড়িতে বসে কাজ করা মানে আপনি আপনার পছন্দমত সময়ে কাজ করতে পারছেন, যতক্ষণ কাজ শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ সময় দিতে পারছেন। একটা ফ্লেক্সিবল শিডিউল থাকার অর্থ হচ্ছে পারসোনাল যে কোনো কাজকে প্রফেশনাল কাজের মতোই গুরুত্ব দিতে পারছেন। যেমন- আপনার যদি সন্তানকে সকালে স্কুলে দিয়ে আসতে হয় সেটাও করতে পারছেন, আবার ট্রান্সপোর্টেশন না পাওয়ার কারণে অফিসে দেরি হওয়ার ভয়ও থাকছে না।
খরচ কম হয়
ট্র্যাফিক ও বাইরের অন্যান্য খরচ কম হয় বলে খরচ অনেকটাই বেঁচে যায়, আবার স্ট্রেস কম হওয়ার কারণে স্ট্রেস লেভেলও কন্ট্রোলে থাকে। যে সময়টা আপনার বাইরে খরচ হতো, সেটা এখন ঘরেই আপনি পরিবারকে দিতে পারছেন, হেলদি ব্রেকফাস্ট করতে পারছেন, এক্সারসাইজ বা হাঁটাহাঁটিও করতে পারছেন।
অফিসকে কাস্টমাইজ করা যায়
বাড়িতে বসে কাজ করা মানে আপনি আপনার অফিসকে মনের মতো করে সাজাতে পারছেন। পছন্দের টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার সবই নিজে চয়েস করে কিনতে পারবেন। নিজের মতো করে ডেকোরেশন করতে পারবেন, ওয়ার্কপ্লেস অর্গানাইজ করতে পারবেন, অর্থাৎ প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার সব করা সম্ভব রিমোট ওয়ার্কিং করলে।
পছন্দের লোকেশনে কাজ করা যায়
ওয়ার্কিং রিমোটলি মানে হচ্ছে যেখানে খুশি বসে আপনি কাজ করতে পারবেন। যেমন- অফিস এনভায়রনমেন্টে যদি কাজ করতে ইচ্ছা না হয় তাহলে বাড়ির বাইরে যে কোনো জায়গায়, কফিশপে, এমনকি পার্কে বসেও কাজ করা সম্ভব। যখন যেখানে ভালো লাগে তখন সেখানে বসেই কাজ করা সম্ভব।
যারা প্রতিদিন অফিসে যেয়ে কাজ করেন তাদের রেগুলার রুটিন একদম আলাদা থাকে। আর যারা বাড়িতে বসে কাজ করেন তাদের রুটিন অফিসের চেয়ে অনেকটাই আলাদা হয়। এর মানে কাজ কোনোটাই ছোট নয়। এটা যার যার চয়েস। যে যেভাবে কাজ করতে পছন্দ করে তাকে সেভাবেই করতে দেয়া উচিত। অনেকে ভাবেন ঘরে বসে কাজ করলে প্রোডাক্টিভিটি একদম কমে যায়। কথাটি একদম ভুল নয়, আবার পুরো সত্যও নয়। রেগুলার রুটিন ফলো করে বাড়িতে বসে কাজ করলেও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো সম্ভব।