চাকরি বদলানোর সঠিক সময় বলতে কি সত্যিই কিছু আছে?

অনেকদিন ধরে একই কোম্পানিতে একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন একই কাজ করতে করতে বোরিং লাগতে পারে। আবার হয়তো কখনো মনে হচ্ছে আপনি যেভাবে করতে চাচ্ছেন কাজগুলো আসলে সেভাবে হচ্ছে না। তখনই ভাবছেন, এবার এই চাকরি বদলানো প্রয়োজন। নতুন চাকরিতে জয়েন করতে হবে। শুধু কি এই কারণেই মানুষ চাকরি বদলায়? চাকরি বদলানোর সঠিক সময় সম্পর্কেই আজ জানাবো আপনাদের।

চাকরি বদলানোর সঠিক সময় কোনটি?

কাজ যখন মানসম্পন্ন হচ্ছে না

আপনি যখন নিয়মিত কোনো কাজে ভালো করে যাচ্ছেন, তখন আপনি বুঝতে পারছেন যে অর্গানাইজেশনের সামনের দিনের জন্য এবং লক্ষ্য পূরণে সরাসরি আপনার ভূমিকা আছে। ডেডলাইন অনুযায়ী যখন আপনার কাজ শেষ হচ্ছে এবং আপনি আপনার বেস্ট পারফর্ম করছেন, তখন আপনার নিজেরই খুব ভালো লাগবে। কিন্তু এর উল্টো চিত্রটাই যখন দেখা যায়, তখনই পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যায়।

হয়তো আপনি কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, এমনকি অর্গানাইজেশনের উপর থেকেও। এই কাজ থেকে আপনার কী লাভ হচ্ছে, কী শিখছেন এসব চিন্তা করতে করতেই আপনার পারফরমেন্স ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডেডলাইন শেষ হয়ে যাচ্ছে, আপনি কাজে ভালো করছেন না খারাপ করছেন সেসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

কাজ যদি একঘেয়েমি লাগে

কাজ করতে করতে একঘেয়েমি লাগতেই পারে। কিন্তু তার পরিমাণ যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন আমরা হয়ত পরবর্তী ভ্যাকেশন কোথায় কাটাবো তা নিয়ে ভাবতে থাকি অথবা চিন্তা করি এই চাকরি ছেড়ে আর কোথায় যাওয়া যায়। যদি এই অনুভূতিগুলো দিন দিন স্পষ্ট হতে থাকে তাহলে সময় হয়েছে নতুন চাকরি খোঁজার। একঘেয়েমি পেয়ে বসলে ছোট ছোট কাজ করতেও আর ভালো লাগে না এবং দিন দিন এনার্জি লেভেল কমতে থাকে। কাজের পরিবেশ যদি ভালো না লাগে অথবা কাজ তার নিজস্ব গুরুত্ব হারাতে থাকে, তাহলে এখনই সময় নতুন জায়গায় মুভ করার।

চাকরি বদলানোর সঠিক সময়

শুধু যদি টাকার কারণেই কাজ করে থাকেন

টাকার জন্যই আমরা কাজ করি এটা অবশ্যই সত্যি। আপনি নিজের দক্ষতার বিনিময়ে টাকা অর্জন করছেন এতে ভুল কিছু নেই। কিন্তু যখন আপনি নতুন কোথাও জয়েন করছেন, তখন শুধু টাকার কথা চিন্তা করলেই হবে না। আপনাকে আগে জানতে হবে আপনি যে কাজটি করছেন সেটি আপনি জানেন কিনা, সেই কাজে মোটিভেশন পাবেন কিনা। যদি কাজই ভালো না পারেন এবং শুধু টাকার জন্য জব সুইচ করেন, তাহলে কাজের শুরুতেই আপনি হোঁচট খাবেন। যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশ ভালো না লাগলে

যে প্রতিষ্ঠানে জয়েন করছেন, হতে পারে যে সেখানকার কাজের পরিবেশ আপনার ভালো লাগছে না। কাজে ভালো করার জন্য কিন্তু আগ্রহ ধরে রাখা খুব জরুরি। একজন মালিকের সব সময় বুঝতে হবে তার কর্মীরা হাসিমুখে ও মন খুলে কাজ করছে কিনা। যদি তা না হয়, অর্থাৎ বস যদি আপনার পরিস্থিতি বুঝতে না পারে তাহলে আপনার উচিত সেখান থেকে চলে আসা। নতুন জায়গায় নিজের পজিশন ও স্কিল দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন।

বর্তমান চাকরিতে যদি ভবিষ্যৎ ভালো না দেখতে পান

যে চাকরিতে বর্তমানে আছেন, সেখানে যদি আনন্দদায়ক কিছু খুঁজে না পান, তার মানে ক্যারিয়ার বদলানোর সময় এসেছে। রোজ রোজ একই নিয়মে আপনি অফিসে আসছেন, কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছেন না এই কাজ করে ভবিষ্যতে আপনি আসলে কতদূর যাবেন। যে কাজে ভবিষ্যৎ দেখা যায় না, বা কাজে আগ্রহ দিন দিন কমতে থাকে, সেখানে আপনি কীভাবে নিজের ক্যারিয়ার দাঁড় করাবেন ভেবে দেখেছেন একবারও?

চাকরি বদলানোর সঠিক সময়

ওয়ার্ক লাইফ যদি ব্যালান্স না করা যায়

আমরা সবাই কাজ করে যাই দিনশেষে নিজেকে ও পরিবারকে ভালো রাখতে। কিন্তু যদি সেই জায়গাগুলোতেই সময় না দেয়া যায় তাহলে এই কাজের অর্থ কী? ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স করার মানে হচ্ছে কাজে পর্যাপ্ত সময় দেয়া এবং তার পর বাকি সময়টুকু পারসোনাল লাইফে দেয়া। সাধারণত ফুল টাইমের ক্ষেত্রে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্সড বলা যায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সবকিছু ভুলে যেয়ে এর দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময় কাজ করতে থাকেন। এতে নিজের যেমন বিশ্রামের ঘাটতি থেকে যায়, সেই সাথে ব্যক্তিগত জীবনে নানা বাধা আসতে থাকে। তাই যে চাকরিতে আপনার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকে না, সেটা ছেড়ে আসাই উত্তম।

আপনার স্বপ্ন আসলে অন্য কোনো জব করা

আপনি কাজ করার ডেস্কে বসে আছেন, কী বোর্ডের বাটনে ক্লিকও করছেন, এদিকে আবার গুগলে জবের সার্কুলার খুঁজছেন নিজের পছন্দের কোম্পানির, সেগুলোকে বুকমার্ক করে রাখছেন। তাহলে কীভাবে বর্তমান কাজে আপনার আগ্রহ তৈরি হবে? এই চাকরি ছাড়ার সময় তো তবে হয়েই গিয়েছে! ওই যে কথায় বলে না, ‘অন্তর যদি দুর্বল হতে থাকে, তাহলে আশাও কমতে থাকে’। তাই মনের কথা শুনুন এবং নিজেকে খুশি রাখার জন্য সেটাই করুন যেটা আপনার অন্তর বলছে।

প্যাশনের বাইরে চলে যাচ্ছেন

ক্যারিয়ারে উন্নতি করার অন্যতম একটি বিষয় কী জানেন? সেটি হচ্ছে প্যাশনের সাথে কাজ করে যাওয়া। ধরুন- আপনার ভালো লাগে গান গাইতে, কিন্তু আপনি একাউন্টের হিসাব মেলাচ্ছেন সারাদিন। আবার আপনার পছন্দ ক্রাফটিং করা, কিন্তু আপনাকে শিডিউল মেলাতে হচ্ছে মিটিং এর। এসব কিন্তু মনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়া। তাই এমন কাজ খুঁজে বের করুন যেখানে আপনি আপনার প্রতিভা দেখাতে পারবেন। তাই যে অফিসে আপনার ভ্যালু ক্রিয়েট হচ্ছে না, সেখান থেকে বের হয়ে নতুন জায়গায় চেষ্টা করুন। নতুন কিছু খোঁজাতে কোনো দোষ তো নেই, তাই না?

প্যাশনের বাইরে চলে যাচ্ছেন না তো?

ক্যারিয়ার বদলানোর আগে কী কী করবেন?

এতক্ষণ তো আমরা জানলাম কেন আমাদের ক্যারিয়ার বদলে ফেলা উচিত। কিন্তু বদলানোর জন্য কী কী করা উচিত? চলুন জেনে নেয়া যাক-

কোথায় যেতে চান সিদ্ধান্ত নিন

পরবর্তীতে আপনি কী কী করতে চান, তা নিয়ে হয়তো আপনার অনেক আইডিয়া আছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই। আপনি আসলে কী চান?

আপনার স্ট্রেন্থ ও উইকনেস সম্পর্কে ভাবুন। আপনার চাকরিতে কোনটা ভালো লাগে আর কোনটা আপনি একদমই পছন্দ করেন না, ভাবুন। আপনার জীবনের প্যাশন কী? কোন কাজ আপনাকে বেশি খুশি করে? আপনি কি অন্য কারো অধীনে কাজ করতে চান নাকি নিজেই কিছু করতে চান? এজন্য কি ফ্রিল্যান্সিং কোনো অপশন নাকি নিজের বিজনেস করতে চান?

এসব প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার কাছে থেকে থাকে, তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে, সামনে আপনি কই যেতে চান।

দক্ষতা বাড়িয়ে তুলুন

এবার যখন আপনি জানেন, সামনের দিনে কী করতে চান, তখন আপনি নিজেই জানেন কী কী দক্ষতায় আপনার নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। ধরুন, আপনি ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভেলপার হতে চান। তাহলে আগে জিজ্ঞেস করবো, আপনি কি কোডিং পারেন? ক্যারিয়ার গড়ার আগে আপনি কি দক্ষতা বাড়িয়েছেন এতে? শুরুতে আপনি এ বিষয়ে একটি কোর্স করুন, পোর্টফোলিও বানান। এরপর একে ফুল টাইম প্রফেশন হিসেবে বেছে নিন।

দক্ষতা বাড়িয়ে তুলুন

নেটওয়ার্ক বাড়ান

নতুন চাকরিতে যাওয়ার আগে নেটওয়ার্ক তৈরি করা খুব জরুরি। বর্তমান চাকরিতে থাকা অবস্থাতেই সিনিয়র, কলিগ বা ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলুন। এরাই কিন্তু আপনার ভবিষ্যতের জন্য অনেক বড় বড় লিংক তৈরি করে দিতে পারে।

চাকরি বদলাতে চাচ্ছেন এতে মোটেও খারাপ কিছু নেই। বরং দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন কোথাও গেলে আপনারই পদ বাড়বে, বেতন বাড়বে। বর্তমানে যেখানে আছেন সেখানে হতাশ হয়ে গেলে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। নতুনত্ব খোঁজাতে কোনো অপরাধ নেই। আপনার জন্য শুভকামনা।

ছবিঃ সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *