একজন ভালো লিডার যে কথাগুলো কখনোই বলেন না

কথায় বলে, ‘বলার আগে ভাবো’। এটাই তো আসলে হওয়া উচিত, তাই না? সবার বেলাতে কথাটা যতটা সত্যি, একজন ভালো লিডার বা বসের বেলাতেও এর গুরুত্ব কিন্তু মোটেও কম নয়! আচ্ছা ভেবে বলুন তো, এই কথাটার কতটুকু আপনি ঠিকঠাক মেনে চলেন, বিশেষ করে যদি আপনি নিজেকে একজন লিডার বলতে চান? আপনাকে কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকটাই সাবধান হতে হবে। কারণ আপনার কথায় মানুষ ইনফ্লুয়েন্সড হবে, নতুন কাজের উৎসাহ পাবে। তাই যে কথাটি আপনি বলতে চাচ্ছেন, তা অবশ্যই ভেবে বলুন। কিছু কথা এমন আছে যেগুলো একজন লিডার হিসেবে কর্মীদের আপনার কখনোই বলা উচিত নয়। চলুন তাহলে সে কথাগুলো সম্পর্কেই আজ জানা যাক।

একজন ভালো লিডার যে কথাগুলো বলেন না 

“আমার এখন সময় নেই”

সত্যি বলতে, একজন লিডার সব সময়ই ব্যস্ত থাকেন। কাজ আর মিটিং যেন কখনোই শেষ হতে চায় না। কিন্তু এত ব্যস্ততার পরও একজন লিডার হিসেবে আপনার কর্মীর কথা শোনার এবং প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আপনার কাছে থাকতে হবে। একজন লিডার যদি সব সময় বলতে থাকেন “এখন কথা বলার সময় নেই” অথবা “পরে আসুন”, তাহলে এক সময় তারা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করাই বন্ধ করে দিবে। তাই নিজের এই মানুষগুলোর জন্য কিছুটা হলেও সময় রাখুন। যদি আপনি কোনো কাজের মধ্যে থাকেন, তাহলে অবশ্যই পরবর্তীতে কথা বলতে পারবেন, এমন একটি সময় ফিক্সড করে দিন।

“কারণ এভাবেই আমরা সব কাজ করি”

প্রতিটি মানুষের কাজের ধরন আলাদা। আজ যখন আপনি লিডার হয়েছেন, তার মানে এই নয় যে অন্যের কোনো সাজেশন নেয়া আপনি একদম বন্ধ করে দিবেন! একজন লিডারকে অবশ্যই খোলা মনমানসিকতার হতে হবে। তার যদি সত্যিই মনে হয় যে, কর্মীর সাজেশন নেয়া সম্ভব নয়, তাহলে সেটা তাকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করে পরে বুঝিয়ে বলতে হবে। যদি কর্মীর সাজেশন নিয়ে ভালো কাজ করা যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্য সেটাও করতে হবে।একজন ভালো লিডার কথা বলেন না

“কী ভেবেছিলেন? আপনি যা ভাববেন তাই হবে?”

একজন ভালো বস কখনো তার কর্মীদের জিজ্ঞাসা করবেন না এই বলে যে, “আপনি কী ভেবেছেন? যা আপনি ভাববেন সেভাবেই হবে?” কারণ মানুষ তার ভুল থেকেই শিখে। কর্মীরা ভুল করতেই পারে। তাদেরকে দোষ না দিয়ে তাদের ভুল থেকে শিখতে দিন। যখন আপনি কাউকে তার ভুলের জন্য কঠিন সমালোচনা করছেন বা বেশি রাগ দেখাচ্ছেন, তখন তারা কাজটি শেখার চেয়ে শুধু করে যাওয়াটাকেই প্রাধান্য দেয়। এই বিষয়গুলো যে শুধু নিজেকেই কষ্ট দেয় তা নয়, বরং পুরো প্রতিষ্ঠানেরই এতে ক্ষতি হয়।

“দেখি, আমাকে করতে দিন!”

কর্মী কিন্তু সব কাজ জেনে আপনার কাছে আসে না। কাজ করতে করতেই সে শিখে। তাই যখন সে আপনার কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে আসে তার মানে এই নয় যে, সে কাজটি করতে চায় না। কিন্তু হয়তো সে আপনার কাছে আসাতে কাজটি আপনি তাকে না শিখিয়ে নিজেই করে দিচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন, আপনি করে দিলে কাজটি দ্রুত শেষ হবে অথবা এটা কোম্পানির জন্য ভালো। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এভাবে আপনি ঠিক কতদিন তার কাজ করে দিবেন? যদি তাকে শেখার সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে একটা সময় দেখবেন তারা কিছুই শিখেনি। তাই সব কাজ নিজে না করে তাদেরকেও কিছুটা সুযোগ দিন।

“আগের কর্মী আপনার চেয়ে ভালো ছিল”

একজন কর্মীর সাথে অন্যজনের তুলনা মানে একটি সুন্দর সম্পর্ককে মুহূর্তেই প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলা। ইন্টার্নাল কম্পিটিশন ভালো হতে পারে, কিন্তু তিক্ততাপূর্ণ নয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টেরই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। আপনি হয়ত তাদের পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু সরাসরি তুলনা করে একে অন্যকে ছোট করা একদমই উচিত নয়।

Angry Boss Shouting

“আপনি বুঝতে পারছেন না”

সবাই জানে প্রতিষ্ঠানে লিডাররা সব সময় স্মার্ট লোকদেরই চাকরি দেয়। কিন্তু পরে তাদেরকে বলে যে, তারা যেমন বুদ্ধিমত্তার লোক চেয়েছিল আপনি তাদের মধ্যে নন! এতে কিন্তু একজন কর্মীর শুধু কাজ করাই কমে যায় না, বরং পরবর্তীতে যে কোনো কাজ করার আগে সে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। লিডার যদি মনে করেন, তার টিম মেম্বারদের মধ্যে কোনো সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তাকে অবশ্যই সেটি সমাধানে সবার সাথে বসতে হবে।

“আপনার পারফর্মেন্সের কারণে কোম্পানি ডুবতে বসবে!”

একজন লিডার বা বসের কখনোই তার কর্মীকে এটা বোঝানো যাবে না যে, তার একক পারফর্মেন্সের কারণে পুরো কোম্পানি ডুবতে বসবে! এর বদলে পুরো টিম নিয়ে কীভাবে টিম ওয়ার্ক করা যায় এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সেটা কতটুকু ভ্যালুয়েবল হতে পারে সেটাই ভাবা উচিত। একজন কর্মীর উপর কখনোই পুরো প্রতিষ্ঠানের বোঝা একবারে চাপিয়ে দেয়া যাবে না।

“আমি বলেছি, তাই করবেন”

আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে যখন কাউকে কাজ দিচ্ছেন তখন কেন দিচ্ছেন সেটাও নিশ্চয়ই আপনি জানেন। তাই বলে অযাচিত কোনো কাজ তাকে দিয়ে করানো মোটেও ঠিক নয়। প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ যখন আপনি কর্মীকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তখন আপনাদের মধ্যে এই স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। একজন কর্মীর যেমন বস থাকবে, তেমনই বসদেরও কাজের জন্য কর্মীদের প্রয়োজন। কিন্তু কখনোই জোর দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না।

“আপনি লাকি যে, আপনার কাছে এই চাকরি আছে”

প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করে তারা সবাই কিন্তু কোনো না কোনো দিক থেকে ভালো। তাই কাউকেই ছোট করে দেখা যাবে না। হুট করে যদি আপনি কোনো কারণে তাকে বলে বসেন, ‘আমি বলেই আপনাকে এখানে রেখেছি! আপনি লাকি যে এখনও আপনার চাকরিটা আছে!” – তাহলে তার কেমন লাগবে বলুন তো? কেউ কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বসের কাছে জিম্মি নয় কাজ করার জন্য। যদি কর্মীর কাজে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তার পারফর্মেন্স ইস্যু নিয়ে তার সাথে আলাদা করে বসুন, কথা বলুন। যদি কাজে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন ঠিক কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে। হুট করেই তার উপর কোনো দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না।

ভালো লিডার যে কথা বলেন না

 “আপনি কেন ছুটি চাচ্ছেন?”

এ ধরনের প্রশ্ন কখনোই কোনো কর্মীকে করা উচিত নয়। এতে সে নিজেকে অপরাধী ভাবতে পারে। প্রতিটি মানুষেরই কাজের ফাঁকে বিরতির প্রয়োজন। তাই একটানা কাজ করতে করতে যখন সে ছুটি নিচ্ছে তখন আপনাকে বুঝতে হবে, তারও হয়ত কিছুটা বিশ্রামের প্রয়োজন। “আপনি কেন ছুটি নিচ্ছেন” অথবা “মাত্রই তো ছুটি নিয়েছেন, আবার কীসের ছুটি?” এ ধরনের প্রশ্ন যখনই করবেন তখনই কর্মী হয়তো কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে। বরং বলুন, “ছুটি নিন। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ব্যালেন্স করার চেষ্টা করুন। যেটুকু সময় ছুটিতে আছেন পুরোটা উপভোগ করুন।“

একজন লিডার মানেই যে তিনি সব জানেন তা নয়। তাকেও প্রতি পদে পদে নতুন নতুন জিনিস জানতে হয়, শিখতে হয়। তার সাথে কর্মীরা কাজ করেন বলে প্রেশার অনেকটা কমে যায়। কিন্তু দিন শেষে আপনি লিডার বলে যদি হুটহাট তাদেরকে কোনো কথা বলে বসেন তাহলে প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি। আজ জানিয়ে দিলাম, একজন ভালো লিডারের কোন কথাগুলো বলা থেকে বিরত থাকা উচিত সে সম্পর্কে। আপনি যদি এখন একজন লিডার হয়ে থাকেন বা ভবিষ্যতে হতে চান, তাহলে উপরে বলা কথাগুলো থেকে যতটুকু সম্ভব বিরত থাকুন।

ছবিঃ Emeritus, Linkedin, Lingo Live, Entrepreneur

1 thoughts on “একজন ভালো লিডার যে কথাগুলো কখনোই বলেন না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *