জীবন থাকলে যেমন সমস্যা থাকবেই, একই কথা খাটে আপনার বিজনেসেও। “Life is not a bed of roses” প্রবাদটিকে আমরা কেউই উপেক্ষা করতে পারি না। তেমনই, ব্যবসার ক্ষেত্রেও ছোট বড় সমস্যার মুখোমুখি হতেই হয়। এখন, সমস্যা কীভাবে হলো, কেন হলো এগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো সমস্যা মোকাবিলার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। এই সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপকেই বলা হয় ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কী?
সাধারণ ভাষায়, বিজনেসের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রে বিজনেসের সুনাম রক্ষা করতে সঠিক পদক্ষেপ নেয়াকেই বলা হয় ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট। এক্ষেত্রে নেতিবাচক ঘটনা যে কোনো কিছু হতে পারে। হয়ত বড় ধরনের লস, নেগেটিভ মার্কেটিং, কাস্টমার বা টিম মেম্বারদের অসন্তুষ্টি, অথবা টেকনোলজিক্যাল কোনো সমস্যা। প্রশ্ন যখন একটা পুরো কোম্পানি নিয়ে, ছোট হোক বা বড়, বিপদ অনেকদিক থেকেই আসতে পারে। তবে, একটা বিজনেস ক্রাইসিসে মূলত তিনটা জিনিস কমন। সেগুলো হলো-
- বিজনেসের জন্য ইন্টারনাল বা এক্সটার্নাল থ্রেট
- সারপ্রাইজ এলিমেন্ট বা হুট করে চলে আসা
- ডিসিশন নেয়ার সময় খুব কম থাকা
এই হুট করে চলে আসা বিপদ সামলাতেই অল্প সময়ে খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে একই সাথে দুইটি জিনিসের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রথমটি হলো, ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা অর্থাৎ যে ক্ষতি হয়ে গেছে তাকে আর বাড়তে না দেয়া, দ্বিতীয়টি হলো একই সাথে কাজের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে খুব দ্রুত চেষ্টা করা। এর জন্য খুব ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হয়, নাহয় আরো বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট একটা ব্যবসার বিপদের সময়ে কাজে লাগে। বিপদ বেশিরভাগ সময়েই হুট করে এসে পড়ে, এস্কেপ প্ল্যান বা ড্যামেজ কন্ট্রোলের কোনো উপায় ভাবা না থাকলে হয়ে যেতে পারে অনেক বড় ক্ষতি। আরো বেশ কিছু কারণে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক ও আইন সম্পর্কিত ঝামেলা কমানো
আর্থিক ও আইনগত সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকেই ভেবে রাখা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এর একটা অন্যতম অংশ। যদি একটা ক্লিয়ার প্ল্যান আগে থেকেই করা থাকে, তাহলে এসব সমস্যা অনেক কমে আসে, এবং ক্রাইসিস বুঝতে পারার পর খুব দ্রুতই একশনে নেমে ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।
দ্রুততম সময়ে কাজে লাগা
যেহেতু বিপদ কখন চলে আসে বলা যায় না, তাই যে কোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকাটাই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট। থেকেই যদি সবকিছু গোছানো এবং সুন্দরভাবে প্ল্যান করা থাকে তাহলে সমস্যা হাজির হওয়া মাত্র সমাধান করতে নেমে পড়া যায়। এর ফলে বিদের কারণে যেসব ক্ষতি হতে পারে, সেগুলো কমে আসে, এবং বিজনেস এর উপর এর প্রভাবও কমে আসে।
শেষমুহূর্তে বিপদে না পড়া
আমরা কেউই চাই না আমাদের বিজনেস অথবা কাজে কোনো সমস্যা হোক। তাই, আগে থেকে প্ল্যান প্রোগ্রাম করে রাখা এবং সঠিক সময়ে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে আর একদম শেষমুহূর্তে এসে কোনোভাবে টানাটানি করে প্ল্যান বানানো, অথবা ভুলভাল এক্সিকিউশনের মত বিপদে পড়তে হয় না।
বিজনেস ও নিজের রেপুটেশন ঠিক রাখা
একটা সমস্যা বা ধাক্কা, তা হোক ছোট কিংবা বড়, অনেকদিনের সাজানো-গোছানো কাজ মুহূর্তের মধ্যেই শেষ করে দিতে পারে। অথবা আপনার পারফেক্ট রেপুটেশনে আঘাত হানতে পারে। এই কারণে, উৎপাদন অনুযায়ী আগে থেকে প্রস্তুত থাকা, এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারা বিজনেসের রেপুটেশন রক্ষা করবে। একই সাথে সময় মতো ক্রাইসিস ডিল করার কারণে আপনার বিজনেসের একটিভিটি,একাউন্টেবিলিটি কমিটমেন্টের পরিচয় ক্রেতারা পাবেন, যা আরো ভালো রেপুটেশন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
মানসিক শান্তি
অনিশ্চয়তার ভয় আমাদের সবারই থাকে। যে কোনো সময় কোনো না কোনো সমস্যা হয়ে যেতে পারে। আগে থেকেই যদি প্ল্যান করা থাকে, তাহলে সঠিক সময়ে সবার আগে কাজে লেগে পড়তে সমস্যা হয় না। তাই, আগে থেকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান করা থাকলে এই ব্যাপারে বাড়তি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও মানসিক শান্তি ঠিকঠাক থাকে।
একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানে কী কী রয়েছে?
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার জেনে নেব একটি আদর্শ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানে কী কী রেডি থাকতে হয়।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিম
শুরুটা করতে হবে জরুরি অবস্থায় দায়িত্ব নিতে পারবেন এমন কয়েকজনকে নিয়ে। আপনার বিজনেসের দায়িত্বশীল ও চটপটে কয়েকজনকে নিয়ে প্রথমেই রেডি করুন একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিম। এই টিমে অবশ্যই আপনার বিশ্বাসী মানুষদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং তাদেরকে বেশ ভালো করে ট্রেনিং দিতে হবে। হঠাৎ কোনো জরুরি প্রয়োজনে কী কী করা দরকার, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে এসব অবশ্যই তাদের জানা থাকতে হবে।
আপনার যদি ছোট বিজনেস হয়, যেখানে আপনি একাই অথবা অল্প কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে আছেন, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাইরের সাহায্য নিতে পারেন। লক্ষ্য হলো আগে থেকে প্ল্যানিং করা এবং কী করতে হবে তা ঠিক করে রাখা।
জরুরি কন্ট্যাক্ট লিস্ট
এইখানে আমরা একটা উদাহরণ দিতে পারি। বিভিন্ন বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফ্ল্যাট বাড়ি বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আমরা প্রায়ই দেখি সাইনবোর্ড পোস্টার আকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্যাক্টস বিভিন্ন জায়গায় আটকানো থাকে। ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, ইলেকট্রিসিটি ম্যানেজমেন্ট অফিস ইত্যাদির সাথে সাথে কিছু জরুরী রেসকিউ টিমের নাম্বারও দেখা যায়। ঠিক এইভাবে এইসব সহ আপনার বিজনেস এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্যাক্ট কোনো এক জায়গায় লিস্ট করে রাখতে পারেন। একই সাথে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের কাছে এই কন্টাক্ট লিস্ট দিয়ে রাখতে পারেন। এর মধ্যে আপনার সাপ্লায়ার, গুরুত্বপূর্ণ কাস্টমার, পার্টনার ও স্টেক হোল্ডারদের কন্টাক্টও থাকতে পারে।
সম্ভাব্য বিপদ আইডেন্টিফাই
বিপদ কখন আসবে, বা কেমন বিপদ আসবে, এটা আমরা আগে থেকে বলতে পারি না। কিন্তু একই ধরনের অন্যান্য বিজনেসগুলো খেয়াল করলে আমরা মোটামুটি আন্দাজ করে নিতে পারি এই ধরনের বিজনেসে ঠিক কেমন ক্রাইসিস হতে পারে। ইন্টারনাল অথবা এক্সটার্নাল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা বড় কোনো এক্সিডেন্ট, সাইবার এটাক অথবা ইনফরমেশন লিক যেকোনো ধরনের সমস্যাই হতে পারে। এবং এক একটি সমস্যার জন্য একেক ধরনের প্ল্যান থাকতে হয়। তাই, সমস্যার ধরন কী কী সেটা আগে থেকে আন্দাজ করে সে অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রাখা ভালো।
ব্যাক আপ রেডি রাখা
যে কোনো ক্রাইসিস বা পটেনশিয়াল ক্রাইসিস এর ক্ষেত্রে মূল সলিউশন যদি ফেইল করে সেক্ষেত্রে ব্যাকআপ থাকতে হয়। খুব ছোট বিষয় থেকে অনেক বড় সমস্যা সলভ করতেও ব্যাকআপ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোনোদিন আপনার কোনো একজন এমপ্লয়ি কাজে না আসেন, অসুস্থ থাকেন অথবা কোনো কারণে তিনি চাকরিই ছেড়ে দেন, সেই গ্যাপ ফিলাপ করতে আপনার অবশ্যই অন্য কাউকে লাগবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার আগের টিমের কাউকেই বেসিক ট্রেনিং দিয়ে রাখেন, তাহলে নতুন হায়ার করতে করতে যেটুকু সময় যাবে, সেই সময়ে আপনার কাজ পড়ে থাকবে না। আবার যদি আপনার বর্তমান সাপ্লায়ার অথবা হোলসেলারের সাথে কোনো কারণে কাজ ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে আপনি ব্যাকআপ কোন সাপ্লায়ারের কাছে যাবেন, মার্কেটে আর কে একই রকমের সার্ভিস দিচ্ছেন, কার কাছে খরচ কী রকম, এসব ব্যাপারেও আপনার কাছে ক্লিয়ার তথ্য থাকতে হবে। এগুলো সবই আপনার ব্যাকআপের আন্ডারে পড়ে, এবং জরুরি প্রয়োজনে এগুলো কাজে লাগবে।
প্ল্যান ম্যানেজমেন্ট, মনিটরিং এবং রিভিউ
প্ল্যান করে ফেলা মানে ১০০% নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া নয়। প্রতিনিয়ত সবকিছুই চেঞ্জ হতে থাকে, কিছুদিন পরে পরেই আপনার ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান রিভিউ করা ভালো। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার চেঞ্জ করা, কন্ট্যাক্ট লিস্ট আপডেট করা, নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হওয়া এই সবগুলোই মনিটরিং এবং রিভিউ এর মধ্যে পড়ে। প্রয়োজনে নতুন নতুন তথ্য এলে সে অনুযায়ী প্ল্যান আপডেট করা ও প্রয়োজনীয়।
কীভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজ করা যায়?
প্ল্যান আগে থেকে ঠিক করার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা জেনেছি, কিন্তু আগে থেকে প্ল্যান করা থাকলেও একচুয়াল ক্রাইসিস এর সময় কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়, যেগুলো হয়তো সব সময় প্ল্যানে নাও থাকতে পারে, আবার দ্রুততার সাথে না নিলে প্ল্যান ফলো করেও লাভ হয় না। এছাড়া প্ল্যান, রিহার্সেল আর অ্যাকশন সম্পূর্ণই ভিন্ন জিনিস। এজন্য ক্রাইসিস মোমেন্ট এলে আগে থেকে করা প্ল্যানের সাহায্যে কীভাবে সেই ক্রাইসিস ম্যানেজ করা যায় সেটা নিয়েই আমরা এখন জানবো।
সরাসরি ক্রাইসিস ডিল করা
যদিও সব রকমের ক্রাইসিস আলাদা আলাদা হতে পারে, কিন্তু যে কোনো ক্রাইসিসেই সর্বপ্রথম স্টেপটা হবে এটাকে স্বীকার করে এটা সম্পর্কে পদক্ষেপ নেওয়া। সমস্যার স্বীকার করতে না চাওয়া, হেলাফেলা করা অথবা দায়সারা ভাবে অন্য কাউকে কাজ সামলাতে দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া কখনো বিজনেস এর জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। কী হচ্ছে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে, এবং সে অনুযায়ী কাজে নামতে হবে। আন্দাজ এর উপর ভর করে, কোনোভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে আরো বড় ক্ষতির কারণ।
এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হতে পারে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ, বা এই ধরনের ক্রাইসিস হ্যান্ডেল করেছেন এমন কারো সাথে যোগাযোগ করা, পরামর্শ ও উপদেশ নেয়া, প্রয়োজনে সম্ভব হলে তাকে নিয়ে একসাথে কাজ করা। মোট কথা ক্রাইসিসকে হালকাভাবে কোনোমতেই দেখা যাবে না। এবং যতদূর সম্ভব নিজে প্রেজেন্ট থেকে জিনিসটা সরাসরি ডিল করতে হবে। এর ফলে ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতাও হবে।
মিডিয়ার সাথে স্বচ্ছ যোগাযোগ
বিভিন্ন কোম্পানিতে যেকোনো সময় যখন কোনো ক্রাইসিসের মুখোমুখি হতে হয়, তার সাথে কিছুটা মিডিয়া ইন্টারেস্ট এর মুখোমুখি হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মিডিয়া সাধারণত কোম্পানির সিইও, মুখপাত্র অথবা সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কারো সাথে সরাসরি কথা বলে ক্রাইসিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চায়। কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সমস্যার সূত্রপাত কোথা থেকে, সমস্যা ঠিক হবে কিনা অথবা ঠিক করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এগুলো কমন প্রশ্ন হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে উচিত হবে সরাসরি মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করা এবং যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু তথ্য তাদের দেওয়া। গুরুত্বপূর্ণ এবং ট্রেইন্ড এমপ্লয়ি ছাড়া অন্য কাউকে মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া যাবে না। কোম্পানির সেনসিটিভ ইনফরমেশন যাদের কাছে ভরসা করা যায়, শুধুমাত্র তাদের সাথেই মিডিয়ার যোগাযোগ করতে দেয়া যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানির ওনার অথবা সিইও সরাসরি অথবা রেকর্ডেড ইন্টারভিউ ভিডিওতে অফার করতে পারেন। এছাড়াও কোনো পাবলিক রিলেশন ফার্ম অথবা এক্সপার্ট কনসালট্যান্টকে হায়ার করা যেতে পারে সাময়িকভাবে এই ক্রাইসিস টাইমের জন্য।
এই মিডিয়া ট্র্যাকশন সাময়িকভাবে ক্রাইসিস ডিল করার সাথে সাথে কোম্পানির ক্লিয়ার এবং সরাসরি এপ্রোচ সম্পর্কে কাস্টমারদের জানায়, যেটি পরবর্তীতে বিজনেসের জন্য ভালো।
পাবলিক স্টেটমেন্ট রেডি করা
যে কোনো প্রবলেমের ক্ষেত্রে কাস্টমার, মিডিয়া, ইনভেস্টর, স্টাফদের সাথে ক্লিয়ার কমিউনিকেশন থাকা জরুরী। একসাথে এই সবগুলোর সলিউশন হতে পারে পাবলিক স্টেটমেন্ট রিলিজ করা। আপনি যদি নিচে থেকে পাবলিক স্টেটমেন্ট রিলিজ না করেন, তাহলে পাবলিকের কাছে ভুল তথ্য অথবা আতঙ্ক সৃষ্টি করার মতো তথ্য প্রচার হয়ে যেতে পারে। এজন্য সলিউশন হচ্ছে নিজ থেকেই সব কিছু গুছিয়ে পাবলিকলি সমস্যা এড্রেস করা, কাস্টমারদের আশ্বস্ত করা এবং প্রবলেম সলভিং এর চেষ্টা সম্পর্কে তাদেরকে তথ্য দেয়া, যেটা বিজনেসের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আপনার ক্রাইসিস যদি প্রোডাকশন জনিত সমস্যা অথবা আন্ডার কোয়ালিফাইড প্রোডাক্ট হয়ে থাকে, যা অলরেডি মার্কেটে চলে গেছে, সে ক্ষেত্রে কাস্টমারকে নিজ থেকে রিপ্লেসমেন্ট অথবা রিফান্ড প্রসেস করে দেয়া কোম্পানির কর্তব্য। নষ্ট অথবা রিজেক্টেড প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কাস্টমারকে জানানো, পণ্যের মান ঠিক রাখতে আপনাদের কোম্পানি থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় এসব আর একবার ক্লিয়ারভাবে প্রচার করা, এসবও পাবলিক স্টেটমেন্ট এর মধ্যে যোগ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে কাস্টমার ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পূর্ণ সৎ থাকতে হবে এবং ক্লিয়ার কমিউনিকেশন থাকতে হবে।
দায়িত্ব এড়ানো, গা ছাড়া ভাব অথবা অন্য কোনো পার্টির উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করবে না, বরং এতে আপনার কোম্পানির দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার সমাধান করাতে কোম্পানির গুড পলিসি এবং কার্যকারিতার প্রকাশ পায়। তাই শান্ত এবং প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ এর মাধ্যমে এই ইস্যুটা ডিল করতে হবে।
লিগ্যাল ইস্যু সম্পর্কে সতর্ক থাকা
যেকোনো ধরনের মিসহ্যাপের ক্ষেত্রে আইনগত ব্যাপারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় ইন হাউস লিগ্যাল কাউন্সিল অথবা অ্যাটর্নিদের সাহায্য নিতে হবে। কোনো ধরনের ক্রাইসিসে সাধারণত সবচেয়ে বেশি রিস্ক থাকে লিগ্যাল ব্যাপারগুলোতে, কারণ এর সাথে কাস্টমার ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ সরাসরি জড়িয়ে থাকে।
সাধারণত লিগ্যাল সমস্যার ক্ষেত্রে অ্যাটর্নিরা নো কমেন্ট এপ্রোচ অথবা পাবলিকলি সরাসরি কিছু বলার বিপক্ষে উপদেশ দেন। তবে সব সময় এই নো কমেন্ট এপ্রোচ কাস্টমারদেরকে সন্তুষ্ট নাও করতে পারে, এবং এর থেকে অসন্তোষ জন্ম নিতে পারে, যার ফলাফল কোম্পানির উপরে নেতিবাচক ভাবে পড়ে। তাই লইয়ারদের পরামর্শ নিয়ে যতটুকু তথ্য পাবলিকলি ছাড়া যাবে, অথবা কাস্টমাররা জানার অধিকার রাখে, সেটুকুই গুছিয়ে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করতে হবে। একই সাথে কী কী লিগ্যাল রিস্ক আসতে পারে, সেগুলো কীভাবে এড়ানো অথবা সমাধান করা যায়, কোম্পানির স্বার্থের জন্য এই পক্ষ থেকে কোনো লিগ্যাল স্টেপ এ যেতে হবে কিনা এসব খুব ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কোম্পানির সাথে জড়িত সকল কাগজপত্র, ডেটা ফাইল, বিভিন্ন প্রমাণ ইত্যাদি সাবধানে এবং নিরাপদে সংরক্ষিত রাখতে হবে, এবং ক্রাইসিস এর ফলে এগুলোর কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা তা সবার আগে চেক করতে হবে।
স্টাফদের সাথে ক্লিয়ার থাকা
আপনার বিজনেসের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত থাকে আপনার স্টাফ ও এমপ্লয়িরা। যেকোনো ধরনের ক্রাইসিসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই ডিল করে, তাই ক্রাইসিস টের পাওয়ার সাথে সাথে মিটিং অথবা অনলাইন বার্তার মাধ্যমে স্টাফদেরকে জানিয়ে দিতে হবে কে ঘটেছে এবং তা কতটুকু ক্রিটিক্যাল। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার স্টাফরা সরাসরি জড়িত থাকবে। বেশিরভাগ কাজগুলোই তাদের করতে হবে। তাই কী হয়েছে, কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে এসব সম্পর্কে তাদেরকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। প্রয়োজনে সরাসরি মিটিং ডেকে প্রত্যেককে তাদের দায়িত্ব আলাদাভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এর ফলে কাজের গতিতে কোনো বাধা আসবে না এবং ইন্টারনালি কোনো গুজবের সৃষ্টি হবে না।
একই সাথে স্টাফদের কমিউনিকেশন এর উপরে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। কোথায় কী বলা যাবে, কী বলা যাবে না, যেকোনো তথ্য সবার আগে কোথায় দিতে হবে, নতুন কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে কীভাবে সলভ করতে হবে, প্রয়োজনে সরাসরি হেড অফিসে যোগাযোগ করতে হবে কিনা এ সম্পর্কেও জানিয়ে রাখতে হবে। এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, মিডিয়া আপনার কোম্পানির সাথে জড়িত যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকেই মতামত চাইবে, ভেতরের খবর জানতে চাইবে। এক্ষেত্রে প্রফেশনালি বিহেভ কীভাবে করতে হবে, এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে কীভাবে উত্তর দিতে হবে এসব সম্পর্কেও তাদের ট্রেনিং দিতে হবে। এটা না হলে কোম্পানির গোপনীয়তা পাবলিকলি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে যা পরে ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্ব দেয়া
সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্বকে বর্তমানে অস্বীকার করার উপায় নেই। সব বয়সের সব স্তরের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এটাকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার বিজনেসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রিসার্চ করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভেরিফাইড পেজ থাকা, সেখান থেকে মার্কেটিং করা, কাস্টমারের সাথে কানেক্ট করা, প্রমোশন ও সেলসের সংযুক্ত করা এসব বিজনেস এর পরিস্থিতি অনেকটাই বাড়ায়। যেকোনো ক্রাইসিস এর ক্ষেত্রে পাবলিক স্টেটমেন্ট এর সময় সোশ্যাল মিডিয়াকেও মাথায় রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি আপনার কাস্টমারদের সরাসরি মতামত দেখতে পারবেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আপনার ক্লিয়ার স্টেটমেন্ট তাদেরকে অফার করতে পারবেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্র্যান্ডের পার্সোনাল ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম অথবা টুইটার একাউন্টে এসে কাস্টমাররা নিজেদের মতামত দেন, কমেন্টে, পোস্টে অথবা ইনবক্স করে। এই দিকটা মাথায় রেখে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের জন্য দক্ষ কাউকে হায়ার করতে পারেন, যে প্রফেশনালিজমের সাথে কাস্টমার হ্যান্ডেল করবে এবং ক্রাইসিস মোমেন্ট এ সুন্দর করে স্টেটমেন্ট দিয়ে কাস্টমারদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। বর্তমানে যেহেতু বিশ্বের বেশিরভাগ লোক বেশ অনেকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, এখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে, কোন ব্র্যান্ড তাদের সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে হ্যান্ডেল করছে, ক্রাইসিস মোমেন্টে তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষা কেমন এগুলো কাস্টমারের বিহেভিয়ার এর উপর প্রভাব ফেলে। তাই এই দিকটা খেয়াল রাখা খুব জরুরী।
ক্রাইসিস শেষে অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন
ক্রাইসিস পিরিয়ড কেটে যাওয়ার পর ইমেজ পুনরুদ্ধার ও স্ট্রং কামব্যাকের জন্য নতুন অ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন হতে পারে একটি ভালো পদক্ষেপ। শুধুমাত্র ট্রাডিশনাল মিডিয়া নয়, ডিজিটাল এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও সমানভাবে প্রচার করতে হবে এই নতুন ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পেইন পি আর ফ্রেন্ডলি হলে ভালো, একই সাথে কাস্টমারের মন জয় করার জন্য ঢালাওভাবে কোনো ডিসকাউন্ট অথবা কুপন দেয়া যেতে পারে।
এই পি আর ক্যাম্পেইনে ইনক্লুডেড হতে পারে অ্যাপোলোজি স্টেটমেন্ট, নতুন গ্যারান্টি, সমস্যা সমাধানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ সম্পর্কে স্টেটমেন্ট।
এছাড়াও কাস্টমারদের যদি কোনোরকম ক্ষতি হয়ে থাকে, রিজেক্টেড অথবা ফল্টি প্রোডাক্ট পেয়ে থাকেন, কোনো রকম শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হয় সে ক্ষেত্রে কোম্পানির অ্যাপোলোজি, রিফান্ড রিপ্লেসমেন্ট বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও এই স্টেপে জরুরী। এতে কোম্পানির উপর কাস্টমারদের বিশ্বাস ফিরে আসবে, কোম্পানির স্বচ্ছতার উপর তারা আস্থা রাখবেন এবং নতুন কাস্টমারও আসতে পারে এ থেকে।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে ভুল কীভাবে ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে?
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিজনেসের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছি। কোনো একটা পদক্ষেপে ভুল হলেই সর্বক্ষণের জন্য বিজনেসের বদনাম হয়ে যেতে পারে। ভুল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট মূলত তিন দিক থেকে একটা বিজনেসের ক্ষতি করে।
১. রেপুটেশন ড্যামেজ
ক্রাইসেসের সাথে যে নেগেটিভ মিডিয়া এটেনশন আসে, তা বিজনেসের জন্য ভালো হয় এমনটি বলা যাবে না। বিজনেস সম্পর্কে নেগেটিভ স্টোরি যখন মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়, তখন পটেনশিয়াল কাস্টমারদের কাছেও নেগেটিভিটিটাই বেশি ছড়ায়। আর ইন্টারনেটে প্রেজেন্ট থাকার কারণে একটা বড় সময় পর্যন্ত নেগেটিভ স্টোরিটাই ফিরে আসতে পারে, যা বিজনেসের সুনামের জন্য ক্ষতিকর।
২. বিজনেস অপারেশনে সমস্যা
সাধারণত ক্রাইসিস প্ল্যান রেডি থাকলেও বিভিন্ন সেক্টর থেকে এক্সট্রা এমপ্লয়ি এনে ক্রাইসিস হ্যান্ডেল করতে হয়। এতে বিজনেসের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়, অন্যান্য এমপ্লয়িদের উপর বেশি চাপ পড়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রোডাকশনেও ঝামেলা হয়। দিয়ে ঝামেলা একটা বড় সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে নেতিবাচক প্রভাব এমপ্লয়িদের উপরেও পড়ে। আগের মতো কাজ করে যাওয়ার মত শারীরিক বা মানসিক অবস্থা থাকে না। প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত কাজ করার কারণে শর্ট নোটিশে চাকরি ছেড়ে দেওয়া, কাজের মান কমে যাওয়া, বা অতিরিক্ত এমপ্লয়ি হায়ার করার প্রয়োজন পড়তে পারে। যার ফলে অপারেটিং কস্ট বেড়ে যায়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এমপ্লয়িরা যদি চলে যান, তাহলে বিজনেসের কার্যকারিতা কমে পুরো বিজনেস এর ওপর নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে।
৩. রেভিনিউ লস
ক্রাইসিসের সময়ে একটা বিজনেসকে অনেক কিছু একসাথে হ্যান্ডেল করতে হয়। নেগেটিভ পাবলিসিটি, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট হ্যান্ডেল ইত্যাদি সবকিছু একসাথে করতে গিয়ে সব মিলিয়ে বিজনেসের লস আসতে পারে। যদি প্রোডাক্ট ফল্টি হয়ে থাকে তবে সেই পুরো প্রোডাক্ট ব্যাচটাই লসের খাতায় পড়ে যায়। এছাড়াও সারাক্ষণ নেগেটিভ মিডিয়া এটেনশনের কারণে সম্ভাব্য কাস্টমাররাও বিজনেস থেকে দূরে চলে যায়, যার ফলে ছেলের হার কমে আসে এবং রেভিনিউ কম হয়।
সফল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এর উদাহরণ
সময় মতো সফলভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজ করতে পারায় বেশ অনেকগুলো ব্র্যান্ডই নিজেদের সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে এবং সময়ের সাথে সাথে আরো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখ করা যায় জনসন এন্ড জনসনকে। ১৯৮২ সালে বেশ বড় একটা স্ক্যান্ডালের মুখে পড়ে যায় জনসন এন্ড জনসন। তাদের ম্যানুফ্যাকচার করা বিখ্যাত টাইলানল তখন পেইন রিলিফের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ওষুধ। কিন্তু হঠাৎই এক্সট্রা স্ট্রং টাইলানল সেবনের ফলে সাত জন মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ১২ বছর বয়সী ম্যারি কেলারম্যান নামে এক বালিকাও ছিল। তদন্তে জানা যায় যে টাইলানল এর বোতলে সায়ানাইড মেশানো ছিল, যার বিষক্রিয়ার ফলে সেই সাত জনের মৃত্যু হয়। এর ফলে জনসন এন্ড জনসন বেশ বড় ক্রাইসিসে পড়ে যায়। তবে, তাদের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক এখনো এফেক্টিভ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এর কেস স্টাডি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পয়জনিং এর খবর পাওয়ার সাথে সাথে এই কোম্পানির সারা দেশের মার্কেট থেকে প্রায় একত্রিশ মিলিয়ন বোতল টাইলানল সরিয়ে নেয়। এতে তাদের বেশ বড় ক্ষতির শিকার হতে হয়, কিন্তু তারা পেছায়নি। এবং পাবলিকলি ওয়ার্নিং দিয়ে তারা মানুষকে আপাতত ওষুধটি খেতে নিষেধ করে, এবং তদন্তে অথোরিটির সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করে। তদন্তে জানা যায়, তাদের ওষুধে কোনো সমস্যা ছিল না, অজ্ঞাতনামা কেউ একজন সেলফ থেকে বোতল সরিয়ে তাতে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলো, যার ফলে সাতজনকে প্রাণ দিতে হয়।
যদিও তাদের কোনো দোষ ছিল না, তারপরেও এই ব্যাপারে জনসন এন্ড জনসন পদক্ষেপ নেয়। তারা পরের প্রোডাকশনে টেম্পার প্রুফ প্যাকেজিং বাজারে ছাড়ে। প্রত্যেকটা বোতল সম্পূর্ণভাবে ফয়েল সিল এবং চাইল্ড প্রুফ ক্যাপ এর সাথে বাজারে আসে, যার ফলে কারো অজান্তে ওষুধে কিছু মেশানোর ঝুঁকি চলে যায়। এবং এই ট্রাজেডিটি থেকে যুক্ত হয় নতুন এবং কড়া আইন, ফেডারাল এন্টিটেম্পারিং অ্যাক্ট অফ ১৯৮৩, যার ফলে কোনো কনজ্যুমার প্রোডাক্টের টেম্পারিং করা ফেডারাল ক্রাইম হিসেবে বিবেচিত হবে।
জনসন এন্ড জনসনের এই রেসপন্স এবং ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেট এথিক্স এ এখনো গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারা টাইলানল সেফটি ম্যানেজমেন্ট, রিব্র্যান্ডিং ও রিপ্যাক করে নতুন করে বাজারে ছেড়েছিল এবং কাস্টমারদের ভরসা আবারো জিতে নিয়েছিল।
সবশেষে বলা যায়, বিপদ যাই হোক না কেন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট যদি ঠিকমতো ইমপ্লিমেন্ট করা যায় এবং দায়িত্বশীলতার সাথে ক্রাইসিস হ্যান্ডেল করা যায়, তাহলে হয়ে যাওয়া ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং আরো বেশি বিজনেস এট্রাক্ট করা সম্ভব।