যে ভুলগুলোর কারণে কখনো লক্ষ্যই স্থির করা হয় না!

আমাদের জীবনে আমরা সবাই গোল সেট করতে চাই। কিন্তু এই গোল অনুযায়ী কীভাবে প্র্যাক্টিকাল কাজ করতে হবে সেটা জানি না। এর মূল কারণ সম্ভবত অনেক লক্ষ্য একসাথে নির্ধারণ করে কোনোদিকেই ঠিকভাবে যেতে না পারাটা। আবার এই লক্ষ্য স্থির করা নিয়েও কিন্তু আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। যে ভুলগুলোর কারণে কখনো লক্ষ্যই স্থির করা হয় না, সেগুলো সম্পর্কেই আজ আমরা জানবো।

যে ভুলগুলোর কারণে লক্ষ্য স্থির থাকে না 

“আমি জানি আমার লক্ষ্য কী… তাই কোনো কিছু স্থির করার প্রয়োজন নেই”

আপনার জীবনে আপনি যা চাচ্ছেন তার গুরুত্ব যতক্ষণ নিজে না বুঝবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ্য স্থির করা অধরাই থেকে যাবে। এমনকি জীবনের চিন্তা, ইচ্ছা, স্বপ্ন সবকিছুই লক্ষ্যের সাথে সাথে বদলায়। ইচ্ছা আর স্বপ্ন হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের কল্পনা। কিন্তু গোল বা লক্ষ্য মানে নিজের জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত বা ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চটার জন্য চেষ্টা করতে থাকা। আপনার কোনো লক্ষ্য থাকলে সেগুলোকে আগে কাগজে লিখুন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করুন।

“লক্ষ্য লিখে রাখার কোনো দরকার নেই”

এক গবেষণা মতে, ৪২% মানুষ লিখিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়। আজ আপনি যে লক্ষ্যের কথা লিখে রাখছেন, এক সময় এই লেখাই আপনাকে প্রেরণা জোগাবে। এই লিখে রাখার জন্য আপনি চাইলে ডায়েরি অথবা ডিজিটাল কোনো প্ল্যানারও ইউজ করতে পারেন।

যে ভুলগুলোর কারণে লক্ষ্য স্থির থাকে না

“লক্ষ্য শেয়ার করা ভুল”

আমরা অনেকেই ভাবি, নিজের লক্ষ্য যদি অন্যের সাথে শেয়ার করা হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত সেটা পূরণ হয় না। অথচ এটি একদম ভুল একটি ধারণা। আপনার যদি ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্যও থাকে, তবু সেটা গোপণ রাখার দরকার নেই। এমন ধারণা অনেক আগে প্রচলিত ছিল। এখন সব কাজ হয় টিম এফোর্ট আর নিজেদের মধ্যে সততার মাধ্যমে। তাই নিজের টিমের সাথে লক্ষ্য শেয়ার করুন, তাদেরকে বলুন আপনি কী চাচ্ছেন, সবাই যেন সে অনুযায়ী কাজ বুঝে নিতে পারে।

“যার লক্ষ্য বেশি, তার অর্জনও বেশি”

একই সময়ে অনেকগুলো কাজ করা সহজ নয়। এতে মনোযোগ নানাভাবে বিঘ্নিত হয়। আপনার লক্ষ্য যদি অনেকগুলো থেকেও থাকে, তবু প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা সময় বের করুন। এতে নির্দিষ্ট একটি কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন।

“লক্ষ্য নির্ধারণের আগে ব্রেইনস্টর্ম করতে হবে”

লক্ষ্য নির্ধারণ করা মানে কোনো টিম প্ল্যান বা গ্রুপ ডিসকাশন করা নয়। এর শুরুই হয় নিজস্ব চিন্তা, দক্ষতা আর সঠিক পরিকল্পনা দিয়ে। তাই শুধু ব্রেইনস্টর্ম করার প্রয়োজন নেই। সময়ের সাথে সাথে আপনার জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বাড়বে। সেভাবেই ধীরে ধীরে কাজ করতে পারবেন।

“ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাই লং টার্ম গোল কাজ করে না”

হ্যাঁ, এটা সত্যি। ভবিষ্যৎ কার কখন কেমন যাবে সেটা আমরা কেউ জানি না। তার মানে কি আপনি কোনো লক্ষ্য ছাড়াই সামনে এগিয়ে যাবেন? এটা একদমই সম্ভব নয়। তাছাড়া লং টার্ম গোল অর্জন করা সব সময় কঠিনও নয়। আপনাকে শুধু খেয়াল রাখতে হবে, যখন যেখানে যে পরিকল্পনা করেছেন, সে অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কিনা। আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য কিন্তু এক সময় গিয়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে এবং দায়িত্ব বন্টনও হয়ে যাবে। তখন সব কাজ আপনাকে একাই করতে হবে এমন মোটেও হবে না। তখন সবাই মিলে কাজ সহজেই সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন।

Arfatun Nabila - Long Term Goals

“লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছি… জয়ী তো অবশ্যই হবো”

কাগজে লক্ষ্য লিখেছেন বলেই যে সেটা সফল হয়ে গেলো, তা কিন্তু নয়! লক্ষ্যের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য আপনাকে প্রচুর পরিশ্রমও করতে হবে। গোল সেট করা শুধু জীবনে কিছু করার চেষ্টার প্রথম ধাপ। এরপর আপনাকে হাঁটতে হবে আরও অনেকখানি পথ। একা একাই কখনো লক্ষ্য অর্জিত হয়ে যায় না।

“বর্তমানে আমার একটি লক্ষ্য আছে… নতুন করে আর লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজন নেই”

এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে আজ আপনার একটা লক্ষ্য আছে বলে নতুন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে, ক্যারিয়ারে বা অন্য কোনো কাজে কতগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চান তার পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার উপর। যদি কখনো নতুন কিছু ভাবনায় আসে, সাথে সাথে লিখে ফেলুন। পরে যথেষ্ট সময় পাবেন সেগুলো বদলানোর, নতুন করে ডেডলাইন সেট করার অথবা এর সাথে নতুন কাজ যুক্ত করার।

“লক্ষ্য পরিবর্তন করা যায় না”

লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য এর চেয়ে বড় ভুল ধারণা বোধহয় আর নেই! আর সবাই একেই বিশ্বাস করে সবচেয়ে বেশি। অথচ এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। গোল সেট করার পর যখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে তখন আপনার পরিশ্রমের ধরনও বদলে যাবে। পুরোটাই আসলে নির্ভর করে আপনার ভিউ পয়েন্টের উপর। পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তাই লক্ষ্য পরিবর্তন হয় না এই ভুল ধারণা থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বের হয়ে আসুন!

“লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য ডেড লাইন ফিক্সড করা মাস্ট”

এটা একদম সত্যিও নয়, আবার একদম ভুলও নয়। কারণ জীবনে আপনি যে লক্ষ্যই নির্ধারণ করতে চান না কেন, একটা সময় নির্ধারণ করে নেয়া ভালো। এতে কাজের প্রতি ফোকাস থাকা সহজ হবে। জীবনে নানা প্রতিকূলতার কারণে কখনো কখনো ডেড লাইন মিস হয়ে যেতে পারে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নতুন করে আবার ডেড লাইন সেট করুন। গোল সেট করে নেয়ার সুবিধা হচ্ছে এতে বেশ ফ্লেক্সিবল থাকা যায়।

যে ভুলগুলোর কারণে লক্ষ্য স্থির থেক না

“লক্ষ্য নির্ধারণ না হওয়া মানেই ব্যর্থতা”

একটা লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার মানে এই নয় যে আপনি ব্যর্থ হয়ে গেলেন! আপনি হয়তো চেষ্টা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি। ইটস ওকে! এতে কিন্তু একবারে হেরে গিয়েছেন তাও নয়। বরং নতুন আরও অনেক কিছু শিখেছেন। কঠিন সময়ে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কোন কাজ কত দ্রুত করলে শেখা যাবে, কীভাবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে হয় এমন নানা বিষয় আপনার সামনে তখন চলে আসবে। এই প্রসেসগুলোকে কিন্তু ব্যর্থতা বলা যাবে না, তাই না? গোল সেট করে সেটার জন্য পুরোদমে সময় দিলে তবেই না সফলতা সামনে আসবে!

লক্ষ্য নির্ধারণ করা নিয়ে অনেক ভুল তথ্য বা মিথ প্রচলিত আছে। কখনো এই প্রচলিত বিষয়গুলো আপনাকে পেছনের দিকে টানতে পারে। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি যখন আপনার লক্ষ্যে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে পেছন থেকে টেনে ধরে সাধ্য কার? তাই ভয় পাবেন না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন, প্রচুর পরিশ্রম করুন। দেখবেন, সফলতা আপনার দুয়ারেই দাঁড়িয়ে আছে। আপনার ভবিষ্যৎ সুন্দর করার দায়িত্ব তো আপনারই, তাই না? তাই স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন পূরণ করারও চেষ্টা করুন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ছবিঃ Veritus Group, The Project Risk Coach, Kiplinger

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *