ফাইন্যান্সিয়াল লাইফ হেলদি থাকুক, এমনটি আমাদের সবারই চাওয়া। মাসিক আয় অনুযায়ী এটা আপনাকে একটা প্রোপার প্ল্যান দিবে, যেটা অনুযায়ী আপনি খরচের আগে কী করবেন সেটা ভেবে রাখতে পারবেন। এই বাজেটে থাকতে পারে – কীভাবে আপনি লোন শোধ করবেন, অবসরের জন্য কীভাবে জমাবেন, মাসের খরচ কীভাবে করবেন। অর্থাৎ এক কথায় – অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য বাজেট আপনাকে সাহায্য করবে।
বাজেট করা কেন জরুরি?
টাকা পয়সা কোন খাতে কীভাবে খরচ হবে সেটা ঠিক রাখার জন্য বাজেট করা জরুরি। কিন্তু অনেকেই এই স্টেপ নিতে চান না। তারা ভাবেন এটা বেশ ঝামেলার একটা কাজ এবং বাজেট করতে বসলেই মাথাব্যথা করে! আবার কারও কারও কাছে বাজেট করার মতো টাকাই থাকে না, তাদের ধারণা টাকা যা আয় হয়, তা তো খরচই হয়ে যায়। কিন্তু বাজেট করা শুধু জরুরিই নয়, এটা টাকা বাঁচাতে সাহায্য করে, বাড়তি খরচ করতে বাঁধা দেয় এবং প্রতিটা টাকার সঠিক খরচ করতে শেখায়। এই পয়েন্টগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা চলুন জেনে নেয়া যাক।
১) বাড়তি খরচ করা বন্ধ হয়
প্রতি মাসে আপনি যা ইনকাম করছেন তা যদি সঠিকভাবে খরচ করতে না পারেন, তাহলে খরচ শুধু বাড়তেই থাকবে। আর এই বাড়তি খরচের নেশা ভবিষ্যতেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না, যার কারণে ঋণও করতে হয়। ধরুন আপনি কোনোভাবেই খরচের কুলকিনারা করতে পারছেন না, তখন ভাবতে শুরু করুন প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের যে বিলটা আসতে থাকবে সেটা পূরণ করতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত? যদি খরচের একটা বাজেট থাকে তাহলে আয় আর ব্যয়ের একটা হিসাব করতে পারবেন, বুঝতে পারবেন কোথায় আপনাকে থামতে হবে।
২) লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করে
বাজেট টিপস জানা থাকলে কোন বিষয়টি আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটি পূরণের জন্য কতটুকু অর্থ আপনার প্রয়োজন, তা সহজেই বুঝতে পারবেন। হয়তো আপনার লোন শোধ করা দরকার হতে পারে, বাড়ি কেনার জন্য জমানো দরকার হতে পারে অথবা নিজেই কোনো ব্যবসা শুরু করলে তার জন্যও টাকা লাগবে। বাজেট করা থাকলে সেই অনুযায়ী খরচ করে লক্ষ্য পূরণও করা সহজ হয়।
৩) জমানো সহজ হয়
যারা বাজেট করেন না তাদের জন্য টাকা জমানো একটু কষ্টের। যারা করে, তারা মাসে অন্তত কিছু হলেও জমাতে পারে। কারণ বাজেট করা হলে কোন কোন খাতে টাকা খরচ হবে সেটার একটা হিসাব থাকে। তখন বাকি টাকাটা সরাসরি সেভিংস বা ইনভেস্টমেন্ট একাউন্টে চলে যায়। এভাবে প্রতি মাসে অন্তত কিছু করে হলেও জমতে থাকে। এভাবে জমালে কিছু অর্থ তো জমবেই, সাথে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্সও থাকবে।
৪) ফ্লেক্সিবল হতে শেখায়
বাজেট টিপস ফলো করলে সেটা যে খুব রাফ এন্ড টাফ হতে হবে এমন নয়। বেশি জরুরি হলে সেই টাকায় আপনি হাত দিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, জমানো টাকায় যতটুকু সম্ভব কঠোর হওয়া প্রয়োজন, তবে যদি মনে করেন পরের মাসে সামলে নিতে পারবেন তাহলে কিছুটা খরচ করাই যায়। এতে আপনার বাড়তি খরচের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। এক মাসে একটু বেশি খরচ করলেও পরের মাসে যে পুষিয়ে নিতে হবে সেটা মনে থাকবে।
৫) আপনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
বাজেটিং আপনাকে টাকা খরচের ব্যাপারে বেশ নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাড়তি খরচ করা থেকে বিরত রাখে, কীভাবে আপনি কী করছেন তার একটা ট্র্যাক থাকে, বুঝতে শেখায় আপনাকে কী কী পরিবর্তন করতে হবে। বাজেট টিপস একটা সলিড প্ল্যান তৈরি করে দেয় যেতা ফলো করা খুব সহজ এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ করে দেয়। আর্থিক ভবিষ্যৎ বদলানোর জন্য এটা অনেক বড় একটা টুল এবং শুরুর দিন থেকেই জীবন বদলানোর যে মানসিক শক্তি সেটা তৈরি হয় এর মাধ্যমে।
বাজেট টিপস করবেন যেভাবে
১) আয় সম্পর্কে জানুন
সব বাজেটই শুরু হয় মাসের ট্যাক্স দেয়ার পর যে ইনকামটুকু থাকে, সেখান থেকে। কোন কোন জায়গা থেকে আপনার টাকা আসছে সেটা বুঝতে পারলে খরচ ও জমা দুটোর ভিত্তিই সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া কত টাকা আপনি প্রতি মাসে বাড়ি এনে খরচ করতে পারবেন সেটাও বোঝা যায় এই বাজেটের মাধ্যমেই। আয় যে কোনো মাধ্যম থেকেই হতে পারে। রেগুলার পে চেক, সাইড হাসল, চাইল্ড সাপোর্ট বা সরকারি ভাতা। প্রতি মাসে আপনি মাসিক ইনকামটুকু হিসাব করবেন, এরপর সেই এমাউন্টটুকু খাতায় লিখবেন এবং ট্যাক্স দেয়ার পর যা থাকে সেটা নোট করবেন।
২) বাজেটিং স্ট্র্যাটেজি বেছে নিন
অনেকের কাছে বাজেটিং খুব ঝামেলার একটি কাজ মনে হতে পারে। এই ঝামেলা এড়ানোর জন্য যে বাজেটিং মেথড আপনার ভালো লাগে সেটাই আপনি বেছে নিন। বাজেট করার অনেকগুলো উপায় আছে। প্রতিটির আলাদা আলাদা স্কিল আছে, ফাইন্যান্সিয়াল গোল আছে। তাই কোনো একটাতে আটকে থাকতেই হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। চলুন এমন কয়েকটি স্ট্র্যাটেজি দেখে নেই-
৫০/৩০/২০ বাজেটিং
আপনি যদি সিম্পল কোনো বাজেটিং মেথড খুঁজে থাকেন, তাহলে এই মেথডটি অবশ্যই ট্রাই করতে পারেন। এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত থাকে। প্রয়োজন (needs), চাওয়া (wants), and জমানো (savings)।
ট্যাক্স দেয়ার পর যা থাকে | বাজেট ক্যাটাগরি | খরচের ধরন |
৫০% | প্রয়োজন | বাসা ভাড়া/লোন পরিশোধ, খাবার, ইউটিলিটি, চলাচলের খরচ |
৩০% | চাওয়া | বাইরে খাওয়া, কেনাকাটা, ছুটি কাটানো, বিনোদন |
২০% | জমানো | ইমার্জেন্সি ফান্ড, ঋণ পরিশোধ, অবসর |
জিরো বেইজড বাজেটিং
আপনি যদি মনে রাখতে চান, আপনার আয় করা প্রতিটি অর্থ কোথায় যাচ্ছে, তাহলে জিরো বেইজড বাজেটিং বেশ ভালো একটি অপশন হতে পারে। কোথায় কত খরচ করছেন এর মাধ্যমে বোঝা সহজ হবে।
খরচগুলোর ক্যাটাগরি করে ফেলুন এবং ঠিক করুন কোন ক্যাটাগরিতে কত খরচ করবেন। শুরুতেই খাবার, বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি, ট্রান্সপোর্টেশন, ঋণ পরিশোধ এবং অন্যান্য দরকারি কাজ। এরপর ইমার্জেন্সি ফান্ড, নতুন বাড়ি বা গাড়ি কেনার জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর জন্য টাকা জমানো শুরু করুন। এরপর বাকিটুকু খরচ হবে বিনোদন, ট্রাভেল, বা আনন্দদায়ক কোনো খরচে। প্রতি মাসের শেষে এই বাজেট আবার নতুন করে রিভাইজ করবেন। কোনো পরিবর্তন থাকলে সেটা করে ফেলবেন।
ক্যাশ এনভেলপ
ক্যাশ এনভেলপ স্ট্র্যাটেজি তাদের জন্য খুব ভালো যারা খুবই কনক্রিট, হ্যান্ডস অন বাজেটিং সিস্টেম ফলো করেন যেন খরচ পুরোটা কন্ট্রোলে থাকে। এই টেকনিক ফলো করা হয় এনভেলপের মাধ্যমে। যেমন আলাদা আলাদা এনভেলপের গায়ে লেখা থাকবে- গ্রোসারি, ইউটিলিটি, ট্রান্সপোর্টেশন ইত্যাদি। এগুলর মধ্যে ক্যাশ নির্দিষ্ট করা থাকবে। এভাবে প্রতি মাসে খরচ হবে সেই এনভেলপ থেকে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন এক্সাক্ট কত টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, কোথায় কতটুকু বাড়তি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে।
৩) প্রোগ্রেস ট্র্যাক করুন
বাজেটিং হচ্ছে জাস্ট খরচ করার একটা পরিকল্পনা। কোথায়, কীভাবে খরচ হচ্ছে সেটার দিকে খেয়াল রাখুন, কখন আপনাকে কষ্ট করতে হচ্ছে, কোন খাতে টাকা বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে এটা প্রতিদিন বা সাপ্তাহিক হিসেবে শুরু করতে পারেন। এরপর মাসিক ভিত্তিতে শুরু করুন। যখন কোনো একটা মেথডে আপনি সেট হয়ে যাবেন, তখন নিজেই বুঝবেন কীভাবে বাজেট টিপস মেনে চললে সুবিধা হবে।
বাজেট করা নিয়ে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করেন। ভাবেন, নিত্য দিনের যা দরকার তা তো খরচ হবেই। এটার জন্য আলাদা করে বাজেটের কী দরকার। কিন্তু একটা বাজেট প্ল্যান থাকলে এই মাসে কোথায় কত খরচ হলো পরের মাসে সহজেই তার আইডিয়া পেয়ে যাবেন। তখন নতুন করে কিছু প্ল্যান করতে গেলে খুব বেশি ভাবতে হবে না। তাহলে আর দেরি কেন? জীবনকে সহজ করে তুলতে আজ থেকেই শুরু করে দিন বাজেট টিপস ফলো করা!