পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কেন জরুরি এবং কীভাবে করা যায়?

চাকরির বাজার দিন দিন প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে, অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে উঠছে। অনেক ভিড় থেকে নিজেকে আলাদা করতে, ইউনিক স্কিল, এক্সপেরিয়েন্স আর প্যাশনের প্রতি হাইলাইট করার জন্য পারসোনাল ব্র্যান্ডিং খুবই ইম্পরট্যান্ট। অনলাইন ও অফলাইন দুই জায়গাতেই আপনার উপস্থিতি অন্যের নজরে আনা জরুরি। লোকে আপনাকে আলাদাভাবে যত চিনবে, তত মনে রাখবে। কিন্তু কীভাবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করা যায়? সেটা সম্পর্কেই জানাবো আজ।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব

বর্তমান জব মার্কেটে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব বেশ বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের কারণে কর্মী ও চাকরিদাতা উভয় পক্ষেরই নিয়োগ সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো সহজ হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে কার উপস্থিতি কেমন সেটা বিবেচনা করেই এখন চাকরির বাজার অনেকটাই নির্ধারণ করা হচ্ছে।

কীভাবে গড়ে তুলবেন পারসোনাল ব্র্যান্ডিং?

কোনো একটা জবের সার্কুলার হলে সেখানে হাজার হাজার সিভি পড়ে। এত সিভির মধ্য থেকে একমাত্র পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ই হতে পারে গেইম চেঞ্জার। কীভাবে ক্যারিয়ারে উন্নতি করার জন্য পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনাকে সাহায্য করতে পারে সেটাই কিছু পয়েন্টে জানাবো আজ।

১) বিশ্বস্ততা তৈরি হয়

যে কোনো ক্যারিয়ারে বিশ্বস্ততা তৈরি করতে চাইলে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ইফেক্টিভলি কাজ করে। এই ব্র্যান্ডিং করতে পারলে আপনার এক্সপার্টাইজ প্রকাশ পায় এবং আপনাকে যিনি নিয়োগ দিবেন তিনিও আপনার সম্পর্কে বুঝতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার স্কিল, যোগ্যতা, জ্ঞান সবকিছু সম্পর্কে বোঝা যায়। আপনার ক্যারিয়ার গ্রোথের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়। তৈরি হয় নতুন নতুন সম্ভাবনা।

২) অন্যের থেকে আলাদা করে

শত শত মানুষের মধ্য থেকে আপনাকে কেন আলাদা করে বাছাই করা হবে? ঠিক কোন কোন বিষয়গুলোতে অন্যদের থেকে আপনি আলাদা? আপনার ইউনিক স্কিল কোনটি, কী কী অভিজ্ঞতা আপনি অর্জন করেছেন, কোন দক্ষতার জন্য আপনি সেরা – এই বিষয়গুলো নোট করে ফেলুন। পারসোনাল ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করার জন্য এটিকে ফার্স্ট স্টেপ বলা যেতে পারে।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং

৩) টার্গেট অডিয়েন্সের চাহিদা বুঝতে পারা

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং তো আর আপনি একা একা চাইলেই সম্ভব না তাই না? এজন্য প্রয়োজন টার্গেট অডিয়েন্স। আর এই অডিয়েন্স কী চায় সেটা বুঝতে হবে আপনাকেই। তারা কোন সমস্যার সমাধান চাচ্ছে, কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাচ্ছে – এসব বিষয়ে আপনি তাদের সহযোগিতা করবেন। একবার যদি এই কাজটি করতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে ব্র্যান্ডিং এর দুনিয়ায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন।

৪) স্পষ্টতা তৈরি করে

ক্যারিয়ার নিয়ে যদি আপনার মাঝে হতাশা কাজ করে, তাহলে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং আপনাকে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। এটিকে বলা যায় সেলফ রিফ্লেকশন। যে কোনো ক্যারিয়ার গোল অ্যাচিভ করার জন্য এটি একটি পাওয়ারফুল টুল। যখন আপনি আপনার ইন্টারেস্ট, প্যাশন ও স্ট্রেন্থ এর প্রতি সময় দিবেন, তখন ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার ভাবনা আরও সুদৃঢ় হবে।

৫) কনফিডেন্স দেয়

নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপর কনফিডেন্ট থাকাটা কঠিন মনে হতে পারে, বিশেষ করে যখন আপনি চাকরি খুঁজছেন অথবা ক্যারিয়ার বদলাতে চাচ্ছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন পারসোনাল ব্র্যান্ড আপনার কনফিডেন্স বুস্ট করতে পারে খুব সহজেই?

আপনার যখন স্ট্রং একটি পারসোনাল ব্র্যান্ড আছে, তখন আপনি জানেন কোন কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা ও জ্ঞান বেশি। আপনি জানেন কোন বিষয়ে আপনাকে কথা বলতে হবে এবং কীভাবে ইফেক্টিভলি অন্যদের সাথে কমিউনিকেট করবেন। এই বিষয়গুলোই আপনার মাঝে কনফিডেন্স তৈরি করবে। যে কোনো জব ইন্টারভিউ বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টেও আপনি অন্যদের চেয়ে বেশ আলাদাভাবে নজর কাড়বেন।

৬) নেটওয়ার্ক তৈরি করে

ক্যারিয়ার গোল ও অ্যাম্বিশন নিয়ে যদি আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হন, তাহলে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং হতে পারে গেইম চেঞ্জার। কিন্তু কীভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করবেন? বিভিন্ন প্রফেশনালদের নিয়ে হওয়া কনফারেন্স, ট্রেড শো ও ওয়ার্কশপে যোগ দিন। নিজের কাছে কিছু বিজনেস কার্ড রাখুন এবং যত মানুষের কাছে সম্ভব কথা বলে, নিজের পরিচয় দিয়ে কার্ড দিন।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এ নেটওয়ার্কিং

একবার যখন কারও সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে, তখন সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, অথবা সরাসরি দেখা করে – যে কোনোভাবেই হোক সেই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখুন। সবশেষে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না। যে ব্যক্তি আপনাকে সাপোর্ট দিল, আপনার কাজে সহযোগিতা করল, তাকে অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবেন। সেটা হতে পারে ছোট কোনো নোট, কোনো ছোট গিফট, ট্রিট দেয়া। এই ব্যাপারগুলো সম্পর্ককে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

৭) ভিজিবিলিটি বাড়ায়

পারসোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারলে ভিজিবিলিটি বাড়ে এবং পোটেনশিয়াল অনেক নিয়োগকারী ও ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়। সবাইকে বোঝান কেন আপনি অন্যদের থেকে আলাদা। আপনি তাদের কী দিতে পারেন যা অন্যরা দিতে পারে না? এই ব্র্যান্ডিং আপনাকে ইন্ড্রাস্ট্রির অন্যদের সাথে সাক্ষাৎ করার, এক্সপারটাইজ শেয়ার করার এবং অন্যদের থেকে শেখার সুযোগ করে দিবে। যার কাছ থেকে যতটুকুই শিখছেন সেটুকুর জন্য তাকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতা জানাবেন।

৮) নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়

নিজের পরিচিতি বাড়াতে ব্র্যান্ড যখন তৈরি হয়ে যায়, তখন নতুন নতুন সুযোগ সামনে আসতে থাকে। চাকরিতে হয়ত নতুন সুযোগ আসে, কোনো ইভেন্টে আপনাকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ডাকা হয়, কোনো প্রফেশনাল অপরচুনিটিস এ অংশ নিতে বলা হয়। ব্র্যান্ড তৈরির আরও একটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি যখন নিজস্ব ফিল্ডে এক্সপার্ট হয়ে যাবেন এবং স্ট্রং রেপুটেশন তৈরি হবে, তখন নিয়োগকারীও আপনি যে মূল্য চাইবেন, সেটাই পরিশোধ করবে। সেই সাথে আপনি আপনার লক্ষ্যে আরও ক্লিয়ার ডিরেকশন পাবেন। আপনার কী করা উচিত, কোন কোন দায়িত্ব পালন করতে হবে, কোন ইন্ড্রাস্ট্রিতে আপনি টিকে থাকতে পারবেন এসব বুঝতে পারবেন সহজেই।

৯) পাওয়ার অফ ব্র্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন এনে দেয়

একটি ব্র্যান্ড ক্রিয়েট হলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার প্রতি লোকের দৃষ্টি কেমন। দুনিয়ার সামনে আপনি কেমন, নিজেকে কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছেন, ভ্যালু ক্রিয়েট করতে পারছেন এসব বোঝা যায় এই ব্র্যান্ড থেকেই। এজন্য হয়ত বেশ খানিকটা সময় লাগতে পারে, তবে এর সুবিধাও প্রচুর। একবার ব্র্যান্ড তৈরি হয়ে গেলে লোকে অটোমেটিক্যালি আপনার ভ্যালু, স্কিল যাচাই করবে। নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্যও আপনার পরামর্শ নিবে।

নিজের গল্প বলুন

নিজের গল্প

মানুষ আসলে মানুষের সাথে কানেক্ট হতে চায়, সরাসরি কোনো কোম্পানির সাথে নয়। তাই ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে আপনাকে আপনার নিজের গল্প বলে যেতে হবে। নিজের ব্যক্তিত্ব, কাজ, দক্ষতা, জ্ঞান সম্পর্কে বলতে হবে। এ জন্য আপনি পোস্ট লিখতে পারেন, ভিডিও বানাতে পারেন, নিজের রোল এ যে যে দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হয় সেগুল সম্পর্কে বলতে পারেন, কাজ করতে যেয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন কোন ইভেন্টগুলো আপনাকে আনন্দ দেয় সেগুলো শেয়ার করতে পারেন, যে কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের সাথে আপনার কেমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেগুলোর গল্পও জানাতে পারেন। এক কথায় পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ক্রিয়েট করার জন্য নিজের গল্পটা বলা জরুরি।

পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করা কেন জরুরি এবং কীভাবে করতে পারেন সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানিয়ে দিলাম আজকের লেখায়। এই ব্র্যান্ডিং এর জন্য আপনাকে শুধু চাকুরি বা ব্যবসা করতে হবে তা জরুরি নয়। যে কোনোটাই আপনি করতে পারেন, আবার দুটো একসাথে চালিয়েও এই ব্র্যান্ডিং করা পসিবল। শুধু আপনাকে বুঝতে হবে কীভাবে করলে সবার কাছে আপনি গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। আর একবার ব্র্যান্ড তৈরি হলে আপনার কিছু দায়বদ্ধতাও তৈরি হবে অন্যদের প্রতি। তাই আপনাকে দেখে যেন ভালো কিছু শেখা যায় বা অন্যকে সাহায্য করা যায় এই বিষয়গুলোতেও নজর রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *