ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ফলো করে অনলাইনে বিক্রি বাড়াবেন যেভাবে

ব্যবসায়িক জগতে পা রেখে শুরুতেই আপনি ভাবতে বসলেন সেল বাড়াতে হবে। মিথ্যা বলবো না, এটা আসলে সব ব্যবসারই মূল টার্গেট। কিন্তু চাইলেই কি বিক্রি বাড়ানো সম্ভব? আপনি হয়ত একটি ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেছেন এবং এটাকে এখন চাচ্ছেন বড় করতে। কিন্তু ইনইফেক্টিভ বিজনেস ট্যাক্টিকগুলো আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না অর্থাৎ অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে না। তাহলে কী করবেন? অনলাইনে বিক্রি বাড়ানোর জন্য আপনাকে ফলো করতে হবে কয়েকটি ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। চলুন সেই স্ট্র্যাটেজিগুলো সম্পর্কেই আজ জানা যাক।

অনলাইনে বিক্রি বাড়াতে ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি

অনেক সময় পণ্যের কোয়ালিটি ভালো হলেও সেগুলো বিক্রি হয় না। আবার দেখা যায়, কিছু পণ্যের ফিচার এত বেশি থাকে অর্থাৎ নিজেদের প্রোডাক্টকে ভালো বলতে যেয়ে সেগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিতে এগুলোর কোনোটাই ফলো করতে বলা হয় না। তাহলে কোন স্ট্র্যাটেজিগুলো ফলো করে অনলাইনে সেল বাড়ানো যায়? চলুন জেনে নেয়া যাক-

১) কন্টেন্ট ক্রিয়েশন

যে কোনো ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করার জন্য কন্টেন্ট ক্রিয়েট করা ভীষণ জরুরি। কারণ ক্রেতা অনলাইনে কেনার সময় আপনার প্রোডাক্ট ছুঁয়ে দেখতে পারে না, শুধু ছবি দেখে। আপনি চাচ্ছেন, ই-কমার্স সাইটে ও সোস্যাল মিডিয়াতে ছবি দেখেই লোকে আপনার প্রোডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নিক। তাই ছবি সিলেকশনের ব্যাপারে আপনাকে মনোযোগী হতে হবে। কত টাকা খরচ হবে সেই চিন্তা না করে, ছবি কীভাবে তুললে আরও আকর্ষণীয় হবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি

ছবি এমনভাবে ওয়েবসাইটে আপ করতে হবে যেন কাস্টমার সেটাতে ইন্টারেক্ট করতে পারে। অর্থাৎ ছবিতেই যেন প্রোডাক্টের কালার, ডিজাইন, সাইজ সব জানার অপশন থাকে। বর্তমানে ই-কমার্স সাইটগুলোতে খেয়াল করলে দেখবেন আপনি যখন কোনো প্রোডাক্টের ছবিতে ক্লিক করেন, তখন সেখানে জুম করে দেখার অপশন থাকে। এতে প্রোডাক্ট সম্পর্কে আরও ডিটেইল জানা যায়।

২) চ্যাট মার্কেটিং

কাস্টমারের সাথে কনভারসেশন শুরু করার জন্য চ্যাট মার্কেটিং বেশ ভালো একটি অপশন। এতে আপনি লয়্যাল কাস্টমার পাবেন সহজেই। মার্কেটিং চ্যানেলে এটি ইসেনশিয়াল কেননা, মাত্র ১৫% মানুষ আপনার ই-মেইল ওপেন করবে, ২% জাস্ট ক্লিক করবে। এতে পোস্ট ক্লিক অ্যাক্টিভিটি কমে যায় এবং আনসাবস্রাইব করার চান্স বেড়ে যায়। চ্যাট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ম্যাসেঞ্জার, এসএমএস ও ই-মেইল ক্যাম্পেইন দিয়ে কম্বাইন করা থাকে। এটি আপনার রেভেনিউ যেমন বাড়াবে, তেমনই নতুন কাস্টমার আনতে সাহায্য করবে। মেসেঞ্জারের সুবিধা হচ্ছে অন্তত ৮০% মানুষ ম্যাসেজ ওপেন করে, ৫৬% ক্লিক করে। ৯৮% এসএমএস ওপেন করে এবং ক্লিক রেট ১৯%। তবে শুধু এই একটি উপায়েই সেল বাড়বে না। মাসের শেষে স্পেশাল অফার, বিগ সেল প্রমোটিং বা অল্প কিছু ইনভেস্ট করে কোনো ক্যাম্পেইন করতে পারেন।

৩) ভাইরাল গিভঅ্যাওয়ে ক্যাম্পেইন

আপনি যদি কোনো কথাকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে চান, তাহলে এটার জন্য ভাইরাল ক্যাম্পেইন বেশ স্মার্ট একটি পদ্ধতি। বন্ধুদের সাথে মেসেঞ্জারে কন্টেন্ট নিয়ে কথা বলুন। তারা তাদের পরিচিতজনদের জানাবে। তারা আবার তাদের পরিচিতজনদের…। এভাবেই ছড়াবে। যদি ক্যাম্পেইন মজার হয় তাহলে এটার এংগেজমেন্ট আরও বেশি হবে।

৪) এক্সিসটিং কাস্টমারদের জন্য এক্সক্লুসিভ ডিল

ই-কমার্স বিজনেসে যতই স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক বা সফটওয়্যারই আপনি ইউজ করেন না কেন, ইউনিভার্সাল ট্রুথ হচ্ছে-

ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি

রিপিট কাস্টমাররাই আপনার অনলাইন স্টোরকে গ্রো হতে সাহায্য করে। বিশেষ করে অল্প খরচে বেশি রেভেনিউ এনে দেয়। কিন্তু কীভাবে? যার আপনার থেকে একবার কিনেছে, তাদেরকে যদি আপনি আরও কিছু অফার দেন, তাহলে তারা আপনাকে ছেড়ে যাবে না। ব্যাপারটি শুধু তাদেরকে সঠিক সময়ে সঠিক ডিল দেয়া। কাস্টমার তখনই লয়্যাল হবে, যখন আপনি তাদের ডিসকাউন্ট কোড, উইকলি অফার দিবেন। অফারগুলো বিভিন্ন সময়ে হতে পারে। যেমন-

  • প্রথম কেনাকাটার পর
  • নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের কেনাকাটা করলে
  • অনেকদিন কেনাকাটা না করলে
  • জন্মদিন বা বিশেষ দিনে

৫) ফেইসবুক অ্যাড

অনলাইন সেল বাড়ানোর আরও একটি উপায় হচ্ছে ফেইসবুক অ্যাড। এটি একটি অটোমেতেড কনভারসেশন যার মাধ্যমে কাস্টমাররা ইনফরমেশন পাবেন, তাদেরকে কিছু অফার করা হবে বা প্রোডাক্ট রিকমেন্ড করা হবে। পোটেনশিয়াল কাস্টমারদের সাথে এংগেজ হওয়ার জন্য এটি কস্ট ইফেক্টিভ একটি ওয়ে।

৬) ব্র্যান্ড নিয়ে কম্যুনিটি তৈরি

একটি ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করুন যেখানে আপনার টার্গেট কাস্টমাররা কনসার্ন অনুযায়ী ইনফরমেশন ও ইন্টারেস্ট শেয়ার করবে। সেই কনভারসেশনগুলোকে ঘিরে কন্টেন্ট ক্রিয়েট করুন, যেগুলো সোস্যাল মিডিয়াতে মানুষকে ইন্সপায়ার করবে। কম্যুনিটি বিল্ড আপ করলে অ্যাওয়ারনেস বাড়ে এবং সঠিক ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা যায়।

৭) এসইও

সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে প্রোডাক্ট পেইজ অপটিমাইজ করলে টার্গেটেড ট্র্যাফিক ও পোটেনশিয়াল কাস্টমার পাওয়া যায়। অনলাইনে লোকে সার্চ করছে এমন প্রোডাক্ট টাইটেল দিয়ে শুরু করুন। সেই কীওয়ার্ড আপনার ডেসক্রিপশন ও মেটাতে বসান। এরপর অপেক্ষা করুন পারফরম্যান্সের।

এসইও

৮) কন্টেন্ট ও ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

অনলাইন মার্কেটিং এর দুটো ভ্যালুয়েবল ফর্ম হচ্ছে কন্টেন্ট ও ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। দুটোই আপনাকে পোটেনশিয়াল কাস্টমার এনে দিবে। দুটোর মধ্যে মেইন পার্থক্য হচ্ছে – কন্টেন্ট আপনার নিজেকে বানিয়ে ডিস্ট্রিবিউটও নিজেকেই করতে হবে। আর ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এ আপনি তাদেরকে পেমেন্ট দেন এবং বেশ বড় অডিয়েন্সের কাছে তারা আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের কথা পৌঁছায়। ই-কমার্স বিজনেসে পজিটিভ রিভিউ খুব ইমপরট্যান্ট। ইনফ্লুয়েন্সারদের রিভিউয়ের কারণে এর ফলাফলও বেশ দ্রুত পাওয়া যায়।

৯) ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট স্ট্রিমলাইন

অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা এড়াতে এবং বিজনেস গ্রো করতে ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট হতে পারে অন্যতম একটি জরুরি এলিমেন্ট। সঠিক ম্যানেজমেন্ট আপনাকে নিশ্চিত করবে প্রোডাক্টের শর্টেজ আছে নাকি বাড়তি আছে। এটি একটি অন্যতম ই-কমার্স বিজনেস স্ট্র্যাটেজি। যেভাবে এই ম্যানেজমেন্ট স্ট্রিমলাইন করা যায়-

ট্র্যাকিং – যে প্রোডাক্টগুলো আপনি বিক্রি করছেন সেগুলোর ট্র্যাক অবশ্যই রাখতে হবে। পলিসি এমনভাবে সেট করুন যেন যে প্রোদাক্টগুলো আগে এন্ট্রি করেছে, সেগুলোর বিক্রি আগে হয়। এতে পুরনো প্রোডাক্টগুলো আগে বিক্রি হবে।

ড্রপ শিপিং – লেবার কস্ট কমাতে এবং লার্জ স্টোরেজ ইউনিট মেইনটেইন করার জন্য ড্রপ শিপিং খুব চমৎকার একটি পদ্ধতি। এজন্য আপনাকে শুধু সাপ্ল্যারের থেকে নির্দিষ্ট আইটেম লিস্ট করে নিয়ে আসতে হবে।

ক্যাটাগরি – টিম ফুলফিল করার জন্য ইনভেনটরি গ্রুপ করে দিতে হবে। এই ক্যাটাগরিগুলো হতে পারে আইটেম ভ্যালু, সেলস ফ্রিকোয়েন্সি ও যে আইটেমগুলো কম ও বেশি সেল হয় সেগুলোর উপর ডিপেন্ড করে।

ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট

১০) কম্পিটিটিভ বেনিফিট

আপনার পণ্য কেন অন্যদের থেকে আলাদা? আপনি কী কী সুবিধা বেশি দিচ্ছেন অন্যদের থেকে? কী কী প্রোডাক্ট আপনাকে ভিন্নতা এনে দিচ্ছে? যদি ভিন্ন না হয়ে থাকেন, তাহলে কীভাবে হতে পারেন? – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন। এই কম্পিটিটিভ বেনিফিটগুলো নিয়ে ভাবলে আপনি বুঝতে পারবেন ই-কমার্স বিজনেসে কীভাবে আপনি ভালো করতে পারবেন।

১১) সঠিক মূল্য নির্ধারণ

পণ্যের দাম বেশি হলে কাস্টমার সেটি কিনবে না, সেজন্য আপনি দাম কমিয়ে দিচ্ছেন – এটা ভাবা একদম ভুল। আপনার পণ্যের কোয়ালিটি যদি ভালো হয় তাহলে যত দামই হোক না কেন, কাস্টমার কিনবে। তাছাড়া মার্কেট ভ্যালু, কম্পিটিটরের প্রাইসিং ও টার্গেট কাস্টমারের উপর ভিত্তি করে আপনাকে প্রোডাক্টের প্রাইস ঠিক করতে হবে। এজন্য আগে থেকে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে।

অনলাইনে বিজনেস করা এমনিতেই বেশ বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে স্মল বিজনেস ওনারদের জন্য। অনেক কিছু না বুঝেই বিজনেস শুরু করে দেন অনেকে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপরে উল্লেখিত ই-কমার্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিগুলো আপনার কাজে লাগবে আশা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *