হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে নতুন জায়গায় অ্যাডজাস্ট হবেন কীভাবে?

অ্যাডাল্টহুড মানে জীবনের প্রতি পদে পদে পরিবর্তন। কলেজ শেষ হয়ে যায়, ট্রাভেল করতে করতে কোথাও যেয়ে থামতে হয় অথবা নতুন চাকরির সন্ধানে ছুটতে হয়। আর যতই আপনি এসব বিষয় ভেবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন, ততই ফিলিংস ও ইমোশন এর মাঝে আটকে যাবেন এবং ঘর ছেড়ে সামনের দিকে যেতে হবে। এই সুযোগটাকে অবশ্য কাজে লাগানোর জন্য আপনি বেশ এক্সাইটেড থাকবেন, স্বাধীন হওয়ার আনন্দ নিতে চাইবেন, আবার একইসাথে নতুন মানুষদের সাথে মিশতেও নার্ভাস ফিল করছেন। হোমসিক হয়ে যাওয়ার ভয় আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। আপনি আপনার পরিবার, বন্ধু এমনকি ঘরের পোষা প্রাণীটিকেও মিস করা শুরু করবেন। মন খারাপ হবে, আপসেট হয়ে যাবেন সেটা আসলে খুবই নরমাল। হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে নতুন জায়গায় কীভাবে অ্যাডজাস্ট হবেন সেটা নিয়েই জানাবো আজ।

হোমসিকনেস কী?

হোমসিকনেস এক ধরনের ইমোশনাল ডিসট্রেস। আপনি যখন নতুন ও অপরিচিত কোনো জায়গায় যাবেন, নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও থাকা শুরু করবেন তখন এই অনুভূতির মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে। আপনি আপনার কম্যুনিটি ও প্রতিদিনের রুটিন মিস করা শুরু করবেন এবং একটা পর্যায়ে এসে সকল কমফোর্ট হারাতে শুরু করবেন।

বাড়ি থেকে যখন দূরে থাকা শুরু করবেন, তখন এই অনুভূতি হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এটা কোনো সমস্যা নয়। সময়ের সাথে সাথে হোমসিকনেস ফেড হতে থাকে। ১-৬ সপ্তাহের মধ্যে অনেকটাই সয়ে আসে পরিস্থিতি। প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।

হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে অ্যাডজাস্ট করবেন যেভাবে

কী কী সিম্পটম দেখা যায়?

মেন্টাল ও ফিজিক্যাল – দুইভাবেই হোমসিকনেস দেখা যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না হোমসিকনেস আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে। এ সময় আপনার মধ্যে যে যে লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো চলুন জেনে নেই।

ইমোশনালি যেভাবে বুঝবেন আপনি বাড়িকে মিস করছেন কিনা-

  • মন খারাপ থাকবে এবং কান্না পাবে
  • দুশ্চিন্তা
  • রাগ হওয়া এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়া
  • দিশেহারা হওয়া
  • কাজে মনোযোগ দিতে না পারা
  • মোটিভেশনের অভাব হওয়া

হোমসিকনেসের কারণে শরীর খারাপ হওয়ার যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে-

  • মাথা ব্যথা
  • শারীরিকভাবে অস্বস্তি হতে থাকা
  • মাথা ঘুরানো
  • খাবার হজম না হওয়া
  • অতিরিক্ত বা কম ঘুমানো
  • এনার্জি না পাওয়া

হোমসিকনেসে এর কারণে মাথাব্যথা হতে পারে

নতুন জায়গায় যেয়ে যদি এসব লক্ষণ আপনার মধ্যেও দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে হোমসিকনেস আপনাকে ঘিরে ধরেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় আছে। চলুন জেনে নেই কীভাবে।

হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে অ্যাডজাস্ট হবেন যেভাবে

১) ব্যাপারটিকে নরমাল ভাবুন

সারাদিন বসে বসে ঘরকে মিস করলে হোমসিকনেস আপনাকে প্রোডাক্টিভ করে তুলবে না। কিছুদিন আপনি নিজেও এই অনুভূতির মুখোমুখি হতে থাকুন। এবার ধীরে ধীরে স্টেপ বাই স্টেপ প্রতিটি মুহূর্তের মোকাবিলা করার চেষ্টা করুন। তাই মন খারাপ হলে কান্না করা দোষের কিছু নয়। সেই সাথে অবশ্যই নিজের যত্ন নিন। মনে রাখবেন, আপনি নতুন একটি পরিবেশে এসেছেন এবং আপনাকে অ্যাডজাস্ট করতে হচ্ছে। নতুন পরিবেশও ঘরের মতো লাগতে পারে যদি আপনি নিজেকে সুযোগ করে দেন। সবকিছু ঠিক আছে এমন অভিনয়ের দরকার নেই। শুধু মনে রাখুন, আপনি যে জায়গা ছেড়ে এসেছেন সেটা সব সময় আপনারই থাকবে এবং তারা আপনাকে সব সময় সাপোর্ট করে যাবে।

২) দৃষ্টিভঙ্গি বদলান

আপনি হয়ত বারবার ভাবছেন বাড়িতে আপনাকে ছাড়া সবকিছু কীভাবে চলছে। এসব ভাবার বদলে নতুন জায়গায় কী কী সুযোগ রয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। ইউনিভার্সিটিতে গেলে নতুন নতুন নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করুন এবং যে ক্লাবে আপনার আগ্রহ আছে সেগুলোতে জয়েন করুন। সবার সাথে কথা বলুন। নতুন জায়গার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধুদের জানান।

৩) কথা বলুন

যার সাথে কথা বললে ভালো লাগে তার সাথেই কথা বলুন। রুমমেট, ল্যাব পার্টনার, কলিগ যে কেউই হতে পারে। আপনার মতো অনেকেই হয়তো এই অবস্থায় আছে। তাই আশেপাশে যারাই আছে তাদের সবার সাথে কথা বলুন। দেখবেন কাউকে না কাউকে পেয়েই যাবেন। নিজের অনুভূতি তাদের সাথে শেয়ার করুন এবং নতুন বন্ধু বানান।

বন্ধু বা কলিগের সাথে কথা বলুন

৪) মনোযোগ সরিয়ে নিন

আপনার মধ্যে যদি নেতিবাচক চিন্তা বসত গড়তে থাকে তাহলে কিছু সময়ের জন্য মনোযোগ সরিয়ে নিন। হতে পারে সেটা কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘন্টার জন্য। রুম পরিষ্কার করুন, হাঁটতে যান, পার্কে বা মিউজিয়ামে যান। যদি এসবেও হোমসিকনেস না কাটে, তাহলে মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ করুন।

৫) কমফোর্ট জোনের বাইরে বের হোন

নতুন জায়গায় নতুন বন্ধু বানান। মন খারাপ করে সব অময় এক জায়গায় বসে না থেকে ক্লাসমেটদের সাথে লাইব্রেরিতে স্টাডি করুন, হুট করে যদি বাস স্টপে কারও সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে কথা বলুন, কলিগদের সাথে লাঞ্চ করুন। এমনকি যদি কারও সাথে কথা বলার সময় মনে হয় আপনি একা নন, তাহলে বুঝবেন আপনি কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন।

৬) সেলফ কেয়ার প্র্যাকটিস করুন

প্রতিদিন পজিটিভ কোনো না কাজ করলে আপনার মুখে হাসি লেগেই থাকবে। তাই নিজের যত্ন নিন। অর্থাৎ সেলফ কেয়ার করা প্র্যাকটিস করুন। নতুন কোনো কফিশপে ঘুরে আসুন অথবা বন্ধুদের সাথে নিয়ে সন্ধ্যায় সিনেমা দেখতে চলে যান। এমনকি ফুল কেনা বা হট শাওয়ার নেয়াও সেলফ কেয়ারের মধ্যেই পড়ে। বিষয়গুলো যত ছোটই হোক না কেন, নিএজেক সময় দিন এবং মেন্টালি ফিট থাকার চেষ্টা করুন।

সেলফ কেয়ার করুন

৭) স্মৃতিকে সাথে করে নিয়ে আসুন

বড় হয়ে যাওয়া মানে কি ছোটবেলার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে হবে? একদমই নয়! আপনার কি পছন্দের কোনো টেডি বিয়ার আছে? পরিবারের কোনো ছবি আছে যা আপনাকে আনন্দ দেয়? তাহলে সেগুলো সাথে করে নিয়ে আসুন। এগুলো আপনাকে নতুন জায়গায় হোমসিকনেস হ্যান্ডেল করে অ্যাডজাস্ট হতে সাহায্য করবে।

৮) যোগাযোগ রাখুন

নিয়মিত বন্ধু ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের ভুলে যাবেন না। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। তবে হ্যাঁ রোজ রোজ সবার সাথে ফোনে কথা বলা বা ভিডিও চ্যাট করলে হোমসিকনেস বাড়তে পারে। তাই সবার সাথেই যোগাযোগ রাখুন, মাঝে মাঝে কথা রাখুন। নিজেকে নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে নিজেকেও কিছুটা সময় দিন।

৯) সুস্থ থাকুন

ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সবই সুস্থ থাকার একটি অংশ। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা মেন্টাল হেলথকে প্রোটেক্ট করারই একটি অংশ। এক্সারসাইজ সরাসরি আপনার ইমশনাল হেলথে ইমপ্যাক্ট ফেলে এবং খাওয়াদাওয়া মনোযোগ ধরে রাখে। নিজের ইন্টারনাল স্ট্রেন্থ ধরে রাখুন এবং প্রতিদিন নিজেকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে তুলুন।

হোমসিকনেস দূর করতে এক্সারসাইজ করুন

আমরা যখন একদম নতুন কোনো জায়গায় থাকতে আসি তখন হোমসিকনেস হওয়াটা মোটেও খারাপ কিছু নয়। আবার নিজেকে একদম আইসোলেটেড করে ফেলাটাও কোনো সমাধান নয়। আবার অতিরিক্ত কাজ করা, বেশি বেশি দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখাও ভালো কোনো সমাধান এনে দিবে না। যখন কোনো কিছু বেশি জটিল লাগা শুরু হবে তখন মানসিক প্রশান্তি দিবে এমন কিছু করতে পারেন। যেমন- জার্নালিং। সেই সাথে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বাড়ান, ফিজিক্যাল ও মেন্টাল হেলথের যত্ন নিন, রেগুলার এক্সারসাইজ করুন, পুষ্টিকর খাবার খান। বাড়ি থেকেই দূরে আছেন মানে যে আপনাকে সব আনন্দ থেকে, ভালো লাগা থেকে দূরে থাকতে হবে এমন নয়। আনন্দ আপনিও ডিজার্ভ করেন। তাই সবার আগে নিজেকে ভালোবাসুন, হোমসিকনেস ধীরে ধীরে কেটেই যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *