চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চান? জেনে নিন এ জন্য কী কী করতে হবে

যদি চোখের সামনে দেখতে পান আপনার বদলে অন্য সহকর্মীর প্রমশন হয়ে যাচ্ছে, তাহলে এমন শুধু আপনার সাথেই হচ্ছে এটা মোটেও ভাববেন না। কারণ আপনার মতো এমন দৃশ্য অনেকেই চোখের সামনে দেখছে। আপনার বদলে অন্য কলিগকে কেন আপনার বস বেশি ডিজার্ভিং ভাবছে সেটার পেছনে আসলে অনেক কারণ আছে। চমৎকার প্রেজেন্টেশন দেয়া থেকে শুরু করে ব্যবসার বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা এমন কর্মীদেরকেই আসলে বসরা প্রাধান্য দেন। চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে জাস্ট একজন কর্মী হয়ে থাকলেই চলবে না। পেতে হবে ভালো স্যালারি, প্রমোশন এবং অবশ্যই সহকর্মীদের কাছ থেকে সম্মান। এতে পারসোনাল ডেভেলপমেন্টও যেমন হবে, তেমনই ওয়ার্কপ্লেস হয়ে উঠবে আরও সহজ। চলুন তাহলে ভালো পারফর্মার হয়ে ওঠার জন্য কী কী করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করার জন্য যা যা করবেন

১) আগ্রহ বজায় রাখুন

প্রত্যেকের মাঝেই কমবেশি জানার আগ্রহ থাকে। কিন্তু এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বেটার পারফর্ম করা যায় সেটা জানেন খুব অল্প মানুষই। ক্যারিয়ার বুস্ট করার জন্য কী কী করা যায় সেটা জানার জন্য টপিক অনুযায়ী স্পেশালাইজড বই পড়তে পারেন। এছাড়া যেখানে কাজ করছেন সেখানে কী ধরনের কাজ হয়, মার্কেটে এ ধরনের আর কী কী কাজ হচ্ছে, আপনি নতুন কী কী আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন সেগুলো সম্পর্কে জানুন, বুঝুন।

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে যা করবেন

২) লক্ষ্য নির্দিষ্ট রাখুন 

করপোরেট জগতে প্রফেশন মুভ করার অনেক সুযোগ থাকে। তবে সুযোগ থাকলেই যে আপনি আপনার চাওয়ামতো পজিশন পেয়ে যাবেন এমন নয়। তাই কর্মক্ষেত্রে এই মাইন্ডসেট ধরে রেখে কিছু ছোট ও বড় লক্ষ্য আগে সেট করে নিতে পারেন। এতে আপনার বসও বুঝতে পারবেন যে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ আছে এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনি মোটিভেশন সেট করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। এটি আপনাকে চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করবে।

৩) সমালোচনা নিতে শিখুন 

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে প্রশংসা যেমন পাবেন, তেমনই ফিডব্যাকও নিতে জানতে হবে। অনেকেই আছেন যারা কোনো ধরনের সমালোচনা নিতে পারেন না। করপোরেট র‍্যাংকিং এ আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার বস ভাবতেই পারে যে আপনার কাজে আরও ভালো করা প্রয়োজন। এটিকে নেগেটিভভাবে না নিয়ে বরং নতুন কিছু শেখার ও করার সুযোগ তৈরি হলো এমনটা ভাবুন। এতে আপনারই গ্রোথ হবে।

৪) স্কিল ইমপ্রুভ করুন

আপনি যে নতুন নতুন স্কিল সম্পর্কে জানছেন সেটা বসকে জানিয়ে রাখুন। এতে কাজের প্রতি যে আপনি ডেডিকেটেড সেটা সহজেই তিনি বুঝতে পারবেন। আপনি যেই ফিলদে কাজ করছেন সেই ফিল্ডের কাজ সম্পর্কেই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। প্রফেশনালি কাজ করতে গেলে কিছু স্কিল আপনার জেনে রাখা জরুরি। সেগুলো হচ্ছে-

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি

  • ক্রিটিক্যাল থিংকিং
  • লিডারশীপ
  • টাইম ম্যানেজমেন্ট
  • প্রবলেম সলভিং
  • টিমওয়ার্ক
  • অর্গানাইজেশনাল স্কিল

এই সবগুলো স্কিল যদি আপনি নিজের মধ্যে বিল্ড করতে পারেন তাহলে ওয়ার্কপ্লেসে তৈরি হওয়া বেশিরভাগ সমস্যাই আপনি হ্যান্ডেল করতে পারবেন। এতে বস বুঝতে পারবেন আপনার এই যোগ্যতাগুলো বেশ ভালোভাবে রপ্ত করা আছে। সেই সাথে নতুন কোনো প্রজেক্টের কাজও আপনি পেয়ে যেতে পারেন।

৫) সবাইকে সম্মান করুন

যে কোনো করপোরেট অফিসেই কাজ করা মানে আপনাকে একসাথে অনেক মানুষের সাথে কাজ করতে হবে। এ কারণে কর্মীদের সোশ্যাল বিভিন্ন স্কিলের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করিয়ে নিতে হবে। এতে আপনার প্রফেশনাল রিলেশনশীপ বিল্ড আপ হবে এবং নেটওয়ার্ক বাড়বে। চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে জরুরি আরও একটি বিষয় হচ্ছে সহকর্মীদের সম্মান করা। ঠিক যেমনটা বসদেরকে করা হয়। এতে কলিগ ও ম্যানেজমেন্টও বুঝতে পারবে যে, আপনি মানুষকে বুঝতে সময় নেন এবং প্রতিষ্ঠানে কার কী দায়িত্ব সেটা সম্পর্কে জানেন। এতে আরও বোঝা যায়, আপনি যে কোনো ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন এবং স্ট্রং প্রফেশনাল রিলেশনশীপ মেইনটেইন করতে পারেন।

৬) কাজে এফোর্ট দিন

একজন টপ পারফর্মার হিসেবে প্রতিটি কাজই আপনাকে বেশ আগ্রহ নিয়ে করতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে সেটাতে যেন আশানুরূপ ফলাফল আসে। যেমন- কাজের ডেডলাইন অনুযায়ী কাজ শেষ করা এবং সেই সাথে টাইম ম্যানেজমেন্ট করা। যদি সম্ভব হয় তাহলে কোম্পানির উন্নতির জন্য নিজের কাজের পাশাপাশি সাইড প্রজেক্টের দায়িত্বও নিতে পারেন। মোট কথা, আপনি যতটা পরিশ্রম করতে পারেন সেটা পুরো এফোর্ট দিয়ে করতে হবে। প্রতিবারই কাজ করার সময় বেস্ট কোয়ালিটিটাই দিতে হবে। এতে বোঝা যায়, আপনাকে যে ধরনের কাজই দেয়া হোক না কেন, আপনি সময়ের মধ্যে সেগুলো শেষ করার দক্ষতা রাখেন।

৭) পজিটিভ মাইন্ডসেট রাখুন 

পজিটিভ মাইন্ডসেট রাখুন

সফল ব্যক্তিরা সব সময়ই বলেন যে, আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই পজিটিভ মাইন্ডসেট রাখতে হবে। এর কারণ হচ্ছে- প্রতিদিন যে কাজগুলো করা হয় তাতে যদি নেতিবাচক আচরণ করা হয় তাহলে মোটিভেশন কমে যাবে এবং পারফর্মও দিন দিন খারাপ হতে থাকবে। পজিটিভ মাইন্ডসেট সব সময় যে কোনো মুহূর্তের ভালো দিকটাই সামনে নিয়ে আসে এবং ওয়ার্কপ্লেসকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করে তোলে।

৮) চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করুন 

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে কাজে চ্যালেঞ্জ নেয়া শিখতে হবে। এতে হয়তো আপনাকে মাঝে মাঝে ওভারটাইম করতে হতে পারে। এক সময় সেটা সময়ের মধ্যে করতে পারাও হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আপনার বস তখন আপনার ডেডিকেশন বুঝতে পারবেন। সব সময় আপনি যে নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন এমন যেন না হয়। যদি আপনার কোনো সহকর্মীর তাদের নিজেদের প্রজেক্ট কমপ্লিট করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনার যতটুকু জানা আছে সেটুকু দিয়েই তাদেরকে সাহায্য করুন।

৯) গ্রোথ অপরচুনিটি খুঁজতে থাকুন 

সব হাই পারফর্মারদের মধ্যে একটা জিনিস একদম কমন থাকে। সেটা হচ্ছে তারা সব সময় চেষ্টা করে কীভাবে নিজেদের গ্রোথ করা যায়। এতে নিজেদের স্কিল যেমন বাড়ে, তেমনই প্রতিদিন অল্প অল্প করে নিজেকে উন্নত করা যায়। একজন ভালো কর্মী সব সময় ম্যানেজমেন্টের দেয়া যে কোনো সোর্সের সুযোগ গ্রহণ করে। যেমন- প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ বা উইকলি টিম মিটিং এ অংশগ্রহণ করা।

গ্রোথ অপরচুনিটি কতটুকু গ্রহণ করতে হবে সেটা বোঝার জন্য আপনি নিজেও নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন- ‘কীভাবে আমি একজন ভালো কর্মী হয়ে উঠতে পারি?’ অথবা ‘আমি যে কাজে এফোর্ট দিচ্ছি সেটা কীভাবে আমার বস বা ম্যানেজমেন্ট টিমকে বোঝাবো?’ এই প্রশ্নগুলো নিজেই নিজেকে করলে বুঝতে পারবেন কোথায় কোথায় আপনাকে ভালো পারফর্ম করতে হবে এবং কীভাবে নিজের গ্রোথ বাড়ানো যায়।

গ্রোথ অপরচুনিটি খুঁজতে থাকুন

প্রফেশনালি নিজের ডেভেলপমেন্ট বাড়ানোর জন্য যে বিষয়গুলোতে আপনাকে করতে হবে-

  • একজন মেন্টর খুঁজে বের করুন
  • ইন্ড্রাস্ট্রি রিলেটেড বই পড়ুন
  • ওয়েবিনার বা সেমিনারে যোগ দিন
  • ওয়ার্কশপে অ্যাটেন্ড করুন
  • কলিগ বা ম্যানেজারের থেকে ফিডব্যাক নিন
  • যে ইন্ড্রাস্টিতে কাজ করছেন সেই ইন্ড্রাস্ট্রি রিলেটেড অনলাইন কমিউনিটিতে যোগ দিন

চাকরিতে ভালো পারফর্ম করার জন্য কী কী করতে পারেন তার কয়েকটি উপায় আপনাদের জানিয়ে দিলাম। যারা এখনও ভাবছেন কীভাবে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাবেন, তাদের জন্য আশা করি আর্টিকেলটি বেশ হেল্পফুল হবে। নিজেকে ছোট না ভেবে কাজে মনোযোগ দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এর বিকল্প নেই। আপনি যেখানেই কাজ করছেন না কেন সেখানকার পরিবেশ যেভাবেই হোক আপনার কাজের উপযোগী করে তুলুন। এতে নিজের গ্রোথ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *